somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ছিঃনেমার ডাইলখুরি দৃশ্য

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগেই একটি পোস্টে বলেছি একটা সময়ে অনেক বাংলা সিনেমা দেখতে হয়েছে, বিটিভি ছাড়া বিনোদনের অন্য কোন মাধ্যম না থাকায়। এর কয়েকটা ছবি দেখার মত হলেও অধিকাংশই গাজাখুরি, হিন্দী সিনেমার নিম্নমানের কপি। বাংলাদেশের এই সিনেমা পরিচালকেরা কি খেয়ে সিনেমা বানান তা জানার ইচ্ছা আছে। একজন সুপারহিরোর চেয়েও বাংলাদেশের সিনেমা পরিচালকদের ক্ষমতা বেশী। তিনি চাইলেই একজন মৃত ঘোষিত ব্যক্তিকে জীবিত করে দিতে পারেন, চল্লিশোর্ধ নায়ককে কলেজের ছাত্র বানিয়ে দিতে পারেন, যখন তখন নায়ক/ নায়িকার স্মৃতিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন আবার যখন তখন তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, আরো এমন সব কাজ করতে পারেন যা কোন হলিউডের পরিচালকও চিন্তা করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। তাদের ডাইলখুরিরই কিছু নমুনা দিলামঃ

ছবির নাম 'বিদ্রোহী সন্তান | গাঁজাখোরটা কে জানি না। তবে সিনেমাটা হিন্দী শোলের অতীব নিম্নমানের নকল। । এইখানে বাংলার জয় হল বাপ্পারাজ, আর বীরু হল আমিন খান। শোলের শেষ দৃশ্যে অমিতাভ মানে জয়ের মৃত্যু ঘটেছিল। তো বাঙ্গালী হল আবেগপ্রবন। শেষ দৃশ্যে নায়ক মরে গেলে দর্শক যদি তাকে মাইরধোর করে, এই টেনশনে বোধহয় একটু বেশীই গঞ্জিকা সেবন করে ফেলছিলেন। দেখা গেল শেষে নায়কের গায়ে গুলি লাগছে, নায়ক প্রায় মরোমরো। সবাইকে বিদায় জানাচ্ছেন। নায়িকা লিমা দেখলেন তার নায়ক মরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আর উপায় না পেয়ে আঙ্গুল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুলি বের করে নিয়া আসলেন :P। একটা না কয়েকটা। গুলি বের করার এইরকম সিস্টেম আর কখনো দেখি নাই। যার মাথা থেকে এই আইডিয়া আসছে তারে তো চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল দেয়া উচিত :)

গত কয়েক বছরে হিট বাংলা ছবিগুলোর মাঝে একটি ‘হৃদয়ের কথা’। গাঁজাখোর এস এ অলীক। সিনেমা কপি কিনা জানি না, ভালই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষে এসে একটুখানি গাঁজা খেয়ে অলীক সাহেব অলীক জিনিস দেখালেন। নায়িকা পূর্ণিমা দুই বছর ধরে কোমায়। ডাক্তাররা শেষ দেখা দেখতে এসেছেন। পূর্ণিমার জন্য মাজারে বসে মোমবাতি জ্বালিয়ে দোয়া করছেন মৌসুমী। এমন সময় হঠাৎ মোমবাতি নিভে গেল।, অন্যদিকে ডাক্তাররাও পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করলেন। ঠিক আছে মানা গেল। একটু পরে হঠাৎ বাতাস আসল, আর মোমবাতি জ্বলে উঠল ;) অন্যদিকে পূর্ণিমাও তার জ্ঞান ফিরে পেলেন। ধরে নিলাম ডাক্তাররা ভুল করে পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন। কিন্তু বাতাস আসলে মোমবাতি জ্বলে উঠল এইটা কেমনে হইল বুঝবার পারলাম না। সারাজীবন দেখছি বাতাস আসলে মোমাবাতি নিভে, জ্বলে উঠে এই প্রথম দেখলাম।

