somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঘন্য জীবন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার নরকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তিন তারিখ মস্কো আর পাচ তারিখ পিটার্সবার্গে আমার হোষ্টেলে এসে পৌছলাম। জাহিদ ভাই আর ইমরুল ষ্টেশনে আসছিল আমারে নিতে। জাহিদ ভাইয়ের গাড়ীতে কইরা হোষ্টেলে আইলাম। হোষ্টেলে আসার আগ পর্যন্ত ভালই ছিলাম। হোষ্টেলে ঢুকার পরই মনে হইল আবার আইলাম সেই জায়গায়। আমার রুমে ঢুইকা দেখি আমার আগের রুমমেট নাই। নতুন কেউ আসছে। পুরা ঘর অগোছালো। বুঝতে চেষ্টা করলাম পুলাডা কোন দেশের হইতে পারে। সন্দেহ করলাম আফ্রিকান। কারন আমার জিনিস সে নিজের জিনিস মনে কইরা ব্যবহার করা শুরু করছে। টেবিলের উপর একটা বই পাইলাম। মনে হইল ফ্রেঞ্চে লেখা। তাইলে এইডা শিওর আফ্রিকান। জাহিদ ভাইরে দেহাইলাম বইডা। উনি আবার ফ্রেঞ্চ জানেন। উনি কইল না এইডা ফ্রেঞ্চ না। তাইলে এইডা কি ভাষা হইতে পারে চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু কোন সমাধান হইল না। কিছুক্ষন পর জাহিদ ভাই চইলা গেল। ইমরুলরে রাইখা দিলাম গল্প করার লাইগা। ইমরুল কয় দেশের গল্প ক। আমি কই কোন গল্প নাই। তয় কাহিনী হইল গিয়া প্রথমবার যখন দেশ ছাইড়া আসলাম তখন ঢাকা থিকা কাতার পর্যন্ত বেশ ফূর্তি করতে করতে আইছি। কাতার থিকা যহন মস্কো আইলাম তহন প্লেনে বাঙ্গালী থিকা রাশিয়ান বেশী। একটু মন খারাপ হইল। তখন প্রথম বুঝতে পারলাম এক বিজাতীয় জায়গায় যাইতাছি। তারপরেও সবাই মিলা ফূর্তি করছি। মস্কো নাইমা যখন এয়ারপোর্ট থিকা বাইর হইলাম তখন কইলাম, আল্লা এই কোন যায়গায় আইলাম। তারপর ট্রেন ষ্টেশনে আমি আর আমার দোস্ত ঋতু অনেকক্ষণ বইয়া থাকলাম। আমি যামু পিটার্সবার্গ আর ঋতু যাইব ভলগোগ্রাদ। কথা আছিল আমরা দুইজনেই ভলগোগ্রাদ যামু। এয়ারপোর্টে যাই পোলা আমাগোরে রিসিভ করতে আইছিল ও কয় আমারে পিটার্সবার্গ যাইতে হইব। মনডা খারাপ হইয়া গেছিল। ঠিক করছিলাম দুই জনে একসাথে থাকুম। কিন্তু হইল না। তারপরে পিটার্সবার্গ আইসা ট্রেন থিকা নামার পর এক মাইয়া আমারে রিসিভ করল। আমারে নিতে একটা ট্যাক্সি আইছিল ভার্সিটি থিকা। ট্যাক্সিতে বইয়া পিটার্সবার্গের পুরান আমলের বাড়ীঘর দেইহা ভাবলাম এই কোন যায়গায় আইলাম। আমারে হোষ্টেলের রুমে পৌছাইয়া দিয়া মাইয়াডা ভাগা দিল। তখন বাজে ভোর চারটা কি পাচটা। বাইরে অন্ধকার। রুম খুলল আমার মত কালা চুল ওয়ালা এক পুলা। ভোরবেলার ঘুম ভাইঙ্গা বেচারার হতভম্ব