somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামা আমার মামা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মামা মোট তিনজন। আজকে আমার বড় মামার কাহিনী বলব। উনি যে আমাকে কি পরিমান আদর করতেন কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার মতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মামা উনি। একটা উদাহরণ দেই আমার প্রতি উনার আদরের। তখন মামা আমাদের বাসায় থাকেন। আমাকে নিয়ে খেলাধুলায় মেতে থাকেন। আমার বাবা আমার প্রতি তার এ আদরের আদিখ্যেতা দেখে আর সহ্য করতে না পেরে উনাকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন, উনি আমাকে আসলে অতটা ভালবাসেন না, যদি সত্যিই এত ভালবাসেন তাহলে তার প্রমাণ দিতে হবে। আমার মামা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। বললেন কি প্রমাণ চান আপনি? আমার বাবা বললেন তোমার ভাগ্নের মুতুন খাও এক গ্লাস, দেখি তুমি কত ভালাবাস তোমার ভাগ্নেকে। আমার মামা বড় কড়া পাবলিক। উনি যে কি রকম কড়া তা পরে বলছি। উনি আমাকে নেংটু করে বললেন, মামা হিসি করতো দেখি। পরে আমি গ্লাস ভরে হিসি করে দিলাম। উনিয়া আমার বাবার সামনেই খাওয়া আরম্ভ করলেন। আমার বাবাও কম যায় না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনি দেখলেন পুরোটা খেয়েছে কিনা। একবার বাধাও দেন নি উনি। আমার মামা গ্লাস শেষ করে বললেন, কি হক সাহেব আর কোন প্রমাণ দরকার আপনার?

আমার এই মামা চরম ডানপিটে। অবশ্য আমার সব মামাগুলোই ডানপিটে। এখন যে কাহিনীগুলো বল তা আমার মা, মামা আর দিদিমার কাছ থেকে শোনা। উনাকে একদিন উনার এক বন্ধু বলল অমাবস্যার রাতে শ্মশান ঘাটে কেউ যদি মরা কোলে নিয়ে কেউ বসে থাকে তবে মাঝরাত্রের দিকে মরা তার কাছে পানি চায়। আমার মামা ঘটনাটা ঠিক কিনা পরীক্ষা করার জন্য বললেন, চল আমরা কাজটা করি। মামার বন্ধু বললেন, আমার অত সাহস নাই ভাই। পারলে তুই যা। আমার মামা একদিন শ্মশানের এক লোক ধরে এক বেওয়ারিশ লাশের ব্যাবস্থা করলেন। তারপর বাড়ীতে এক বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে যাবার কথা বলে বের হলেন। একটা কলস যোগাড় করলেন। পুরো এক কলস পানি ভরলেন। মরার যাতে পানির অভাব না হয় আর কি! এরপর মামার সব বন্ধুরা মিলে মামাকে নিয়ে শ্মশান ঘাটে মরার মাথা কোলে দিয়ে আর এক কলস পানি দিয়ে মামাকে বসিয়ে দিয়ে সবাই ভাগা দিলেন। মামা সারারাত মরা কোলে নিয়ে আর এক কলস পানি নিয়ে বসে থাকলেন। কোন খবর নাই মরার। মামা মরাকে কয়েকবার ঝাকুনিও দিলেন। মরা আর ওঠে না, পানিও চায় না। ঐদিকে বাড়িতে খবর চলে গেছে। ভোর হতেই পুরো গ্রামের মানুষ হাজির। সবাই উৎসুক হয়ে রয়েছে কি ঘটল। সবাই এসে দেখে মামা মরা কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। মামা তো তার বন্ধুকে এই মারে সেই মারে। পুরাই কাহিনী।

আর লিখতে ভাল লাগছে না মামার কথা। আমার এই মামা উনার কলিজাটা নিজ হাতে কেটে দিয়ে দিতে পারতেন আমার জন্য, তার এই ভাগ্নের জন্য। এখনো মামার শরীরের ঘ্রাণ মনে পড়ে। শ্যামলা চেহারার হাসিখুসী, চরম বুদ্ধিমান আমার সেই মামা বেশ কয়েক বছর হল মারা গেছেন। আর কোনদিন আমাকে উনি ডাকবেন না মামা বলে। আর কোনদিন মামাকে জড়িয়ে ধরব না মামাকে। হোটেলে নিয়ে গিয়ে কেউ কোনদিন বলবে না, মামা যা মনে চায় খা, তোর আজকে যা খেতে ইচ্ছে করে খা। ছোট থাকতে মামার হাত ধরে ঘুরতাম। আজ আর সেই হাতটা নেই ধরার জন্য। কেউ আর বাবার নিষেধ অমান্য করে আমাকে মেলায় নিয়ে যাবে না। আমার একটা মামাতো ভাই। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। খুব কম বয়সে সে তার বাবাকে হারিয়েছে। সে আর কোনদিন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুবে না। মামী আর কোনদিন মামাকে ভাত বেড়ে খাওয়াবে না। সে আমার মামা, আমি তার ভাগ্নে। পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় সম্পর্ক। আমার মামা আমাকে খুব ভালবাসত। মামাকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম। রাতের বেলা ঘুড়িতে আলো বেধে দিয়ে উড়াতাম। জ্বলজ্বল করত ঘুড়িটা। যেন একটা ছোট্ট তারা যে অনেক নিচে নেমে এসেছে। রাতের আকাশের দিকে তাকালে আমার শুধু মনে পড়ে সেই ঘুড়িটা কই, যেটা আমাকে মামা বানিয়ে দিয়েছিল, যেটা হারিয়ে গিয়েছিল সুতা ছিড়ে? আমার মামাও সুতা ছিড়ে চলে গিয়েছেন সেই বাত্তি ঘুড়িটার মত। সেই বাত্তি ঘুড়িটার মতই আমার মনে মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে আমার মামার চেহারাটা। পরকাল, আত্মা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে আমি আবার আমার মামার দেখা পাব। মামাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করে।


(বড় বিলাই আপুর ভাগ্নে সম্পর্কিত পোষ্ট পড়ে আমার মামার কথা খুব মনে পড়ে গেল)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩২
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×