somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ঈদে আমার বউ এডভোকেট

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লার দুনিয়ায় কতকিছুই না হয়। ঈদের দিনে বৃষ্টি হয়, কক্সবাজারে লুকজন পানিতে ডুবে ডুবে, জলিল মিয়া সাকা মিয়া হাডুডু কাবাডি খেলে আর আমার বউ এডভোকেট হয়, আমার বাচ্চারা স্কুলে পড়ে। ক্যামনে কি?

ঈদের দিনে বইনে কইলো সালামী তো দিতে পারুম না, তুমি বড় হইয়া গেছ তবে গাড়ী নিয়া ঘুরতে পার। মাগার কথা একটাই সব দায় দায়িত্ব তোমার; মানে ট্রাফিক পুলিশের হুজ্জতি থেইক্কা, গাড়ী নষ্ট টু হাজতবাস সবগুলাই, সে কিসু জানে না। হে হে হে কম দামে গাড়ী কিনা কাগজপত্র অর্ধেক পাইছে আর বাকী অর্ধেক এখনো পায় নাই তাই গাড়ী নিয়া তার দুশ্চিন্তার শ্যাষ নাই। প্রথমে মনে হইল নিমুনা, পরে আবার ভাবলাম ঈদের দিনে গাড়ী সাবধানে চালাইলে কাকারা ধরবোনা। আমি কিন্তু গাড়ী চালাইতে পারি না, সাবধানে মানে ইয়াং ড্রাইভার লইয়া কারো গায়ের উপর না চাপাইয়া চিকনে বাইর হইয়া যাওন। আমি দোনোমোনোতে আছি। আমার এক বন্ধুর বহুদিন ধইরাই গাড়ী আছে, সুযোগ পাইলেই সে ফাটাইয়া গাড়ী চালায় আর ডেটিং মারে, আমি গোপন ঈর্ষায় মরি। কিন্তু কিছু কই না।

সেইদিন ভাবলাম যাক সুযোগ আসছে, যতই দরিদ্র হই আর যতই রিস্ক থাকুক এইবার গাড়ী নিয়া বাইরামুই। বইনে গাড়ীর লোভে হইলেও জেল থেইক্কা ছুটায়া নিয়া যাইবো। তো ঈদের দিন বিকালে বুকে সাহস কইরা গাড়ী নিয়া বাইরাইলাম, মানে দুরুদুর বুকে মাঝের সিটে বামদিক ঘেইসা বসলাম। গাড়ী টয়োটা ক্যাডিলিনা, বাইরে থেকে দেখলে কত পুরান ঠিক বোঝন যায় না। কিন্তু আমার দুরুদুরু তো কমে না। একটা কইরা পুলিশের গাড়ী দেখি আর মনে হয় এই আটকাইলো এই ধরলো। এমন সময় সেই গাড়ীওয়ালা বন্ধু ফোনে জানাইলো সে গুলশানে মুভএনপিক এ আছে তার গার্লফ্রেন্ড নিয়া, আমি জামু কিনা। প্রথমে ভাবলাম থাক কাবাবে হাড্ডি হইয়া কি হইবো, কিন্তু সেদিন আমার অবস্থা আসলেই খারাপ। যাগো লগে প্রমউম ছাম্মাকছাল্লো হইতে পারতো তারা টপাটপ বিয়া কইরা ফেলতাছে আর নতুন জামাই সংসার নিয়া ঈদ করতাছে। আর যারা বন্ধু তাগে বাড়ীত যাইয়া দেখি কেউ নাই, বেড়াইতে গেছে।

আর বাকীগুলা সব দেশের বাইরে, পুরা মাইনকার চিপা যারে কয়। আমি তখন টিএসসিতে বন্ধুরে কইলাম আইতাসি গুলশান। গাড়ীর সাথে ততক্ষণে আমার দূরত্ব কমা শুরু করছে কেমন যেন ভালোও লাগতাছে। পুলিশ নিয়া চিন্তাও কমতাছে..আত্মবিশ্বাস বাড়তাছে। গাড়ী ফার্মগেট মাত্র ছাড়াইছে এমন সময় বা দিকে ক্রস করতে থাকা একটা মোটরসাইকেল গতি কমাইতে শুরু করল।

মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী দুজনই মধ্যবয়সী সাদা পাঞ্জাবী পড়ে আছে। গতি কমাইতে কমাইতে একেবারে জানালার কাছে এসে হুট করে চালক বলল,

-আস্সালামু আলাইকুম ভাইজান
-ঈদ মোবারক
-ভালো আছেন তো?

আমি তো ভেতরে ভেতরে একটু নার্ভাস ভাবলাম সাদা পোশাকের পুলিশ নাকি।

বললাম,

-আপনাকেও ঈদ মোবারক
-ভালো আছেন?

চালক সহজেই বুঝলেন আমি তারে চিনতে পারি নাই

-সে মোটরবাইক চালাতে চালাতেই বলল
-ভাইবেরাদার গো তো অহন আর চিনতে পারবেন না
-ঈদে তো একটা খোঁজও নিলেন না
-হয় হয় এমনি হয়
-আমাগো কি অহন আর চিনবেন
-যাইহোক এখন কন ভাবী কেমুন আছে?
-বাচ্চা দুইটা?
-আপনারে এত কইলাম একদিনও বাসায় গেলেন না,
-আজকে কি বস খাইবেনটাইবেন নাকি, লাগলে কইয়েন ম্যানেজ কইরা দিমু

আমি তখন হতভম্ব হবার কাছাকাছি, ফোন এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম তার ক'দিন আগেই বাচ্চা হয়েছে। সে দেখি কোন কথা না বলে মনোযোগ দিয়ে এই চলমান আলাপ শুনছে...

চলতে চলতেই সে বলল,
- ভাই কি বাসায় যাইতেও কইবেন না?
আমি নিশ্চুপ, হতভম্ভ থেকে মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করেছি
-সেও মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে বুঝলো কোথাও একটা বড় ঘাপলা আছে বোধহয়।
সে বলল,
-ভাই আপনে ১০ নম্বর থাকেন না?
-আপনার বউ এডভোকেট না?
আমি বললাম না, আমি তো এখন বিয়েই করি নাই।

লোকটা আর কোন কথা বললো না, পিছনের সঙ্গীর দিকে একবার তাকিয়ে
বিজয় সরণীর দিকে একটানে বেরিয়ে গেল। আমি আর আমার ফোনের সেই বন্ধু
একসাথো হো হো করে হেসে উঠলাম। হাসির মধ্যেই ও বলল, শরৎ তুমি যে বিয়ে করে দুই বাচ্চার বাপ সেইটা তুমি আমাকে বলোনাই। দাড়াও তোমার এডভোকেট বউকে এখনি বলতাসি........

ফলাফল: বিনা কাগজের গাড়ীতে চড়ার দুইটা খারপা দিক..

১.পুলিশে আপনারে জেলে দিতে পারে
২. আপনার বিয়া না করা এডভোকেট বউও আপনারে বিয়া গোপনের অপরাধে জেলে দিতে পারে.....
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×