somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লাবে বসে চাইনিজ খেলে সংস্কৃতি নষ্ট হয় না, শুধু লুঙ্গী পরতে না পারলেই সংস্কৃতি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়??

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুঙ্গি শব্দটা বার্মিজ হলেও এর ব্যাবহার শুরু হয়েছে দক্ষিণ ভারতে বর্তমানে তামিলনাডুতে। উইকিতে লুঙ্গির সম্পর্কে যা লেখা আছে...

ভেস্তি নামক এক ধরনের পোষাককে লুঙ্গির পূর্বসূরী বলে মনে করা হয়। ইতিহাসে উল্লেখিত আছে মসলিন কাপরের ভেস্তি পোষাক তামিল থেকে ব্যবিলনে রপ্তানী হত। ব্যবিলনের প্রত্নতাত্বিক নিবন্ধে 'সিন্ধু' শব্দ খুজে পাওয়া যায়। তামিল ভাষায় সিন্ধু অর্থ কাপড় বা পোষাক। 'বারাদাভারগাল' নামের তামিলনাডুর জেলে সম্প্রদায় পশ্চিম আফ্রিকা, ইজিপ্ট বা মিশর এবং মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে লুঙ্গি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সময়ের সাথে, সাদা কাপড়ে ফুল এবং অন্যান্য নকশা চিত্রিত হয়ে পরবর্তীতে লুঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে লুঙ্গি বার্মা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গুলোয় এটি বেশি জনপ্রিয়।


লুঙ্গি শব্দটি বর্মিতে လိုဈည္, রোমক হরফে longyi, উচ্চারণ /lòuɲdʒì/। বাংলার উচ্চারণ থেকে একটু আলাদা, তবে স্বগোত্রীয বলে চেনা যায়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসে শব্দটি বর্মি, তবে অভিধানটিতে ব্যুৎপত্তির জায়গায় সাথে ফারসি লুঙ্গি শব্দটি দেওয়া আছে । হিন্দিতে लुंगी, আর উর্দুতে لنگى। শব্দটি ফারসিতেও পাওয়া যায়, لنگی হিসেবেই।

==========================================

পোষাক হিসেবে বাংলায় লুঙ্গির আগমন প্রায় ৫৫০/ ৬০০ বছর আগে (এই তথ্যটা পুরোপুরি নিশ্চিত না)। ব্যবহারের সুবিধার জন্য সহজেই লুঙ্গী শুধু বাংলা নয় ভারতের পূর্বাঞ্চল, নেপাল, ভুটান, বার্মা, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রিটিশরাএই উপমহাদেশের জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতিতে একটা র‌্যাডিক্যাল পরিবর্তন আসে। লুঙ্গীর পরিবর্তে শার্ট প্যান্ট হয়ে ওঠে প্রসাশনিক পোশাক। ব্রিটিশরা জোরজবরদস্তি করে শার্ট প্যান্ট আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা সেরকম নয়, প্রসাশনিক কাজে এটি সুবিধাজনক বলেই এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।

আর এই শতাব্দীতে এটিকে বাঙালির পোষাক বলতে কোন অসুবিধা দেখি না। একটা অফিসের পিয়ন থেকে এমডি কেউই কিন্তু অফিসে লুঙ্গী পরে না। আজ যারা লুঙ্গি প্রেমে কাতর তারাও কিন্তু বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লুঙ্গি ছেড়ে শার্ট-প্যান্ট ই পরে রেব হন। এমন কি পয়লা বৈশাখেও কাউকে লুঙ্গি পরে বের হতে দেখি না।

ব্যাপারটা ঠিক এবারের ইত্যাদিতে দেখানো নানী-নাতীর কৌতুকটার মত,

নাতী বাজার থেকে ফার্মের মুরগি নিয়ে এসেছে।

নানী বলেঃ জানস না,আমি বিদেশী মুরগি খাই না।
নাতিঃ এইডি তো বিদেশী না... এডির জন্ম এই দ্যাশে, এই দ্যাশের খানা-পিনা খাইয়াই বড় হইসে।
নানীঃ তাও এডি বিদেশী।
নাতিঃ আইচ্চা কওতো মার্কেটে গিয়া জামা কাপড় সবই তো বিদেশী খুজ, শুধু মুরগির বেলায় দেশী না হইলে মাথা গরম হইয়া যায়, আমাগো দ্যাশ-প্রেম কি শুধু এহন মুরগীর উপরে গিয়া পড়ছে??


