somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পন্ডিত মশাই

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আয়ের একটা উৎস হলো টিউশানী করা। কমবেশী সবাই সেটা করে। কিন্তু কি বুঝে ভার্সিটিতে উঠেই আমি চাকরী খোঁজা শুরু করলাম। সিলেট এমনিতেই মফস্বল টাইপের শহর। চাকরী বাকরীর সুযোগ খুবই কম। তার মাঝে ভর্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রকে কে চাকরী দিবে। তবে কপালটা মনে হয় ভালো ছিলো। তাই অল্পদিনেই একটা কোন রকম চাকরী জুটিয়ে নিলাম। সিলেট পেন্টাসফট নামে একটা মাল্টিমিডিয়া ট্রেনিং সেন্টারে মাল্টিমেডিয়া ফ্যাকাল্টি। বেতন পাঁচ হাজার টাকা। চাকরী পেয়েছি। বিশাল ব্যাপার। আমি ভার্সিটিতে ঘোষনা করে দিলোম যে যেহেতু আমি চাকরী পেয়েছি, সুতরাং এখন আমি বিয়ে করতে পারি। যদিও ক্যান্পাসের মেয়ে মহলে সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখা গেলো না!

বিদেশী ট্রেনিং কোম্পানী। টাই পরে স্যুটেট বুটেট হয়ে যেতে হবে। মুখ থাকবে ক্লীন সেভড।সমস্যা হলো আমাকে সেখানে চাকরী করতে হবে ক্যাম্পাসে আমার ক্লাশের ফাকেঁ ফাকেঁ। আমি টাই ঠাই পড়ে স্যুটেড বু্টেড হয়ে ক্যাম্পাসে যাই । ক্যাম্পাসে ক্লাশ করি, আবার ক্লাশের গ্যাপে চলে আসি অফিসে। ভালোই চলছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো ভার্সিটি স্টুডেন্ট। য়ে পায়ে থাকবে স্যান্ডেল, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, উস্কো খুস্কো চুল। তার বদলে আমি ক্যাম্পাসে যাই স্যুট বুট পরে।সুতরাং খুব অল্প সময়েই আমি ক্যাম্পাসে কাকতাঁড়ুয়া বনে গেলাম। ব্যাপারটা যখন বুঝলাম, তখন টাইটা ব্যাগে নেয়া শুরু করলাম। ক্যাম্পাসে যাই সার্ট ছেড়ে দিয়ে, রিক্সায় বসে সার্ট ইন করি, টাই পরি।পথের লোকজন চেয়ে চেয়ে দেখে। সুতরাং প্রতিদিন একই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়ে বলে পুরো এলাকায় আমি এক আজব চিড়িয়া হিসেবে পরিচিত হয়ে গেলাম।

ট্রেনিং সেন্টারে আমি নেই ডিজাইনিং এর ক্লাশ।এরমাঝে নতুন উপদ্রব শুরু হলো ট্রেনিং সেন্টারে এক ছাত্রী। সে আমার স্টুডেন্ট। আমি যতই তাকে বুঝাই সে বলে বুঝেছে। কিন্তু কোন একটা ডিজাইন করতে বললে আর কিছু করতে পারেনা। যাই হোক অনেক কষ্ট করে করে তাকে কোর্সটা শেষ করালাম। তাকেও বেশ সন্তুষ্ট মনে হলেো। কোর্স শেষে সব স্টুডেন্ট রা ট্রেইনারের ইভালিউশন করবে। সবাইকে একটা করে ফর্ম দেয়া হলো। টিচারের কোনটা ভালো, কোনটা ভালো না এই জাতীয় সব প্রশ্ন সেখানে। সব মিলেয়ে আটজন স্টুডেন্ট আমার। ইভালিউশন এর রেজাল্ট দিতে সেন্টার ম্যানেজার আমাকে ডাকলেন। তারপর চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা সিজার তোমার ব্যাপারে এই মেয়েটা এতো ক্ষেপে আছে কেন?’। আমিতো অবাক। আমি নিরীহ গোবেচারা টাইপ ট্রেইনার। আসল কথা হলো ওই ছাত্রী আমাকে সববিষয়ে কম নাম্বার দিয়েছে। আমার টেকনিকাল নলেজ কম, আমি বুঝাতে পারি না ইত্যাদী।

