somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুরত্ব অথবা বাস্তবতা:((/:)

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তানিশা .........২৩ বছরের তরুণী,পড়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে,আর আজ শিক্ষা জীবনের শেষ দিন।অর্থাৎ আজ তাদের সমাবর্তন।কালো গাউন আর মাথায় হেট পড়ে অন্য সবার সাথে হলরুমে দাডিয়ে আছে সে, পাশে তার হবু স্বামী রাহাত,যে কিনা সদ্য বিলেত থেকে উকিলাতি পাশ করে এসেছে।তানিশার ডান হাতের কনিষ্ট আঙ্গুল রাহাতের হাতে ধরা।সবাই দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইছে আর তানিশার চোখে বিন্দু বিন্দু জলের সঞ্চারণ হচ্ছে।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, তার পাশে আজ অন্য আরকজনের থাকার কথা ছিল। হ্যাঁ... অতীতের সব স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আজ তার বৃষ্টিতে ভিজতে বড় বেশি ইচ্ছা করতেছে; যদিও বৃষ্টি তার মোটেও পছন্দ নয়।
ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন। তানিশার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। সদ্য কৈশোর জীবন পেরিয়ে এসেছে। প্রথম দিন সবাই সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে আসে।তানিশার সামনে সব নতুন মুখ, তার পরিচিত কেউ এই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় নি।সকাল ১০ টায় ক্লাস শুরু হয়,তানিশার পাশে বসে লম্বা পাতলা একটি মেয়ে। পরে জানতে পারে তার নাম শিরিন। প্রথম কথাতেই শিরিনের সাথে তানিশার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।তারপর গল্পের শুরু....জীবনের গল্প। শিরিন নাকি সিনিয়র একজন সাথে প্রেম করে।শিরিনের প্রেমের গল্প শুনতে শুনতে তানিশারও জগতটা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে।দেখতে সুন্দর তানিশা অবশ্য স্কুল কলেজ জীবনে অনেক প্রপোজ পেয়েছে কিন্তু এইসব ব্যাপারে তখন মোটেও আগ্রহ ছিল না। প্রকৃতির আশ্চর্য হেয়ালিতে ঐ দিনই তানিশার সাথে পরিচয় হয় তানিমের। পরিচয় পর্বটা অবশ্য অদ্ভুতই বলা যায়। তানিমও ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। ক্লাস শেষ করে দুজন গেটের সামনে দাঁড়ায় রিকসার জন্য। আকাশে তখন প্রচুর মেঘ। বৃষ্টিও পড়তে শুরু করেছে। অনেকক্ষণ পর একটা রিকসা আসলে দুজনই ডাক দেয়। কিন্তু একজন রিকশাওয়ালার পক্ষে দুজনের ডাকে সাড়া দেয়া সম্ভব না। রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে জেনে নেয় দুজনের বাসা একই দিকে,তাই সে দুজনকেই রিকসাই উঠার জন্য বলে।একদিকে বৃষ্টি আর অন্য দিকে অপরিচিত একজনের সাথে একই রিকসায় যাওয়া......দুজনই বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।তাদের চিন্তায় ছেদ পড়ে মেঘের গর্জন শুনে। অবশেষে দুজনই রিকসায় উঠে। ঐ রিকশাতেই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব তারপর প্রেম।একজন আরেকজনকে পাগলের মত ভালবাসে। তাদের ভালবাসা গভীর হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এদের মধ্যে প্রচুর মিল আছে...দুজনের নামের প্রথম অক্ষর “ত” দিয়ে শুরু,দুজনই লেখে বাম হাতে,সাধারনত প্রেমিক-প্রেমিকারা বৃষ্টি ভালবাসলেও এরা ভালবাসে শীত।
দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরীতে যাওয়া। রাস্তার পাশে দাডিয়ে ফুসকা খাওয়া। অথবা ছুটির দিন গুলোতে নগর থেকে দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়া। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে। দুজনে বেশ ভালো পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ করে তারা নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তানিমের বাড়ি নওগাঁ আর তানিশার চট্রগ্রাম।ব ন্ধের এক মাস তারা মোবাইলে যোগাযোগ রাখে। এক মাস পর ইউনিভার্সিটি খুললে তারা ঢাকায় চলে আসে।পরীক্ষায় বেশ ভালো ভাবে পাশ করে। নতুন ক্লাস শুরু হলে আবার পড়ালেখা শুরু। দুজন স্বপ্ন দেখে একসাথে সারা জীবন থাকবে আর গ্রামের নিরক্ষর মানুষদের জন্য কিছু করবে।এভাবেই কাটছিল তাদের সোনালী দিনগুলো।