somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনা

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা উপন্যাসের ধারাবাহিক প্রকাশনা আজ শুরু করলাম সামু পরিবারের জন্য। লেখিকার অনুমতি সাপেক্ষেই তাঁর পরিচিতিসহ সম্পূর্ণ উপন্যাসটি প্রকাশ করছি। যদি কারো আগ্রহ কিংবা সময় থাকে পড়ার................................................................................

লেখিকার পরিচিতি
জিনাত রহমান পেশায় একজন সাংবাদিক, কলামিষ্ট, উন্নয়নকর্মী, উপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। লেখিকা সমসাময়িক ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে প্রচুর লিখেছেন দেশের দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকাগুলোতে। দেশের বাইরেও তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
সাবলীলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য গতি তাঁর উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কুশলী রচনায় তাঁর গল্পের প্রধান উপজীব্য জীবন বোধ। জীবন যন্ত্রণা প্রেম ভালবাসা ফুটিয়ে তুলেছেন। জীবনের সুখ-দুঃখ, চমকপ্রদ হৃদয়গ্রাহী। তাঁর একটি স্বপ্ন গ্রাম বাংলার নারীরা যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয় সে জন্য তিনি তাঁর গ্রামে একটি স্কুল ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেছেন। তিনি দৈনিক উত্তরবাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, দিনাজপুর লেখিকা সংঘের সভানেত্রী, রুরাল কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এসোসিয়েশন - আরসিডিএ'র পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিকার প্রকল্পের সদস্য সচিব, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সদস্য, গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগারের সহ-সভাপতি, ওয়েবের সহ-সভাপতি, নাসিবের সদস্য, দিনাজপুর জেলা কনজ্যুমার এসোসিয়েশনের সদস্য এবং নাগরিক ফোরামের সহ-সভাপতি। তিনি বিভিন্ন অবদানের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্য অঙ্গনে অবদানের জন্য উত্তরবাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ-২০০২ পদক, মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাহিলা সংস্কৃতি সংঘ একুশে স্মারক পদক-২০০৫, সাহিত্য ও সমাজ সেবার জন্য ভারতের শিলিগুঁড়ি উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ পদক-২০০৬, ২০০৭ সালে এইচআইভি/এইডস রিপোর্টের জন্য প্যানোস সাউথ এশিয়া পদক এবং সেন্টার ফর কমিউনিকেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট - সিসিডি থেকে অর্থনীতির উপর রিপোর্ট করে ২০০৬ সালে ফেলোশিপ পান। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। জিনাত রহমান ভ্রমণ পছন্দ করেন। পাহাড় ও সমুদ্র তাঁর প্রিয়। বাগান করা তাঁর শখ। ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার অনেক জায়গা তিনি ভ্রমণ করেছেন। তিনি দার্জিলিং, শিলিগুঁড়ি, গ্যাংটক, মুর্শিদাবাদ, মালদাহ, কলকাতা, জলপাইগুঁড়ি, শিকিম, আগ্রা, দিল্লি, আজমির, জয়পুর এলাহাবাদ ভ্রমণ করেছেন। অলস দুপুরে গান শোনেন ও বই পড়েন। জিনাত রহমানের জন্ম ১লা জানুয়ারি। পৈত্রিক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। একদিন জিনাত রহমান স্বপ্নের ফানুস ফুঁড়ে সীমান্ত পার হয়ে আকাশ ছোঁবেন। আর আমরা তাঁকে ছোঁব। তারপর বলবো এই আমাদের জিনাত রহমান। আমি চাই তিনি আরও ছোট গল্প ও উপন্যাস লিখে যান।

গুণমুগ্ধ কাছের মানুষ।
--মাশুক রায়হান
-------------
প্রকাশকাল
১৪১৫ বাংলা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
কম্পোজ
মোঃ জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ)
মূল্যঃ- ১২৫ (একশত পঁচিশ) টাকা মাত্র।
-----------
কেন মা তুই দিলি ডানা
উড়তে যখন করিস মানা
খাঁচায় ভরে দিলি আমায়
কেন মা তুই দিলি কথা
খাতায় পড়ে রয় সব কথা
কলম দিলি কেন লেখার
বিনা দোষে দিলে সাজা।
--------------

লেখকের অন্যান্য গ্রন্থঃ
ধুসরবাসনা (ছোটগল্প সংকলন) - ২০০৮ একুশে বই মেলা
বিভিন্ন ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং কবিতা জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
-----------
বইয়ের ভূমিকা
মানুষের প্রতি মানুষ। জীবনের প্রতি জীবন। সমাজ অদম্য বাসনা। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি থেকে কল্পনা শক্তি দিয়ে জীবন জটিলতার হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে জীবনের অতল গভীরে ডুব দিয়ে পাঠকের সবুজ হৃদয় ছুঁয়ে যেতে চেয়েছি। আমার উপন্যাসে সুখ-দুঃখ, প্রেম ও সৌন্দর্য্য চেতনার সঙ্গে সমন্বয় করতে চেয়েছি। সর্বোপরি আমার এ প্রয়াস যদি পাঠককে আবেগাপ্লুত ও উচ্ছসিত করতে পারে সেটাই হবে আমার অন্ধকারের জোনাকির মতো সফলতার মিটমিট আলো। তাহলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো।

