somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ প্রেমিক সরকারই আমাদের কাম্য...................................................

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনগণ সম্ভবত আওয়ামী লীগের আসল নীতি-মনোভাব ও চরিত্র সম্পর্কে বুঝতে শুরু করেছে। সে সুযোগ অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার নিজেই দিয়ে চলেছে। পুলিশকে দিয়ে লাঠি পেটানোর কথাই ধরা যাক। গত ২ সেপ্টেম্বর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশ শেষে পেট্রোবাংলার অফিস ঘেরাও করার জন্য মিছিল শুরু করেছিল। মিছিলটিকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যেতে দেয়া হলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো- সে প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন। মিছিলকারীরা বড়জোর পেট্রোবাংলার অফিসের সামনে গিয়ে জড়ো হতেন, কিছুক্ষণ স্লোগান দিতেন। এরপর প্রচলিত নিয়মে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা এসে উপস্থিত হতেন। মিছিলকারীরা তার হাতে একটি স্মারকলিপি দিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ফিরে আসতেন। এর চাইতে বেশি কিছুই হতো না। কারণ, ওই কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা সরকারের পতন ঘটানোর কিংবা সরকারকে বিপাকে ফেলার মতো কিছু করতেন না। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আনু মুহাম্মদসহ মিছিলকারীদের পরিচিতির দিকটিও বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল। তাদের সকলেই দেশের বিশিষ্টজন, তারা অন্তত ‘লগি-বৈঠা' নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো অসভ্য খুনি-সস্ত্রাসী নন।
সুতরাং তটস্থ হওয়ারও কিছু ছিল না। অন্যদিকে ‘লগি-বৈঠা'র হত্যা-সন্ত্রাসের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ সরকার সম্ভবত ভরসা করতে পারেনি। নিরীহ ও বিশিষ্টজনদের মিছিলের ওপর পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে। পুলিশও বহুদিন পর কাজের মতো কাজ পেয়ে গিয়েছিল। তারা নির্বিচারে মিছিলকারীদের পিটিয়েছে। তাদের মধ্যে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর আনু মুহাম্মদসহ ৫০-এর বেশিজনকে রাস্তায় ফেলে নিষ্ঠুরভাবে লাঠি পেটা করেছে পুলিশ। আনু মুহাম্মদের পায়ে দুটি ফ্র্যাকচার হয়েছে। তাকে পর পর দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে হয়েছে। অন্য আরো ২৩ জনের অবস্থাও আশংকাজনক বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এখানে আনু মুহাম্মদের বক্তব্য উল্লেখ করা দরকার। হাসপাতালের বিছানা থেকে অনেক যন্ত্রণার মধ্যেও তিনি বলেছেন, তারা সরকারের বিরুদ্ধে নন এবং দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। সরকার তাদের ওপর কেন পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছিল তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। দুঃখ করে আনু মুহাম্মদ আরো বলেছেন, সরকারের দায়িত্ব নাগরিকদের জানমাল রক্ষা করা। কিন্তু সে সরকারই পুলিশ দিয়ে নাগরিকদের লাঠি পেটা করিয়েছে।
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, গরু মেরে জুতা দানের মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২ সেপ্টেম্বরের লাঠি পেটা করানোর ‘অনভিপ্রেত' ও ‘দুঃখজনক' ওই ঘটনার জন্য ‘দুঃখ' প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোনো সদস্যের বাড়াবাড়ির জন্য ঘটনাটি ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এমনভাবেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন যেন পুলিশের কোনো একজন বা কয়েকজন সদস্যের বাড়াবড়িই সেদিনের লাঠি পেটা অভিযানের জন্য দায়ী। এজন্য সরকারের নাকি কোনো নির্দেশনা ছিল না! অথচ এমন একটি ঘটনাকে কোনোভাবেই পুলিশের একক ইচ্ছায় বা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে নেয়া অ্যাকশন হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। বড়কথা, কোনো পুলিশের ‘ঘাড়েই' একটির বেশি দু-তিনটি করে ‘মাথা' নেই যে, শেখ হাসিনা যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সে সরকারের ইচ্ছা ও নির্দেশের বাইরে গিয়ে এ ধরনের হামলা ও লাঠি পেটা করার কথা তারা চিন্তা পর্যন্ত করার সাহস পাবে।
এখানে অন্য একটি চমকপ্রদ তথ্যেরও উল্লেখ করা দরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা যেখানে ব্যক্তি পুলিশের বাড়াবাড়ি তত্ত্ব হাজির করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন, একজন মন্ত্রী সেখানে হাস্যকরভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ধরে টান মেরেছেন। নিজের কান্ডজ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে তিনি বলেছেন, পুলিশের মধ্যে এখনো বিএনপি-জামায়াতের যে সব লোকজন রয়েছে তারাই নাকি সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য লাঠি পেটার কম্মটুকু করেছে! অন্যদিকে সত্য এবং বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে না। কারণ, ক্ষমতায় আসার পর মুহূর্ত থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ে ‘সংস্কার' কার্যক্রম চালিয়েছে। বেছে বেছে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে ছাটাই করতে গিয়ে কম্বল উজাড় হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এত কিছুর পরও যদি কোথাও সত্যিই বিএনপি-জামায়াতের লোকজন থেকে থাকে এবং তারা যদি লাঠি পেটা করার অভিযান চালানোর মতো শক্তিশালী হয়, তাহলে স্বীকার করতেই হবে যে, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু অযোগ্য ও ব্যর্থ নয়, অপদার্থও! কারণ সরকার এমনকি পুলিশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি!
