somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যশোরের ঈদ বাজারের হালহকিকত

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হয়ে উঠছে যশোরের ঈদ বাজার। টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণের পর বাজারে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। ছিট কাপড়ের কেনকাটা শেষ করে অধিকাংশ মানুষই এখন ব্যস্ত তৈরি পোশাক কিনতে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে নারী-কন্যা শিশুদের ইমিটেশন সামগ্রী, জুতা-স্যান্ডেলসহ টুকিটাকি অন্যান্য কেনাকাটার ধুম। বসে নেই গ্রামাঞ্চলের সেলাই শিল্পীরাও।
যশোরের ঈদ বাজার বরাবরই দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলার তুলনায় একটু এগিয়ে। যশোরের ঈদ বাজারের বাড়তি আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত যশোর স্টিচ। শাড়ি, সালোয়ার, পানজাবি, ফতুয়া থেকে শুরু করে চুড়িদারি ঈদের পোশাকের বাহারি সব আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে দোকানগুলোতে। সেলাই ছাড়াও এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাটিক-বুটিক-ব্লকের বাহারি সব পোশাক এবং সবগুলোই যশোরের তৈরি। বিশেষ করে মেয়েদের ত্রিপিচ, টুপিচ, শাড়ি, পানজাবি, ফতুয়া, চুড়িদারির প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। ছেলেরাও পানজাবির প্রতি বেশ আকৃষ্ট। তবে ঘর সাজাতে প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতিও মানুষের আকর্ষণ কম নয়। যেমন বিছানার চাদর, কুশন কভার, ওয়ালম্যাট এবং নানা ধরনের শোপিচও বিক্রি হচ্ছে সমানে।
বর্তমানে যশোর শহরের নানাপ্রান্তে গড়ে উঠেছে হস্তশিল্পের দোকান। তবে, রেলরোড মুজিব সড়কটি হস্তশিল্পের দোকানের জন্য আলাদাভাবে চিহ্নিত। এখানে রয়েছে রঙ, চরকা, খেয়া, অঙ্গমনি, তাড়ং, কালেকশন ইত্যাদি নামকরা প্রতিষ্ঠান। যাদের তৈরি পোশাকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আশপাশের জেলাগুলো থেকেও মানুষ প্রতিনি ছুটে আসছে। মূল বাজারের ভেতরেও কয়েকটি দোকানে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
যশোরে ‘গরিবের বাজার’ বলে খ্যাত কালেকটরেট মার্কেট (নিকছন মার্কেট) আরো বেশি জমজমাট হয়ে উঠছে। বিত্তবানদের কেনাকাটার মাঝে প্রথম দিকে সাধারণত গরিব মানুষ বাজারে প্রবেশের তেমন একটা সুযোগই পায়নি। এখন তারা ছুটছেন নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটায় এবং অধিকাংশ গরিব মানুষের গন্তব্যই কালেকটরেট মার্কেট। এখানে খুব কম মূল্যে ভালভাল পোশাক পাওয়া যায় বলে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি মার্কেট। নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি উচ্চবিত্তদের অনেকেও এ বাজারে ভিড় করছেন গরিব আত্মিয় বা বাড়ির কাজের লোকদের জন্য কেনাকাটা করতে। এরমাঝে যদি ‘ভাল কিছু’ পেয়ে যান তাহলে কম দামে নিজের জন্যও সেটা কিনে নিতে দ্বিধা করছেন না। এ মার্কেটে সাধারণত ঢাকার গার্মেন্টস’র তৈরি কমদামি পোশাকগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই পোশাক পাওয়া যায় কালেকটরেট মার্কেটে।