-----জিনাত রহমান

অহনা

-জিনাত রহমান

অহনা এক শিল্পপতির মেয়ে। সে প্রায় তার বান্ধবীদের বলতো, দেখিস ধনি-গরিব ভেদাভেদ ভুলে সমাজ ব্যবস্থা বদলে দেব আমি। আমি কোনদিন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করবো না। বান্ধবীরা হেসে উড়িয়ে দিত। তুই এতবড় শিল্পপতির মেয়ে তোর মুখে এসব কথা মানায় না। অহনার মধ্যে কোন অহংকার ছিল না। খুব সাধারণ জীবন যাপন করতো। একদিন পরিচয় অহনার সাথে একটি মেধাবী ছেলের। সে গান জানে, কবিতা আবৃত্তি করে। অহনা ভাল তানপুরা বাজাতে পারে। কলেজের নাটক, আবৃত্তির অনুষ্ঠান করতে গিয়ে একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির নাম প্রবাল। এই ভাবে কবিতা শুনতে শুনতে অহনা আর প্রবাল প্রায় লং ড্রাইভে যায়। জীবনের মোড় কখন যে কোন দিক এসে ঘুরপাক খায় কেউ বলতে পারে না। মনের অজান্তে এক সময় দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলে। একদিন কলেজের একটি নাটক করতে গিয়ে তারা বর বধু সেজে অভিনয় করে। এ ভাবেই সত্যি সত্যি ওরা পালিয়ে দু'জনে বিয়ে করে ফেলে। প্রবাল প্রথমে বিয়ে করতে চায়নি। এতবড় শিল্পপতির মেয়ে। তার সাথে কি আমার ঘর করা হবে? এসব ভাবতে থাকে। প্রবালকে অহনা বলে, জানো প্রবাল? তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি। বড়লোকদের আমি ঘৃণা করি। কেননা তাদেরকে শুধু মদ আর ক্লাব নিয়েই থাকতে দেখেছি। তাই তোমাকে বিয়ে করে শান্তিতে থাকতে চাই। জানো, ওরা সুখ খুঁজতে চলে যায় ক্লাবে। আর মধ্যবিত্ত স্বামীরা সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর স্ত্রীর কাছে এসে ভালবাসার কথা বলে। স্বর্গের মত সুখ পায়। প্রবাল অহনার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-তুমি আমাকে বিয়ে করে ভুল করলে নাতো? আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারবো না।
অহনা বলে, কিছুই চাই না আমি। আগে তুমি পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাও। তাহলেই হবে। অহনা এত ভালবাসে ভেবে প্রবাল মুগ্ধ হয়ে যায়। অহনার ভালবাসাকে স্বাগত জানায়। অহনাকে প্রভাতের ঝরা বকুলের মালা দিয়ে জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিল। প্রবাল ভার্সিটিতে একদিন মন খারাপ করে বসে আছে। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। বাতাসে লাল পাঁপড়ি দিয়ে সবুজ ঘাসের বুক ভরে আছে। অহনা দেখছে প্রবালকে ভীষণ ভাল লাগছে। প্রবালের কাছে গিয়ে বলে, সাদা পাঞ্জাবিতে খুব মানিয়েছে তোমাকে। আজ তোমাকে নিতে এসেছি আমাদের বাসায়।
- কী বল তুমি তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? তোমার বাবা-মা আছে না বাসায়?
- না ওরা দেশের বাইরে গেছে সবাই।
প্রবালকে জোর করে নিয়ে যায়। ঘরে ঢুকে প্রবাল অবাক হয়ে যায়। লাল গোলাপ দিয়ে সারা ঘর সাজানো। লাল নীল বাতিতে অপূর্ব লাগছে অহনাকে।
- শোন প্রবাল, ভালবাসার জন্য একটি সুন্দর মন প্রয়োজন। তুমি আমার সেই মন।
প্রবাল অহনার হাত চেপে ধরলো। প্রবাল সম্পূর্ণ নিজেকে সঁপে দিল। সাত দিন অহনার বাসায় থেকে প্রবাল চলে গেল হলে। রুপালী দ্বীপে নির্জন মনে খেলতে লাগলো স্বপ্নে বিভোর দু’টি মন। ক’দিন আর দেখা নেই প্রবালের সাথে। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। অহনা ক’দিন ধরে খুব ভাবছে। বাবা-মাকে বিয়ের কথাটা জানাবে। একদিন সুযোগ বুঝে বলে ফেললো, বাবা, আমি বিয়ে করেছি।
বাবা গর্জন করে উঠলো, একি বলছো? ছেলে কে? কী তার পরিচয়?
- একটাই পরিচয় সে ভাল ছাত্র। দেখতে ভাল।
অহনা একরোখা কারও কথা সে শুনবেনা এটা ভাল করে জানে ওর বাবা। অহনার বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। বেশ কিছুদিন পর ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যায়। প্রবালকে জরুরিভাবে তার বাবা-মা দেশের বাড়ীতে যেতে বলে। অহনাকে প্রবাল বলে, বাবা বাড়ি যেতে বলেছেন। আমি ক’দিনের জন্য গেলাম, চলে আসবো। অহনার ভীষণ মন খারাপ, কান্নাকাটি করে। প্রবালকে বিদায় দেয়। প্রবাল বাড়ি গিয়ে দেখে তার বাবা প্রবালের বিয়ে ঠিক করেছে। মেয়েকে আংটি পরিয়েছে তার বাবা-মা। প্রবাল যে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে সেকথা বাবা-মাকে বলতে পারেনি। এমন একটি পরিস্থিতি। প্রবাল বলে, বাবা আমি তো সবে মাত্র মাষ্টার্স পড়ছি। পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী হোক তারপরে বিয়ে করবো।
বাবা একরোখা, না এসব কথা তোমার ভাবতে হবে না। মেয়ের বাবাই চাকুরী দেবে। ওরা বাড়ি করে দেবে। একমাত্র মেয়ে চাকুরী করে। বাবা-মায়ের মান-সম্মান তুমি রাখবে না? আমি কথা দিয়েছি মেয়ের বাবা-মাকে।
প্রবাল যে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে সে কথা বাবা-মাকে আর বলতে পারেনি। মহা ভাবনায় পড়ে যায় মুখচোরা প্রবাল। তারপর আর ভয়ে কোন যোগাযোগ করেনি অহনার সাথে। কী জবাব দেবে? কী করবে? অহনা তার বাবা-মাকে জানায় সে মা হতে চলেছে। এটা শুনে অহনার বাবা-মা ভীষণ রেগে যায়, তোর এই বিয়ে মানি না। এই বাচ্চা কার পরিচয়ে বড় হবে, বল। বাচ্চা নষ্ট করে ফেল। সমাজের কাছে কী বলবো?
অহনার সোজা জবাব, বলবে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বর বিদেশে চলে গেছে।
মা বলে, সমাজ তোমাকে বাঁকা চোখে দেখবে। ভেবে দেখ ব্যাপারটা। অহনা ভাবে, সেদিন প্রবালের সহজ-সরলতা ভাল ছাত্র দেখে তার উপর আস্থা রেখেই জীবনের এতবড় ঝুঁকি নিয়েছিলো। প্রবাল ওকে ভুলে গেল। জীবনের মাঝে আর একটি তুলতুলে ছোট জীবনের আগমন। এভাবে ভাবতে ভাবতে নয়টি মাস কেটে গেল। অহনা ভাবতে থাকে জীবনে কী ভেবেছিলাম, আর জীবন আমায় কোথায় নিয়ে গেল। অহনার ফুটফুটে একটি ছেলে হলো। দেখতে একেবারে প্রবালের মত হয়েছে। বুকভরা বেদনা। বারবার মনে পড়ছে প্রবালের কথা। প্রবাল তুমি দেখলে না, আমাদের ভালবাসার ফুল কত সুন্দর হয়েছে। আমার কোলজুড়ে এসেছে। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, কেন ভালবাসলে?
আমার মধ্যে কী কম ছিল, বল? একা একা বলতে থাকে। অহনার মাথায় হাত দেয় অহনার বান্ধবী। কাঁদিস না। জীবনে যখন এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলি কোন কিছু না ভেবে, এখন ভাবছিস কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই আর কত কাঁদবি?
এদিকে প্রবাল তার বান্ধবীর কাছে খবর পায় অহনার ছেলে হয়েছে। শোনে অহনার যন্ত্রনার কথা।
প্রবালের সাথে আমি একটা বছর শুধু নির্মাণ করেছি। আমার ফেলে আসা ভালবাসার। আমার প্রবাল আমাকে নিংড়ে উজাড় করে ভালবাসা দিয়েছিল। আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছিল নীল বিস্তৃত ঐ আকাশ দেখতে শিখিয়েছিল। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল।
বান্ধবী বলে, তোকে বলেছিলাম অহনা, প্রবাল তোর চেয়ে ছোট ওকে বিয়ে করিস না। ওরা স্ত্রীর মূল্যায়ন করতে জানে না। মন চঞ্চল হয়ে থাকে। যাকে দেখে তাকেই ওদের ভাল লাগে।