ভাব। আমি ইংরেজীতে জিগাইলাম তুমি কই থিকা আইছো। কয় বাংলাদেশ। আমি কইলাম শালা তুইও তাইলে আছোস এইহানে। আর কোন বাঙ্গালী আছে কিনা জিগাইতে কইল পাশের রুমে আরেকজন থাকে। এই আরেকজনই হইল ইমরুল। আমি কিছুটা হাফ ছাইড়া বাচলাম। যাক তাইলে বাঙ্গালী আছে আমার লগে। ওরাও আমার মত। আমার একমাস আগে আইছে। আসল প্রসঙ্গ থিকা অনেক দূরে সইরা আইলাম। যা কইতে ছিলাম। এইবার দেশ থিকা আসার সময় হাড়ে হাড়ে বুঝছি। প্রথমবার ফূর্তির চোটে টের পাই নাই। এইবার সব ফূর্তি বাইর হইয়া গেছে। প্লেনে আমি জানালার কাছে সিট পাইছিলাম। দিনের বেলা। নিচে স্পষ্ট বাংলাদেশের জমি বাড়ীঘর দেখা যায়। আমি তাকাইয়া তাকাইয়া দেখতাছি। আব্বা আম্মার সাথে ফোনে বাতচিত করতাছি। ফোন রাখলাম। প্লেন ছাইড়া দিছে। আমি নিচে আমার দেশ দেখতাছি। হঠাৎ দেখি আমার চোখ দিয়া পানি পড়তাছে। আমি জানিনা কি জন্য পড়তাছে। দুই বছর আগে আমার চোখ দিয়া পানি পড়ে নাই, গত দুই বছরেও পড়ে নাই। কিন্তু শালার এইবার কি হইল বুঝলাম না। আর বালের এমন সময় মনে পইড়া গেল এক দেশাত্মবোধক গান ( সুন্দর সুবর্ণ.........) । আমি পুরা মুখ জানালার দিকে ঘুরাইয়া দিলাম যাতে কেউ না দেখে আমি কানতাছি। আমার মনে হইল কি আছে জীবনে যদি নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে না পারলাম। আমার এক বন্ধু কিশালয় কইছিল দোস্ত আমি দেশে যামু না। আমি জিগাইলাম কেন যাবি না। কয় দেশে গেলে আমি আর ফেরত আইতে পারুম না। কথাডা ও মিথ্যা কয় নাই। আমি ফেরত আইছি ঠিকই কিন্তু নিজের মনের উপর অনেক অত্যাচার কইরা। প্রায়ই ভাবি কি হইব এইসব কইরা। এর থিকা দেশে গিয়ে কামলা খাইটা দেশে থাকা অনেক ভালা। আমরা দিন যাইতাছে আর মানসিক ভাবে একটু একটু কইরা এবনরম্যাল হইতাছি। এইখান থিকা যহন যামু তহন আমরা মানসিক ভাবে ৫০% আসুস্থ হইয়া যামু। গতকাল দিনে হোষ্টেলে আইলাম আর রাইতেই আইল কাপানি দিয়া জ্বর। মনে হইল আমি মাইনাস ৯০০ ডিগ্রীতে দাড়াইয়া রইছি। সারা শরীর কাপানি দিয়া উঠল। চরম কষ্টে উঠলাম। একটা সোয়েটার গায়ে দিলাম, ফুল প্যান্ট পরলাম, তারপর কম্বলের নীচে ঢুকলাম। মনে হইল আমি এইবার শেষ। ভাবলাম একটা নাপা খাই। কিন্তু উইঠা যে ওষুধটা খামু এই শক্তিও শরীরে নাই। চরম কষ্টে উঠলাম। বুঝলাম নরক যন্ত্রণা কারে কয়। বালের এক জীবন কাটাইতেছি। আমি আর নাই। এইখানের পাট চুকাইয়া সোজা বাড়ী যামুগা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২০
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×