In the name of LOVE, lovely and loveliest
বন্ধু,
এটা একটা চিঠি, বন্ধুর পক্ষ থেকে বন্ধুকে। অনেক কিছুই বলার ছিল; কিন্তু কী দিয়ে শুরু করব বুঝতে পারছি না। তবে এ মূহুর্তে কয়েকটি ফার্সি বয়েত মনে পড়ছে-
“ বেশনু আয্ নে চূন হেকায়েত মী কুনাদ
ওয়ায্ জুদাঈহা শেকায়েত মী কুনাদ ”
অর্থাৎ, “ কান পেতে শোন বাঁশির ফরিয়াদ
সুমধুর সুর নয়, বাশঁবন থেকে বিচ্ছিন্ন বাশিঁর এটা বুক ফাটা আর্তনাদ ”
“ কেয্ নেস্তান তা মরা বুব্রীদাআন্দ
আয্ নফীরাম মর্দ ওয়া যন্ নালীদাআন্দ ”
অর্থাৎ, “ বিচ্ছিন্ন হয়েছি যবে আমি বাঁশবন থেকে
সারা জগত কেঁদেছে, কেঁদেছে সকল নারী-পুরুষ ঠিক সেদিন থেকে ”
“ ছীনা খাহাম শারহা শারহা আয্ ফেরাক
তা বগুইয়াম শারহে দারদে ইশ্তিয়াক ”
অর্থাৎ, “ ব্যাথা-বেদনার আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে হৃদয় যাহার
আমার প্রেম-বেদনা প্রকাশের জন্য কেবল তাহাকেই দরকার ”
এই বিখ্যাত ফার্সি কবিতাটি সত্যিই অসাধারণ, এটা আমার রক্ত ও মাংসের মত, ঠিক সেই ভাবে, যেভাবে তুমি আমার রক্ত ও মাংসের মধ্যে, হৃদয়ের স্পন্দনের মধ্যে, সর্বপরি আমার আত্মার মধ্যে মিশে আছ। দুনিয়ায় এমন কে আছে যে আত্মাকে ভাগ করতে পারে? রক্ত প্রবাহিত হবে, মাংস পঁচে যাবে, হৃদয়ের স্পন্দনও একদিন থেমে যাবে, কিন্তু আত্মা সে তো অনন্তকাল থাকবে। তুমিই আমার বেহেশত, আর তোমাকে না পাওয়ার বেদনাই আমার দোজখ। এই চিঠির উত্তরই আমার হাশর বা শেষ বিচার। তোমার জন্য আমার কলম গজলের পর গজল লিখে গেছে। সেসবের মধ্যেকার দু’ একটা শের তোমাকে শোনাচ্ছি-
১) “ লুট গায়ে হাম, আব অর কেয়া
দিলকি সারি লহু আব নাগমা বান গায়া ”
অর্থাৎ, “ নিঃশেষ হয়ে গেছি আমি, কীই বা বাকি আছে
হৃদয়ের সমস্ত রক্ত আজ কবিতা হয়ে গেছে ”
২) “ জান্নাত অর কেয়া হে মেরি দোস্ত, এক গুলফাম-এ-নাগমে হে তেরে
আব জিনা হে তো জিনা কেয়া, তু তো তু হে বাস বন্দেগী হে মেরে ”
অর্থাৎ, “ বেহেশত আর কীই বা বন্ধু আমার, মুখ নিঃশৃত কবিতার বাগান তোমার
এখন বাঁচতে হবে তাই বাঁচব, কিন্তু জেনে রেখো- কেবলমাত্র তুমিই শুধু ইবাদত আমার ”
“ আমি তোমাকে ভালবাসি ” কথাটা কিভাবে বলব? কেননা এটাতো সত্যিই যে-
“ জুমলা মাশূকাস্ত ও আশিক পর্দায়ে
যিন্দা মাশূকাস্ত ও আশিক মুর্দায়ে ”
এবার এটার অর্থ বললাম না। শুধু এটুকুই বলব যে- স্বীয় খোদার সামনে বান্দা দাঁড়াবে কোন সাহসে? তোমাকে ভালবাসি- তার মানে এই নয় যে বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা করব। খোদা কিছু দিক বা না দিক, বান্দার কাজ তাঁর উপাসনা করা। তেমনি প্রেমাস্পদ কিছু দিক বা না দিক, মানে ভালবাসুক আর নাই বাসুক, প্রেমিকের কাজ ভালবেসে যাওয়া।