অহনা বলে, না, আদ্রিকা, প্রবাল এমন ছেলে না। আমার সাথে মাত্র তিন বছরের পার্থক্য। কি যায় আসে তাতে।
আদ্রিকা বলে, শোন অহনা এখনও সময় আছে বিয়ে করে ফেল।
অহনা বলে, না-রে, জীবনে একবার বিয়ে হয়।
অহনা তার হৃদয়ের কথা ডায়েরিতে লিখে রাখে। প্রবাল যাবার পর সে কয়টি চিঠি দিয়েছিল সেই চিঠিগুলি বার বার পড়ে বিরহ যন্ত্রণাকে অনেকটা সহজ করে তুলতো। এইভাবে অহনা ২২টি বছর পার করে দেয়। ছেলেকে লেখাপড়া করানোর জন্য কানাডায় পাঠিয়ে দেয়। কিছুতেই বাসায় মন টিকছিলো না। কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে খুলনায় খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ছেলে কানাডায় গিয়ে পৌঁছেই সংবাদ দেয় ভালভাবে এসেছি। রাতে আবির ই-মেইল করে। সব কথা মাকে জানায়। আবির ই-মেইল করছে আর সব ঘটনা লিখছে। এখানে এসে রুনির সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব ভাল ছেলে।
ওই দ্যাখো, বলছিলাম, আমার এখানকার রুনির কথা। সেটাতো আগে শেষ করি। লাঞ্চ আমি অফিসে করি। যখন একা থাকি ভাবি, আমি বাপির মত অফিসে খাই। তুমি বলতে না বাপি বাসায় আসতো না। আমিও তাই। বাপি কফি পছন্দ করতো আমিও দুপুরে কফি খাই। রাত ৯টা নাগাদ বাসায় ফিরি। অফিসে ল্যাপটপে বসে কাজ করি। বাসায় একা, তাই দেরী করে খাই। এটাও বাপির মত অভ্যাস হয়েছে, তুমি বলবে। তুমিতো নানা ধরনের রেসিপি জানো। তোমার আদরের সোনাবাবু রান্না করা শিখেছে। উপায় নেই। মাকে ডাকলেই পাওয়া যায় না। মা দেশে। টিভি দেখি খানিকক্ষণ। স্টাডি করতে হয় প্রচুর। উইক এন্ডে জিমে যাই। শপিং করি। তুমি বলতে না, মা, বাপি এক শার্ট বেশি দিন পরতেন না। বাপির মত আমারও একই পোশাক বেশি দিন পড়তে ভাল লাগে না। বাবার মত চুজি হয়েছি। সে দিন শপিং করতে গিয়ে তোমার জন্যে গ্রিন শাড়ী কিনেছি। মনে হয় তোমার পছন্দ হবে। তুমি তো গল্প করেছিলে, বাপি তোমাকে জীবনের প্রথম শাড়ি দিয়েছিলো এস কালারের উপর লাল ব্লক করা। তোমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো। বাইরে বেশি ক্ষন দেরি করি না। তুমি হয়তো ভাবছো রাত বিরাতে আমি ঘুরে বেড়াই। না মা, তা আমি করি না। আমার বন্ধুরা হেল্পফুল। ওরা আমাকে আগলে রাখে। ওরা জানে আমি তোমার আদরের ছেলে। এখন আর বলি না, এটা খাব না, ওটা খাবনা। সব বায়না ঘুঁচে গেছে। মা দুশ্চিন্তা করো না আমার জন্য। তোমার সব চিঠিতে, ভালো করে খাওয়া দাওয়া করবে, এটা লেখা থাকে। তোমার সব চিঠি পেয়েছি। ফোনে কথা বল, ইমেল করো। তাও কষ্ট করে চিঠি দাও কেন? পার বটেই মা। বাপি তোমার চিঠির উত্তর দিত না, বলতে। আমাকে এখন বলবে, তুই তো বাবার মত হয়েছিস। মা একটি কথা বল তো সত্যি করে, যে কথা তোমার সামনে বলতে পারিনি। বাবা কেন তোমাকে নিয়ে ঘর সংসার করলো না? বাবাকে কোন দিন দেখতে পেলাম না। মাঝে মাঝে মনটা কেঁদে উঠে বাবার জন্য। ছোট বেলা থেকে বাবাকে ঘৃণা করতে শেখাওনি। শুধু ভালবাসতে শিখিয়েছো। আবির প্রশ্ন করে তার মাকে, কেন মা? যে লোকটি মাত্র সাত আট মাস তোমার সাথে থেকেছে তার প্রতি এত ভালবাসা? কেন? আমি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারি না। আমার কথাগুলি তোমার কাছে খাপ ছাড়া লাগতে পারে। বাবা কেন দাদার কথা শুনলো? বাবা তো পাস করে ভাল চাকরি করতো। তিনিতো বেকার ছিলেন না। তুমি বল তোমার বয়সটা-ই বাধা। না তা-না। বাবা তোমাকে যদি এত ভালবাসতো তাহলে কেন ছেড়ে যাবে? বাবার ভালবাসায় খাদ ছিল। প্রেমের জন্য রাজা রাজ্য ছেড়ে দেয়, আর বাবা কিনা দাদার সম্পত্তির জন্য তোমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ে বিয়ে করলো? তোমার তো কত সম্পত্তি। জমি, বাড়ি, ঘর সব তো নানা তোমাকে দিয়ে গেছে। বাবার কি দরকার ছিল দাদার সম্পদের? মা তুমি যত কথাই বল, বাবা তোমাকে তোমার মত করে ভালবাসেনি। আমাকে সে এই পৃথিবীতে আসতে দিতে চায়নি। তুমি জেদ করে আমাকে এই পৃথিবীর আলো দেখালে। তুমি বিয়েও করলে না। এভাবে জীবন কাটালে আমার দিকে তাকিয়ে। তোমাকে কোনভাবে দুঃখ দেবার ইচ্ছা আমার নেই মা। তবে তোমার জীবনটা তোমারই। আমি হয়তো বিয়ে করবো। বউ নিয়ে চাকুরী স্থলে থাকবো। তখন তুমি আমার কাছে আসবে না। বললেই বলবে, না-রে বাবা যাব না। তোর বাবার স্মৃতি স্পর্শ পাই সব জায়গায় বাবা। এক কাজ করো। জীবন এভাবে চলে না। একজন সঙ্গির দরকার। তুমি বিয়ে করো আবার। মা আমি বলছি। তুমি ভাবছো হয়তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। না মা তোমার জীবনে এত কষ্ট আমি সইতে পারি না। তুমি শুধু বল একদিন অবশ্যই তোর বাবা আমার জীবনে ফিরে আসবে। এমন করে অনেক বছর পার করে দিলে। সেই ছাত্রী জীবন থেকে। পরিশেষে আল্লাহকে বলি, আল্লাহ যেন তোমার মনের আশা পূরণ করেন। তবু অনেক কথা বলে ফেললাম। আমার কথাগুলি যদি তোমাকে হার্ট করে থাকে, তাহলে মাফ করে দিও। আই লাভ ইউ ভেরি মাচ। আই মিস ইউ মা। ফোন করো কিন্তু। আমার টাকা যায় অনেক, ফোন দিলে। তুমি ফোন দিবে।
-তোমার আবির
অহনা ছেলের চিঠি পেয়ে ভীষণ কান্নাকাটি করে। মিলি, অহনার ভাইয়ের স্ত্রী, এসে বলে, আপু কি হয়েছে কাঁদছেন কেন? অহনা কোন জবাব দেয়না। কেঁদেই চলে, কেঁদেই চলে। এভাবে মন খারাপ থাকে ক'দিন। কলেজ বন্ধ। সময় একেবারে কাটে না। অহনা ভাবে ক'দিন ঘুরে আসি খুলনায় ফুপুর বাসা থেকে। সেখানে হয়তো ভাল কাটবে। রওনা হয়। খুলনায় বাস থেকে নেমে রিকসা নেবে তখন পিছন থেকে কে যেন ডাকছে, অহনা বলে। বুঝতে পারছে না। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, প্রবাল। অহনা থমকে যায়। দীর্ঘ ২৫ বছর পর দেখা। হঠাৎ এভাবে তার সাথে দেখা হবে, অহনা কল্পনাও করতে পারেনি। পিছন থেকে বার বার ডেকেই যায়, অহনা, অহনা বলে। ফিরে আর দেখে না। সোজা ফুফুর বাসা চলে আসে অহনা। প্রবাল পিছু নেয়। কেয়ারটেকার এসে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয় অহনার হাতে। সেখানে প্রবালের বাসার ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর লেখা।
পরদিন অহনা প্রবালকে ফোন করে। ফেলে আসা ২৪ বছরের ঘটনা অহনাকে বলে প্রবাল।
- জানো, জীবনে যে ভুল করেছি সেই মাশুল দিচ্ছি একা একা থেকে।
অহনা জিজ্ঞেস করে, কেন, সুইটি কোথায়?
- সে আমাকে ভুল বুঝে, আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তোমার একটা ছবি দেখে ফেলে, সেই থেকে ঝগড়া, অশান্তি। আমার মনের এত জ্বালা যন্ত্রনা সব গোপন রেখে সুইটিকে সুখি করতে চেষ্টা করেছি। আমার একমাত্র বংশধর তার খোঁজ নেইনি অশান্তি হবে বলে। আমি তো পাপি। তোমাকে কাপুরুষের মত ছেড়ে চলে গেছি। বাবা-ভাইয়ের কাছে তোমার আমার বয়সের ডিফারেন্ট কথা বলাতে তারা রাজি হয়নি। তাছাড়া কিছুই অভাব নেই। তুমি এতবড় কলেজে পড়াও সুন্দর বাড়ি ঘর সব আছে। আমার সোনার টুকরা ছেলেকে জীবনে দেখিনি। কালকে অবশ্যই তুমি আমার কোয়ার্টারে আসবে। তোমার সাথে আমার কথা আছে।

