somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শয়তানের বিপদ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জায়গাটা নরক। প্রাসাদ পান্ডেনিয়ামে শয়তান তার খাস কামরায় বসে আছেন। তার বিশ্বাস, স্বর্গে থেকে দাসত্ব করার চেয়ে নরকে রাজত্ব করা অনেক ভাল। আলো ঝিকিমিকি ডেস্কটার ওপর ঝুঁকে ইন্টারকমের সুইচ টিপলেন তিনি।
অপর প্রান্ত থেকে লিলিথ জিজ্ঞেস করল,‘জ্বী হুজুর, বলুন’। এই লিলিথ শয়তানের প্রাইভেট সেক্রেটারি।
শয়তান জিজ্ঞেস করলেন, ‘লিলিথ, আজ ক’জন এল?’
-মাত্র চারজন হুজুর। আমি কি এক এক করে তাদের পাঠাব?
-হ্যাঁ, পাঠাও, তবে একটু পর।
-জ্বী, ঠিক আছে।
-আচ্ছা, ওরা এখন কোথায় আছে?
-হুজুর, আমার ঘরে বসিয়ে রেখেছি।
-তুমি ওদেরকে ভাল করে পরীক্ষা করেছ তো?
-জ্বী
-আচ্ছা, এই চারজনের মধ্যে কাউকে কি তোমার একেবারে নিঃস্বার্থ বলে মনে হয়েছে?
-জ্বী হুজুর, একজনকে নিঃস্বার্থ বলে মনে হয়েছে।
শয়তান প্রচণ্ড একটা ঝাঁকি খেলেন। কী! তিনি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। কি বললে তুমি?
-ঘাবড়াবার কিছু নেই, হুজুর । কারন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করার সম্ভাবনা খুবই কম। কোটিতে মনে হয় হয়তো একজনকে পাওয়া যেতে পারে। আর এই ইচ্ছার সঙ্গে স্বার্থের কোন সম্পর্ক থাকা যাবে না। একেবারে নিঃস্বার্থ হতে হবে। তাই না হুজুর?
-হ্যাঁ। শেষ আর ইচ্ছা, এই দুটো শব্দ শুনে নরকের অসহ্য গরমের মধ্যেও শয়তান থরথর করে কাঁপছেন। তার মনে একটাই ভাবনা, যদি কখনও কোন লোক এমন এক ইচ্ছার কথা বলে, যার সঙ্গে স্বার্থের কোন সম্পর্ক নেই। তখন কি হবে?
হ্যাঁ, তখনই শয়তানের জীবনে নিদারুণ এক বিপর্যয় নেমে আসবে। সেটাকে মহাবিপদ বললেও কিছু বলা হয় না। তার সমস্ত শক্তি কেড়ে নেয়া হবে। একরকম বলতে গেলে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হবে। এই অবস্থায় তাকে এক হাজার বছর কাটাতে হবে। এক হাজার বছর পর তিনি শিকল খুলে বের হয়ে আসতে পারবেন, তবে তারপরও কথা আছে। অনন্তকালের ভবিষ্যত দিনগুলোতে কোন স্বাভাবিক কাজকর্মই তিনি করতে পারবেন না। সমস্ত ক্ষমতা এতটাই খর্ব হবে যে তখন তার কাছে আর কেউ আসবেই না। শক্তিমদমত্ত আগের সেই শয়তানকে কখনোই আর খুজে পাওয়া যাবে না। উফ, অসহ্য! অসহ্য সেই অবস্থা! শয়তান এটা চিন্তাই করতে পারেন না।
অবশ্য এরকম কিছু ঘটা খুবই কঠিন। কোটির মধ্যে হয়তো বা একজন সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে......আবারও শয়তানের কাঁপুনি শুরু হলো।
দূর, শুধু শুধু এসব চিন্তা করে মাথা খারাপ করার কোন মানেই হয় না। লিলিথই ঠিক বলেছে, সম্ভাবনা খুবই কম। কম মানে কি, নেই বললেই চলে। মানুষ কখনও পুরোপুরি নিঃস্বার্থ হতে পারে না । শয়তান নিজেই নিজের মনকে বোঝাচ্ছেন।