ভাবছি তোমাকে একটা গানের সিডি উপহার দেব। আমার পছন্দের সব শিল্পীদের গাওয়া গান। মেহেদি হাসান, গুলাম আলি, আসাদ আমানত আলি খান- এঁদের, প্লাস আরও আনেকের গান, কিন্তু তোমার ভাল লাগবে কি না তা বুঝতে পারি না।
এই আধুনিক যান্ত্রিক জগতে ক’জনই বা গজল শোনে? হিন্দি মেলোডিয়াস গানেরই এখন বাজার নেই বাংলাদেশে- সব রক, হিপ-হপ, জ্যাজ নয়তো র্যাপ। বাংলা গানের কথা কী বলব? এক এক জন এক এক ধরনের গান শোনে- কেউ বালাম, কেউ হাবিব, কেউবা অর্নব। জানি না তুমি কোন ধরনের গানের শ্রোতা, শুধু এটুকু জানি তুমি শুধু তুমিই- অসাধারণ, অদ্বিতীয়।
হায়! যদি মজনুর মতো হতে পারতাম!হজ্জ্ব করতে গিয়ে মজনু কাবার গিলাফ ধরে বলেছিল-
“ ইলাহী তুবতু আন কুল্লিল মাআছী, ওয়া-কিন আন হোব্বে লায়লা লা আতুবু ”
অর্থাৎ, “ দুনিয়ার সমস্ত গুনাহ হতে তওবা করছি, কিন্তু লায়লার প্রেম বর্জন করতে পারব না। দুনিয়ার সবকিছু বর্জন করলাম, কিন্তু লায়লার প্রেম দৃঢ়ভাবে ধারন করলাম। ”
জাজিরতুল আরব ধন্য, কেননা সে মজনুর মত প্রেমিক পেয়েছে। আফসোস বাঙালীদের জন্য! যারা শরৎচন্দ্রের উপন্যাস(দেবদাস-১৯১৭) এর বাস্তব উদাহরন হয়ে মরতে চায়; এবং যার ফলে ভারত ও বাংলাদেশ কোটি কোটি আহাম্মক মার্কা প্রেমিক পেয়েছে।
মজনুকে লায়লার কথা জিঙ্গেস করা হলে সে বলত- আনা হু (আমিই সে)। তখন লোকেরা বলত- তা হলে মজনু কে? সে বলত- ওয়া আনা হু (সেও আমি)। এই জন্য আরবী “ মাজনূন ” শব্দের অর্থ পাগল(crazy)।
যদি আল্লাহ এমন করতেন, কারও নাম উচ্চারন করতে গেলে কেবল তোমার নামই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হত! সত্যিই তাহলে আমার এই পাগলামি(craziness) সার্থক হত। Let’s be. তাই হোক।
ওয়াল্ট হুইটম্যানের একটা কবিতা মনে পড়ছে-
Out of the rolling ocean crowd,
Came a drop gently to me;
Whispering I love you, before long I die;
I have travelled a long way merely to look on you, to touch you.
For I could not die till I once looked on you;
Again we wander-we love-we separate again
Again she holds me by the hand-I must not go
I see her close beside me, with silent lips sad and tremulous.
Return in place of that ocean, my love,
I too a part of that ocean, my love.
-Walt Whitman (1819-1892)
এই অসাধারণ কবিতাটি বোধ হয় হুইটম্যান তোমার আর আমার জন্যই লিখেছিলেন। যাক সে কথা, আমায় ভালভাস আর নাই বাস, অন্তত চিঠির উত্তর দিও।
সবশেষে বলতে চাই- Love for all, hatred for none.
তোমার বন্ধুর পক্ষ থেকে
তোমাকে
Author: Towsif Khan