হারানো জিনিষ পেলে যেমন আনন্দ হয়। অহনার তখন তেমন অবস্থা। রাতে অহনার ঘুম নেই। প্রবালের একই অবস্থা হল। সকালে ঘুম থেকে উঠে এলো প্রবালের কোয়ার্টারে। প্রবালতো মহা খুশি। অহনাকে পেয়েছে। বিগত ২৪ বছরের যত জমানো কথা তারা প্রাণ খুলে বললো। অহনা প্রবালকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এতোদিনে কাছে পেল। স্বার্থক হলো অহনার ভালবাসা। ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে তার জয় হলো।
- স্বপ্নের গভীরে যখন আমার দখিনা হাওয়া, অহনা, তখন শুধু তোমার কথা মনে ফিরে ফিরে আসতো। তুমি চোখের আড়াল হলেও আমার মনের আড়াল হওনি। মনের গোপন গভীরে তোমার আসন পাতা ছিল। নীল আকাশের দিকে তাকালে তোমাকে দেখতে পাই। তুমি কত সুন্দর করে কথা বল। অহনা, ক'দিন আছ খুলনায়?
- আছি দশ বার দিন। কলেজ খুলে গেলে চলে যাব।
- আচ্ছা অহনা, একটা কথা বলতো। তুমি কেন জীবনে এত বড় সিদ্ধান্ত নিলে যে এভাবে জীবন কাটাবে? আমার ছেলেটা হলো আমাকে জানালেনা কেন?
- কেন জানাবো বল? তাকে তো তুমি এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখাতে চাওনি। বাচ্চা নিতে বার বার না করেছিলে।
- কেন বলেছিলাম, এই বাচ্চাটির জন্য অন্য কোথাও তোমার বিয়ে হতোনা তাই। আমি বিয়ে করে ঘর সংসার করছিলাম। তুমি জীবনটা এভাবে নষ্ট করলে।
- এটা আমার স্বার্থকতা সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছি। একটা সন্তানকে নিয়ে কিভাবে মা একা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করেছি। আমার ছেলে কার মত হয়েছে, জানো প্রবাল? একেবারে তোমার মত কপাল, ভুরু, চোখ, ঠোঁট সব তোমার। শুধু আমার মত লম্বা হয়েছে। গায়ের রং তোমার মত।
- আমার দেখতে মন চায় ছেলেকে।
- কেন পঁচিশ বছরে একবার খোঁজ নাওনি আমি ছেলেকে নিয়ে কেমন আছি।
- কে বলেছে খোঁজ নেইনি? সব সময় নিয়েছি তোমার বান্ধবী অর্পিতার কাছে। আমি ওকে কসম দিয়েছি, তুমি যেন টের না পাও।
- জানো প্রবাল, আজ এই মধুর লগ্নে ভাবতেই ভাল লাগছে তুমি আমার। একান্তই আমার। তুমি আমার রাজপুত্র।
- আর তুমি অহনা, আমার স্বর্গের রাজরানী তুমি। তুমি কত ভাল। এত কিছু ভাবছো কেন। তুমি একান্তই আমার।
এভাবে দু'জনের কেমন দিন চলে যায় ছুটি কাটিয়ে অহনা ফিরে আসে ঢাকায়। আর প্রবাল থেকে যায় খুলনায়। অহনা ভাবে প্রবাল এত চাপা আমাকে এত ভালবাসে অথচ একবার আমাকে জানালো না সে একা একা নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছে। তা আমার সাথে তার সংসার হলো না। হলো সুইটির সাথে। প্রবাল সব সময় মানিয়ে চলেছে। ধৈর্য্য পরীক্ষা দিয়েছে। সুইটি প্রবালকে একটু ও বোঝেনি। সন্দেহের আগুনে ছারখার করে দিয়েছে প্রবালের জীবন।

