somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য কাইট রানার

০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এ বছরে পড়া শ্রেষ্ঠ বই হচ্ছে খালেদ হোসেইনীর লেখা দ্য কাইট রানার। এত সহজভাবে লেখা কিন্তু এত ব্যাপক উপলব্ধির বই অনেকদিন পড়ে পড়লাম।

মূলত: আফঘানিস্তানের পটভূমিতে রচিত এই বইয়ে উঠে এসেছে আফঘান সংস্কৃতিতে ধনাঢ্য পরিবারে মাতৃহীন এক কিশোরের বেড়ে উঠা, বাবার সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন, তৎকালীন আফঘানিস্তানের অমানবিক শ্রেণী বৈষম্য, দুই কিশোরের বন্ধুত্ব, একজনের প্রগাঢ় ভালোবাসার বিপরীতে অপরজনের বিশ্বাসঘাতকতা, যুদ্ধের এবং যুদ্ধপরবর্তী জীবনের ভয়াবহ বাস্তবতার গল্প।

বইয়ের মূল চরিত্র আমীর। জন্মের সময় মাকে হারানো, প্রতিপত্তীশালী পিতার সান্নিধ্য বন্চিত আমীরের সারাদিনের সঙ্গী তাদের নিম্ন বর্ণের কাজের লোকের ছেলে, তারই মতো জন্মের পরে মাকে হারানো হাসান। গল্প এগিয়ে যায় এই দুই কিশোরের হাত ধরে আফঘান ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ধারক কাবুলের অলিগলি পেরিয়ে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা পর্যন্ত। পথে উঠে আসে রহিম খান, আলী, সানোবার, আসেফ, কামালের মতো চরিত্রগুলো। সেইসাথে উঠে আসে শ্রেণীবৈষম্যের কুতসিত চিত্র, যা থেকে আমীর নিজেও পুরোপুরি মুক্ত নয়। বাবার বিশালত্বের কাছে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হতে থাকা আমীর ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতাকে বেছে নেয় নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। সঙ্গে সর্বক্ষণের সঙ্গী কাইট রানার হাসান। আমীরের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে হাসান মুখোমুখি হয় জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিঙ্গতার। যে বিকেল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য উদযাপিত হওয়ার কথা সেটি পরিণত হয় পরবর্তী জীবনের জন্য ভয়াবহ দু:স্বপ্নে। পাপবোধে আক্রান্ত আমীর তার দুর্বল মানসিকতাকে সহ্য করতে না পেরে দূরে ঠেলে দেয় হাসানকে। পরবর্তীতে রাজতন্ত্রের পতনের সাথে আমীরের পরিবারের আফঘানিস্তান ছেড়ে সর্বস্ব হারিয়ে আমেরিকা চলে যাওয়ার মধ্যে শেষ হয় প্রথম অংশ।

আমেরিকা পর্বে আমীর এবং তার বাবা নিজেদের আস্তে আস্তে অন্য প্রবাসী আফঘানদের পাশে থিতু করে নেয়ার মধ্যেই লেখক হিসেবে আমীরের আবির্ভাব ঘটে। জীবনে প্রেম, বিয়ে, বাবার মৃত্যু, লেখক হিসবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া - সবকিছু মিলিয়ে প্রবাসে নতুন জীবনে আমীর কালের আবর্তে আস্তে আস্তে ভুলে যেতে চেষ্টা করে আফঘানিস্তান এবং হাসানকে। তার এই জীবনের ছন্দপতন ঘটায় একটি টেলিফোন কল। আমীর মুখোমুখি হয় এক চরম সত্যের, তার নিজের ভিতরের সংঘাত বাড়তেই থাকে। পূর্বের পাপের প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ পেয়ে আমীর ফিরে আসে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফঘানিস্তানে, যেখানে তালিবান অত্যাচার লোকজনকে যুদ্ধের ভয়াবহতাও ভুলিয়ে দিয়েছে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া একসময়ের সমৃদ্ধশালী আফঘানিস্তানের রাস্তা তখন দুর্ভিক্ষ আর পিতাহারা বাচ্চাদের অসহায় জীবনের প্রতিচ্ছবি। এক্ষেত্রে লেখকের একটা চমৎকার উক্তি ছিলো: "There are a lot of children in Afghanistan, but little childhood." এই কঠিন সময়ের মধ্যে নিজের বিবেকবোধকে জাগ্রত করে জীবনে প্রথমবারের মতো চ্যালেন্জের মুখোমুখি দাঁড়ায় আমীর । যুদ্ধের ভয়াবহতায় পিস্ট অসহায় এক বালককে এই ডামাডোল থেকে বাঁচিয়ে তার জীবনকে ভরিয়ে দিতে আমীর শুরু করে তার জীবনের নতুন দৌড়। নতুন এক কাইট রানার হিসেবে।

অসাধারণ সহজভাবে লেখা বইটির গল্পে উঠে এসেছে অসাধারণ সব মনস্তাত্ত্বিক উপলব্ধি। গল্পে টানটান উত্তেজনার সঙ্গে ছিলো এমনসব ঘটনার মোড় যেটি কেউ হয়তো পড়তে গিয়ে মাথায়ও আনবেনা। পাপবোধে জর্জরিত মানুষের আত্মোপলব্ধির পাশাপাশি লেখন চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং তার পিছুটান। দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষ শেষপর্যন্ত খোদার কাছে তার কর্মের জন্য শরণাপন্ন হয়। দেখিয়েছেন প্রকৃতি কিভাবে শেষপর্যন্ত মানুষের উপর তার প্রতিশোধ নিয়ে নেয়।

এককথায় অসাধারণ এই বইটি পড়ে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো সিনেমা বানানোর জন্য এটি আদর্শ একটি গল্প। নিজে নিজে অনেক ভিসুয়ালাইজও করেছি গল্পের প্রতিটি মুহূর্ত। দ্য কাইট রানার নিয়ে ইতিমধ্যে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রও তৈরী হয়েছে। আমার কেন জানি দেখতে ইচ্ছা করছেনা, যদি আমার কল্পনার ছবিগুলো হারিয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×