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে যায়। দুজন এখন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ করেছে। ক্লাসের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এ বন্ধে কেউ বাড়ি না গিয়ে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসবে। সবার আগে যে নামটি আসল তা হল কক্সবাজার। তানিম যেতে রাজি ছিল না, কারণ হিসেবে সে জানিয়েছিল- তার মা তার পথ চেয়ে বসে আসে। পরে তানিশার পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়। তানিশার চিন্তা কক্সবাজার থেকে ফেরার সময় আরো কয়েকজন বন্ধুসহ তানিমকে তার চট্রগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
নির্দিষ্ট দিন সবাই ইউনিভার্সিটির সামনে হাজির হয়। সবার হাতে বা কাঁধে ব্যাগ আর পরনে রংবেরঙের পোশাক। আজ তানিশা কালো শাড়ি পডেছে আর তানিম নীল টি শার্ট। সকাল ৮ টায় যাত্রা শুরু হয়, আর কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০টা বাজবে। তানিম আর তানিশা পাশাপাশি সিটে বসে। বাসের মাইকে বাজতে থাকে গান। সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করতে করতে অনেকটা সমই পার হয়ে যায়। অন্য অনেকের মত তানিমও নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখে পুরো বাস। তানিশা তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, তার চোখে এখন ভবিষ্যতের চিন্তা। হাজারো এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে.........একটা ছোট সংসার থাকবে তাদের। ছেলে হলে নাম রাখবে সাম্য আর মেয়ে হলে স্বাগতা। তানিশার চিন্তায় ছেদ পড়ে তানিমের ডাকে। তানিশা তার স্বপ্নের কথা তানিমকে বলে। তানিম এবার তার স্বপ্নের কথা জানায়,পড়ালেখা শেষ করে দুজন চলে যাবে গ্রামে ঐখানে গ্রামের অবহেলিত মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তার।
বাস চলছেই...পথের দুপাশের দৃশ্য দেখে সবাই মুগ্ধ। এই পথ অবশ্য তানিশার বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত। আড্ডা গান গল্প গুজব চলছেই। দুপুর ১২:৩০টায় কুমিল্লা এসে বাস থামে। হোটেলে নেমে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। আধ ঘন্টা বিরতির পর বাস আবার চলতে শুরু করে। প্রথমে তানিমের আগ্রহ না থাকলেও যতই সময় যাচ্ছে তার আগ্রহটা বাড়ছে। বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত দেখবে ভাবতেই ভাল লাগছে। বিকাল ৫টা বাস চট্রগ্রামে। গন্তব্যে যেতে আর মাত্র ৩ ঘন্টা লাগবে। এতক্ষন চুপচাপ থাকা বাস আবার সরগরম হয়ে উঠে। সামনের সিটের কয়েকজন বেশ উচ্চ স্বরে গান গাচ্ছে।
রাত ৯টা বাস কক্সবাজারের কাছাকাছি চকরিয়া নামক স্থানে। ক্লান্তিতে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তানিশা বাইরে তাকিয়ে আছে আর তানিম তার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্লান্তিতে তানিশার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
বাস চলছে, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে তানিশার ঘুম ভেঙে যায়। চারদিকে অন্ধকার আর অনেকের গোঙানির শব্দ। তার সারা শরীরেও প্রচুর ব্যাথা। কিছুক্ষন পর সে বুঝতে পারে তাদের বাস এক্সিডেন্ট করেছে। রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাস উল্টে গেছে।তানিমের কথা মনে হতেই সে পাশ ফিরে দেখে তানিম অজ্ঞান হয়ে আছে আর তার শরীরে রক্ত। এই দৃশ্য দেখে সেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরদিন সকালে তানিশা নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে। জ্ঞান ফিরলে সে তানিমের কথা জানতে চায়। নার্স জানায় উন্নতর চিকিৎসার জন্য ৩ জন কে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদের অবস্তা খুব খারাপ। তানিশা পরে জানতে তানিম এদের মধ্যে একজন। ঐ দিন রাতের ট্রেনে ঢাকায় চলে যায় তানিশা। ঢাকায় ফিরে স্টেশন থেকেই হাসপাতালে চলে যায় সে। ঐখানে শুনতে পায় তার জীবনের নির্মম দুঃসংবাদ,তানিম নাকি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।আর কোন দিন তার পাশে দাড়াতে পারবে না। তানিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। দুজনই এত পাশাপাশি ছিল অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তার কিছু না হলেও তানিমের জীবনে হয়ে গেছে তছনছ।
