somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের আধ্যাত্মবাদ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের আত্মিক নীতি কী ? জীবনের পরিপূর্ণ ব্যবস্থার সঙ্গেই বা তার সম্পর্ক কী ? এ বিষয়টি ভাল করে বুঝার জন্য আধ্যাত্মবাদ সম্পর্কে ইসলামের ধারণা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও দার্শনিক ধারণার পারস্পরিক পার্থক্য সর্বপ্রথম বুঝে নিতে হবে। এ পার্থক্য ভাল করে না বুঝার দরুন ইসলামের আধ্যাত্মবাদ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মানুষের মস্তিষ্কে অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন সব ধারণা ঘুরপাক খেতে থাকে যা সাধারণত এ ‘আধ্যাত্ম’ শব্দটির সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। এ সমস্যায় পড়ে মানুষ ইসলামের সঠিক আধ্যাত্মবাদকে খুব সহজে বুঝে উঠতে পারে না-যা ‘আত্মার’ জানাশোনা পরিসীমাকে অতিক্রম করে জড় এবং দেহের রাজ্যেও আধিপত্য বিস্তার করে, শুধু আধিপত্য বিস্তারই নয় তার উপর প্রভুত্বও করতে চায়।

পার্থিব জীবন ও আধ্যাত্মবাদের দ্বৈততা

দর্শন ও ধর্মজগতে সাধারণ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আত্মা এবং দেহ দু’টি পরস্পর বিরোধী জিনিস, উভয়ের ক্ষেত্র ও পরিবেশ আলাদা, উভয়ের দাবি বিভিন্ন বরং পরস্পরবিরোধী এবং এই উভয় ক্ষেত্রেই একই সঙ্গে উন্নতি লাভ কখনো সম্ভব নয়। দেহ এবং বস্তুজগত ‘আত্মার’ কারাগার বিশেষ, পার্থিব জীবনের সম্পর্ক-সম্বন্ধ এবং মনের ইচ্ছা-বাসনার হাতকড়ায় আত্মা বন্দী হয়ে পড়ে। দুনিয়ার কাজ-কারবার ও লেনদেনের লৌহনিগড়ে আবদ্ধ হয়ে ‘আত্মার উন্নতি’ শেষ হয়ে যায়। এ ধারণার অবশ্যাম্ভাবী ফলে আধ্যাত্মবাদ এবং পার্থিব জীবনের পথ সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন হয়ে গিয়েছে। যারা পার্থিব জীবন অবলম্বন করল, তারা প্রথম পদক্ষেপেই নিরাশ হয়ে পড়ল এবং মনে করতে লাগল যে, এখানে আধ্যাত্মবাদ তাদের সঙ্গে কোনক্রমেই চলতে পারবে না। হতাশাই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত জড়বাদের পঙ্কিল আবর্তে নিমজ্জিত করেছে।

সমাজ, তামাদ্দুন, রাজনীতি, অর্থনীতি -- মানুষের জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগ আধ্যাত্মবাদের নির্মল আলোক হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়ে গেল। আর সর্বশেষে বিশাল পৃথিবী যুলুম-নিপীড়নের সয়লাবে রসাতলে গেল। অন্যদিকে যারা আধ্যাত্মিকতার অনুসন্ধানে আত্মনিয়োগ করল, তারা নিজ নিজ ‘আত্মার’ উন্নতির জন্য এমন সব পথ খুঁজে বের করল, এ দুনিয়ার সঙ্গে যার কোনই সম্পর্ক নেই। কারণ তাদের দৃষ্টিতে আধ্যাত্মিক উন্নতির এমন কোন পথ নেই, যা দুনিয়ার মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে। তাদের মতে আত্মার উন্নতি সাধনের জন্য দেহের নিপীড়ন বা নির্যাতন অত্যন্ত জরুরি। এ কারণেই তারা এমন সব অত্যধিক কৃচ্ছ্রসাধনের নিয়ম উদ্ভাবন করল, যা ‘নফস' কে নিঃসন্দেহে ধ্বংস করে দেয় এবং দেহকে করে দেয় অবশ ও পঙ্গু। আধ্যাত্মিক দীক্ষার জন্য নিবিড় অরণ্য, পর্বত গুহা এবং এ ধরনের নির্জন কুটির প্রাঙ্গণকেই উপযুক্ত স্থান বলে মনে করল, যেন সমাজের কর্ম-কোলাহল তাদের এ ধ্যান-তপস্যার গভীর একাগ্রতায় বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে না পারে। আত্মার ক্রমবিকাশ সাধনের জন্য তারা দুনিয়া ও দুনিয়ার এ বিপুল কর্মমুখরতা হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং পার্থিব জগতের সংস্পর্শে আসার সম্পস্ত সম্পর্ক ও সম্বন্ধকে সম্পূর্ণ ছিন্ন করে ফেলল। আত্মার উন্নতির জন্য এটা ভিন্ন অন্য কোন পথই তারা সম্ভব বলে মনে করল না।

পূর্ণতার দু'টি মত

দেহ ও আত্মার এ দ্বৈততা এবং ভিন্নতা মানুষের পূর্ণতা লাভের দু'টি ভিন্ন মত ও লক্ষ্য সৃষ্টি করেছে। একদিকে হচ্ছে পার্থিব জীবনের পূর্ণতা ও সার্থকতা -- অর্থাৎ শুধু জড় ও বাস্তব সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়া। মানুষ যখন একটা উত্তম পাখি, একটা উৎকৃষ্ট কুমির, একটা ভাল ঘোড়া এবং একটা সার্থক শৃগাল হতে পারেব, তখনই সে পূর্ণতার একেবারে চরমতম স্তরে উন্নীত হয়েছে বলে মনে করতে হবে। অন্যদিকে হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবনের পরিপূর্ণতা। মানুষ কিছু অতিমানবিক ও অস্বাভাবিক শক্তির মালিক হলেই তার লাভ হলো বলে মনে করা হয়। আর মানুষের একটা ভাল রেডিও সেট, একটা শক্তিমান দূরবীণ এবং একটা সূক্ষ্মদর্শী যন্ত্রে পরিণত হওয়া কিংবা তার দৃষ্টি এবং তার কণ্ঠ নি:সৃত শব্দের একটা পরিপূর্ণ ঔষধালয়ের কাজ দিতে শুরু করাই হয়েছে এ পথে পূর্ণতা লাভের একেবারে সর্বশেষ স্তর।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×