somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুটির ঘণ্টা বাজে ঢংঢং/ মেঘেরা হারায় বৃষ্টির রঙ!!

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমগ্র বছরের মধ্যে আমার বাসায় যাওয়া পড়ে সর্বোচ্চ ৪-৫বার; এর মধ্যে ২ঈদ কমন, আর বাকি ৩বার রিজার্ভ রাখা, এবং এমনও দেখা গেছে এই রিজার্ভেশনগুলো অনেকবছর অব্যবহৃতও থেকে যায়। তাই ছুটিতে আমার বাসায় যাওয়াটা বেশ একটা উপলক্ষ্যই বটে। ২০০৩ সালে এসএসসি পাশের পর সেই যে বাসা ছাড়লাম, এরপর টানা একমাস কখনোই আর বাসায় থাকা হয়নি। কলেজ জীবনে তবু ২-১ মাস পরপর যাওয়া হত, কিন্তু ভার্সিটিতে ঢুকে বাসাকে নিত্যবৃত্ত অতীত করে ফেলেছি বোধহয়।
ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা ছেড়েছিলাম ১৭ই সেপ্টেম্বর, আর ফিরলাম ২রা অক্টোবর; সবমিলিয়ে ২ সপ্তাহের মত একটা প্যাকেজ।
৩০শে আগস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই আম্মু ক্রমাগত তাগাদা দিচ্ছিল 'বাসায় আসো, বাসায় আসো', আর আমি বারবারই বিভিন্ন কাজের বাহানায় দিন বাড়াচ্ছিলাম। তাই নিশ্চিত ছিলাম এবার বাসায় গিয়ে কঠিন জেরার সম্মুখীন হতে হবে, এবং প্রতিটি কাজের পইপই হিসাব দিতে হবে। মূলত কাজ বলতে ছিল শুধু নাটকের কাজটাই। কিন্তু এই ব্যাপারে বাসার কাউকেই কিছু জানাইনি, কারণ আমি লেখালিখি করি এ ব্যাপারটিই বাসায় কেউ জানেনা (আমার ছোটভাই বাদে), তাই আমার কোন লেখাই আমার পরিবারের কেউ পড়েনি। সেদিক থেকে, নাটক করার কারণে বাসায় আসছিনা এই কথা বললে আরও অনেক কথা বলতে হত সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে। তারচেয়ে না বলাই শ্রেয়।
সঙ্গত কারণেই ১৭ তারিখ বাসায় ফিরে পুরো ব্যাপারটি বলার পর আম্মুর কাছে যথেষ্টই নাজেহাল হতে হয়েছে; প্রথমত, আমি সংখ্যাতত্ত্বের কাজ ফেলে নাটক করতে পারি, এটা তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করেননি, এবং ২য় কারণ হচ্ছে, নাটক তেমন কোন প্রোডাক্টিভ কাজ নয় (পরিবারের ভাষ্যমতে)। সুতরাং বাসায় ফিরেই অভ্যর্থনাটা বেশ জমজামাট হয়েছিল আর কি!
বাসায় কম যাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল, বাসায় গিয়ে করার মত তেমন কোন কাজ পাইনা; রিমোটে টিভির চ্যানেল বদলানোটাই বলতে গেলে একমাত্র কাজ, এবারও তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা হল। তবে বিকালটা পুরোপুরি অন্যরকম কাটে; ছুটিতে আসা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়, প্রায় 'কিশোর রাত' পর্যন্ত গল্পগুজব- রসিকতা চলে। সন্ধ্যার দিকে একটা চায়ের আসর বসে। চায়ের আসরে আমি নিয়মিতই অপদস্থ হই- সবার থাকে সিঙ্গল কাপ, আর আমার কাপটা ডাবল; এখান থেকেই নিত্যদিনকার বিপত্তির উৎপত্তি।
বন্ধুরা একত্রিত হলেই বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ রাখা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক; একসময় আমাদের টিমটা খুবই শক্তিশালী ছিল, কিন্তু অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাসের মত এখন আমরা খেলতেই নামি হারের ধরনটা সম্মানজনক করার টার্গেটে। এবারও বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেললাম এবং প্রতিটিতেই হার , কোনটায সম্মানজনক, কোনটাই শোচনীয়। বরাত গুণে একটা ম্যাচে টাই। দীর্ঘদিন না খেলার কারণে আমার ফিটনেসের অবস্থাও যাচ্ছেতাই- একটা দৌড় দিলেই স্ট্যামিনা শেষ, কয়েকটা ম্যাচে তো রীতিমত রানার নিয়ে ব্যাটিং করতে হয়েছে আর ফিল্ডিংয়ের প্রসঙ্গ নাহয় অনুল্লিখিতই থাকুক- সে এক মহা বিনোদনের দৃশ্য!
ঈদ আর পূজা কাছাকাছি সমযে হওয়ায় আখেরে লাভই হয়েছে। আমাদের সার্কেলটা হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ। তাই বিভিন্ন মন্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখার পাশাপাশি টুকটাক নিমন্ত্রণও রক্ষা করা হযেছে। স্কুলে পড়ার সময়ে এইসব মন্ডপে যেতে বিরক্ত লাগত, এখনও খুব ভাল লাগেনা, তবে আগের সেই বিরক্তিটা একেবারেই নেই। বিশেষ করে, মন্ডপে গেলে মুসলমান বন্ধুরাও যেভাবে দলবেধে নাচে, দৃশ্যটা অপলক চেয়ে থাকবার মত। এখানেও আমি বিব্রত হই নিয়মিত, কারণ হালকা-পাতলা কাজ চালানোর মত গান-অভিনয় পারলেও নাচানাচির ব্যাপারটা আমার হয়ইনা, তাই বিভিন্ন কনসার্টে নিয়মিত ধাক্কা খাওয়া-পায়ে পাড়া খেতে খেতে মোটামুটি গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিজের এলাকাতেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে ততটা ভাল লাগার কথা নয়।
বন্ধুদের তরফ থেকে আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল, যার সন্ধান পাই ঢাকা আসার আগের দিন। এর আগে নাটকের পোস্টটাতে লিখেছিলাম বাজেট ঘাটতির কারণে নাটকের এডিটিং ঈদের আগে সম্ভব হচ্ছেনা। সেই লেখাটি জাহাঙ্গিরনগরে পড়ুয়া আমার এক বন্ধু পড়ে ফেলে, এরপর আমার অজ্ঞাতেই নিজেরা চাদা তুলে টাকাটা যোগাড় করে। আমি ভাবতাম আমার মত গম্ভীর-নিরস মানুষের জন্য বন্ধুত্বের বন্ধনটা সমযোজী, এখন বুঝলাম আয়নিক। ওদেরকে সেদিন ধন্যবাদ বলতে পারিনি, আজ এই লেখার মাধ্যমে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা দুই-ই পৌছে দিলাম।

