somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ জেগে আছে, শাহবাগ ঘুমায় না

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে যেতে পারলাম শাহবাগে। আবেগের কাছে। ব্যাতিক্রমি এক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রের কাছে।
রূপসীবাংলা হোটেলের কাছে বাস থেকে নামতে হলো। বাস তারপর আর শাহবাগের দিকে যেতে পারে না। শাহবাগ এখন দুরন্ত এবং চূড়ান্ত আবেগের দখলে।
দূর থেকেই দেখি আকাশের বুক চিড়ে উড়ছে একটি বিশাল পতাকা। বিশাল মানে আসলেই বিশাল – ন্যূনতম একটি টেনিস মাঠের মত।
এমন বড় কিছুর কাছে দাঁড়ালে শরীর শিরশির করে ওঠে। দিগন্তবিস্তৃত বড় মাঠ, বিশাল সমুদ্র, কিংবা পর্বত আমাদেরকে যেভাবে শিহরিত করে।
কিন্তু আজ বিশালত্বের জন্যই শুধু শিহরিত হচ্ছিলাম না। শিহরিত হচ্ছিলাম কারণ বাস থেকে নেমেই আমার মনে হলো ঐযে আমার চেতনা উড্ডীন।
শাহবাগের জমায়েতের ভিতরে ভিতরে হাঁটতে থাকি। খন্ড খন্ড মিছিলের সাথে গলা মেলাইঃ জয়বাংলা! কিংবা “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই”।
হ্যাঁ আমরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। সাথে সাথে এটাও চাই কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি শুধু তার রাজনৈতিক ভিন্নমতের জন্য রাজনৈতিক নোংরামির শিকার হয়ে অপরাধী সাব্যস্ত যেন না হন।
আমি আওয়ামী লীগকে মোটেই বিশ্বাস করি না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। বর্তমান লীগের পক্ষে সবই সম্ভব। সবই তারা পারে। চিহ্নিত রাজাকার হলেও তাকে তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র দিতে পারে প্রকাশ্য সমর্থনের বিনিময়ে। রাজাকারকে মন্ত্রি বানাতেও তাদের লজ্জা নাই যদি সেই রাজাকার এখন মেয়ের শ্বশুর হয়। এখানে আমার একটা অনুমান দেইঃ চিহ্নিত রাজাকার সাকাচৌয়ের কিছু হবে না। কারণ সে আওয়ামী লীগের রুই কাতলাদের আত্মীয়।
আমার একজন কবিবন্ধু, তার একটি কাব্যগ্রন্থও বের হয়েছে একুশের বই মেলায়, আমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেছেঃ বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা আমাদের অনেক সংগ্রামের ফসল। আমাদের গর্ব। অহংকার। চিরদিন শিখে এসেছি ক’য়ে কলা, কমলা, কাঁঠাল। অথচ কোনো কিছু না ভেবেই আজ আমরা বলছি ক’য়ে কাদের মোল্লা। আমাদের গৌরবের বর্ণমালাকে কেন ঘৃণ্য ঐ রাজাকারের নামের সাথে মিলিয়ে নেব? এটা নিতান্তই অবিবেচনাপ্রসূত শ্লোগান।
ঠিকই তো এটা তো আসলেই বোকামি হয়ে যাবে যদি যে নামটি মীর জাফর নামটির মত ঘৃণ্য হতে যাচ্ছে তার সাথে আমাদের প্রিয় ‘ক’ অক্ষরটিকে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। সুতরাং আসুন সবাই “ক’য়ে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার” না বলে বলি, “কাদের মোল্লা,কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার”।
আরেকটা কথা – আমাদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এই আন্দোলন থেকে উস্কানিমূলক কোনো শ্লোগান বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। যেমন এই শ্লোগানটাঃ “একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা কতল কর”। এই শ্লোগান আন্দোলনকে পন্ড করার একটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আন্দোলন থেকে আমরা কোনো হিংসা ছড়াব না। কোনো হানাহানি আমাদের কাম্য নয়। আমাদের আপাত উদ্দেশ্য একটাইঃ যুদ্ধাপরাধীর সঠিক বিচার। সুতরাং এক্ষেত্রে সকলের সচেতনতা কাম্য। আরে ভাই, শিবিরের ছেলেমেয়েরা তো আমাদেরই ভাইবোন কিংবা আত্মীয়স্বজন। সুতরাং আসেন তাদেরকে নয়, তাদের ভুল চেতনাকে কতল করি। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই আন্দোলনকে কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এই চেতনাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এটা হোক আমাদের শক্ত হাতিয়ার। এই চেতনাকে ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠেকায় কে। এটা তো প্রতিষ্ঠিত প্রবচন ‘হুজুগে বাঙ্গালি’। এই প্রবচন কিন্তু আমাদের আবেগের শক্তিমত্তার স্বীকৃতি। আবেগের শক্তিতে আমরা যে কোনো কিছু ভেঙ্গেচুরে তছনছ করতে পারি আবার গড়তেও পারি। দেখার বিষয় আমরা তছনছ করব নাকি গড়ে তুলব। সুতরাং সবাই আসেন শাহবাগে, আমরাই হব পজিটিভ বাংলাদেশের কারিগর।
আরও একটা কথা। এটা জামাতী এবং শিবিরদের প্রতি। এটাই কিন্তু আপনাদের শেষ সুযোগ কলঙ্ক মোচনের। আসেন প্রজন্ম চত্বরে। দেখেন, উপলব্ধি করেন উত্তাল আবেগকে। ভালকরে বোঝেন, ভাবেন; কলঙ্ক নিয়েই থাকবেন নাকি কলঙ্কমুক্ত হবেন। আপনাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি উদাত্ত আহ্বান শাহবাগে আসেন, ঘোষণা দেন কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর দায় আপনারা আর নেবেন না। আপনারা নতুন প্রজন্ম। আপনারা এদেশকে ভাল বাসেন। আপনারা চান মানবতাবিরোধী প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর উপযুক্ত বিচার হোক।
আপনারা যারা নতুন প্রজন্মের নতুন নেতা-কর্মী তারা কেন পুরান জামাতীদের অপরাধের দায় ঘাড়ে নেবেন? প্রয়োজনে নতুন দলের ঘোষণা দেন। নতুন ইশতেহার তৈরি করেন। স্বদেশী চেতনায় উদবুদ্ধ হন। মনে রাখবেন, জনগণ কিন্তু সবাইকে দেখছে। আর ইতিহাস সবই লিখে রাখছে।

# প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে বলছি, পক্ষে-বিপক্ষে সবাই মতামত দিন। আসল সত্য বের হয়ে আসুক।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×