somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের আলোবাতাস ছাড়া প্রবাসের ৩৬৫দিনের দিনলিপিঃ একটা স্মৃতিচারনমূলক পোষ্ট!!!

১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতে জীবনের ৩৬৫ দিন অতিক্রম করলাম আজ প্রিয় জন্মভূমির আলোবাতাস ছাড়া সূর্য্যদয়ের দেশে। গতবছরের আজকের দিনে সকালে পৌছেছিলাম জাপানে অনেক শংকা আর ভয় নিয়ে। একেতে প্রথম দেশের বাহিরে, তারপরও জাপানের ভাষাগত সমস্যা।সবকিছু এখন সেই অতীত।

৯ই অক্টোবর, ২০০৮ এ থাই এয়ারে উড়াল দিছিলাম মাকে চোখের পানিতে ভাসিয়ে, আম্মা এমনভাবে কাঁদছিলেন যেন আমি একেবারে চলে যাচ্ছি। মনটা এত খারাপ লাগছিলো যে কি বলবো, বিমানের মাঝেও মাঝে মাঝে সেলফোনে কথা বলছিলাম, যতক্ষন নেটওয়ার্ক ছিলো। এরপর থাইল্যান্ডে অসহনীয় একাকী ৫ঘন্টার ট্রান্জিট। সবাই অপরিচিত, কি করবো, ঘুরে ঘুরে ৫ঘন্টা কি কষ্টে যে অতিক্রম করেছি, শুধু আমিই জানি। এরপর রাত ১১টায় শুরু হলো যাত্রার ২য় পর্ব। পরেরদিন ভোরে নারিতা পৌছেছিলাম , ইমিগ্রেশনের ঝামেলা মিটিয়ে বিশ্বঃ থেকে আসা রিসিভারকে পেয়ে গেলাম। এরপর ক্যাম্পাসে সরাসরি পৌছার জন্য এয়ার্পোর্ট লিমুজিন বাসে উঠে প্রায় ৩ঘন্টার ঘুমঘুম যাত্রার পর পৌছিলাম, দেখি প্রফেসর আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ১ম দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে ঘুমাতে গিয়ে পড়লাম সমস্যায়। কারন তখন দেশের সাথে ৩ঘন্টা সময়ের ব্যবধান। ঘুম আসছিলো না কিছুতেই পড়ে লোকাল সময় ৩টায় ঘুমাইছিলাম /:)

এরপর শুরু হলো জাপানের ভাষা শেখার ক্লাস আর সেই সাথে ইংরেজী না জানা জাপানীজদের সাথে আমার যুদ্ধ । ওরা ইংরেজী বুঝে না আর আমি জাপানীজ বুঝি না :P:P:P:P সবকিছুতেই জাপানীজ ভাষায় লেখা, ফরম/পণ্য, সাইনবোর্ড জাপানীজে লেখা, আর আমি খাই ধোকা X((X((

আমার ল্যাবে একজন ইন্দোনেশিয়ান এসেছিল কয়েকদিন আগে, প্রোফেসর আমাদেরকে নিয়ে লাঞ্চে গেলেন, জাপানীজদের রেস্টুরেন্টে পেলাম আরেক মজার অভিজ্ঞতা। ১ম মাস ছিলাম বিশ্বঃ ইন্টাঃ স্টুডেন্ট হলে, সেখানে রান্নায় কিছু মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেশে রান্নার কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না, যা করছি সব নিজের মেজাজ মর্জিমত মেনু। সব রুমেই এটাচড বাথ আর কিচেন, প্রায়ই রান্না করতে গিয়ে ধোয়া করতাম আর স্মোক ডিটেক্টর চিল্লানী দিয়ে গার্ডদেক ডেকে আনতো :P:P:P:P:P

এরপর শুরু হলো নতুন সমস্যা, দেশে কথা বলবো কিভাবে, কারন টিএন্ডটি থেকে কল করলে প্রচুর খরচ, টিঊটরকে (ফরেন স্টুডেন্ড কে সাহায্যের জন্য ল্যাবের একজন জাপানীজ স্টুডেন্ট, এতে সে কিছু সন্মানীর পায় যা বিশ্বঃ দেয়) নিয়ে রওনা দিলাম সেলফোনের হেনস্তা করতে।

দেশের বাহিরে গেলে সবারই মনে হয় মাতৃভূমিকে বেশি মনে পড়ে! আর এটা যে কতটা বাস্তব আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি! কোথাও কিছু হলেই মনে হয়, ইস বাংলাদেশকে যদি ফুটিয়ে তুলতে পারতাম! এরপর আসলো সেই সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, দেখলাম প্রায় যে সব দেশের ছাত্র আছে সবারই কিছুনা কিছু স্টল আছে শুধু আমাদেরই নাই। সেই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি।

