somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন ঈদগাহ ৩৬৯ বছর ধরে চলে আসছে ঈদের জামাত

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের মতোই ২৯ রমজান ছিল সেদিনও। ১৭২৯ সালের কথা। বাংলায় মুঘল শাসন চলছে। ১৬১০ সালে বুড়িগঙ্গাপারের ঢাকা আসীন হয়েছে রাজধানী শহরের মর্যাদায়। সুবাদার তখন দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খাঁ। ত্রিপুরা জয়ের খবর এল সুবাদারের কাছে। তিনি এত খুশি হলেন, যেন ঈদের আগেই মাতোয়ারা হলেন ঈদের আনন্দে। মুনতাসীর মামুন তাঁর পুরানো ঢাকার উত্সব ও ঘরবাড়ি বইতে উল্লেখ করেছেন, সুবাদার তত্ক্ষণাত্ হুকুম দিলেন গরিবদের মধ্যে হাজার টাকা বিতরণের। শুধু তাই নয়, ঈদের দিনে সুবাদারের আবাস ঢাকা কিল্লা থেকে ঈদগাহে যাওয়ার পুরো পথের দুই পাশে তাঁর নির্দেশে ছড়ানো হলো মুঠি মুঠি মুদ্রা। এটিই ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো ঈদগাহ। এবারও সেখানে আদায় করা হবে ঈদের নামাজ। এখন এটি ধানমন্ডির শাহি ঈদগাহ নামে পরিচিত।
‘তিনি এমনই একটি ঈদগাহ নির্মাণ করেছেন, উচ্চতায় সেটি চাঁদের টুকরার ঈর্ষার বস্তু। তার মিম্বর শুভ মিনার এবং শরীয়তের তারকার আবাসস্থল। বিশেষত ন্যায়বিচারক আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ প্রাসাদ নির্মাণ করার ক্ষমতা দান করছেন (অনু: মুনশী রহমান আলী তায়েশ)।’ মেহরাবের ওপর লাগানো শিলালিপিতে এমনই বলা হয়েছে ঈদগাহটি সম্পর্কে। আজ থেকে ৩৬৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ঈদগাহ। টিকে আছে এখনো। এখানে প্রতিবছর দুই ঈদে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। তবে শিলালিপিতে যেমন বলা হয়েছিল এর মিনারের উচ্চতা সম্পর্কে, বাস্তবে তা আর তেমন নেই। বরং এর চারপাশ দিয়ে এত সুউচ্চ ভবন উঠে গেছে যে ধানমন্ডির এই ঈদগাহ তো বটেই, এর মিনারগুলোও আর দেখা যায় না একেবারে কাছে গিয়ে না দাঁড়ালে। এটি নির্মাণ করেছিলেন মীর আবুল কাসেম, ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা ছিলেন তখন বাংলার সুবাদার। তাঁর দেওয়ান আবুল কাসেম। ঢাকার এটিই প্রাচীন ঈদগাহ এবং মুঘল আমলের যে স্থাপত্যকর্মগুলো এখনো মোটামুটি ভালোভাবে টিকে আছে, এর অন্যতম।
মুঘল আমলে সুবাদার, নায়েবে নাজিম, অমাত্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই ঈদগাহেই নামাজ আদায় করতেন। মূল শহর থেকে বেশ দূরে ছিল ঈদগাহটি। মুনতাসীর মামুন উল্লেখ করেছেন, ‘এর পাশ দিয়ে তখন বয়ে যেত পান্ডু নদীর একটি শাখা। এই শাখা জাফরাবাদে সাতগম্বুজ মসজিদের কাছে মিলিত হতো বুড়িগঙ্গার সঙ্গে।’ মুঘল শাসক ও তাঁদের অমাত্যরা বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই বুড়িগঙ্গা পারের ঢাকা শহর থেকে প্রায় এক ক্রোশ দূরের এই ঈদগাহে আসতেন নামাজ আদায়ের জন্য।
মুঘল আমলের পর ঈদগাহটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ইংরেজ আমলে পুরো এলাকাটিই জঙ্গলে ভরে ওঠে। সংস্কার না করায় ঈদগাহের প্রাচীর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। মুনশী রহমান আলী তায়েশ তাঁর তাহরিখে ঢাকা বইতে লিখেছেন, ‘আজকাল এটি ভগ্নাবস্থায় আছে। এর আশপাশের মুসলমান এবং শহরের অধিকাংশ লোক ওখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। শহরের মুসলমান মত্স্য ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর ওখানে একটি মেলার আয়োজন করেন। এতে হাজারো লোকের সমাগম হয় এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা চলে।’
এরপর বুড়িগঙ্গা দিয়ে বহু পানি গড়িয়েছে। ইতিহাসের বহু উত্থান-পতন ও ঘটনাপ্রবাহ বয়ে গেছে এই শহরের ওপর দিয়ে। তবে ধানমন্ডির শাহি ঈদগাহ টিকে গেছে বিলুপ্তির কবল থেকে। বাংলা পিডিয়ার তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৮১ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করছে। চারদিকে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ঈদগাহের পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই কেবল মুঘল আমলের। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৮ সালে সংস্কারের সময় অন্য তিন দিকের প্রাচীর নির্মাণ করেছে। প্লাস্টার করা এই প্রাচীরের শীর্ষ প্রান্ত পারস্যরীতির ‘মোরলোন’ নকশাখচিত। বন্যা বা বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য চার ফুট ভূমি উঁচু করে ঈদগাহটি নির্মাণ করা হয়েছিল। লম্বা ১৪৫ এবং চওড়া ১৩৭ ফুট। চার কোণে রয়েছে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ। পশ্চিম প্রাচীরের মাঝ বরাবর প্রধান মেহরাব। আরও দুটি ছোট আকারের মেহরাব আছে এর দুই পাশে। প্রধান মেহরাবটি অষ্টকোনাকৃতির। ভেতরের দিকে খানিকটা ঢালু খিলান আকৃতির। মেহরাবগুলো দেয়ালের আয়তাকার ফ্রেমের ভেতরে অবস্থিত। প্রধান মেহরাবের দুই দিকে আছে বহু খাঁজবিশিষ্ট নকশা করা প্যানেল। এর উত্তর পাশেই তিন ধাপবিশিষ্ট মিম্বর। ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের পাশ দিয়ে গেলে ঈদগাহের পুরো কাঠামোটি দেখা যায়। দক্ষিণ পাশে শাখা বিছিয়ে ছায়াময় করে রেখেছে বহু বছরের পুরোনো তেঁতুলগাছ। সেখানেই গাড়ি রাখার জায়গা। উত্তর দিকের প্রাচীর বরাবর মেহগনির সারি। কয়েকটি নারিকেল গাছ পশ্চিমের দেয়ালের পাশে। ভেতরের মাঠ সবুজ ঘাসে ঢাকা। সেখানেই শত শত বছর ধরে ঈদের নামাজ আদায় করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
মুঘলেরা আজ আর নেই। কিন্তু এই শহরে আজও রয়ে গেছে তাদের কালজয়ী বহু কীর্তির নিদর্শন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ হয়ে। এখানে ঈদের নামাজ শেষে সবাই চলে যাবেন নিজ গন্তব্যে, তবে মাঠটি থাকবে আগামী দিনের ঢাকার নাগরিকদের জন্য।

প্রথম আলোর পাতা থেকে নেয়া ....................
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×