somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম যে তবুও প্রেমঃ স্বপ্ন নিয়ে বেচে রবে, বাঁচিতে সে জানে

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
শনি আখড়া থেকে মাতুয়াইল যাবার পথে একবার দেখি মুরগির দোকানের সামনে একটা বড় পলিথিন বিছানো। সেখানে মুরগির শরীরের চামড়া আর কিছু হাবিজাবি অংশ বিছানো আছে।ফার্মের মুরগি প্রসেস করার পর চামড়া আর কিছু অংশ বেচে যায়। ক্রেতারা কেউ সেই অংশ চেয়ে নেয় না। ডেসিং করা মুরগি পলিথিনে ভরে নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে কিছুই ফেলা হয় না। এই আপাত অপ্রয়োজনীয় অংশও বিক্রি হয়। দোকানের সামনে গরুর গোশত কুরবানীর ঈদের সময় যেভাবে ভাগ করে রাখা, সেইভাবে ভাগ করে রাখা আছে। দেখে মনে হচ্ছে, এক এক ভাগ করে বিক্রি হচ্ছে সেই সব। কোন ক্রেতা দেখি নাই আশেপাশে। তবে বিক্রি যে হয় এইসব বস্তু –সেটা ত নিশ্চিত।

বিভিন্ন টক শো এবং পত্র পত্রিকায় আমি কিছু মানব-দরদী মানুষকে দেখেছি, এই প্রশ্ন করতে, আমাদের দরিদ্র মানুষদের আমিষের চাহিদা কিভাবে পূরন হয়? বেশিরভাগ ফকির নাকি কুরবানীর ঈদ ছাড়া গোশতের দেখা পায় না। কিন্তু যে শিশুগুলো বড় হচ্ছে সমাজের অন্তজ অংশে- তাদেরও ত আমিষের চাহিদা আছে। আমিষ না পেলে তারা বড় হবে কিভাবে?

সেইদিন আমি আমিষের একটা উৎস এর কথা জেনে আসলাম। এরাও তাহলে মুরগি(!) খেয়ে বড় হয়...

০২
চাঁদপুরের অফিস পাড়ায় রাস্তার পাশে একটা কারিগর আছে। পেয়াজু-আলুর চপ-ছোলা বিক্রি করে রাস্তার পাশে। আমি একদিন কি মনে করে যেন খেলাম একটা চপ। চপ মুখে দিয়ে মনে হলো, এই খাদ্যের উৎস পৃথিবী নয়। বেহেস্তের ফেরেশতারা এই খাবার বানাচ্ছে। সামান্য দুই টাকা করে দাম। কিন্তু ভিতরে মাংসের একটু আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আলুর যা দাম এরপর মাংশ দিয়ে ভেজে বিক্রি করে সে লাভ করছে কিভাবে আমার মাথায় ঢুকল না। তবে একটা জিনিস বুঝে গেছি সাথে সাথে। আমাকে এই বস্তু বার বার খেতে হবে। সেইদিন আমি গোটা দশেক চপ খেলাম।
এরপর থেকে যখন আমি ছুটিতে চাদপুর যেতাম, সেই দোকানটা খুজে বের করে চপ খেতাম। প্রতিদিন খেতে খেতে এমন অবস্থা হত যে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হত। এরপরেও থামাতাম না।

একদিন কথা প্রসঙ্গে চাদপুরের কিছু বন্ধুকে বলছিলাম সেই দোকানের কথা। নাসিম নামের আমার সেই বন্ধু চপ খাবার কথা শুনে বলল, করছোস কি!! হারামজাদারা ত ফার্মের মুরগির চামড়া দিয়ে এই চপ বানায়।

তার মামা বা কাকা ফার্মের মুরগির ব্যবসা করে। এই ধরনের চপ-ছোলা বিক্রেতারা নাকি রাতের বেলা এসে মরা মুরগি আর ড্রেসিং করা মুরগির চামড়া আর হাবিজাবি অংশগুলা কিনে নিয়ে যায়। পরদিন সেগুলো দিয়ে চপ বানায়...

এই কথা জানার পর কয়েকটা ছুটি গেল। আমি চপ খেতে যাই না। একদিন ক্ষুধার্ত বিকেলে সেই দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। ভাজার আওয়াজ আর গন্ধ পাচ্ছি। গন্ধে মাতোয়ার হয়েই ঠিক করলাম, একটা খেয়ে দেখি। শুধু একটা খাব।
একটা খেলাম। এরপর মনে হল, যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। একটা খেলাম- দুইটাও খাই। দুইটা খাওয়ার পর, আরো কয়েকটা খেলাম। এরপর আরো খেলাম...


পুরান ভালোবাসা ফিরে আসল... ভালোবাসার জোয়ারে সব ঘৃনা ভেসে গেলো...


০৩
আনিসুল হকের উপন্যাস পড়ছি। নাম- এতদিন কোথায় ছিলেন। জীবনানন্দকে নিয়ে লেখা উপন্যাস। বেচারা নতুন কোন তথ্য জোগাড় করতে পারে নাই। কয়েকটা বই পড়ে- সেগুলোর থেকে একটা সারাংশ টাইপ তৈরী করে জিনিস দাড় করিয়েছে। সে জানে ভিতরে মাল কম, তাই আকর্ষনীয় করার জন্য জীবনানন্দের যৌন জীবনের কথা লিখে দিয়েছে। কিভাবে বেচারা বউয়ের কাছ থেকে রাতে লাত্থি খেয়ে সোফায় বসে বসে হস্ত মৈথুন করেছে- তার বর্ননা আছে।

জীবনানন্দ চাকুরী জীবনে ব্যর্থ- প্রেমিক হিসাবে ব্যর্থ। আমরা সবাই সেটা জানি। কিন্তু স্বল্প-পরিচিত কোন এক কবি ভক্ত রমনীর কথা ভেবে ভেবে রাতের বেলা হস্ত মৈথুন করছে- এটা কোনদিন ভাবি নাই। এতবড় looser ছিল ব্যাটা। আনিসুল হকের উপন্যাসটা পড়ে মনে হল, ধূসর পান্ডুলিপির কোন কবিতা আর পড়তে ভালো লাগবে না। ব্যাটাকে হাজার বছর ধরে পথ হাটা কবি বলে মনে হচ্ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল লুঙ্গিতে ভেজা দাগ লুকিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত এক মধ্য বয়সের লুল পুরুষ।

কয়েকদিন পর জীবনানন্দ সমগ্র পড়ার সুযোগ এলো। রূপসী বাংলার একটা কবিতা পড়তে শুরু করেছি- হঠাৎ আবিষ্কার করলাম- সেই পুরানো আবেগ- সেই ভালোবাসা ফিরে আসছে। আশ্চর্য যে এতকিছু জানার পরও ভালোবাসার কোন কমতিবোধ করলাম না। গভীর আবেগে রুপসী বাংলার কবিতা পড়লাম। চোখ ভিজে আসল...


[ এরপর হতে আমি আসিনুলের আর কিছু পড়ব না বলে ঠিক করেছি। এমনিতেও আমি আনিসুল হকের কোন বই কিনে পড়ি না। নেট থেকে নামিয়ে পড়ি। নতুন প্রতিজ্ঞা হলো, নেট থেকে নামিয়েও আর আনিসুল হকের কিছু পড়ব না। বদের হাড্ডি আনিসুল হক আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে আজে বাজে কথা বলেছে... ]
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×