somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়তু কমরেড চে

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯ অক্টোবর কমরেড চে’র ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী (সম্পূর্ণ)

ওদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আমার প্রিয় এম-২ রাইফেলটা অকেজো হয়ে গেছে। তবে আমার পরাজয় এই নয় যে, বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। এভারেস্ট বিজয়ের অভিযানেও অনেকে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আজ মানুষ জয় করেছে। ফিদেলকে বলো_ আমার মৃত্যুতে বিপ্লব পরাজিত হয়নি। বিপ্লবের মৃত্যু নেই। শোষিত মানুষের জয় অনিবার্য। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ একদিন ধ্বংস হবেই। বিদায়_চে

৯ অক্টোবর কমরেড চে’র ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। তিনি জন্মে ছিলেন ১৯২৪ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায়। বেঁচেছিলেন মাত্র ৪৩ বছর। তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবরের রাত শেষে ৯ অক্টোবরের পড়ন্ত রাতের ১ টা ৩০ মিনিটে। এই কিংবদন্তি বিপ্লবীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারা পৃথিবীব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হবে।

চে’ একটি নাম। একটি বিপ্লব। যে নামের সঙ্গে বিপ্লব শব্দটির অদ্ভুদ সম্পর্ক। যে নামটি থেকে বিপ্লব শব্দটিকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। চে’ নামটি শুনলেই শরীরের কোষগুলো বিদ্রোহ করে উঠে। মুহূর্তের মধ্যে চেতনার তন্দ্রা-কারফিউ ভেঙ্গে যায়। এ এক অদ্ভুদ অনুভূতি। অবশ্য এ অনুভূতি_ উপলব্দির জন্য চেতনা থাকা চাই।

এই ক্ষণজন্মা বিপ্লবীর জন্ম আর্জেন্টিনার গোমারিও শহরে। বাবা গুয়েভারা লিঞ্চ। মা মেরিলা মেনা। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর বুয়েন্স আয়ার্সের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল এবং কলেজ। পড়াশুনা শেষে রক্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হন। কিন্তু এই ডাক্তারের রক্তে এবং চেতনায় ঢুকে যায় মার্ক্সবাদের মন্ত্র। যার ফলে চেতনায় ঘুরপাক খেতে থাকে শোষিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। সারাক্ষণ অস্থির। কিছু একটা করতে হবে এদের জন্য। তাই ছুটে যান নিরন্ন-অনাহারী মানুষের কাছে। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। এভাবে পার হয়ে যায় বছর। শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য বিপ্লবের নেশায় পাগল হয়ে ওঠেন তিনি। বন্ধু চিচিনার দেয়া ১৫ ডলার ও বন্ধু আলবার্তোকে সঙ্গে নিয়ে জরাজীর্ণ মোটর সাইকেলে চড়ে আর্জেন্টিনার ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে ঘুরে বেড়ান ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। উদ্দেশ্য একটাই_ বিপ্লব। প্রত্যক্ষ করেন সেখানকার বাস্তবতা।

ঘুরে বেড়ান পেরু, ভেনিজুয়েলা, পানামা, ইকুয়েডর, মেক্সিকো, কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া ও কিউবাসহ আরো অনেক দেশে। এসব দেশে তিনি বিপ্লবী তৈরী ও বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য বিপ্লবী কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি গুয়েতেমালার সরকার প্রধান জ্যাকোবা আরচেঞ্জের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সে দেশে যান। জ্যাকোবা আরচেঞ্জ ছিলেন আরেক বিপ্লবী। এ সময় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধার জন্য ছদ্মনাম নেন_চে’। এই নামেই তিনি আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশে দেশে বিপ্লবের নেশায় এক পর্যায় চে মেক্সিকোতে চলে যান। ১৯৫৪-৫৫ সাল পর্যন্ত চে নিজেকে ও বিপ্লবকে বাচিয়ে রাখতে সব ধরনের কষ্ট সহ্য করে টিকে থেকেছেন। ১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে চে’র সাক্ষাত হয়। দুই বিপ্লবী বেশ কিছুদিন যাবৎ সমাজ বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে মনস্থির করলেন বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই। বিপ্লবের জন্য প্রথম নিশানা ঠিক হলো কিউবা। চে-ফিদেল বাহিনী কিউবায় অবস্থান নিল। গেরিলা যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধ পরিচালনার নৈপুন্য- পারদর্শিতার কারণে চে’-কে সবাই সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক বানিয়েছিল। ৮২ জন বিপ্লবী বহন করে নেয়া ‘গ্রানামা’নৌযানটি কিউবার মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বাতিস্তা সরকারের হাজার হাজার সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। অর্থাৎ বাতিস্তা সরকার গোপনে খবর পেয়েছিল এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ৩ দিনের মধ্যে বিপ্লবীদের ৬০ সশস্ত্র সংগ্রামে শহীদ হন। বন্দী হন ৪ জন। চে’ আহত হয়। যোদ্ধারা কিউবার সিয়েরো সায়েস্ত্রি পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। এখানে নতুন করে স্থাপিত হলো বিপ্লবী ঘাটি। গেরিলা সৈন্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ চলতে থাকলো। এ সময় কিউবার অসংখ্য তরুণ মার্ক্সবাদী মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ফিদেল-চে বাহিনীতে যোগ দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম চালায়। গেরিলা বাহিনী স্বৈরাচারী সরকারের ভিঁত তছনছ করে দেয়। কিউবার সকল মানুষ ফিদেল-চে বাহিনীকে সমর্থন দিল। ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারী চে’- বাহিনী রাজধানী হাভানা দখল করে। কিউবায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট হলেন ফিদেল। চে’-কে প্রথমে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদ দেয়া হয়। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন তিনি।

কিছু দিন পর চে’র চেতনায় ভেসে উঠলো শোষিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। মনে মনে সিদান্ত নিলেন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমার জন্ম হয়নি। পুনরায় বিপ্লবের নেশায়, মানুষের মুক্তির নেশায় সাম্রাজ্যবাদকে কবর দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। বিদায় নিলেন কিউবা থেকে।

হে বন্ধু আমার, কমরেডগণ ও কিউবার সকল মানুষ_বিদায়! পার্টির জাতীয় নেতৃত্ব ও আমার রাষ্ট্রীয় সকল পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিচ্ছি। ত্যাগ করছি আমার মন্ত্রীত্ব, মেজর পদ ও কিউবার নাগরিকত্ব। তুমি (ফিদেল) আমার স্ত্রী-কন্যাদের দেখো। বিপ্লবী অভিনন্দনসহ---চে’।

চলে যান লুলুম্বার দেশ কঙ্গোতে। প্রতিকুল পরিবেশ দেখে সেখান থেকে চলে যান বলিভিয়ায়। ১৯৬৫ সালে বলিভিয়ায় শুরু করেন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। ধীরে ধীরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে বলিভিয়ার স্বৈরাচার সরকারের ভিঁত কাপিয়ে দেন। এ কাজে বলিভিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টি তাঁকে সহযোগীতা করেনি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলিভিয়ার জঙ্গলে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বলিভিয়ার ইউরো উপত্যকায় চে’-সহ ১৬ জন বিপ্লবীকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। প্রায় সহস্ত্র সৈন্যের সাথে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা যুদ্ধ করে পরাস্ত হয়। তার পর রাত ১টা ৩০ মিনিটে মারিও তোয়ান ১০ টি গুলির আঘাতে চে’-কে নির্মমভাবে হত্যা করে।

লাল সালাম কমরেড চে। জয়তু কমরেড চে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×