somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটবেলার ঈদ

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার ছোটবেলার ঈদ
সৈয়দ আফসার
বাবা, মা মিলে আমাদের পরিবার সবর ছিল এগারোটি প্রাণ। বোনের জন্ম দিন কয়েক আগে, ভাই হাঁটা শিখছে দেয়াল-খাট ছুঁয়ে, মায়ের হাত ধরে। ঈদের আনন্দ তাদেরই বেশি যার ঘরে আমার মতো সাতবোন থাকে। বছর ঘুরে আসে মাত্র দুটি দিন। কদরও তো ঠিক ৩৬৩দিনের পরিমান।যে ঘরে বড় বোনরা থাকেন, তাঁরা তো মমতাময়ী মা-ই হন। বড় বোনদের কাছে যখন শোনা যেত ঈদের আর ক'টা দিন বাকি... ঘড়ির কাঁটা গুনে রাখতাম ঘন্টা ও প্রহর... মনের ঘরে কত কিছুই না ওঠা-নামা করতো,দিন এলে সন্ধ্যা নামার নাম নেই; রাত্রি ঘনায় ভোরের আভা চোখে ভাসে না। ভাবতাম যদি এক ঘুমে ফুরিয়ে যেত সকল অপেক্ষা, জাগলেই দেখতাম পুরো ঘর জুড়ে হাসছে ঈদের আনন্দ... সে বয়সে আমাদের পরিবার তেমন স্বচ্ছল ছিল না, বাবার সামর্থ্যের কমতি দেখিনি, মায়ের উজ্জল হাসিই ছিল বাবার প্রাণশক্তি; তাঁদের আদরস্নেহভালোবাসার ভেতর আমাদের বেড়ে ওঠা।

রাত্র পেরুলেই কাঙ্ক্ষিত দিন, ভোর জাগলেই সহপাঠিদের ঘুমোঘোরে রেখে পুকুরের সিঁড়ি ধরে নেমে যেতাম জলে, পুকুর জলে ফাঁকে মুখে মুখ রেখে সাঁতারও হত দু'একবার; বোনের সুগন্ধি সাবান শরীরে ঢলে দিলে গোসল সেরে নেবার তোড়জোড় দিতেন। ঘরে ফিরে এলে নিজ মুখে লাগিয়ে দিতেন নিজের জন্য কেনা তিব্বত-স্নো...চুল ও শরীরে লাগাতেন সুগন্ধিতেল ... স্নো আর সুগন্ধিতেলে আমার কাঙক্ষা জাগত না তখন
'বলতাম জামাটা পরে নেই এখন।' বোনের মানা! এখনও ঈদের কিছু খাওয়া হয়নি, আগে খাওয়া শেষ হউক...।সেমাই,ফিরনি-নোনবড়া-সন্দেশ
'কোনটা তোর চাওয়া?' বলি একটা হলেই হয়... কারণ নতুন জামা পরার লোভ কি আর খাওয়ার মত হয়? মনে জামা পরার আনন্দ জমা হতে হতে স্বপ্ন ছুঁয়ে সহপাঠির জামাবাড়ি হেঁটে যেত, বোন কি জানতেন। বোন চুলের সিঁথি টেনে দিতেন, বলতেন 'কিউট লাগছে' সে বয়সে কি 'কিউট' শব্দের মানে-টা জানা ছিল? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিঁথির দিকে তাকাতাম, চিরুনি দিয়ে চুলগুলো এদিক ওদিক পরিপাটি করে দেখতাম... মনে প্রশ্ন জাগত আমি তো দিন-দিন বড় হয়ে যাচ্ছি, এভাবে সিঁথি হলে কি বড় দেখাবে? তারপর সহপাঠিরা দল বেঁধে ঈদগার পথ ধরে হাঁটতাম... নামাজ শেষে কোলাকুলি... বেড়ানো স্বজনের বাড়ি,পাওয়াও যেত ৫/১০টাকা সালামি...।

এখন রাত্রিভোর একই রকম মনে হয়, ঈদের কোন আমেজ হৃদয়কে নাড়ায় না। ঈদের দিনেও ভোরে ঘুম ভাঙে না। রুটিন মাফিক কাজে যাওয়া আসা, কি অস্বস্থিবোধ,কাজ-কাম জীবন বাঁচার দায়! ঠেকা কাম... ২/৩ মাস চলে যায় অবলীলায় চুল-দাঁড়ি কাটার কথা মনেই থাকে না। এখন ঈদে নতুন জামা পরা... বোনদের বিয়ে হয়েছে, তাঁদের সংসার গোছাতে সবাই ব্যস্ত... এভাবেই চলছে বছর কয়েক ধরে ক্লান্ত পরবাস!

তাইতো পরবাসে বসে ভাবি হারানো কান্না; এবয়সে পুরনো শ্বাসের ভেতর বাঁচতে পারে না, যা আগে কখনো বলা হয়নি মৃদুকন্ঠে তাও বললে যতটা প্রয়োজন গ্রহণ করো আমায়; প্রাত্যহিক কান্নায়... অসহায় করো না ব্যাক-পকেটে ফেলে; জলে গাঁথা শাদারুমালে।করাত কলের পাশে সর্বদা আরেক
বেদনা ক্ষতের মতন হাড়ে গাঁথে ঘুরে ঘুরে পর্দার আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাখে অতীতের চোখে; প্রশ্নহীন দূরত্বে ঘুরছে নিজের খামখেয়ালে; দেহের ভেতরে দুর্দিনে ঘুরে ঘুরে প্রত্যাখ্যান, পুরনো দিনের গান তখন তোমার কাছে জল মানে বৃষ্টি; বৃষ্টি মানে জল মিলেমিশে থাকার লোভে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোমার সামনে কোন কথাই সহজে বলতে পারি না; কোন কথায় দ্বিমত নেই তর্কে-বিতর্কে কথা বাড়াই না কারণ তর্কে-বিতর্কে আমাদের দূরত্ব বেড়ে যায় তিন-চার গুণ তোমার প্রথা-কথা-টথা শুনে হাসির ভেতরে তাকাই; হাসলেই খুন হয়ে যাই পূর্বাপর, ঘুমের ভেতর; শরীর জ্বলে না পড়ে না; শেষ বেদনা টুকরো হীমের মতো ঘুরায়; চাহিদা বাড়ায়ঘুরতে ঘুরতে ফের ওঠে বসি ঘোরে, ঘুরি দেহে... আংকির ভেতর তখন সুরে-সুরে শরীর বেয়ে ওঠে হারানো কান্না দিবা-রাত্রি-ভোরে মন খুলে শ্বাস টানিনি, মাকে আজ ফোনে বলেছি; জানি না মা; আবার কবে আমার ঈদ হবে সবার সাথে...
আজকের দিনে ভাল থেকো মা... সবাইকে নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×