- একটি দিনের জন্য আমি সুখ পাইনি সুইটির কাছে। সারাক্ষণ তার ক্যারিয়ার, চাকুরী, বাবার বাড়ি এই করে কাটিয়েছে। জানো রাতিন? অহনা তার উল্টো। আমার কাছে তার চাওয়া কিছুই না। আমি কী পছন্দ করি? কখন কী খেলাম? সবসময় তার এসব চিন্তা। আমাকে ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিত অহনা। সেবা আর ভালবাসায় আমার জীবন ভরিয়ে রাখতো। অথচ আমি ওকে ঠকিয়েছি। একটু বয়স বেশী ছিল বলে ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি। ওকে নিয়ে ঘর করবো না। এই কারণে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিয়েছে। না থাকতে পেলাম সুইটির কাছে, না পারলাম অহনা কাছে।
- শোন, তুমি অহনা ভাবির কাছে ফিরে যাও।
- যার জন্য আমার প্রতিটি নিশ্বাস, যার জন্য আমার অনন্ত অপেক্ষা, যার জন্য সব কিছু তুচ্ছ আমার কাছে, তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
- সে কে?
- আমার ছেলে আবির। আমি যে অন্যায় করেছি, আমার ছেলে কি পারবে আমায় ক্ষমা করতে?
- অবশ্যই পারবে। অহনা ভাবি যদি ছেলেকে সে ভাবে তৈরী করে থাকে।
- আচ্ছা বন্ধু, তুমি এমন কেন করলে? প্রেমিকার জন্য মানুষ কত কি করে। কেউ বানায় তাজমহল। কেউ রাজ্য ত্যাগ করে। তুমি এই কাজ কেন করলে?
প্রবাল অহনাকে ফোন করে।
- তুমি কি আর একবার খুলনায় আসতে পার না?
অহনা বলে, তুমি এসো।
- বাসায় উঠবো না হোটেলে?
- কেন, বাসায় উঠবে। সেই আমাদের পুরোনো খাট আমি আজও সাজাই। সেদিন প্রথম তোমার সাথে চুপি চুপি ঘুমিয়ে ছিলাম। যদি লোকে কিছু বলে বলুক। তুমি আমার স্বামী। আমি জানি, এটাই যথেষ্ট। কারো ধার ধারি না।
প্রবাল আর থাকতে পারলো না অহনার কাছে ছুটে গেল। ভোর রাতে ট্রেন থেকে নেমে বাসায় গেল। গেট খুলে দাঁড়িয়ে আছে অহনা। লাল গোলাপ হাতে নিয়ে। ঘরে ঢুকে প্রবাল দেখে, বিছানায় লাল গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো। প্রবাল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অহনার দিকে। অহনা নিচু হয়ে প্রবালকে সালাম করে। প্রবাল বুকে জড়িয়ে ধরে অহনাকে। প্রবাল অহনার গাল ছুঁয়ে বলে, আমি কতটুকু ভালবাসি তোমায়, অহনা, জানো? মাটি থেকে আকাশ কিংবা সপ্তর্ষি মন্ডল ভেদ করে তারও ওপরে যতটুকু ভালবাসা আছে তার চেয়েও বেশি।
অহনা প্রবালের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। অহনা মাথাটা তুলে প্রবালের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, কি বলতে এসেছো আমায়, বলো। খুব অস্পষ্ট স্বরে প্রবাল বলে, হাত দাও। বলতেই এসেছি।
অহনা প্রবালের হাত চেপে ধরে।
- যে কথাটা বিগত ২৪ বছরে বলনি, আজ বলো আমি শুনবো।
- আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই। ভালবাসতে চাই। ঘর করতে চাই।
অহনা চুপ করে থাকে।
- কথা বলো, অহনা। আমি আর পারছি না এভাবে জীবন চালাতে। আমি বাঁচতে চাই। প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে চাই।
- ঠিক আছে। আমি মাহিনের সাথে কথা বলে দেখি।
একদিন মাহিনকে ডেকে সব কথা জানালো। প্রবাল তার জীবনে ফিরে আসতে চায়। মাহিন তো কথাটা শুনে মহা খুশি।
- বুবু, তোকে আমরা সুখি দেখতে চাই।
সব ভাইবোন মিলে পরিকল্পনা করে। বুবুকে আমরা নতুন ভাবে সাজাবো। নতুন জীবনের ঠিকানা দেব। এদিকে বাড়িতে সাজ সাজ পড়ে যায়। প্রবাল অহনাকে নিয়ে চলে যাবে বধু বেশে। অহনা তার ছেলেকে বিদেশে খবর দেয়।
- বাবা, তুই কবে আসবি আমার কাছে?
প্রবাল বিদায় নিয়ে যায়। ক'দিন পর আসবো। ছুটি নিতে হবে। নতুন জয়েন করেছি। নতুন কোম্পানি। প্রবাল গিয়ে আর আসতে পারে না। বস বলেন, এ মাসে ছুটি দেয়া যাবে না। বছরের শেষে এক মাস পর ছুটি নাও।
এদিকে অহনা পথ চেয়ে থাকে প্রবাল আসবে। কেঁদে কেঁদে একাকার হয়ে যায় অহনা। ভীষণ রাগ করে প্রবালের সাথে।
- তুমি আসবে বলে এত আয়োজন, আর তুমি এলে না।
- লক্ষিটি রাগ করো না। আমি আসবো এক মাস পর তোমার কাছে।

