বেই দাও। ষাটের দশকের চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব এর বিরোধীতা করার হিম্মত ছিল। সম্ভবত মরমীবাদী বলেই। হ্যাঁ, চিন যতই বস্তুবাদী আদর্শ গ্রহন করুক না কেন- মরমীবাদ এখনও চিন থেকে একেবারে লীন হয়ে যাই নাই। চিনে যে ক’জন কবি কবিতায় মরমীবাদ আগলে রেখেছেন- কবি বেই দাও তাদের মধ্যে একজন। বেই দাওকে বলা হয়: রহস্যবাদী কবি।
বেই দাও শব্দটির অন্য উচ্চারণ পেই তাও এবং শব্দটির অর্থ- ‘উত্তরের দ্বীপ।’ কবির জন্ম ১৯৪৯ সালের ২ অগাস্ট বেইজিং এ হলেও কবির শিকড়টি চিনের উত্তরের একটি দ্বীপে প্রোথিত । এবার বলি; বেই দাও এর প্রকৃত নাম: ঝাও ঝেনকাই। ( চিনে এরকম ছদ্মনাম নেওয়ার রেওয়াজ আমি আগেই লক্ষ্য করেছি।) বেই দাও -এই ছদ্মনামটি গ্রহর করার আরেকটি কারণ আছে, সেটি হল কবি বেই দাও নির্জনতা পছন্দ করেন-মরমী কবি বলেই হয়তো।
এবার কবি বেই দাও-এর ‘ রাত্রি: বিষয় ও বৈচিত্র’ কবিতাটি পাঠ করা যাক।
রাত্রি: বিষয় ও বৈচিত্র
আলোর সমান্তরাল দ্যূতিসহ
এখানে মিশেছে পথ-
যেনবা, দীর্ঘ সংলাপ সহসা গিয়েছে ভেঙ্গে।
আবছা কর্কস তিরস্কার আর
ট্রাক ড্রাইভারদের তামাকের বিশ্রী গন্ধ বাতাসে।
বেড়ার বদলে লোকেরা লাইন করে দাঁড়িয়ে
দরজার ফুটো ছেদ করে আলো
রাস্তায় সিগারেটের ফিলটারের পাশে পড়েছে
পায়ের তলায় দ্রুত পিষে যাচ্ছে
বুড়োর হারানো লাঠির ওপর ঝুঁকে রয়েছে বিলবোর্ড
যেনবা হাঁটবে এক্ষুণি
পাথরের জলপদ্মটি ক্ষয়ে যাচ্ছে জলাশয়ে, পাশেই
একটি দালান গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে
জেগে ওঠা চাঁদ সহসা ঘন্টা বাজায় বারবার
আর প্রাসাদের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় অতীত
সম্রাটের ভোরের জাঁকালো অনুষ্ঠানের অপেক্ষায়
বুঝি এখনই সূর্যঘড়ি ঘুরে উদযাপন করবে কৃত্য
ব্রোকেডের পোশাক আর রিবন উড়ছে বাতাসে
উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাথরের ধাপের ধূলিকণা
দেওয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে দ্রুত চলে গেল যে
তার জন্য নিয়নের রঙীন আলো
রাতভর তাকে ঘুমাতে দেবে না
জলের ঝিকিমিকি আলোর রহস্যময় কাঁপন দেখবার জন্য
একটি হুলো বেড়াল লাফিয়ে উঠল বেঞ্চে
খোলা জানালার পর্দায় পারদ-বাতির উৎকট আলো
অন্যদের ব্যাক্তিগত জীবনে উঁকি দেয়
নিঃসঙ্গ মানুষের স্বপ্নকে বিরক্ত করে
পিছনে একটি ছোট দরজা
শিকারের খুব কাছেই একটি হাত
যেনবা তাক করছে বন্দুকের নল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২৬