somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটি

০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সঙ্গি সাথীদের নিয়ে বছর আটেকের মেয়েটি স্কুলের দিকে রওনা দিয়েছে। গরমে সকালে স্কুল। রোদের তেজ এখনো চড়েনি। মেয়েটি খুব তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলছে। স্কুলের সীমানা আর সার্কিট হাউজের ধার ঘেসে অনেক পুরনো বকুল গাছের সারি। ফুলে ফুলে ভরে আছে গাছের তল। সে বকুল কুড়িয়ে মালা গাঁথতে হবে যে। কে কত বড় মালা গেঁথে টিচার কে দিতে পারে তারই প্রতিযোগিতা হবে।
ক্লাসে পড়ায় মন বসতে চায় না। উদাস মনটা বার বার ছুটে যেতে চায় স্কুল ঘরের পাশের পুকুর পাড় দুটোয়। পুকুরে অজস্র শাপলা ফুটে আছে। পুকুর পাড়ে, খেজুর, জাম গাছের সারি। ঝরে পড়া খেজুর, আর জাম না খেলে জীবনটাই বৃথা। আরো আছে খাটো খাটো ঝাকড়া সফেদা গাছ। ওরা বলে চিনি ফল। চিনির মত মিষ্টি, বালু বালু লাগে খেতে। সে ফল পাড়তে কোন পরিশ্রমও করতে হয়না। গাছ গুলো ঝাকড়া হয়ে মাটিতে লুটীয়ে আছে। যেনো ওকে ডেকে বলছে, “ এসো, আমার কোলে এসে বস”— জামের রসে ঠোট রাঙ্গিয়ে, গলায় লাল শাপলা জড়িয়ে মেয়েটি ঘরে ফেরে। গরমের ঘোর লাগা নীঝুম দুপুর। মায়ের পাশে শুয়ে অশান্ত মনে অপেক্ষা— কখন মার চোখদুটো ঘুমে জড়িয়ে আসবে। নিস্তব্ধ দুপুরে নারকেল গাছে কাঠবেড়ালির বিচরনের কুটকুট শব্দ। মা ঘুমে তলিয়ে গেলে, পা টিপে টিপে বের হয়ে যাওয়া। আম গাছের নিচে ঘুরাঘুরি...কোচড় ভরে আম কুড়ানো।
বৃষ্টি আর বৃষ্টি... উঠোণ জুড়ে যেন নদী, কাগজের নৌকা বানিয়ে বানিয়ে সাজিয়ে, সেই নদীতে ভাসিয়ে দেয়া। মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে যাওয়া। টেংড়া, পুঁটি। সে পুটির আবার সাজের বহর—লাল ডোরা কাটা, যেন লাল শাড়ি পরা। কদম-গুচ্ছ নিয়ে কাক ভেজা হয়ে ঘরে ফেরা, আর মায়ের হাতের পিটুনি। বৃষ্টি মুখর ছুটীর দিনে, জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে বৃষ্টি দেখা। নাহয়, বানান করে করে “ লরা মেরীর” বই পড়া। চোখের সামনে তখন আর বৃষ্টি নয়, প্রেইরির প্রান্তর, নাহয় তুষারপাত দেখতো মেয়েটি। মায়ের পায়ে পায়ে ঘুরে ঘ্যান ঘ্যান করে একটি আধুলি জোগাড় করতে পারলেই
ভো—দৌড়—রথের মেলায়। স্বপ্নের দেশে। দুধসাদা কদমা, বাতাসা, যা কিনা মুখে দিলেই বাতাসের মত মিলিয়ে যায়, মুড়কি, জিভেগজা, খাজা, ভ্যাটের খই, তিল, বাদামের তক্তি, মাটির পুতুল, খেলা ঘরের হাড়িকুড়ি, আর ও কত কী!!

