somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানব সম্পর্কে ইসলামের ধারণা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ ব্যাপারে ইসলামের আদর্শ দুনিয়ার অন্যান্য সমগ্র ধর্মীয় ও দার্শনিক নীতি হতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। ইসলাম বলে যে, আল্লাহ তায়ালা মানবাত্মাকে এ পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। কিছু ইখতিয়ার ও স্বাধীনতা, কিছু কর্তব্য, কিছু দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করেছেন এবং এসব পালন করার জন্য সর্বোত্তম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দেহও তাকে দান করেছেন। এ দেহ তাকে দেয়া হয়েছে এ উদ্দেশ্যে যে, তার স্বাধীনতার প্রয়োগ এবং তার সমস্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য তার দেহকে ব্যবহার করবে। অতএব এ দেহ তার আত্মার কারবার নয়, এটা তার কারখানা। এ আত্মার কোন উন্নতি যদি সম্ভব হয়, যোগ্যতার বাস্তব পরিচয় দেয়ার ভিতর দিয়েই সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়া এ দুনিয়া কোন শক্তির ক্ষেত্রও নয় -- মানবাত্মা এখানে কোনরকমে বন্দী হয়ে পড়েছে এরূপ মনে করা যেতে পারে না। বরং এটি একটি কর্মক্ষেত্র, কাজ করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। এখানকার অসংখ্য জিনিস তার অধীন করে দেয়া হয়েছে।

এখানে আরো অনেক মানুষকে এ খিলাফতের বিরাট দায়িত্ব পালন করার জন্য তার সঙ্গে সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে প্রকৃতির সাধারণ দাবি অনুযায়ী তামাদ্দুন, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং জীবনের অন্যান্য শাখা-প্রশাখাকে তারই জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটা তার জন্য একটা পরীক্ষাগার। জীবনের প্রত্যেকটা দিক ও প্রত্যেকটা বিভাগ সেই পরীক্ষার একেকটা ‘প্রশ্নপত্র’ বিশেষ। ঘর, মহল্লা, হাট-বাজার, অফিস, কারখানা, শিক্ষাগার, থানা, আদালত, সৈন্য শিবির, পার্লামেন্ট, সন্ধি সম্মেলন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র -- সবকিছুই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্র। এটা পূর্ণরূপে লিখে দেবার জন্যই তাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ যদি এদের মধ্যে কোন বিষয়ে পূর্ণ সময় তার এবং তার উত্তর না দেয় কিংবা অধিকাংশ প্রশ্নপত্রের কোন উত্তরই যদি সে না লেখে তবে তার ফলে শূন্য ছাড়া সে আর কী-ই বা পেতে পারে ? সে যদি তার সমস্ত লক্ষ্যকেই এ পরীক্ষা দেয়ার কাজে নিযুক্ত করে আর যত প্রশ্নপত্রই তাকে দেয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটার সে কিছু না কিছু উত্তর লিখে দেয়, তবেই সে সফলতা এবং উন্নতি লাভ করতে পারে, অন্যথায় তা কিছুতেই সম্ভব নয়।

বৈরাগ্যবাদের প্রতিবাদ

ইসলাম এভাবে জীবনের বৈরাগ্যবাদী ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছে এবং মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দুনিয়ার বাহির হতে নয়, এর মধ্য হতেই বের করেছে। আত্মার ক্রমবিকাশ ও উৎকর্ষ এবং সাফল্য-সার্থকতা লাভ করার আসল উপায় ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনসমুদ্রের মাঝখানেই অবস্থিত -- তার কিনারে নয়। ইসলাম আমাদের আত্মার উন্নতি ও অবনতির কী মাপকাঠি উপস্থিত করে তাই বিচার্য। বস্তুত এ প্রশ্নের জবাব খিলাফতের পূর্ব বর্ণিত ধারণার মধ্যেই বর্তমান রয়েছে। ‘খলিফা’ হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালার সামনে মানুষ তার পরিপূর্ণ জীবনের কার্যাবলির জবাবদিহি করতে বাধ্য। পৃথিবীতে যে স্বাধীনতা ও বিবিধ উপায়-উপাদান তাকে দান করা হয়েছে, সে সবগুলোকে আল্লাহর মর্জি অনুসারে ব্যবহার করাই তার কর্তব্য। যে শক্তি ও যোগ্যতা তাকে দেয়া হয়েছে, তা সে আল্লাহ তায়ালার অধিক হতে অধিকতর সন্তোষ লাভের জন্য ব্যয় করবে। অন্য মানুষের সঙ্গে তাকে যেসব সম্পর্ক সম্বন্ধ দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে, তাতে সে আল্লাহর মনোনীত নীতি অবলম্বন করবে। মোটকথা নিজে সমগ্র চেষ্টা-সাধনা ও শ্রম-মেহনত ব্যয় করে পৃথিবী এবং তার মধ্যস্থিত মানুষের জীবনকে এত সুন্দর ও সুশৃংখল করবে, যত সুন্দর ও শৃংখলাপূর্ণ অবস্থায় তাকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান। মানুষ যত বেশি দায়িত্বজ্ঞানের অনুভূতি, কর্তব্যপরায়ণতা, আনুগত্য এবং মালিকের সন্তুষ্টি লাভের আগ্রহ সহকারে এ কর্তব্য পালন করবে, আল্লাহ তায়ালার ততখানি নৈকট্য সে লাভ করতে পারবে। বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভই হচ্ছে আধ্যাত্মিক উন্নতি। ঠিক এর বিপরীত সে যতখানি অলস, কর্মবিমুখ কর্তব্যজ্ঞানহীন হবে, অথবা দুর্বিনীত, বিদ্রোহী এবং অবাধ্য হবে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ হতে সে ততখানি বঞ্চিত হবে। আর আল্লাহর নিকট হতে দূরে পড়ে থাকলেই ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় আধ্যাত্মিক অধপতন।

পার্থিব জীবনেই আত্মার উন্নতি

উপরের ব্যাখ্যায় একথা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী ধার্মিক ও দুনিয়াদার -- উভয় ব্যক্তিরই কর্মক্ষেত্র এক, এরা উভয়ে একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে। এবং সত্য বলতে গেলে দ্বীনদার ব্যক্তি দুনিয়াদার অপেক্ষাও অনেক বেশি কর্মব্যস্ত থাকবে। ঘরের চার প্রাচীর হতে শুরু করে আন্তর্জাতিক কন্ফারেন্স পর্যন্ত জীবনের যত ক্ষেত্র এবং ব্যাপারই হোক না কেন, এর যাবতীয় দায়িত্ব দ্বীনদার ব্যক্তি দুনিয়াদার ব্যক্তির শুধু সমান নয় বরং বেশি পরিমাণে নিজের উপর চাপিয়ে নেবে। তবে যে জিনিস এ উভয় ব্যক্তির পথকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্কের স্বরূপ। দ্বীনদার ব্যক্তি যা-ই করবে তা ঠিক এ অনুভূতি নিয়েই করবে যে, আল্লাহর নিকট হতেই তার উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যই সে কাজ করবে এবং আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত আইন অনুসারেই তা করবে। পক্ষান্তরে দুনিয়াদার ব্যক্তি সমস্ত কাজই করবে দায়িত্বহীনভাবে এবং নিজের ইচ্ছামত। এ পার্থ্যকই দ্বীনদার ব্যক্তির সমগ্র পার্থিব জীবনকে সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক জীবনে পরিণত করে এবং দুনিয়াদার ব্যক্তির সমগ্র জীবনকে আধ্যাত্মিকতার আলো হতে বঞ্চিত করে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×