অবশেষে যেতে পারলাম শাহবাগে। আবেগের কাছে। ব্যাতিক্রমি এক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রের কাছে।
রূপসীবাংলা হোটেলের কাছে বাস থেকে নামতে হলো। বাস তারপর আর শাহবাগের দিকে যেতে পারে না। শাহবাগ এখন দুরন্ত এবং চূড়ান্ত আবেগের দখলে।
দূর থেকেই দেখি আকাশের বুক চিড়ে উড়ছে একটি বিশাল পতাকা। বিশাল মানে আসলেই বিশাল – ন্যূনতম একটি টেনিস মাঠের মত।
এমন বড় কিছুর কাছে দাঁড়ালে শরীর শিরশির করে ওঠে। দিগন্তবিস্তৃত বড় মাঠ, বিশাল সমুদ্র, কিংবা পর্বত আমাদেরকে যেভাবে শিহরিত করে।
কিন্তু আজ বিশালত্বের জন্যই শুধু শিহরিত হচ্ছিলাম না। শিহরিত হচ্ছিলাম কারণ বাস থেকে নেমেই আমার মনে হলো ঐযে আমার চেতনা উড্ডীন।
শাহবাগের জমায়েতের ভিতরে ভিতরে হাঁটতে থাকি। খন্ড খন্ড মিছিলের সাথে গলা মেলাইঃ জয়বাংলা! কিংবা “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই”।
হ্যাঁ আমরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। সাথে সাথে এটাও চাই কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি শুধু তার রাজনৈতিক ভিন্নমতের জন্য রাজনৈতিক নোংরামির শিকার হয়ে অপরাধী সাব্যস্ত যেন না হন।
আমি আওয়ামী লীগকে মোটেই বিশ্বাস করি না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। বর্তমান লীগের পক্ষে সবই সম্ভব। সবই তারা পারে। চিহ্নিত রাজাকার হলেও তাকে তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র দিতে পারে প্রকাশ্য সমর্থনের বিনিময়ে। রাজাকারকে মন্ত্রি বানাতেও তাদের লজ্জা নাই যদি সেই রাজাকার এখন মেয়ের শ্বশুর হয়। এখানে আমার একটা অনুমান দেইঃ চিহ্নিত রাজাকার সাকাচৌয়ের কিছু হবে না। কারণ সে আওয়ামী লীগের রুই কাতলাদের আত্মীয়।
আমার একজন কবিবন্ধু, তার একটি কাব্যগ্রন্থও বের হয়েছে একুশের বই মেলায়, আমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেছেঃ বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা আমাদের অনেক সংগ্রামের ফসল। আমাদের গর্ব। অহংকার। চিরদিন শিখে এসেছি ক’য়ে কলা, কমলা, কাঁঠাল। অথচ কোনো কিছু না ভেবেই আজ আমরা বলছি ক’য়ে কাদের মোল্লা। আমাদের গৌরবের বর্ণমালাকে কেন ঘৃণ্য ঐ রাজাকারের নামের সাথে মিলিয়ে নেব? এটা নিতান্তই অবিবেচনাপ্রসূত শ্লোগান।
ঠিকই তো এটা তো আসলেই বোকামি হয়ে যাবে যদি যে নামটি মীর জাফর নামটির মত ঘৃণ্য হতে যাচ্ছে তার সাথে আমাদের প্রিয় ‘ক’ অক্ষরটিকে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। সুতরাং আসুন সবাই “ক’য়ে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার” না বলে বলি, “কাদের মোল্লা,কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার”।
আরেকটা কথা – আমাদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এই আন্দোলন থেকে উস্কানিমূলক কোনো শ্লোগান বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। যেমন এই শ্লোগানটাঃ “একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা কতল কর”। এই শ্লোগান আন্দোলনকে পন্ড করার একটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আন্দোলন থেকে আমরা কোনো হিংসা ছড়াব না। কোনো হানাহানি আমাদের কাম্য নয়। আমাদের আপাত উদ্দেশ্য একটাইঃ যুদ্ধাপরাধীর সঠিক বিচার। সুতরাং এক্ষেত্রে সকলের সচেতনতা কাম্য। আরে ভাই, শিবিরের ছেলেমেয়েরা তো আমাদেরই ভাইবোন কিংবা আত্মীয়স্বজন। সুতরাং আসেন তাদেরকে নয়, তাদের ভুল চেতনাকে কতল করি। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই আন্দোলনকে কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এই চেতনাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এটা হোক আমাদের শক্ত হাতিয়ার। এই চেতনাকে ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠেকায় কে। এটা তো প্রতিষ্ঠিত প্রবচন ‘হুজুগে বাঙ্গালি’। এই প্রবচন কিন্তু আমাদের আবেগের শক্তিমত্তার স্বীকৃতি। আবেগের শক্তিতে আমরা যে কোনো কিছু ভেঙ্গেচুরে তছনছ করতে পারি আবার গড়তেও পারি। দেখার বিষয় আমরা তছনছ করব নাকি গড়ে তুলব। সুতরাং সবাই আসেন শাহবাগে, আমরাই হব পজিটিভ বাংলাদেশের কারিগর।
আরও একটা কথা। এটা জামাতী এবং শিবিরদের প্রতি। এটাই কিন্তু আপনাদের শেষ সুযোগ কলঙ্ক মোচনের। আসেন প্রজন্ম চত্বরে। দেখেন, উপলব্ধি করেন উত্তাল আবেগকে। ভালকরে বোঝেন, ভাবেন; কলঙ্ক নিয়েই থাকবেন নাকি কলঙ্কমুক্ত হবেন। আপনাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি উদাত্ত আহ্বান শাহবাগে আসেন, ঘোষণা দেন কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর দায় আপনারা আর নেবেন না। আপনারা নতুন প্রজন্ম। আপনারা এদেশকে ভাল বাসেন। আপনারা চান মানবতাবিরোধী প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর উপযুক্ত বিচার হোক।
আপনারা যারা নতুন প্রজন্মের নতুন নেতা-কর্মী তারা কেন পুরান জামাতীদের অপরাধের দায় ঘাড়ে নেবেন? প্রয়োজনে নতুন দলের ঘোষণা দেন। নতুন ইশতেহার তৈরি করেন। স্বদেশী চেতনায় উদবুদ্ধ হন। মনে রাখবেন, জনগণ কিন্তু সবাইকে দেখছে। আর ইতিহাস সবই লিখে রাখছে।
# প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে বলছি, পক্ষে-বিপক্ষে সবাই মতামত দিন। আসল সত্য বের হয়ে আসুক।