এরপর সব কিছু দ্রুত ঘটতে থাকে। তানিম কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি চলে যায়। প্রথম দিকে একে অপরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করত। সময় গড়িয়ে যায়। তানিম সিদ্ধান্ত নেয় সে তানিশার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। তানিম চায় তানিশার অনেক বড় পরিবারে বিয়ে হবে,যেন সে সুখে থাকে। তানিশা অনেক কষ্ট করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। একটি স্বর্গীয় সম্পর্ক ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। দিনের পর দিন কাটতে থাকে কিন্তু একজনের সাথে অন্য জনের কোন যোগাযোগ হয় না। দুরত্ব বাড়তে থাকে।
১০ মাস পর.........তানিশা পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়। তার অ্যাংগেজমেন্ট হয় রাহাতের সাথে। অন্য দিকে জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক তানিম তার জীবনের দুঃখের দিন গুলো পার করছে। নীরবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে রাত ভোর হয়ে যায়। মাঝেমধ্য রাতে তানিম স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে। তার পাশে তো তানিশার থাকার কথা! এক্কেবারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তানিম স্বপ্ন দেখে সে আর তানিশা একটি প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার। তানিশা জোরে জোরে বাচ্চাদের পড়াচ্ছে............অ আ ক খ।
তানিশার চিন্তায় ছেদ পড়ে রাহাতের ডাকে। তানিশার চোখে অশ্রুধারা। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে মিশে যাচ্ছে তানিশার অশ্রু। অনেক দূরে তানিম চেয়ে থাকে আকাশের পানে। যেখানে মেঘেরা খেলা করে অবিরাম। হঠাৎ হঠাৎ প্রবল বজ্রপাত। আজ তার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রচণ্ড ভাবে। যদিও সে বৃষ্টিকে পছন্দ করে না
তানিশা .........২৩ বছরের তরুণী,পড়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে,আর আজ শিক্ষা জীবনের শেষ দিন।অর্থাৎ আজ তাদের সমাবর্তন।কালো গাউন আর মাথায় হেট পড়ে অন্য সবার সাথে হলরুমে দাডিয়ে আছে সে, পাশে তার হবু স্বামী রাহাত,যে কিনা সদ্য বিলেত থেকে উকিলাতি পাশ করে এসেছে।তানিশার ডান হাতের কনিষ্ট আঙ্গুল রাহাতের হাতে ধরা।সবাই দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইছে আর তানিশার চোখে বিন্দু বিন্দু জলের সঞ্চারণ হচ্ছে।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, তার পাশে আজ অন্য আরকজনের থাকার কথা ছিল। হ্যাঁ... অতীতের সব স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আজ তার বৃষ্টিতে ভিজতে বড় বেশি ইচ্ছা করতেছে; যদিও বৃষ্টি তার মোটেও পছন্দ নয়।
ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন। তানিশার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। সদ্য কৈশোর জীবন পেরিয়ে এসেছে। প্রথম দিন সবাই সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে আসে।তানিশার সামনে সব নতুন মুখ, তার পরিচিত কেউ এই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় নি।সকাল ১০ টায় ক্লাস শুরু হয়,তানিশার পাশে বসে লম্বা পাতলা একটি মেয়ে। পরে জানতে পারে তার নাম শিরিন। প্রথম কথাতেই শিরিনের সাথে তানিশার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।তারপর গল্পের শুরু....জীবনের গল্প। শিরিন নাকি সিনিয়র একজন সাথে প্রেম করে।শিরিনের প্রেমের গল্প শুনতে শুনতে তানিশারও জগতটা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে।দেখতে সুন্দর তানিশা অবশ্য স্কুল কলেজ জীবনে অনেক প্রপোজ পেয়েছে কিন্তু এইসব ব্যাপারে তখন মোটেও আগ্রহ ছিল না। প্রকৃতির আশ্চর্য হেয়ালিতে ঐ দিনই তানিশার সাথে পরিচয় হয় তানিমের। পরিচয় পর্বটা অবশ্য অদ্ভুতই বলা যায়। তানিমও ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। ক্লাস শেষ করে দুজন গেটের সামনে দাঁড়ায় রিকসার জন্য। আকাশে তখন প্রচুর মেঘ। বৃষ্টিও পড়তে শুরু করেছে। অনেকক্ষণ পর একটা রিকসা আসলে দুজনই ডাক দেয়। কিন্তু একজন রিকশাওয়ালার পক্ষে দুজনের ডাকে সাড়া দেয়া সম্ভব না। রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে জেনে নেয় দুজনের বাসা একই দিকে,তাই সে দুজনকেই রিকসাই উঠার জন্য বলে।একদিকে বৃষ্টি আর অন্য দিকে অপরিচিত একজনের সাথে একই রিকসায় যাওয়া......দুজনই বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।তাদের চিন্তায় ছেদ পড়ে মেঘের গর্জন শুনে। অবশেষে দুজনই রিকসায় উঠে। ঐ রিকশাতেই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব তারপর প্রেম।একজন আরেকজনকে পাগলের মত ভালবাসে। তাদের ভালবাসা গভীর হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এদের মধ্যে প্রচুর মিল আছে...দুজনের নামের প্রথম অক্ষর “ত” দিয়ে শুরু,দুজনই লেখে বাম হাতে,সাধারনত প্রেমিক-প্রেমিকারা বৃষ্টি ভালবাসলেও এরা ভালবাসে শীত।
দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরীতে যাওয়া। রাস্তার পাশে দাডিয়ে ফুসকা খাওয়া। অথবা ছুটির দিন গুলোতে নগর থেকে দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়া। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে। দুজনে বেশ ভালো পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ করে তারা নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তানিমের বাড়ি নওগাঁ আর তানিশার চট্রগ্রাম।ব ন্ধের এক মাস তারা মোবাইলে যোগাযোগ রাখে। এক মাস পর ইউনিভার্সিটি খুললে তারা ঢাকায় চলে আসে।পরীক্ষায় বেশ ভালো ভাবে পাশ করে। নতুন ক্লাস শুরু হলে আবার পড়ালেখা শুরু। দুজন স্বপ্ন দেখে একসাথে সারা জীবন থাকবে আর গ্রামের নিরক্ষর মানুষদের জন্য কিছু করবে।এভাবেই কাটছিল তাদের সোনালী দিনগুলো।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে যায়। দুজন এখন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ করেছে। ক্লাসের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এ বন্ধে কেউ বাড়ি না গিয়ে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসবে। সবার আগে যে নামটি আসল তা হল কক্সবাজার। তানিম যেতে রাজি ছিল না, কারণ হিসেবে সে জানিয়েছিল- তার মা তার পথ চেয়ে বসে আসে। পরে তানিশার পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়। তানিশার চিন্তা কক্সবাজার থেকে ফেরার সময় আরো কয়েকজন বন্ধুসহ তানিমকে তার চট্রগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
নির্দিষ্ট দিন সবাই ইউনিভার্সিটির সামনে হাজির হয়। সবার হাতে বা কাঁধে ব্যাগ আর পরনে রংবেরঙের পোশাক। আজ তানিশা কালো শাড়ি পডেছে আর তানিম নীল টি শার্ট। সকাল ৮ টায় যাত্রা শুরু হয়, আর কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০টা বাজবে। তানিম আর তানিশা পাশাপাশি সিটে বসে। বাসের মাইকে বাজতে থাকে গান। সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করতে করতে অনেকটা সমই পার হয়ে যায়। অন্য অনেকের মত তানিমও নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখে পুরো বাস। তানিশা তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, তার চোখে এখন ভবিষ্যতের চিন্তা। হাজারো এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে.........একটা ছোট সংসার থাকবে তাদের। ছেলে হলে নাম রাখবে সাম্য আর মেয়ে হলে স্বাগতা। তানিশার চিন্তায় ছেদ পড়ে তানিমের ডাকে। তানিশা তার স্বপ্নের কথা তানিমকে বলে। তানিম এবার তার স্বপ্নের কথা জানায়,পড়ালেখা শেষ করে দুজন চলে যাবে গ্রামে ঐখানে গ্রামের অবহেলিত মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তার।