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার যা-ই বোঝানোর চেষ্টা করুক না কেন, পুলিশকে দিয়ে হামলা আসলে সুচিন্তিতভাবেই চালানো হয়েছিল। এমনটি যে ঘটবেই সে কথা বোঝা যাচ্ছিল সরকারের কার্যক্রম থেকে। আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রথম থেকেই এমন কিছু বিষয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে যেগুলোর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সরকার তাই বলে জাতীয় স্বার্থকে নিরাপদ ও নিশ্চিত করার বা আরো এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোনো অবদান রাখছে না। সরকারের নীতি ও কর্মকান্ডে বরং ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ। একটি উদাহরণ হিসেবে বিদেশীদের কাছে সমুদ্র বক্ষের তিনটি ব্লককে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্তের এবং এ সংক্রান্ত চুক্তি বা পিএসসির উল্লেখ করা যায়। দেশপ্রেমিক সকল মহলের দাবির প্রতি উপেক্ষা দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সপ্রতি বিদেশী কোম্পানির কাছে এই শর্তে তিনটি ব্লক ইজারা দিয়েছে যে, কোম্পানিগুলো ৮০ শতাংশ পর্যন্ত তেল-গ্যাস রফতানি করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, ৮০ শতাংশের আড়ালে বিদেশীরা সম্পূর্ণ সম্পদ পাচার করলেও বাংলাদেশের করার কিছুই থাকবে না। বড়কথা, কোনো দেশই বিদেশী কোম্পানিকে এত বেশি পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রফতানি করার সুযোগ দেয় না। এজন্যই ‘মডেল পিএসসি ২০০৮' বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। এর পক্ষে দ্রুত জনমতও গড়ে উঠেছে। কারণ, দেশে ইতোমধ্যেই গ্যাস সংকট তীব্র হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন চাহিদা যেখানে ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট সেখানে উৎপাদন করা যাচ্ছে ১৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ এখনই ঘাটতি ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছে গেছে। অর্থনীতিবিদরা গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সংকটকে বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ শুধু কথার কথা নয়। আসলেও গ্যাসের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে, অনেক কারখানা অনুমোদনই পাচ্ছে না। টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে চলছে মারাত্মক গ্যাস সংকট। শিল্প মালিকরা হা-হুতাশ করছেন। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ ও সারের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর দোহাই দিয়ে সরকার সার কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তত্ত্বাধায়ক সরকার নাম নিয়ে ক্ষমতা দখলকারী উদ্দিন সাহেবদের দু' বছরে গ্যাস খাতে সুফলপ্রসূ কিছু করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারও এ পর্যন্ত সম্ভাবনাময় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওদিকে আত্মর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো রহস্যময় আচরণ করছে। কেয়ার্ন এনার্জি হাতিয়া ও ম্যাগনামায় পাঁচ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার কথা জানিয়েও হঠাৎ পিছুটান দিয়েছে। কোম্পানিগুলো উল্টো গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি তুলেছে।
অন্যদিকে তেল-গ্যাসসহ জ্বালানি সংকট দূর করার ব্যাপারে সরকারকে তেমন উদ্যোগই নিতে দেখা যাচ্ছে না। সরকার তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করেছে বলে ঘোষণা দিয়ে বসে আছে। কিন্তু এই বাড়তি বিদ্যুৎ কবে নাগাদ কিভাবে উৎপাদিত হবে- এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই জানানো হচ্ছে না।
সম্ভাবনা ও সংকটকেন্দ্রিক বিশ্লেষণের এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তেল ও গ্যাস সম্পদকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। কারণ, একবার বিদেশীদের দখলে চলে গেলে বাংলাদেশের জনগণকে চিরদিনের জন্য জ্বালানির সংকটে পড়তে হবে। বিদেশীরা বাংলাদেশীদের কাছে বাংলাদেশীদেরই সম্পদ বিক্রি করবে গলা কাটা দামে। তারা সেই সাথে জনগণকে জিম্মিও বানিয়ে ফেলবে। কিন্তু সরকার চুক্তি করায় জনগণের করার কিছুই থাকবে না।
