somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু বৈষম্যের শুরু আর শেষ কোথায়??

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন বিখ্যাত চিত্র শিল্পী তার একটা ছবির বিনিময় পেয়েছিলেন কয়েক লক্ষ ডলার। কেন কি আছে এতে?? রহস্য উৎঘাটিত হয় তার মৃত্যুর পর নিজের লেখা ডায়েরী থেকে। এর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশেও একটা নাটক হয়েছিল। চিত্র শিল্পী নারী ও শিশুদের ধরে নিয়ে আসত। তারপর তাদের রাখা হতো অনাহারে। বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো আর সেই মুহুর্তের ভয়ার্ত মুখের ছবি আঁকত। সেই ছবিটা তারই একটি। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই ছবি গুলো আপনি কিভাবে আকলেন? তিনি উত্তরে বললেন,"তাদেরকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।" সেদিন তার শুধু ছবিই না মহানুভবতাও আকাশচুম্বি হয়েছিল।

এটা একজন শিল্পীর কথা। কিন্তু আমাদের সমাজে এই রকম অনেক শিল্পী আছে যারা আমাদের গরীব শিশুদের জীবনকে পুজি করে পাক্কা অভিনয় করে যাচ্ছেন। জোগাড় করছে তাদের রুটি রুজি আর বিলাসিতার পন্য গুলো।

আট হাজার কুর্দি মারার অপরাধে সাদ্দামের ফাঁসি হয়েছিল। আর সাদ্দামকে ধরার জন্য তামা তামা করা হয়েছে ইরাক। ইরাক যুদ্ধে যত মানুষ মারা গেছে তার শুধু মাত্র পঞ্চাশ হাজারই ছিল শিশু। তখন সারা বিশ্বের মানবিক সংস্থাগুলো কানে তুলো আর নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে। আজ যখন আমেরিকা বাংলাদেশে এক প্যাকেট বিস্কুট কিংবা এক প্যকেট ওরস্যালাইন পাঠায় তখন তাদেরকে আমরা দেবতা জ্ঞানে প্রনাম করি। আর কোথায় কোন গরীব মায়ের ঘরে অভাবের তাড়নায় শিশুটি স্কুলে না গিয়ে বাবার সাথে মাঠে যায় তার কাছে গিয়ে শিশু অধিকারের নীতি বাক্য শোনাতে শুরু করি।

আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যেই ভাবে চলছে এই ভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে শিশু বৈষম্য কখনোই দুর হবে না। সবাই আছে গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার তালে। আর যদিও হয় তাতে ও সময় লাগবে কম পক্ষে এক শতাব্দী। এ সময়টা বাঙ্গালী জাতিকে খেসারত দিতে হবে। কেননা একটা জাতীর পট পরিবর্তন হতে কম পক্ষে তিনটা প্রজন্ম লাগে, তাতে স্বাভাবিক ভাবে লাগে ৫০ বছর। আর মানুষ দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে কখনো পরিবর্তনের জন্য উদ্দোগী হয়না। বাংলাদেশে এই গতি আরো মন্থর।

এক শ্রেণীর তথাকথিত পন্ডিত, বুদ্ধি জীবি আর রাজনীতি বিদেরাই শিশু অধিকারে কথা বলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো লক্ষ্য করলে দেখবেন এই দেশের মানুষ তাদের দ্বারাই শাসিত এবং শোষিত হয়, শিশুরা তার ব্যতিক্রম নয়। আর শিক্ষিত শয়তানরা তাদের পক্ষ হয়ে জাবর কাটতে একটু লজ্জা বোধ করেনা।

তারা চায় এ সমস্যা গুলো বেঁচে থাকুক। ফুটপাতে জন্মেছে যেই জিনিস ওটা আর যাই হোক মানুষ কি?? পরগাছা যেমন মুল গাছকে পুজি করে বেঁচে থাকে এবং একসময় মুল গাছটিকে খুজে পাওয়া যায়না, ঠিক তেমনি ওরা দরিদ্র শিশুদের পুঁজি করে বেঁচে থাকে। তারা জানে যদি এই সমস্যা গুলো মিটে যায় কিংবা আশংকা জনক হারে কমে যায় তাহলে তাদের রুজির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শিশুদের নামে প্রকল্প চাই। এই প্রকল্পের নামে দেশী বিদেশী সংস্থা থেকে টাকা আসবে। সেই টাকা দিয়ে গরীর অবেহেলিত শিশুদের কেন্দ্র করে সভা,সেমিনার হবে, তাদের করুণ জীবনী নিয়ে চিত্রকর্ম প্রর্দশনী হবে। শিশুরা পাবে কাঁচা কলা আর ওগুলোর পরিচালক কিংবা প্রধান অতিথি হবেন আমার ভন্ড নেতারা। সেই টাকায় তাদের গাড়ী হবে,বাড়ী হবে, বউয়ের শাড়ী গয়না হবে, সন্তানরা হয় বিদেশ লেখাপড়া করতে যাবে নয়তো দেশের গড়া উঠা নাইট ক্লাবে গিয়ে নেশায় বুদ হবে। আর মহান নেতাজী শিশুদের রক্ত বেচা টাকায় কেনা মার্সিডিস থেকে নেমে দেবতার বেশে মঞ্চে উঠে মুখস্থ কতক গুলি জ্ঞান গর্ভ কথা বলবে যখন ক্ষুধার্ত শিশুদের মন পড়ে থাকবে খাবার দিকে। এর পর তিনি কোন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন যেন হিমালয় জয় করেছেন।

