somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর নিয়মিত টহল

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন আর মৃত্যুর ব্যবধান কতটুকু? হয়তো মাত্র আধা সেকেন্ড, এই ব্যবধানটুকু অতিক্রম করতে না পারলে হয়তো আজকেই খেলা সাঙ্গ হয়ে যেতো, হয়তো পরদিন কিংবা ঈদের পরের দিনের সংবাদপত্রে রিপোর্ট আসতো, ঈদের এই বন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকায় আমার নামটাও যুক্ত হতো। হয়তো এরবেশী কিছু আসা করা যায় না বাংলাদেশে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আরও সোচ্চার হওয়া উচিত মনে হয়।

২০০৭এর ঈদের পর থেকে আর বাসে দিনাজপুর যেতে দেই না বাসার কাউকেই। হাইওয়েতে যারা গাড়ী চালায়, সেইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং পারস্পরিক গতির লড়াই আরোহীদের জীবনকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখে এটার সংবেদ হয়তো তাদের থাকে না, তবে যখন ক্ষতি হয় তখন একটা পরিবার উজার হয়ে যায়।

সেবার যাচ্ছিলাম ঈদের দুদিন আগে। সিরাজগঞ্জ পার হওয়ার পর বগুড়ায় ঢুকবার পর থেকেই রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, সম্পূর্ন চাঁদের পিঠ হয়ে থাকা রাস্তায়ও বাসড্রাইভার কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এলোপাথারি গাড়ী চালাচ্ছে। বাসের যাত্রীদের চিৎকার এবং আপত্তিগ্রাহ্য না করেই।

মনে হচ্ছিলো বাস থামিয়ে নামিয়ে পিটাই। চুতমারানী গাড়ী চালাইতাছো তুমি, এইটা ফর্মূলা ওয়ান রেসিং ট্রাক না যে তুমি ১০০ কিমির উপরে চালাইবা। নিরাপদ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার, সেইটাও শহরের বাইরের রাস্তায়, শহরের ভেতরে নিরাপদ গতিসীমা এখনও ৪০ কিমি। সেটা মেনে গাড়ী চালাও সমস্যা নাই, আমাদের এত তাড়াও নেই যে পৌঁছে যেতে হবে সবার আগে।

তবে পরবর্তী ঈদ থেকে দিনাজপুর যাওয়া মানেই ট্রেনে যাওয়া, অনেক বেশী নিরাপদ ভ্রমন। তবে গত ঈদের আগে আগে মেজাজটা আরও খারাপ হলো, যখন পেপারে পড়লাম রেল লাইনের ফিশিংপ্লেট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ, এবং হঠাৎ করেই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, মনে হলো এইসব অপরাধী যারা এত এত মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া উচিত। দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও, যাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবার কথা এইসব।

আজ রাতে যাচ্ছিলাম ওয়ারী, বঙ্গভবনের পাশ দিয়ে বের হয়ে গ্যাস স্টেশনের সামনের রাস্তায় দেখলাম একটা প্রাইভেট আরেকটা প্রাইভেটের সাথে চুম্মাচুম্মি করতেছে, সেইটাকে আমলে না নিয়ে জয়কালী মন্দিরের সামনের রাস্তাটা অতিক্রম করবো যখন, তখনও আড়াআড়ি রাস্তায় কোনো গাড়ীর দেখা পাই নি। একটা বাস অলস ভঙ্গীতে বাঁক ঘুরছিলো, সেটার পাশ দিয়ে রাস্তায় উঠামাত্রই একটা গাড়ী অন্তত ৬০ কিমিতে ছুটে আসলো, সামনে রিকশা আর বাস, নড়বার উপায় নেই, তাড়াতাড়ি চালিয়ে চলে যাবো এমন পরিস্থিতিও না, আমার রিকশা রাস্তার উপরে, আর যেটুকু ফাঁকা জায়গা সেটুকু দিয়ে একটা বাস কোনো ভাবেই পার হতে পারবে না, কিন্তু খুনে গতির নেশায় ধেয়ে আসছে গাড়ীটা।

কোনোমতে রিকশার চাকা ঘুরিয়ে সংঘর্ষ এড়ানো গেলো, আমি হঠাৎ করেই খেয়াল করে দেখলাম আমার গলা সম্পূর্ন শুকনো, দ্রিদ্রিম দ্রিদ্রিম হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে, আমি শক্ত করে ধরে আছি রিকশার হুড, গাড়ীটা চোখের পলকে অতিক্রম করে যাওয়ার পর জয়কালী মন্দিরের সামনে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে বললাম, ভাই আরেকটু হইলে তো মাইরাই ফেলাইছিলা আমারে।
ঐ শালা এমনে গাড়ী চালাইলে কেমনে হইবো কন?
কথা সত্য, একটা ন্যুনতম নিয়ম না মেনে চললে কোনো সড়কই নিরাপদ না, আমি ট্রাফিক আইন মেনে চললেই যে আমার জীবনটা নিরাপদ হয়ে উঠবে এমন না, বরং আমাকে নির্ভর করে থাকতে হবে অন্য সব গাড়ীচালকদের উপরে,তারা নিয়ম মেনে বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে চলাচল করলে হয়তো সম্ভব আমাদের নিরাপদ সড়ক পারাপার।
রিকশা থেকে নেমে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটলাম কিছুক্ষণ ঈদের ভীড়ের ভেতরেই। কয়েক ইঞ্চির ব্যবধানে মৃত্যুকে দেখে কিঞ্চিৎ অসস্তিতে পড়েছি, ইদানিং খুব ঘনঘন দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছি, সিঁড়ি থেকে পড়েছি বার তিনেক, মৃত্যু নিয়মিত টহল দিচ্ছে মনে হয়। কতদিন এড়িয়ে থাকা যাবে বলতে পারছি না।

বাসা ফিরে থিতু হয়ে বসবার আগেই আমার এক পরিচিত পরিবারের সংবাদ পেলাম, তাদের সম্পূর্ণ পরিবারই সড়কদুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুপুরে। বাঁচবার মধ্যে বেঁচে তার ছোটো সন্তান। মনে হলো আর একটু হলে হয়তো তাদের সাথে আমার নিজস্ব মৃত্যুর সংবাদও পৌঁছাতো পরিবারের কাছে।

ভালো থাকুন সবাই, নিরাপদে বাসা গিয়ে ঈদের আনন্দ শেষে ণিরাপদে ফিরে আসুন ।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×