এরকমই গতকাল থেকে অনেকের পোস্ট পড়ে মনে হল আমাদের বাঙালীত্ব যেন দাড়িয়ে আছে শুধু লুঙ্গির উপরে। যাহোক, আজকের লুঙ্গি বিতর্কের মুলে আছে ফরহাদ মজহার ও ঢাকা ক্লাব।

ফরহাদ মজহারঢাকা ক্লাব দুটোই বিতর্কিত জিনিস। ফরহাদ মজহার কে নিয়ে বিতর্কে যাচ্ছি না, তাকে নিয়ে অনেক পোস্ট এই ব্লগে আছে। ঢাকা ক্লাব নিয়ে একটা ঘটনা পড়েছিলাম। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ যখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে ছিল তখন প্রায়ই ঢাকা ক্লাবে সন্ধায় পার্টি হত, আর শত শত মানুষ ক্লাবের পাশের ডাস্টবিনে অপেক্ষা করত পার্টি কখন শেষ হবে। কারণ পার্টি শেষ হলে খাবার দাবারের উচ্ছিট্টগুলো ফেলে দেয়া হত ডাস্টবিনে।

সমস্যা হল, ঢাকা ক্লাবের চরিত্র সবারই জানা। তা সত্বেও মজহার ভদ্রলোক ঢাকা ক্লাবে যেতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। এবং বিভিন্ন লেখা থেকে জানলাম রেডিসন, শেরাটন, সোনার গা, সবখানেই ঊনার লুঙ্গী পরে ব্যাপক রকম যাতায়ত আছে। তবে ওসব প্রোগ্রামে উনি নিশ্চইয় ডাল-ভাত কিম্বা আলু ভর্তা নাই কেন এই অভিযোগে না খেয়ে থাকেন না। বরং বিদেশী খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

শেরাটন, সোনার গা কিম্বা ঢাকা ক্লাবেই অর্ধ নগ্ন ফ্যাশন শো নিয়মিতই হচ্ছে। সংস্কৃতি ধংসের অভিযোগে কোন মানব বন্ধন দেখা যায় না। বরং মানব বন্ধন দেখা যায় লুঙ্গির জন্য। যেন লুঙ্গি বাঙালী জাতীয়তাবাদের এক বিমূর্ত প্রতীক... লুঙ্গির ব্যাপারে কোন আপোস চলবে না...

বাঙালিত্ব জাহির করার জন্য যারা লুঙ্গি নিয়ে এত মাতামাতি করছেন, একদিন লুঙ্গি পরে অফিসে যান, দেখেনতো পরের দিন চাকরী থাকে কিনা? রোমে গেলে রোমান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সবথেকে মজার ব্যাপার লুঙ্গির জন্য আজ যাদের কথা শুনলে মনে হয় জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত তারাই রেডিশন, সোনার গা বা শেরাটনে ফ্যাশন শো দেখার সুযোগ পেলে কিন্তু ছাড়বে না। তখন হয়ে যাই গ্লোবাল... ;)


সত্যান্বেষী'র প্রসঙ্গ: 'লুঙ্গি বিপ্লব' লেখাটাকে খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে ... আমার পূর্বপুরুষ তখনো লুঙ্গি বানাতে শিখেনি। কোনমতে গাছের ছাল বাকল আর পশু চামড়া দিয়ে লজ্জা ঢাকত। কিন্তু যখন লুঙ্গি বানাতে শিখল পড়তে শিখল তখন কেউই তাদেরকে গাছের ছাল বাকল আর পশু চামড়া পরিত্যাগ করে লুঙ্গি ধরায় 'এলিট শ্রেণী' বলে গালি দেয়নি। সভ্যতার আরেক স্তরে এসে মানুষ লজ্জা ঢাকার জন্য লুঙ্গির চেয়ে উন্নতমানের পোষাক আবিষ্কার করলো - প্যান্ট। আমি কোন মতেই সভ্যতার অগ্রগামীতার বিপক্ষে যেতে পারি না। আমি কখনো চাই না সমাজের বিবর্তন উল্টো পথে হাটুক।

যাইহোক, হৃদয়ে বাংলাদেশ থাকলে পোশাক দিয়ে বাঙালিত্ব জহির করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:২২
২৩টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×