শয়তানের কাছে হাজারে মাত্র একজন আত্মা বিক্রি করতে আসে। এরা শুধু ইচ্ছা পূরণের জন্যে আত্মাটা বিক্রি করে ফেলে। শয়তান মর্ত্যলোকে এদের ইচ্ছা পূরণ করে দেন। তার পরিবর্তে তাদের আত্মাগুলো মুত্যুর পর শয়তানের কাছে চলে আসে। আর এই সমস্ত আত্মাদের নরকবাসই হয় চিরস্থায়ী।
এদের মধ্যে কেউ কেউ নিঃস্বার্থ ইচ্ছা প্রকাশ করে না, তা নয়। কিন্তু সেসব এতই নগণ্য যে শেষ ইচ্ছার ধারেকাছে ঘেষতে পারে না। বোধহয় আরও লক্ষ লক্ষ বছর এভাবেই কেটে যাবে। কেউই কোনদিন শয়তানের কাছে শেষ ইচ্ছাটা বলবে না । এই পর্যন্ত যারা তার কাছে আত্মা বিক্রি করতে এসেছে তারা কেউই এই ভয়ানক ইচ্ছার ধারে কাছে যেতে সাহস পায়নি। কাজেই তিনি নিশ্চিতই থাকতে পারেন। শয়তান আবারও ইন্টারকমের সুইচ টিপলেন।
অপর প্রান্ত থেকে লিলিথের কণ্ঠ ভেসে এল। ‘জ্বী, বলুন হুজুর।’
-লিল, এবার তুমি ওদেরকে এক এক করে পাঠাতে পারো।
-জ্বী, ঠিক আছে।
-আর শোনো, যাকে তোমার নিঃস্বার্থ বলে মনে হচ্ছে তাকেই আগে পাঠাও। ওর সঙ্গেই আগে বসি।
-জ্বী, হুজুর।
শয়তান আরও একটা সুইচ টিপে লিলিথের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন।
এরপর শয়তানের ঘরে যে লোকটা ঢুকল, দেখে মোটেও তাকে ভয়ানক বলে মনে হলো না। লোকটা খুব ছোটখাট। দেখে মনে হচ্ছে, সেই যেন ভয়ে কাতর। লোকটার দিকে তাকিয়ে শয়তান গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এখন কোথায়, জানো? ’
-হ্যাঁ, জানি। ভয়ে ভয়ে বলল সে।
-আমি কে জানো?
-হ্যাঁ।
-শর্তের কথা সব জানা আছে?
-জ্বী, আছে।
-যেমন।
-আজ আমি আপনাকে যে ইচ্ছার কথা বলব, সেটা আপনি পূরণ করবেন ঠিকই, কিন্তু তার বিনিময়ে মৃত্যুর পর আমার আত্মা আপনার হস্তগত হবে, এই তো?
-হ্যাঁ, তাই। এবার বলো তুমি কি চাও।
বেটে লোকটা বলল, ‘আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরেই আবার........। ’
-দেখো, আমি কোন অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা শুনতে চাই না । যা বলবার পরিস্কার করে বলো। আমার সময়ের অনেক দাম।
-জ্বী, মানে, বলব? বলেই ফেলি, না?
-হ্যাঁ, বলেই ফেলো।
-আমার ইচ্ছাটা পূরণ হবে তো?
গম্ভীর সুরে শয়তান বললেন, ‘হবে মানে, আলবত হবে। ’
তাহলে শুনুন। আমি চাই, আপনি আমার মধ্যে কোনরকম পরিবর্তন আনবেন না। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শয়তান, হারামি, বুদ্ধিহীন আর দুঃখী মানুষে পরিণত করুন আমাকে। এটাই হচ্ছে আমার শেষ ইচ্ছে।
প্রচণ্ড ভয় পাওয়ায় শয়তানের কণ্ঠ থেকে তীক্ষè আর্তনাদ বেরিয়ে এল।




মূল: ফ্রেডারিক ব্রাউন।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×