somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ঈদ শপিং

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের গাড়ির ড্রাইভার উচ্চশিক্ষিত, মাস্টার্স ডিগ্রি করা। বিষয়ও ফেলে দেয়ার মতো না, অর্থনীতি। দেখতেও মাশাল্লাহ। ;)
এখনও যারা বোঝেন নাই, তাদের জন্য বলি-এই ড্রাইভারটা আসলে আমি। এই রোজার সময় আমাকে ড্রাইভারেরই কাজ করতে হয়। এমনিতে আমার অফিসটা মজার। যে কোনো অফিসে যাই বলে বাসা থেকে বের হওয়া যায়। আর অফিসে যদি বলি একটা গুরুত্বপূর্ণ নিউজ পেতে সোর্সের সঙ্গে দেখা করতে হবে তাহলেও যে কোনো সময় বাইরে থাকা যায়। সপ্তাহের ৬দিন অফিসে যাই বইলা বউরে এড়াইতে পারছি। B-)
কিন্তু শুক্রবার পুরা ধরা। শপিং-যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে না, ড্রাইভার হওয়ার জন্য। আগেই একবার বলছিলাম, টিপাইমূখ বাঁধ, তেল-গ্যাস চুক্তি কিংবা ওবামার স্বাস্থ্যনীতি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাসায় আমিই নেই। আর রান্না কি হবে, ছেলে-মেয়েরা কোথায় পড়বে কিংবা ঈদের সময় কার জন্য কী কিনতে হবে-এ ধরণের ছোট খাট সিদ্ধান্ত আমার বউই নেয়।
এইটা একটা পুরানা জোকস হইলেও এর অন্তত অর্ধেক যে সত্যি তা টের পাইলাম শপিং-এ যাইয়া। জোকসটা হইল-শপিং আর ‘ওইটা আর কী’ ছেলেরা পাঁচ মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারে না। আমিও শপিং-এ যাই, ৫ মিনিটের মধ্যে আগ্রহ হারাইয়া ফেলি। :|
গেছি সানরাইজ প্লাজায়, তিনতলা। বউ ঢুকলো চৈতিতে। রাশি রাশি মেয়ে। কোনটা আমার বউ আর খুঁজে পাই না। মার্কেটে যাইয়া বউ হারাইয়া ফেললাম। কী আর করি খুঁজে বের করলাম সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে। যত কাছে যাওয়া যায় ততটাই যাইয়া বললাম-‘আপনার সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলতে পারি।’ ভয়ে ছিলাম, আবার বলে বসে নাকি- বলেন আংকেল। তাকিয়ে দেখলাম চোখ দুটা মাছের মতো, তেমন কোনো ভাষা নাই। একটু কপাল কুচকে বললো, ‘কী কথা বলবেন, আর কেন বলবেন।’ বললাম, আমি আমার বউকে খুঁজে পাচ্ছি না। এখন খুব সুন্দরী কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি দেখলে আমার বউ ঠিকই কাছে চলে আসবে।
সাথে সাথে ফল। বউ আমারে টান দিয়ে নিয়ে গেল উল্টো দিকের রং-এ। যাইতে যাইতে বললাম, চৈতিই তো ভাল, সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা যায়। গোপনে কই-এইটা কিন্তু মাথা খাটাইয়া বলছি। এই কথা শুইনা যদি বউ আমারে নিয়া শপিং-এ আর না আসে। ;)
গেলাম রং-এ। নতুন একটা বুদ্ধি পাইলাম। একটা শর্ট পাঞ্জাবি ধইরা বললাম এইটা আমি কিনবো। কিনলাম। বউ খালি একবার চিপায় নিয়া কইলো-তোমার জন্য কিছু কিনতে আসছি নাকি?
এর পর গেলাম পাশেই নবরূপায়। নবরূপায় কখনো আমি সুন্দরী মেয়ে দেখি না। এইটা আমার আবিস্কার। ঐ খানেও আমি আগের বুদ্ধি ধরলাম। একটা সাদার মধ্যে কাজ করা শার্ট ধইরা বললাম, এইটা আমার পছন্দ হইছে। পুরা নবরূপায় ঐ একটা শার্টই কেনা হইলো। বউ হালকা ঝাড়ি দিয়া কইলো তোমারে আর নিয়া আসা যাবে না। বুঝলাম বুদ্ধি কাজে লাগতাছে।:P
নতুন আরেকটা বুদ্ধির বাইর করছিলাম। আর সেইটা হইল একটা ঝগড়া লাগানো। সফলও হইলাম। চোখ কান খোলা রাখলে অজুহাতের অভাব হয়না। একটা ঝগড়া লাগাইতে পারলে আমি নিশ্চিত ছিলাম এক সপ্তাহ অন্তত শপিং থেকে বাইচা যাবো। গত মঙ্গলবার এক অজুহাত আপনিই আইসা ধরা দিল। আমিও জন্টি রোডস-এর মতো খপ কইরা ক্যাচটা ধরলাম। তারপর দেখি বউ কথা বলে না। আমিও মহা ফূর্তিতে দিন কাটাইতে লাগলাম। অফিস করি, সিনেমা দেখি, ঈদ আর পূজা সংখ্যা পড়ি। এইসব কইরা শুক্রবারও পার কইরা দিলাম। বউ মনে হয় ঘটনা টের পাইয়া রোববার থেইকা নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করছে। :((
আগামি শুক্রবার কেমনে শপিং এড়াবো ভাবতাছি। কারো কাছে কী কোনো বুদ্ধি আছে?? :)