এবার ছুটির মূলপ্রাপ্তি বলি। আমরা ৪ভাই-বোন সর্বশেষ একত্রিত হয়েছিলাম ২০০৫ সালে; বোনদের বিয়ের পরেও একত্রিত হযেছি, তবে সেখানে হয় আমি নয়তো আমার ইমিডিয়েট বড়বোনটা অনুপস্থিত থাকতই। তাই সম্মিলনটা হত ৩জনের। দীর্ঘ ৪ বছর পর ২দিনের জন্য আবারো সেইসব হারানো দিন ফিরে এসেছিল আমাদের বোলতা কুটিরে। ওহ, বলা হয়নি আমাদের বাসার নাম 'বোলতা কুটির'। আমার আম্মুর ধারণা, আমরা ৪ ভাইবোন একেকটা বোলতা, তাই বাসার নাম বোলতা কুটির রেখে আম্মুর ধারণাটাই পোক্ত করা হয়েছে। আমাদের ভাইবোনদের ছবি সব দুষ্টুমিতে ভরপুর, মোটামুটি একটা ইনোসেন্ট ধরনের ছবি পেলাম। ছবিটা ২০০০ সালে তোলা


একঘেয়ে কিংবা আনন্দদায়ক যেমনই কাটুক, ছুটি শেষে বাসা ছেড়ে আবারো সেই নাগরিক জীবনে ফিরে আসলাম। বুয়েটে ছুটি পাই অনেক, কিন্তু ছুটিগুলোকে কখনই বাসায় যাওয়ার উপলক্ষ্য করা হয়ে উঠেনা।। হযত আবার কোন ঈদে, আবারো ছুটির ঘণ্টা বাজবে...আর, আমি মেঘ আর বৃষ্টি মাপতে মাপতে কয়েকদিনের জন্য বিশ্রাম খুঁজব বোলতা কুটিরের নিবিড় ছায়ার আড়ালে.......
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×