বাড়ী ফেরার পথে গাড়ির চাকায় লেগে ছিটকে উঠা পানি দ্বারা ফুটপাতে পলিথিনের ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে আসবে যেখানে রোদ বৃস্টিতে অনাহারে রয়েছে কোন না কোন শিশু। যে শিশুটি ক্ষুধার জ্বালায় দুমুঠো অন্নের জন্য তার গাড়ী পরিস্কার করে দিবে তাকে ধরে দুটো চটকানা মারতে হাত কাপবেনা তার দামী গাড়িতে হাত দেওয়া অপরাধে। বাড়ী ফিরে শিশুটির পিঠে আয়রন চেপে ধরতে দ্বিধাবোধ করবে না একটা শাড়ী কিংবা শার্ট পুড়িয়েছে বলে,, অথবা দলাথি মারতে কুন্ঠিত হবেনা যে শিশুটি মনিবের আগে ঘুমিয়ে গেছে মনের অজান্তে। এই লোক গুলির মুখে যখন অধিকারের বানী শুনি তখন ভুতের মুখে রাম নামের মতই শোনায়, লজ্জায় আমার গা রি রি করে। মানবতা তখন চারিদিক থেকে অভিশাপ দিতে থাকে।

আমার কোম্পানীর মালিকের মেয়ে হয়েছে। উনি এই মেয়ের জন্য হাসপাতালের বিল দিয়েছেন সাড়ে চার লাখ টাকা। আর এই উপলক্ষে কোম্পানীর চারশ কর্মচারীকে এক বেলা স্পেশাল খাবার দিয়েছেন সত্তর হাজার টাকা খরচ করে। এখন আপনারা বলেন শিশু বৈষম্যে শুরুটা কোথায় হলো? যে শিশুটি ফুটপাতে কিংবা অঁজপাড়া গায়ের কোন নিভৃত পল্লীতে জন্ম হলো তার সাথে এই শিশুর পাথর্ক্য কত? জিরো টু ইনফিনিটি। এঙ্গেল ডিফারেন্স ১৮০ ডিগ্রী। মানুষে মানুষে পার্থক্য হতে পারে তাই বলে এত পার্থক্য?

মা দিবসের এক টিভি অনুষ্ঠানে এক বাচ্চাকে উপস্থাপক জিজ্ঞাসা করছে। মা দিবসে তুমি কি কি করেছ? সে উত্তর দিচ্ছে মাদারস ডেটে আমি মম কে মা বলে ডেকেছি। ওই ডাকে কি টেস্ট! অথচ রাস্তায় কিংবা গ্রামে পড়ে থাকা শিশুটির মা দিবস লাগে না সারারছরই সে ছাগলের বাচ্চার মত ম্যা ম্যা করে।

আর শালার এন জিও ওয়ালা আসে গ্রামের মানুষকে আসে শিশু অধিকার বুঝাতে। যা শিখা তাদের। যারা তথাকথিত শিক্ষিত শিল্প পতি কিংবা নিজেদের দেশের কেউ কেটা মনে করে। তারাই শুধু শিশু নয় পুরো মানবজাতীর অধিকার খর্ব করে বসে আসে।

মাঝে মাঝে যখন দেখি একটা শিশুকে বাচাতে টাকা তোলা হচ্ছে। মাত্র ছয়/ সাত লাখ টাকা। তখন ঘৃনা লাগে নিজের প্রতি। কোন দেশে বাস করি যেই দেশে এমন হাজারো পরিবার আছে যাদের একটা সন্তানের জন্য প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে। আবার সরকারী ভাবে একটা আলাদা মন্ত্রনালয় আছে, সেখানে দেশী বিদেশি ফান্ড আছে আর সেই দেশে কিনা কয়েক লাখ টাকার জন্য একটা শিশুকে ভিক্ষা করতে হয়। আর দুএকটা ভুই ফোড় সেখানে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে নিজেকে ক্যামেরার সামনে দাতা হাতেম তাই সাজাতে চায়।

গোড়া কেটে আগায় পানি ঢেলে লাভ নেই। শিশুদের শৈশব, দৌড়ানোর জন্য একটা মেঠোপথ কেড়ে নিয়েছি আমরা। আমাদের শিশুরা ভিডিও গেম চায় না, ইনডোর বেবী জোন চায় না। তারা চায় চঞ্চল শিশুকাল, দুরন্ত কৈশোর। আর এখন শিশুদের পক্ষ হয়ে দুকলম লিখে নিজেদের মহানুভব সাজানোর চেস্টা পুরোটাই ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২৩
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×