তারপর অহনা ঢাকা থেকে খুলনায় যায়। একটা বিশেষ দিন অহনার জীবনে ৯ জুলাই। প্রবালের সাথে সেদিন বিয়ে হয়। চুপি চুপি ওদের বাসর হয়। ফুলবিহীন বাসর। সে বাসরে অন্য রকম সুখ ছিল। আনন্দ ছিল। কী পরম পাওয়া। সেই স্মৃতি অহনা ভুলতে পারে না। খুলনায় খালার বাসায় এসে ফোন দেয় প্রবালকে।
- আমি আসছি ১ ঘন্টার মধ্য তোমার কোয়ার্টারে। আজ আমরা রিক্সায় ঘুরবো সন্ধ্যা পর্যন্ত।
প্রবাল অবাক হয়। অহনা পরির মতো সেজে এসছে। লাল রংয়ের শাড়ি পরেছে। দু'হাত ভর্তি কাচের চুড়ি। মেচিং টিপ। মুগ্ধ চোখে প্রবাল তাকিয়ে থাকে।
- আজকের দিনটা একটু অন্যরকম, তাই না? অহনা প্রবালের হাত নিজের কাছে টেনে নেয়।
- তুমি আমার পাশে বসেছো অন্যরকম ভঙ্গিতে। তুমি আজ ডান পাশে। স্বামী স্ত্রী রিক্সায় কে ডানে বা বামে বসে জানো?
মায়া ভরা চোখে অহনা চায় প্রবালের দিকে। লজ্জা পেয়ে যায় অহনা। প্রবাল আরো কাছ ঘেঁষে বসে।
- বলোতো, আজ কি জন্য বিশেষ দিন? তোমার জন্মদিন? ফাগুনের প্রথম দিন? আজ কি ভালোবাসা দিবস?
- প্রবাল, তুমি মনে করো, আজ কী দিন।
- না পারছি না। না, পারবো না।
- আচ্ছা প্রবাল, তুমি কি কোন কারণে বিরক্ত?
চমকে উঠে প্রবাল। অহনার দিকে তাকায়।
- সুইটি কি কোন ঝামেলা করছে?
- না, তেমন কিছুনা।
- প্রবাল, বলো তো মানুষের সীমাবদ্ধতা কী?
- মানুষ যা স্বপ্ন দেখে, তা পূরণ করতে পারে না।
- এই যেমন তুমি। বাবা বিয়ে দিলেন, কিন্তু ওকে নিয়ে ঘর হলো না। আর আমাকে চুপি চুপি বিয়ে করলে। তোমার চেয়ে আমি বয়সে বড় বলে, বাবা মাকে সাহস করে বললেনা।
- ধ্যাত, ওসব কথা বাদ দাও। আজ আমরা অন্যরকম কথা বলব।
প্রবাল আলতোভাবে অহনার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে, বলো না গো কেন এত সেজেছো?
- তুমি আমাকে গোলাপি পরি বলবে তাই?
অহনা প্রবালের হাত চেপে বলে, তুমি কি বুঝতে পার, আমি তোমাকে কত ভালবাসি?
- আমি জানি। প্রবাল হাসতে হাসতে বলে, তবে আমার চেয়ে বেশি নয়।
- ইস কি যে বলো, প্রবাল? আমি বেশি ভালবাসি। আজ অন্যরকম দিন।
বলো, আজ কি দিন। আজ আমাদের প্রথম দেখা, প্রথম পাওয়ার দিন।
রাত হয়ে আসে দু’জনের পথ দু'দিকে শেষ হয়। রিক্সা থেকে নেমে অহনা বলে, আমি ভোরেই ঢাকা চলে যাব। কলেজে সকালে ক্লাশ নিতে হবে।
- না গেলে হয় না?
- তুমি আমার কাছে গেলে না। আমি আসলাম তোমার কাছে। শধু অন্য রকম আজ, আমাদের বিবাহের দিন তাই। তুমিতো কিছু মনে রাখো না।