১ম মাস বিশ্বঃ ইন্টাঃ হলে থাকার পর শুরু হলো আর একটা ডরমেটরীতে থাকা, যেখানে আসা যাওয়ার সময় গ্রাম বাংলা ফসলের ক্ষেত পাওয়া যায়। আমি খুব বেশি ধার্মিক না, তবে চেষ্টা করি যতটা সম্ভব ধর্মীয় অনুশাসন মানা যায়। এখানে বিশ্বঃ বেশকয়েকটি মুসলিম দেশের ভাই পেয়েছিলাম, যাদেরকে নিয়ে নামাজ পড়তাম, এখনও পড়ছি। সবচেয়ে মজা পেয়েছি এইজন্য যে, নামাজের বিছানা হিসাবে আমরা গায়ের চাদর ব্যবহার করতাম, আর সেটা আমাদের দেশি প্রডাক্ট।

জাপানে এসে আর যাই হক, ধুমাইয়া বাইসাইকেল চালাচ্ছি, মনে হচ্ছে সেই কৈশরে ফিরে গিয়েছি। আমি যে ডরমেটরীতে থাকি সেখানে সবার জন্য একটা করে সাইকেল ফ্রি:P:PB-) ছেলে-বুড়ো-মা-সন্তান সবাই গনহারে সাইকেল ব্যবহার করে তারপর কোন জট নাই সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলছে। মাঝে মাঝে মজা লাগে মায়েরা তাদের সন্তানকে সাইকেলে নিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ ধরনের সাইকেল সেগুলি।


এরপর ইন্টাঃ স্টুডেন্ট অফিস আমাদেরকে নিয়ে একটা জুনিয়র স্কুলে প্রোগ্রাম করবে, তেমন কিছু না, নিজনিজ দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে. ব্লগে ছবি চেয়েছিলামঃ কিছু ছবি দরকার বাংলাদেশকে নিয়ে, দিন না কিছু ছবি!!!!!! , অনেকব্লগার সেই আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সুন্দর একটা সচিত্র আর্টিকেল বানিয়েছিলাম বাংলাদেশকে নিয়ে, যা সবাই পছন্দ করেছিলো, সুন্দর একটা দিন কাটিয়েছিলাম স্কুলের বাচ্চাদের সাথে।

বেশ মজা হয়েছে টোকিও বৈশাখি মেলায়, যেন আর এক বাংলাদেশ! খুবই ভালো লেগেছিলো বাংগালীর এই মিলনমেলা।


আমাদের রান্না এমনিতেই বেশি সময় আর শ্রমদিয়ে করা, যার জন্য প্রায়ই চায়নীজ-জাপানীজরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কি রান্না করছি, মাঝে মাঝে বুঝাতেও হয় , নিজেই পারি না রান্না তার ঊপড় এমন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা, :P:P

এরপর হানামী (ফুল) উতসবে বেশ মজা হয়েছে ল্যাবের সবাই একসাথে। সাকুরা ফুলের আর কিছু ছবি এই পোষ্টে

__________________________________
বেশকিছু মজার জায়গাও ঘুরেছি জাপানে-

মাঊন্ট তাকাও ভ্রমন (কিঞ্চিত)
মাঊন্ট তাকাও ভ্রমন-বিস্তারিত

সী-ওয়ার্ল্ড ভ্রমন
_____________________________________
এরপর আসলো প্রবাসে ২য়বারের মত ঈদ।


এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে সময়ের চাকা অতিক্রম করছে। আরো আড়াই বছর প্রবাসে কাটাতে হবে, দূরে থাকতে হবে আপনজনদের। এই ১ বছরের প্রবাস জীবনে হয়ত প্রাপ্তীর খাতায় জমা বেশি নাই, তবে যেটুকু আছে, সেটা কম নয় বৈকি। অনেক স্মৃতিময় ঘটনাই ঘটে গেছে এই প্রবাস জীবনে, কিছু দুঃখের কিছু আনন্দের, কিছু আবার জীবনের পরম পাওয়া। প্রবাস জীবনেই অনেকেই জড়িয়ে গেছে আমার সাথে একান্ত আপন হয়ে, হয়ত দুরত্ব সবসময় দূরে ঠেলে না কাছেও টানে।

-----------------------------------------------------------------------
এটা আমার প্রবাস জীবনের ১বছরের স্মৃতি কথন, আজাইরা বকবকানি প্যাচাল, আপনাদের সময় ক্ষ্যাপনের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। দোয়া করবেন সবাই আমার জন্য, ডিগ্রী শেষ করে যেন দেশে ফিরতে পারি, আর যেন শিরোনাম দিতে না হয়, দেশের আলো-বাতাসছাড়া প্রবাহিত জীবন। জাপান যত ঊন্নতই হোক, এরচেয়ে হাসি-কান্না-দুঃখের মাঝেও আমার বাংলাদেশ অনেক অনেক প্রিয়, অ-নে-ক।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×