ছবির নাম মনে নাই। নায়ক ওয়াসিম। সিনেমার এক পর্যায়ে নায়ক স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। শেষে এসে তিনি স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তো ধারেকাছে কোন গুন্ডা না পেয়ে (মাথায় বাড়ি মারার জন্য) শেষ পর্যন্ত নায়ক নিজেই গাছের সাথে মাথা বাড়ি মেরে স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনলেন =p~ =p~। অন্য পরিচালকেরা স্মৃতিশক্তি ফেরানোর জন্য অভিনব সব উপায় অবলম্বন করেন, তবে এই সিনেমার পরিচালক মনে হয় উচ্চ জাতের গাজা খেয়ে এই অভূতপূর্ব পদ্ধতি আবিস্কার করেছিলেন। এই ব্যাটারেও মনে হয় নোবেলের লিস্টে রাখা যায়।

এই ঘটনা অনেক ছবিতে দেখানো হয়েছে। এই কারনে ছবির নাম মনে নাই। ছবির নায়িকা বেদেনী। এইসব ছবিতে যা হয় নায়ক( রাজপুত্র :) ) কে শেষে সাপে কামড় দিয়েছে। নায়িকার বাবা বড় ওঝাও হার মেনে নিয়েছেন যে কিছু করা সম্ভব না। এই সময়ে নায়িকা তার বীন বাজানো শুরু করলেন। সেই বীন শুনে সাপ বন থেকে পড়িমড়ি করে ছুটে আসতে লাগল।এসে নায়কের পা থেকে সমস্ত বিষ শুষে নিয়ে মরে গেল। সাপের কি মহানুভবতা । কতখানি ডাইল খাইলে এই দৃশ্য একজন পরিচালক দেখায় ?

ছবির নায়ক আলমগীর। সিনেমার শেষে মারামারি করে আর না পেরে ভিলেন প্লেন নিয়ে পালায় যাচ্ছে। নায়ক সাহেব মোটর সাইকেল নিয়ে তার পিছনে তার করছেন। এক পর্যায়ে নায়ক প্লেনকেও ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে প্লেনের একটু সামনে গিয়ে থেমে যান। ভিলেন মনে হয়ে মোটরসাইকেল কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তারপর প্লেন চালানো জানত না। প্লেন থেমে গেল তাও হঠাৎ করে। শেষে ভিলেন বাইরে বের হয়ে মাইরপিট করে হেরে গেল। ইশ ভিলেন যদি খালি মোটরসাইকেলটাকে ধাক্কা মারা জানত তাহলে এইভাবে নায়কের কাছে মাইর খাইতে হইত না /:)

ছবির নাম ‘লম্পট’। নায়ক কুংফু সম্রাট রুবেল। সিনেমার ভিলেন আরেক কুংফু সম্রাট ইলিয়াস কোবরা। তো সিনেমার শেষে দুই কুংফু সম্রাটে হেভী মারামারি। কেউ কারো চেয়ে কম না। এমন সময় ইলিয়াস কোবরা কুংফুর ইতিহাসে নতুন মাইর আবিস্কার করলেন। নিজের জায়গায় দাড়াইয়া এমন ঘুরান দিলেন যে ড্রিল মেশিনের মত মাটি ফুটা কইরা মাটির নিচে ঢুকে গেলেন =p~ =p~। নায়ক রুবেল দেখলেন তার ইজ্জত নিয়া টানাটানি পড়তেছে। তিনিও ঘুরান দিয়া মাটির নিচে চইলা গেলেন। কিন্তু বেচারা ক্যামেরাম্যানতো আর কুংফু জানেনা, সে মাটির নিচে গিয়া এই বিরল দৃশ্য ধারণ করতে পারল না। উপর থেকে দেখানো হল মাটি জায়গায় জায়গায় সরে যাচ্ছে। এই সিনেমার একশন ডাইরেক্টর কোবরা সাহেব নিজেই। ব্রুসলিও মনে হয় এই একশন জানে না। কোবরা কে হলিউডে নিয়া যাওয়া দরকার, হাজার হোক কপি তো করে নাই।

খালি বাংলা সিনেমায়ই মনে হয় এসব সম্ভব। ঠিক তেমনি উচ্চ মানের নেশাখোর হইলেই মনে হয় বাংলা ছিঃনেমাও বানানো সম্ভব।
২৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×