somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর্গোৎসব এবং মায়ের মার খেয়ে একজন সাম্প্রদায়িকের অসাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার গল্প

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় কোনো কিছু বেছে নেয়ার আগে প্রথম হিসেবটা শুরু হতো ধর্ম দিয়ে। পাঠ্য বইতে কোনো বিখ্যাত ব্যাক্তির জীবনী পড়ছি, পড়া শেষ হওয়ার পর লোকটাকে যেই মহান মনে হতো তখনি আবার রিভিশন দিয়ে খুঁজতাম ব্যাটার ধর্ম কী?
যেই দেখতাম, অন্য ধর্মের। মনটাই খারাপ হয়ে যেতো।
কেউ কোনো দেশের কথা বলছে, সে দেশ সম্পর্কে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল এটা কী মুসলমান দেশ?
আমাদের একটা সুদীর্ঘ সময়ে আমাদের প্রতিবেশীরা সবাই ছিল হিন্দু। আমাদের ফ্যামেলীর সাথে তাদের সম্পর্কে কখনো ধর্মের ভিন্নতা ব্যবধান গড়ে দিতে পারেনি।
কিন্তু আমি কেন জানি মেলাতে পারতাম না। পরিবারের চেয়ে মফস্বলের প্রাইমারী স্কুলের ক্লাসমেটদের কাছে তখন নানা সাম্প্রদায়িক কথাবার্তাই আমাকে বেশি আলোড়িত করতো। অনেক কবিতাও প্রচলিত ছিল তখন। হিন্দু ক্লাসমেটদের রাগানোর জন্য। সেসব প্র্যাকটিস করে কখন যে সাম্প্রদায়িক হয়ে ছিলাম নিজেও বুঝিনি। অবশ্য তখন সাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক বিষয়টাও অচেনা ছিল। দূর্বোধ্য ছিল।
তখন আসলে সমসাময়িক বন্ধুদের কথাতেই প্রভাবিত হতাম।
তাদের কথায় প্রবাবিত হয়ে হিন্দু প্রতিবেশী বন্ধুদের গরুর মাংস খাওয়ার জন্য রিকোয়েষ্ট করে বিব্রত করতাম।
তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে কয়েকজনের সাথে মিলে একবার তুলসি গাছ ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।
এবং সেই শেষ। আমার মা-ও আমার সাম্প্রদায়িক ধারনাকে শেষ করে দিয়েছিলেন ব্যাপক মারের মধ্য দিয়ে।

২.
বয়স হলো, বিচার বিবেচনাবোধ হলো। এখন এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছে ঈদের চেয়ে কোনো অংশে কম না পুজোর আনন্দ। একদম ছোটবেলার কথা মনে পড়ে এক বছর গ্রামে ছিলাম। চাচা চ্যায়ারম্যান হবার সুবাধে বাড়ীর সামনে নৌকা করে প্রতিমা নিয়ে আসতো গভীর রাতে। বাবা ডেকে তুলে নিয়ে যেতো। চোখ গোল করে দেখতাম হ্যাজাক লাইটের আলোয় দেবী দূর্গাকে। এখনো কানে বাজে সেই ঢাকের ধ্বনী।
এখন পুঁজা মানেই আমাদের আলাদা উৎসব। ঈদের মতোই সিডিউল করে আমাদের বন্ধুদের উৎসব চলে। চলে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে দেবী দূর্গাকে দেখা। পাশাপাশি দেবী দূর্গাকে দেখতে বের হওয়া দেবীদের দেখার উৎসবও।
দশমীতে যখন সুর আর আলোয় উদ্ভাসিত হয় পুরো শহর, আমরা যখন ব্যাস্ত থাকি বিসর্জনের জন্য যাওয়া দেবীর মূর্তি দেখতে তখন মাঝে মাঝে সেই সাম্প্রদায়িক দিনের কথা মনে হলে হাসি আসে।
কী না ছিলাম? হিন্দুদের প্রসাদ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে কী না করেছি? আর এখন মন্ডপে গিয়ে প্রসাদ না পেলে মেজাজ খারাপ হয়। হিন্দু বন্ধুদের উপর রাগ লাগে, তোদের এলাকার মন্ডপে এইবারই শেষ। প্রসাদ খাওয়াস না, আইসা কী করমু।

আজ দশভূজা দেবীর বোধন আমন্ত্রন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু।
অনেকগুলো বছরের মতো এবারও একজন সাবেক সাম্প্রদায়িক ইশতিয়াক আহমেদ অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে অপেক্ষায় আছে একটি উৎসবের।


১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×