somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবশেষে সে (শেষ কিস্তি)

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মালিবাগের এক গার্মেন্টস-এ কাজ নেয় মকু। সেলাই কাজ যেহেতু আগেই জানা ছিলো; সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে তার সুবিধাই হলো। কুষ্টিয়ার মর্জিনা আর তার টেবিল পাশাপাশি। কাজের ক্ষেত্রে মর্জিনা তার সিনিয়র হওয়াতে অনেক কিছুই শিখতেই পারছে সে। হাতে কলমে শেখানোর পাশাপাশি হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি থেকে শুরু করে চিমটি কিল-ঘুসি সবই চলে আড়ালে আবডালে।

মর্জিনার একটি বিয়ে হয়েছিলো; সন্তান না হওয়ায় তাকে দায়ী করে তাড়িয়ে দিয়েছে তার তরকারী বিক্রেতা স্বামী। ঢাকায় এসে প্রথমে এক ডাক্তার দম্পত্তির বাসায় রান্না-বান্নার কাজ করতো মর্জিনা। মাস তিনেকের মাথায় ডাক্তার ভদ্্রলোকের প্রলোভনে অন্তসত্তা হয়ে পড়ে সে। সব দোষ গিয়ে পড়ে মর্জিনার ওপর। যার কারণে ঐ বাসা থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয় ভদ্রলোকের স্ত্রী। একবার অন্তসত্তা না হওয়ার কারণে; আরেকবার অন্তসত্তা হওয়ার কারণে পরিত্যাক্ত হয় সে। পোড় খাওয়া জীবনে মকুকে সবুজ সংকেত মনে করে মর্জিনা।

চৌধুরীপাড়ায় কয়েকজন পোশাকশ্রমিকদের সাথে একটা মেসে থাকতো মকু। বরিশালের খায়রুন এসে দুবেলা রান্না-বান্না করে দেয় তাদের। খায়রুনের দশ বছরের মেয়ে জুলিও গারমেন্টেস এ কাজ করে। স্বামী তাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে বউ নিয়ে খুলনা থাকে। খায়রুনের দুঃখের কথা শুনে কষ্টে মকুর বুকটা ভেঙ্গে যায়। খায়রুনকে সান্তনা দেয়। একদিন অন্যান্য মেস-মেটদের অনুপস্থিতিতে খায়রুনকে বুকে তুলে নেয় মকু। খায়রুনের শূন্য আকাশটা যেন পুর্ণ হয় মকুকে পেয়ে। অন্ধকার জীবনে আলো ফিরে পায় সে। একটা অবলম্বন খুঁজে পায়। অন্যের শোকে কাতর হওয়া মকু এই প্রথম একটু দ্বিধায় পড়লো। একদিকে মর্জিনা; অন্যদিকে খায়রুন। কাউকেই দুঃখ দিতে রাজি নয় মকু। কৌশলে দুজনের সাথেই সমান তালে সম্পর্ক চালিয়ে যায় মকু।

বছরখানেক পর একদিন হরতালে গারমেন্টস বন্ধ থাকে। মেসমেটরা সবাই ধরলো সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য। শরীরটা ভালো লাগছেনা’ এই অজুহাতে মেসে থেকে যায় সে। যথাসময়ে খায়রুন আসে কাজ করতে। কাজের কথা ভুলে গিয়ে আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে মকু আর খায়রুন। ঠিক হয় আজ সন্ধ্যায় ওরা দুজন সিনেমা দেখতে যাবে। সুতরাং ফুর্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ঠিক ঐ মুহূর্তে মেসে হাজির হয় মর্জিনা। বাইরে থেকে হাসাহাসি ফিসফাস শব্দ শোনা যায়। অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর দরজা খুললে ওদের অসংলগ্ন আচরণে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে মর্জিনা। মুহূর্তে আশে-পাশের লোকজন এসে জড়ো হয়। সবকিছু শুনে বেঁধে ফেলে মকু আর খায়রুনকে। আটকে রাখে মর্জিনাকেও।

ষোল দিন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেয় মকু। ক্ষত তখনো ভালো করে শুকায়নি। জনতার মার-ধরের আঘাতের চিহ্ন আর সেগুলোর ব্যথা এখনো আছে। তবুও ডাক্তার তাকে রিলিজ করে দেয়। এ কদিন মেসমেটরাই তার পাশে ছিলো। ওদের একজনের নিকট থেকে কিছু টাকা নিয়ে অশ্র“সিক্ত নয়নে ঢাকা ছাড়ে মকু। ঠাঁই হয় মায়ের আশ্রয়ে। কিছুদিন আবার চুপসে থাকে সে। কারো সাথে আর কথা হয়না।

অবশেষে মকু এখন একটা মসজিদে নিয়মিত আজান দেয়। বাবার রেখে যাওয়া জমিজমা দেখাশুনা করে আর অবৈতনিক মুয়াজ্জিন হিসেবে মসজিদে পড়ে থাকে। এখনো মেয়েদের দেখলে পালিয়ে বেড়ায় মকু। তবে লজ্জায় নয়, ভয়ে।

(শেষ)
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×