মেয়েদের কেনাকাটা নিয়া একটা ফাও গল্প কই। ৬ তলা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এই স্টোরে কেবলমাত্র স্বামী বিক্রি হয়। মেয়েরা যায়, পছন্দ হলে স্বামী কিনে নিয়ে বাসায় চলে আসে। তবে শর্ত হচ্ছে একবার এক তলা দেখে অন্য তলায় চলে গেলে আবার আগের জায়গায় ফিরতে পারবে না। মানে আগেরটার সাথে যাচাই করা যাবে না।
শেফালী রানী গেল এই স্টোরে, স্বামী কিনতে। এক তলায় যেয়ে দেখে লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের একটা চাকরী আছে। শেফালী ভাবলো খারাপ না, চাকরি তো একটা আছে। তারপর সে মনস্থির করতে না পেরে দোতালায় গেলো।
দোতালায় লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে এবং তারা বাচ্চা পছন্দ করে। শেফালী রাণীর পছন্দ হইল। চাকরিও করবে আবার বাচ্চা পালবে। বাহ..। তাহলে একবার তিনতলায় দেখে আসা যাক। শেফালি রানী গেল তিন তলায়।
তিন তলায় লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে এবং ছেলেগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। এইবার শেফালী রানী ভাবলো এর পরের তলায় তাহলে আরও ভাল ছেলে পাওয়া যাবে।
গেল চার তলায়। এখানে লেখা আছে--এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে, ছেলেগুলো দেখতে খুব সুন্দর এবং ঘরের কাছে সাহায্য করে।
শেফালী রানী ভাবলো এরপরের তলায় আরও ভাল স্বামী পাওয়া যাবে। গেল সেখানে। এখানে লেখা দেখলো-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে, ছেলেগুলো দেখতে খুব সুন্দর, ঘরের কাছে সাহায্য করে এবং অত্যন্ত রোমান্টিক।
তারপরেও শেফালী রানীর আগ্রহ কমলো না। ভাবলো ৬ তলায় নিশ্চই আরো ভাল ছেলে আছে। ৬ তলার এক ছেলেকেই কিনে নেওয়ার আশা করে গেল ৬ তলায়।

৬ তলা পুরোটা খালি। ডিসপ্লেতে একটি ছেলেও নেই। খালি লেখা রয়েছে, ‘আপনি এই ফ্লোরের ৬,৮৭৫,৯৫৩,০১২ নম্বর ভিজিটর। আপনি কিভাবে আশা করেন এখনও এই ফ্লোরে কোনো ছেলে অবশিষ্ট থাকবে!!

শিক্ষা: মেয়েদের সন্তুষ্ট করার সাধ্য কারোই নেই।:((

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯
১০৪টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×