হঠাৎ দূর থেকে বাঁশির আওয়াজ আসছে। চারিদিকে তাকায় অহনা। দেখে রাস্তার ধারে কে যেন বাঁশি বাজায়। অদ্ভুত করুণ সে সুর। হৃদয় বিদীর্ণ করে ডাকে। এগিয়ে যাচ্ছে অহনার রিক্সা। করুণ সে বাঁশির সুর কানে ভেসে আসছে। কখন যে বাসার সামনে এসে পড়েছে বুঝতেই পারেনি, অহনা। দরজা খুলেই মামাতো বোন প্রিয়তি প্রশ্ন করে, এত দেরি করলে? আব্বু টেনশন করছিলো।
- একটু দেরি হয়ে গেল।
- কি, তোমার বর কি যাবে ঢাকায়, কি বললো?
- না-রে, যাবে না। আমি সকালেই যাব ঢাকায়। ৭ টায় বাস। দুপুর ২টায় একটা ক্লাস আছে।

অহনা বাসে উঠতে যাবে, তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রবাল। অহনা চমকে যায় প্রবালকে দেখে। কয়েক সেকেন্ড বোবার মত তাকিয়ে থাকে প্রবালের দিকে। কিছু বলতে পারে না। আস্তে আস্তে জলে ভরে গেল চোখ দুটো। পানি পড়ছে গাল বেয়ে। একটু এগিয়ে বলে, তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসছি। আমি সব কিছু ভুলে যাই। তোমার দেয়া গিফট খুলে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। এতগুলি বছর তুমি আমাকে আগলে রেখেছো? প্রতিবছরের বিবাহ বার্ষিকীকে তুমি এমন করে ধরে রেখেছো? ২৫ বছরে ২৫টি চিঠি, ২৫টি গিফট সেই শুকনো গোলাপ, যতন করে রেখেছো। সেগুলো তুমি আমার হাতে তুলে দিলে অহনা।
- নিজেকে নিজের ভিতর লুকিয়ে রেখেছি।
মাথা নিচু করে প্রবাল কথা গুলি বলেছিলো।
- সারারাত ভেবেছি কোন মুখে দাঁড়াবো, কি বলবো তোমাকে আমি। ক্ষমা করো আমাকে। চলো আমার বাসায়। যেতে দেব না।
- আমি তো বলেছি, ছেলের সাথে আমার কথা হয়নি। ওর সাথে কথা বলি তারপর। গাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে যায় মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে বলে অহনা। হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো।
গাড়ি চলে তার নিজ গতিতে এগিয়ে। প্রবাল দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে। ঢাকায় অহনা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অহনাকে ফোন দেয় প্রবাল। অহনা ফোনটা কেটে দেয়। রাতে অহনা কল ব্যাক করে। অনেক কষ্টের কথা শেয়ার করে প্রবালের সাথে। তারপর বলে, আচ্ছা বলোতো, জীবনের শেষ থাকে না কেন?
- বলতে পার - নিয়তি।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে অহনা বলে, অদ্ভুত নিয়তি। আচ্ছা বলোতো, তুমি কি আমাকে মনে রেখেছিলে?
প্রবাল একটু থমকে যায়। অহনা ম্লানভাবে হেসে বলে, তুমি আমায় মনে রেখেছিলে?
প্রবাল চুপ করে থাকে। অহনা বলে, ঘুমিয়ে গেলে নাকি, প্রবাল?
- না।
- আমি জানি তোমার ঘুম পেয়েছে। ঘুমিয়ে যাও সকালে উঠতে হবে। অফিস আছে। রাখি, জান। ভাল থেকো।
অহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রেখে দেয়।

বাবা আবির
আমার অনেক আদর নিস। অনেক দিন তোকে লিখি না আজ তোকে একটা গল্প নয়, সত্যি ঘটনা শুনাবো। শুনলে চমকে যাবি, বাবা। আমাকে নিয়ে তোর এত কষ্ট, এত চিন্তা। সব যন্ত্রণার অবসানের সময় এসছে। তুই আয়। এলেই সব কথা বলবো শুধু এটুকু বলবো। আমি বলেছিলাম না, তোর বাবা একদিন হলেও ফিরে আসবে। তোকে বারবার বলেছিলাম। তোর বাবা আমাকে আমার মত না ভালবাসলেও, আমি যা ভালবাসা দিয়েছি তাতে সেখান থেকে পালাতে পারেনি। ফিরে আসতে চায় আমার কাছে। তুই কি বলিস, বাবা? তুই চলে আয়। তোর বাবা তোকে দেখতে চায়। ভাল থাক, বাবা। আজ রাখি। পরে লিখবো।