যশোরের বাজারের আরো একটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে দেশি বা স্থানীয় পোশাকের পাশাপাশি এখানে বিদেশি পোশাকেরও রমরমা একটা বাজার আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যশোরের বেশ নিকটবর্তী হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে বেশি পরিমাণ পোশাক এবং ইমিটেশন সামগ্রী আমদানি করে থাকেন। ভারতীয় পণ্য বিশেষ করে শাড়ি, লেহেঙ্গা, টপস আর ইমিটেশন সামগ্রীর প্রতি ক্রেতাদের একটু আকর্ষণও বেশি থাকে। এর পাশাপাশি পুরুষদের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জির চালানটা আসে ভারতসহ জাপান, চায়না, থাইল্যান্ড ইত্যাদি থেকে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্যদের চেয়ে কয়েকধাপ এগিয়ে আছে ‘জেনথিক’। রেলরোড মুজিব সড়কের মতি শপিং মল’র এই প্রতিষ্ঠানটি সাজগোজে নিজেও যেমন মনোরম তেমনি পণ্যসম্ভারেও বৈচিত্রময়। দেশি-বিদেশি নামকরা সব ব্রান্ডের পোশাক’র পসরা সাজিয়ে বসেছে জ্যানথিক। দাম একটু চড়া হলেও ‘চোখ বুজে ভাল জিনিস কেনা যায়’ বলে এখানেও সকাল থেকে গভীর রাতঅব্দী ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। শহরের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত, কাস্টম, ইমিগ্রেশন আর সেনাবাহিনীর চাকরিজীবীদের পরিবারের ভিড়ে সাধারণ ক্রেতাদের এখানে প্রবেশের সুযোগ খুব কমই থাকে।
বাজারে পোশাক আর ইমিটেশন কেনাকাটার পাশাপাশি জুতা-স্যান্ডেলের দোকানেও প্রতিদিন মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যশোরের সুপ্রতিষ্ঠিত সম্রাট, বিউটি, লিবার্টি, প্রাইম এবং হালে প্রতিষ্ঠিত জনতা কোম্পানির জুতা-সান্ডেরের প্রতিই মানুষের আগ্রহ একটু বেশি। এর পাশাপাশি বাটা এবং গ্যালারি এ্যাপেক্স’র শোরুমেও মানুষের ভিড় কম নয়।
এদিকে, ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় একটু কম হলেও কাজের চাপ বেড়েছে টেইলার্স শ্রমিকদের। রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা কাজ করেও অর্ডারের মাল ঠিক সময়ে কাস্টমারের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত টেইলার্স মালিকরা। যে কারণে অধিকাংশ টেইলার্সে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টেইলার্স সূত্রে জানা গেছে, এবার ছিট কাপড়ের মধ্যে বিরণ চিকেন, ভেলবেট চিকেন, লেস চিকেন, ব্রাসো থ্রিপিস, কাতান, মোগল ই আজম, জর্জেট সিকুইন, মাখন সিল্ক, তসর সিল্ক, ওয়েডলেস লেজারসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এবং কাজ করা ত্রিপিচের চাহিদা বেশি। এসব কাপড়ের অধিকাংশই চুমকি আর জরির কাজ করা।
বাজারে ভিড় বাড়বে আর পাড়া/মহল্লায় কোন কাজ হবে না-যশোরের ঈদ বাজারে এটি বড়ই বেমানান। না, এবারও তা হয় নি। বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যশোরের গ্রামাঞ্চলের পাড়া/মহল্লায় হাতের কাজ একটু বেশি বেড়েছে। ফ্যাশন সচেতন মানুষ বাজারি পোশাকের পাশাপাশি নিজেরাও ডিজাইন করে বা ডিজাইন সংগ্রহ করে সেগুলো গ্রামাঞ্চলের সেলাই শিল্পীদের কাছ থেকে তুলে নিচ্ছেন সালোয়ার, কামিজ, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া এমনকী শার্টেও। এবার সেলাইয়ের বিশেষ ডিজাইনগুলোর মধ্যে শান্তিপুরি, খেতাফোড়, ভরাট, ডালফোড়, চেইন ফোড়, জলফোড় ইত্যাদির চাহিদা একটু বেশি। এ কাজের জন্য শেলাই শিল্পীদের পারিশ্রমিক অবশ্য খুব একটা বেশি না। মাত্র ১শ’ ৫০ টাকা থেকে ২শ’ ৫০ টাকা পর্যন্ত। শেলাই শিল্পীদের পাশাপাশি অনেক মা-বোন নিজেরাও বাড়িতে বসে প্রিয়জনদের পোশাকে ডিজাইন সেলাই করছেন। আর এব কাজের জন্য প্রযোজনীয় চুমকি, ফিতা, সুতা আর পাথরের সরবরাহও রয়েছে বাহারী। যশোর বাবু বাজারস্থ ১৪টি দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব। দামও হাতের নাগালে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৪০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×