নীল আকাসে সাদা মেঘের ভেলার সাথে মেয়েটির মনও হারিয়ে যেতে চায়। মেঘ গুলো কত না দেশে ঘুরে বেড়ায়। লরা মেরীর দেশে, হাতেমতাই এর দেশে, টম কাকার দেশে। ইশ!! ও যদি এমনি করে মেঘের সাথে ঘুরতে পারতো? মা, বাবা,
ভাই, আর ছোট্ট পুতুল বোনটির জন্য খারাপ লাগবে বই কী! তবুও............ নদীর ধারে কাশের বনে লুকোচুরি খেলা, চরের বালুতে প্রাসাদ বানানো, গলা ছেড়ে গান গাওয়া—কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা, মনে মনে.........আকাসে কত রঙের ঘুড়ির মেলা। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনী। আবার মায়ের কাছে আবদার—ঘুড়ি নাটাই আমার চা-ই-ই চাই। কখোনো ইচ্ছে পুরন হয়, কখোনো না।
আকাসের দিকে চিল চক্ষু-নজর রাখা, কখন কোন ঘুড়িটা ভো-কাট্টা হয়। আকাসের দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে গিয়ে পায়ে কাঁটা ফুঁটুক, কী নখটাই উপড়ে যাক, ঘুড়ি আমার চাই—কোনো গাছের ডালে আটকা পড়া ঘুড়ি, অনেক প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয় করে আনা,

ঈদ পরবে খুব ভোরে উঠে গোসল সেরে নতুন জামা, জুতো, যা কিনা অনেক দিন যক্ষের ধনের মত আগলে রাখা হয়েছিল, যাতে কেউ দেখে না ফেলে। দেখে ফেল্লেই তো ঈদ মাটি। তো সেই যক্ষের ধন পরিধান করে, চুড়ি, টিপে সেজেগুজে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটি। যখন ঘরে ফেরে তখন ঈদের দিনের আলো নিভে গিয়েছে, সন্ধ্যা হয়েছে। নতুন জুতায় ফোস্কা পড়া পা, আর সারাদিনের ক্লান্তি তাকে জেগে থাকতে দেয়না। মা যে কত কষ্ট করে কত রান্না বান্না করলেন, তার কিছুই মেয়েটির খাওয়া হয়না। মা, ব্যাথা-ভরা দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হয়তো বলেন, এত পাড়া বেড়ানি হয়েছে।

এমনি করেই কবে যে শিউলি ফোটার সময় এসে যায়। কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে, শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে মেয়েটি কোচড় ভোরে শিউলি কুড়োয়। শিশিরে তার জামার প্রান্ত ভিজে যায়, টুপটাপ কুয়াশায় ভেজে তার মাথার এলোমেলো চুল। পুজো মন্ডোপে ঘুরে বেরানো, প্রসাদ খাওয়া, বন্ধুদের সাথে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। ভাসানে নদীতীরে বিষন্ন মনে
শীতের ভোরে খেজুরের রস নিয়ে আসে গাছিরা। মেয়েটি যানে, যারা রস সংগ্রহ করে তাদের বলে শিউলি, বাহ! কি সুন্দর ফুলের নামে নাম। বাবা বলেছেন, বাবা কত কিছু যানেন, বাবার উপর মেয়েটির ভারি আস্থা। বাবা তো ওকে জিমকরবেটের গল্পও শুনিয়েছেন। ঠান্ডা কনকনে রস, তাই মা বেশী খেতে দেন না, অল্প করে দেন। এ রস সুর্য উঠার আগেই খেয়ে ফেলতে হয়। পরে নাকি খেতে হয়না।
রস খেতে মানা থাকলেও পিঠে খেতে কোন মানা নেই। মা কত রকমের পিঠে বানান। তেলেরপিঠে, ভাপাপিঠে, পুলিপিঠে, গকুলপিঠে, পাটীসাপটা আর ও কত পিঠে। মা হাড়ি ভরে পিঠে বানান, মেয়েটি সারাদিন ঘুরেফিরে খায়। পৌষ সংক্রান্তিতে আরো মজা হয়, পাড়ার দিদিমার বাড়ি, বন্ধুদের বাড়ি কত মজার পিঠেই না খাওয়া হয়।

দখিনা মলয় বাতাস বয়ে যায়। গাছে গাছে নতুন পাতা। এক ঝলক বাতাসে মনটা যেন উথাল পাথাল করে উঠে। মা বলেন লিলুয়া বাতাস। মেয়েটির মন বলে উঠে কি যেনো বদলে যাচ্ছে, কিছু একটা বদল প্রক্রিয়া চলছে, কিন্তু মেয়েটির বয়স তা সঠিক ধরতে পারেনা। শুধুই অবাক চোখে দেখে।
“আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে”

মেয়েটির কি কোন নাম নেই? আছে। অনেক নাম। হাজার হাজার, লাখো লাখো নাম। কোন নামে তাকে ডাকবো? একটি নামেই মেয়েটিকে সবাই চিনে নিবে, এমন নামই আমি দেবো তাকে............ কৈশোর।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:১৫
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×