প্রবাল,
কেমন আছ? ক'দিন ধরে তোমার সাথে কথা বলতে পারছিনা। ঘূর্ণিঝড়ে সব টাওয়ার ভেঙে যাওয়াতে মোবাইল নেটওয়ার্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন। তাই তোমাকে পাচ্ছি না। তুমিতো আমাকে তোমার অফিস থেকে ল্যান্ড ফোনে একটু ফোন করতে পারতে? আজ ও তুমি উদাসীন থেকে গেলে। আমি ছটফট করে মরছি। প্রবাল, আমার উচ্ছাস। ভালবাসার ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে ছিলাম। দীর্ঘ ২৫টি বছর পর সেগুলি খরচ করছি। এই ২৫ বছর একাউন্টটা তোমার নামে যতন করে রেখেছি। এখন তুমি বলে দিবে। কিভাবে খরচ করবো। সব সীমানা ডিঙ্গিয়ে আমি আর তুমি অনেক কাছে এসেছি। ডিঙ্গিটা কুলে ভিড়েছে। তবে আমরা নামবো না। এই ছোট্ট ডিঙ্গির ওপর বসেই আমাদের পরম প্রশান্তি সব হিসেব-নিকেশ। আর প্রশান্তির ভাগ আমরা দুজন ছাড়া কাউকে দেব না। তুমি কি বল? প্রবাল। তোমার টোল পড়া হাসি আমার হৃদয়ে লাগে। তোমাকে নিয়ে আমি সারাক্ষণ ভাবতে থাকি। তোমার মুখ, তোমার হাসি, তোমার শরীর স্পষ্ট দেখতে পাই আমি। আমার ভাবনার ফেলে আসা জ্বলন্ত মুহূর্তের কথা। প্রথম খাবার টেবিলে বসে, একসাথে খেতে বসে আমরা খেতে পারিনি। শুধু তোমাকে দেখেছি। যখন এগিয়ে দিতে গেলাম, সেই জায়গায় তোমার পাগলামো। আমার মনের আশেপাশে ঘুরপাক খায়। সেকথা ভেবেও কষ্ট পাই। দারুণ স্মৃতি হাতড়িয়ে মানুষ যেমন সুখ পায় আমার কিন্তু বড্ড কষ্ট হয়। কান্না পায়। আজ তোমার ছায়াগুলি আমার কাছে কেবলই স্মৃতি। ছিটকে বেরিয়ে আসতে চায়। প্রচণ্ড মান অভিমান নিয়ে। কিন্তু উপায় নেই। কর্তব্যের খাতিরে আজ আমি অনেক দূরে তোমাকে রেখেছি। ভাল লাগে না। ভাল থেকো খুব সুন্দর হোক তোমার জীবন। চিঠির উত্তর যদি না দাও, তাহলে আমি আর লিখবো না। এটাই শেষ চিঠি।
-ইতি
তোমার লক্ষি

তোমার চিঠি পড়ে আর না লিখে থাকতে পারলাম না। এতদিন আমার শুকনা মনের মধ্যে একটা অস্থির ভাব অপেক্ষা করছিল। সময় চলে যাচ্ছিলো। সব আশা ভরসা নুইয়ে যাচ্ছিল। আমার প্রত্যাশিত মনের কাছে অপেক্ষার গুরুভারে বুকের ভিতরটা টনটন করছিলো। আমি যেন অসহায়। আমার শূন্যতা পূরণ হবার নয়। জানতাম, যে পূর্ণতা আমি চাই, তা কোন দিন পাবো না। পেতে পারি না। বড় বেসামাল, বড় বেসুরো মনে হয়ে ছিল নিজেকে। ভাল করে বাঁচার নেশায় হঠাৎ আমি পাগল হয়ে উঠলাম। কতকাল ধরে নিজেকে অবহেলা করেছি। দেহ মনের প্রতি অবিচার আর অত্যাচার করেছি বছরের পর বছর। সব কিছু গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। ওলট-পালট হয়েছিল জীবনের সব হিসেব-নিকেশ। ভেবে ছিলাম স্রোতে ভাসিয়ে দেবো আমার স্বত্ত্বাকে। এতদিন কিভাবে বেঁচেছিলাম জানি না। লক্ষি আমার অহনা, কিভাবে এক এক করে কঠিন অন্ধকার রাতগুলি কাটিয়েছি। না মরিনি। মরতে চেয়েছি। মৃত্যু হলেই তো পরাজয় হবে। না মরে, ভালই হয়েছে। তা-না হলে তুমি, অহনা মনি, আজও আমায় এত ভালবাস, কেমন করে তোমায় পেতাম? সুইটি আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিল। তুমি আমায় ক্ষমা করেছো এটাই বড় পাওয়া।। জান আমার, কবুতর আমার। আমাদের শুরু হলো যুগল চলন। লাল লাল টকটকে গোলাপের মালা আমায় পরিয়ে দিবে। আমি তোমায় দেখবো।
হে সমাজ, আমাকে ধিক্কার দিস না। আমি আমার অহনা মনিকে ছেড়ে গিয়েছি বলে। হে সমাজ, একটু চুপ কর। একটু খানি ভালবাসতে দে আমায়। জীবনে কোন হিসাব মেলাতে পারিনি। আমার জীবনের সোনা মনিকে কোন আসনে বসাবো আমি? আমার সোনা মনিকে হীরের আসনে বসালেও ওকে অনেক ছোট করা হবে। তার কারণ হীরে, চুনি, পান্না, মুক্তা থেকেও আমার সোনা বৌ, সোনা মনি আমার কাছে তুমি অনেক বেশি মূল্যবান। তুমি আমার মুকুটহীন রানী। তুমি আমার ট্রয়ের রানী। শুধু মনে হয়, ২৫ বছর আগে সেই ডাক বাংলোয় একাকী শুয়ে আছি। কুট করে একটু আওয়াজ। দরজা খুলেই মুহূর্তে মেঘদূত জমিয়ে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×