এজন্যই বিদেশীদের হাতে তেল ও গ্যাস সম্পদ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় কমিটি মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল। উল্লেখ্য, উদ্দিন সাহেবদের দু' বছরেও জাতীয় কমিটিসহ দেশপ্রেমিক বিভিন্ন মহল আন্দোলন করেছেন। কিন্তু প্রায় প্রত্যক্ষ একটি সামরিক সরকার হলেও উদ্দিন সাহেবরা কখনো আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালাননি। অন্যদিকে গণতন্ত্রের পূজারী হিসেবে পরিচিতিদানকারী আওয়ামী লীগের সরকার শুরুতেই নিয়েছে চরম দমনমূলক পদক্ষেপ। এখানে সরকারের উদ্দেশ্যের দিকটি এসেছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ সরকার আসলে উদ্দিন সাহেবদের তৈরি করে রেখে যাওয়া আয়োজন অনুযায়ী চুক্তি বা পিএসসি স্বাক্ষর করেছে। তখন প্রকাশ্যে বলা হয়েছিল, চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বিদেশী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সরকারের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে। দেশের চাহিদা পূরণের পর যদি গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে বিদেশী কোম্পানি ওই গ্যাস বিদেশে রফতানি করার সুযোগ পাবে। জ্বালানি তেলের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্যও এসব কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করবে সরকার। বলা হয়েছিল, অগভীর সমুদ্র এলাকায় আটটি ব্লকের জন্য আট বছর এবং গভীর সমুদ্র এলাকার জন্য নয় বছরের সময় দেয়া হবে। সরকারের দেখানো যুক্তিরও উল্লেখ করা দরকার। বিদেশীদের হাতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও রফতানির অধিকার তুলে দেয়ার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সরকার বলেছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেশের প্রয়োজন ২৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে নাকি এত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। এজন্যই বিদেশীদের ডেকে আনা হয়েছে।
সরকারের কোনো যুক্তিই কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। একটি দেশের জন্য ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার মোটেই সমস্যা হতে পারে না। বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার মতো দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে কয়েকটি মাত্র নয়। সরকার চাইলে প্রয়োজনের চাইতেও বেশি অর্থ বাংলাদেশ পেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে চুক্তি হতে হবে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, যেখানে কমিশন বা ঘুষ আদায় করার সুযোগ তেমন নেই বললেই চলে। এটাই বোধ হয় জাতির জন্য ‘কাল' হয়েছে! শুধু অন্য রাষ্ট্রের কথাই বা বলা কেন? দেশে-বিদেশে বসবাসকারী এমন বাংলাদেশীদের সংখ্যাও কম নয়, যাদের মাত্র কয়েকজন মিলেই দেশে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু সেখানেও ঘুষ ও কমিশনের বাণিজ্য করা সহজ হবে না। এটাই সম্ভবত অন্তরালের আসল কারণ।
এখানে অস্ট্রেলীয় কোম্পানি স্যান্টোসের অভিজ্ঞতা জানানো দরকার। এটা মোটেও নতুন খবর নয় যে, বছরের পর বছর ধরে ভারত ও মিয়ানমার বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার অনেক ভেতরে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। কিন্তু দেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারণ ও রক্ষার এবং সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণ করার জাতীয় দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সব সরকারই গাছাড়া ভাব দেখিয়ে এসেছে। ফলে সীমানা নির্ধারণ থেকে ব্লক ভাগ ও উৎপাদন বন্টন চুক্তি (পিএসসি) করা পর্যন্ত প্রতিটি জরুরি বিষয়েই বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থারই সুযোগ নিয়েছে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ না করেই ভারত ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং মিয়ানমার ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ভারত আটটি ব্লকে এবং মিয়ানমার সাতটি ব্লকে কাজ চালাচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের সরকার বিদেশী দু'একটি কোম্পানিকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়ার বাইরে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এই উদ্যোগহীনতার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থই শুধু বিসর্জন দেয়া হয়নি, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেও হাল ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তিনদিকে ভারতবেষ্টিত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পথ হিসেবে একমাত্র সমুদ্রই উন্ডুক্ত রয়েছে। কিন্তু সে পথটিকেও অবরুদ্ধ করে ফেলার আয়োজন করেছে ভারত, সঙ্গে যোগ দিয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে সরকার দেশ দুটিকে প্রতিহত করার এবং চূড়ান্তভাবে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ করার চেষ্টা করেনি। এদিকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে সময়ে সময়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও জাতীয় স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়নি। এর ফলে দেশকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য কেয়ার্ন এনার্জির সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। মার্কিন