ওই ট্রেনিং সেন্টারের চাকরী আমি বেশীদিন করতে পারি নি। পড়ালেখার চাপ বাড়ার সাথে সাথে চাকরী করার সখ আমার মাথায় উঠলো। চাকরীজীবী আদর্শ বিবাহযোগ্য ব্যাচেলর থেকে আমি চাকরী ছেড়ে দিয়ে একলাফে বেকার ছাত্র হয়ে গেলাম। তবে ওই ট্রেনিং সেন্টারের বদৌলতে একটা টিউশানি পেয়ে গেলাম। ছাত্র হলো আমার চেয়ে দেড় ফুট লম্বা। আমার কাছে তাকে একটা বড় সড় পালোয়ান মনে হতো। আমাকে উপরের দিকে মুখ করে তার সাথে কথা বলতে হতো। আর সে আমাকে স্যার স্যার করে বলতো।তো আমার কাজ হলো এই পালোয়ানকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো সুক্ষ শীল্পকর্ম শেখাতে হবে। কারন তার বিয়ে ঠিক হয়েছে এক লন্ডনী কইন্যার সাথে। মেয়ে তাকে বিয়ে করে লন্ডন নিয়ে যাবে। সেখানে যেয়ে যেন কোন একটা কাজ করতে পারে সে জন্যই তার এই শীল্পকর্ম শেখার আয়োজন।

সপ্তাহে তিনদিন আমি তাকে পড়াতে যাই। টুকটাক কাজ দিয়ে বসে থাকি কখন ভেতর থেকে ভালো মন্দ খাবার দাবার আসবে। প্রতিদিনই কোন না কোন দারুন আইটেম পাঠানো হতো বিকেলের নাস্তা হিসেবে। মেসে থেকে পড়াশুনা করি। খাবার যা খাই তা হলো বুয়ার রান্না করা হাতধোয়া পানির মতো ডাল আর পানশে শক্ত মাংসের সাথে চাল আর ভাতের মাঝামাঝি আধশেদ্ধ কিছু একটা। তাই ছাত্রের বাসায় ওই খাবার তখন আমার কাছে অমৃত। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করি কবে পড়াতে যাবো। তবে আমার ছাত্র অত্যন্ত বাধ্য এবং গুরু অন্ত প্রাণ। কারন আমার গোগ্রাসে খাওয়া দেখে মায়া করেই মনে হয় প্রতিদিনই সে তার খাবারের প্লেটটাও আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমিও গুরু দক্ষিণা হিসেবে সেটা পেটে চালান করে দিই আর মনে মনে তাকে আশীর্বাদ করি। আমার থেকে হাত খানেন লম্বা হওয়াও কেবল মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদটা করতে পারি না।

তো আমার আশীর্বাদের গুনেই মনে হয় সে দুই মাসের কোর্স পাঁচ মাসে শেষ করে ফেললো। কোর্স শেষ। আমার টিউশানী ও শেষ। তাই শেষ কাজ হিসেবে তাকে বললাম একটা খুব সুন্দর ডিজাইন করতে। ক্রিয়েটিভিটির যাতে চর্চা হয় তাই আমি তাকে বললাম এমন নিজের আইডিয়া মতো খুব সুন্দর একটা ওয়াল পেপার ডিজাইন করতে। এটাকে বাড়ির কাজ দিয়ে আমি চলে এলাম।

পরের দিন ছিলো আমার শেষ ক্লাশ। আমি তার কাজ দেখে বলবো, যে তুমি পাশ। সে আমাকে তার তৈরী করা ওয়াল পেপারটা দেখালো। জিনিসটা ছিলো এরকম। একটা সূর্যমূখী ফুলের গাছ। তিন চারটা সূর্যমূখী ফুল ফুটে আছে। আর প্রতিটা ফুলের মাঝখানে গোল অংশটাতে কোনটাতে তার ছবি, কোনটাতে খুব সাজগোজ করা একটা মেয়ের ছবি। আমি তো আমার ছাত্রের শীল্প প্রতিভা দেখে বিস্মিত। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞস করলাম। মেয়েটা কে? আমার পালোয়ান ছাত্র লজ্জ্বায় এতটুকু হয়ে বললো ‘ স্যার এইটা আমার বউ’

মনে আছে পরে সেই ছাত্র লন্ডনে গিয়ে বেশ ভালো একটা চাকরী পেয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৪৬
৪২টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×