somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৎ স্বভাব মানুষের উৎকৃষ্ট গুণ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সাধারণত সৎ স্বভাব বলতে ভালো স্বভাবকে বুঝে থাকি। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দর হলে যেমন একে বলা হয় সুন্দর গঠন, তেমনি আত্মার অভ্যন্তরীণ গুণাবলী সুন্দর অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি ও প্রবৃত্তিগুলো সমভাবে বিকশিত ও স্ফূর্ত হলেই একে বলা হয় সৎ স্বভাব। সৎ স্বভাব ও চরিত্রের উন্নতি সাধন বড় ইবাদতের মধ্যে গণ্য। যার স্বভাব যত ভালো সে তত উঁচুদরের মানুষ।একদিন রাসূলে পাককে (সা·) সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, করুণাময় আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যত ধরনের গুণ দান করেছেন, তার মধ্যে কোন গুণটি সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট?’ হুজুর (সা·) বললেন, ‘সৎ স্বভাব’। তিনি আরও বললেন, ‘সূর্যতাপ বরফকে যেমনভাবে গলিয়ে দেয়- মানুষের সৎ স্বভাব ঠিক তেমনিভাবে তার পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়।’ নবী করিম (সা·) অন্যত্র বলেছেন, “সৎ স্বভাবের বলে মানুষ ‘ছায়েমুদ্দাহা’র অর্থাৎ সারাবছর ধরে রোজা রাখার এবং ‘কায়েমুল্লাইল’ অর্থাৎ সারারাত দণ্ডায়মান থেকে আল্লাহর ইবাদত করার ফজিলত ও সওয়াব লাভ করতে পারে। সৎ স্বভাবের বিকাশ সাধন করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে নয়। আর এর জন্য প্রয়োজন সাধনা ও সদিচ্ছা। মনের পবিত্রতা সাধন করে মানুষ নিজের মধ্যে সুন্দর স্বভাব জন্মাতে পারে।

ছোটদের স্নেহ ও বড়দের শ্রদ্ধা করা, মাতা-পিতার সেবক হওয়া, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে মহব্বত করা, কারও প্রতি বদনজর না দেয়া, মিথ্যা না বলা, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার মানসে কাজ করা, গিবত না করা, সংযমী হওয়া, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, কথা দিয়ে কথা রক্ষা করা, অহংকারী মনোভাব বিসর্জন দেয়া, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি ও দেশবাসীর উপকার করা, মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকা, স্বদেশপ্রেমিক হওয়া, মেধা ও জ্ঞানকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সৎ কর্ম করা, অলসতা ও হীনম্মন্যতা দূর করে কঠোর পরিশ্রমী হওয়া, ঈমান ও আমল ঠিক রেখে মহান স্রষ্টার দাসত্ব করা সৎ স্বভাবের পর্যায়ভুক্ত। পশুর মতো পানাহার, আপন স্বার্থে মশগুল এবং যৌনলিপ্সায় মত্ত থেকে সৎ স্বভাবের মতো সুন্দর ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়।
নিজেকে ভালো মনে করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়, নিজেকে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি ভেবে ঈমানকে সুদৃঢ় করা, আমলে সালেহ করা, সহি নিয়তে সৎ কাজ করা, ভালো কাজের সমর্থন ও সহযোগিতা করা এবং মন্দকে প্রতিহত করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করাই হচ্ছে সৎ স্বভাবের বৈশিষ্ট্য।
মহান রাব্বুল আলামিন সৃষ্টিজীবের প্রত্যেক জাতিকে এক-একটি সীমার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণতা দান করেছেন এবং সে সীমা পর্যন্ত উন্নতি করার উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন- ঘোড়াকে গাধা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব পশু বা পাখির মতো শ্রেষ্ঠত্ব নয়। বরং মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব তার বুদ্ধি ও মেধার দরুন। মানব জাতিকে হিংস্র জন্তুর মতো হানাহানি ও পাশবিক কাজে লিপ্ত হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে মহান স্রষ্টা পৃথিবীতে প্রেরণ করেননি। যদি তাই হতো, তবে মানুষকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি না করে শিয়াল, কুকুর, বাঘ, ভালুক, সিংহরূপেই প্রেরণ করা হতো। আবার কেবল আহার, নিদ্রা, যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেও মানুষ সৃষ্টি হয়নি। পানাহার ও কামভাবই যদি মানব জীবনের একান্ত লক্ষ্য হতো, তবে মানুষকে উট বা চড়-ই পাখি করে সৃষ্টি করা হতো। কিন্তু আল্লাহপাক মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যদি তার অন্তর থেকে শূকর স্বভাব, কুকুর স্বভাব, শয়তানি স্বভাব বিসর্জন না দেয় তাহলে সে কখনও সৎ স্বভাবের অধিকারী হতে পারবে না। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হবে। অন্যদিকে সৎ স্বভাবের ফলে অন্তরে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, মায়া-মমতা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা, সত্য-ন্যায়ের প্রতি অনুরাগ, মিথ্যা ও মন্দের প্রতি বিরাগ জন্ম নেয়। যার জ্যোতিতে আলোকিত হয় অন্তর। এমন অন্তরেই আল্লাহপাকের বসত।

মানবদেহ যদিও মাটির মতো তুচ্ছ, তবুও মহাগুণে গুণাম্বিত। ‘আসফালা সাফেলিন’ অর্থাৎ নীচতা-নিকৃষ্টতার নিম্নতম পর্যায়ের শয়তানোচিত স্বভাব থেকে ‘আলা ইল্লইয়িন’ অর্থাৎ উত্তম স্তরের স্বভাব ও উৎকৃষ্ট ধরনের গুণাবলী লাভ করে ফেরেশতা জাতির সমমর্যাদাভুক্ত হতে পারে। আর তখনই অন্তর তৃপ্ত হয় মানসিক প্রশান্তিতে। নিজেকে ও স্রষ্টাকে বুঝতে সহজ হয়। মুক্তিলাভ করা যায় দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও কাম-ক্রোধের কবল থেকে। এরই নাম প্রকৃত সুখ। হে খোদা! আমাদের সৎ স্বভাবের মাধ্যমে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করুন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×