এই কোম্পানি বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন শেষ না করেই অস্ট্রেলিয়ার আরেক কোম্পানি স্যান্টোসের কাছে তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এটা ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। উদ্বেগ ও আপত্তির প্রথম কারণ হলো, অনুমতি নেয়া দূরে থাক, শেয়ার বিক্রির এত বড় কার্যক্রম সম্পর্কে কোম্পানি দুটি বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। উদ্বেগ ও আপত্তির দ্বিতীয় কারণও গুরুতর। স্যান্টোস অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের অংশে ভারতের হয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে। কেয়ার্নের শেয়ার কিনে নেয়ায় স্যান্টোস বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় অনুসন্ধান ও উত্তোলনেরও আইনগত ক্ষমতা পেয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত বরাবর ৫ ও ১০ নম্বর ব্লকের প্রতিটির ৪৫ শতাংশ এবং পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ানমার সীমানার পাশে সাঙ্গু ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশের ওপর স্যান্টোস কর্তৃত্ব করবে। সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্রও পরিচালনা করবে স্যান্টোস। ভারত ও মিয়ানমার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার যে বিশাল এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেখানেও স্যান্টোসই ক্ষমতা পেয়েছে। সুতরাং ধরে নেয়া যায়, স্যান্টোসের মাধ্যমে আমাদের সম্পদ ভারত ও মিয়ানমারের দখলে চলে যেতে পারে। ফলে সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণ করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন, এমনকি অসম্ভবও হয়ে পড়তে পারে। উল্লেখ্য, কেয়ার্ন ও স্যান্টোসের মধ্যকার শেয়ার লেনদেনের বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়েছিল। সারা বিশ্বই তা জানতে পেরেছে, জানেননি শুধু আমাদের আমলা ও কর্তা ব্যক্তিরা। তারা থেকেছেন ‘আনুষ্ঠানিকভাবে' অবহিত হওয়া অপেক্ষায়! আর অপেক্ষায় থাকার ফল যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তার প্রমাণ তো ভারত ও মিয়ানমারই দিয়ে চলেছে।
সমুদ্র সীমা নির্ধারণ ও তলদেশের সম্পদ আহরণ নিয়ে যে অবহেলা দেখানো হয়েছে তা যদি সরকারের স্থলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখাতো তাহলে এজন্য তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হতো। বস্তুত এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা পর্যায়েরই গুরুতর অপরাধ। কারণ এই অবহেলা এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে জাতির সম্পদ তুলে দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেশের সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকার। এর ফলে আমাদের সমুদ্র এলাকা সংকীর্ণ হয়ে এসেছে ও বেদখল হয়ে গেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথটি অনেকাংশে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমাদের জাতীয় সম্পদও লুণ্ঠিত হচ্ছে যথেচ্ছভাবে। বর্তমান পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলা দরকার, সমগ্র জাতির ভাগ্য ও স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে কমিশন বাণিজ্য ধরনের কোনো কিছুকেই প্রশ্রয় দেয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিদেশী কোম্পানির হাতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত তেল-গ্যাস রফতানির অধিকার ও ক্ষমতা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের উচিত সমুদ্র তলদেশের সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যাপারে নিজস্ব উদ্যোগে দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠা। আগেও বলা হয়েছে, বিশেষ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বার্থোদ্ধার করা উদ্দেশ্য না হলে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার এমন কোনো পরিমাণ নয়- যা বাংলাদেশ যোগাড় করতে পারবে না। অনেক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীও এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। সার্বভৌম জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হলে সরকারকে তার নীতি-মনোভাব ও কর্মকান্ডে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো কোম্পানির সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী উৎপাদন বন্টন চুক্তি বা পিএসসি স্বাক্ষর করা চলবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ করাটা মোটেও যথেষ্ট হতে পারে না, সরকারকে প্রফেসর আনু মুহাম্মদসহ দেশের বিশিষ্টজনদের ওপর হামলা চালানোর জন্য জাতীয় কমিটির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×