বাস চলছেই...পথের দুপাশের দৃশ্য দেখে সবাই মুগ্ধ। এই পথ অবশ্য তানিশার বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত। আড্ডা গান গল্প গুজব চলছেই। দুপুর ১২:৩০টায় কুমিল্লা এসে বাস থামে। হোটেলে নেমে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। আধ ঘন্টা বিরতির পর বাস আবার চলতে শুরু করে। প্রথমে তানিমের আগ্রহ না থাকলেও যতই সময় যাচ্ছে তার আগ্রহটা বাড়ছে। বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত দেখবে ভাবতেই ভাল লাগছে। বিকাল ৫টা বাস চট্রগ্রামে। গন্তব্যে যেতে আর মাত্র ৩ ঘন্টা লাগবে। এতক্ষন চুপচাপ থাকা বাস আবার সরগরম হয়ে উঠে। সামনের সিটের কয়েকজন বেশ উচ্চ স্বরে গান গাচ্ছে।
রাত ৯টা বাস কক্সবাজারের কাছাকাছি চকরিয়া নামক স্থানে। ক্লান্তিতে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তানিশা বাইরে তাকিয়ে আছে আর তানিম তার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্লান্তিতে তানিশার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
বাস চলছে, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে তানিশার ঘুম ভেঙে যায়। চারদিকে অন্ধকার আর অনেকের গোঙানির শব্দ। তার সারা শরীরেও প্রচুর ব্যাথা। কিছুক্ষন পর সে বুঝতে পারে তাদের বাস এক্সিডেন্ট করেছে। রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাস উল্টে গেছে।তানিমের কথা মনে হতেই সে পাশ ফিরে দেখে তানিম অজ্ঞান হয়ে আছে আর তার শরীরে রক্ত। এই দৃশ্য দেখে সেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরদিন সকালে তানিশা নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে। জ্ঞান ফিরলে সে তানিমের কথা জানতে চায়। নার্স জানায় উন্নতর চিকিৎসার জন্য ৩ জন কে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদের অবস্তা খুব খারাপ। তানিশা পরে জানতে তানিম এদের মধ্যে একজন। ঐ দিন রাতের ট্রেনে ঢাকায় চলে যায় তানিশা। ঢাকায় ফিরে স্টেশন থেকেই হাসপাতালে চলে যায় সে। ঐখানে শুনতে পায় তার জীবনের নির্মম দুঃসংবাদ,তানিম নাকি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।আর কোন দিন তার পাশে দাড়াতে পারবে না। তানিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। দুজনই এত পাশাপাশি ছিল অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তার কিছু না হলেও তানিমের জীবনে হয়ে গেছে তছনছ।
এরপর সব কিছু দ্রুত ঘটতে থাকে। তানিম কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি চলে যায়। প্রথম দিকে একে অপরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করত। সময় গড়িয়ে যায়। তানিম সিদ্ধান্ত নেয় সে তানিশার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। তানিম চায় তানিশার অনেক বড় পরিবারে বিয়ে হবে,যেন সে সুখে থাকে। তানিশা অনেক কষ্ট করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। একটি স্বর্গীয় সম্পর্ক ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। দিনের পর দিন কাটতে থাকে কিন্তু একজনের সাথে অন্য জনের কোন যোগাযোগ হয় না। দুরত্ব বাড়তে থাকে।
১০ মাস পর.........তানিশা পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়। তার অ্যাংগেজমেন্ট হয় রাহাতের সাথে। অন্য দিকে জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক তানিম তার জীবনের দুঃখের দিন গুলো পার করছে। নীরবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে রাত ভোর হয়ে যায়। মাঝেমধ্য রাতে তানিম স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে। তার পাশে তো তানিশার থাকার কথা! এক্কেবারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তানিম স্বপ্ন দেখে সে আর তানিশা একটি প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার। তানিশা জোরে জোরে বাচ্চাদের পড়াচ্ছে............অ আ ক খ।
তানিশার চিন্তায় ছেদ পড়ে রাহাতের ডাকে। তানিশার চোখে অশ্রুধারা। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে মিশে যাচ্ছে তানিশার অশ্রু। অনেক দূরে তানিম চেয়ে থাকে আকাশের পানে। যেখানে মেঘেরা খেলা করে অবিরাম। হঠাৎ হঠাৎ প্রবল বজ্রপাত। আজ তার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রচণ্ড ভাবে। যদিও সে বৃষ্টিকে পছন্দ করে না
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×