[ এই পোস্টটি সম্পূর্নই আমার ব্যাক্তিগত চিন্তাধারা ও বিচ্ছিন্ন পড়াশোনার ফসল। এখানে উল্লেখিত ডাটা ইনটারনেট ও পত্র-পত্রিকা থেকে নেয়া। পদত্ত ডাটা সমসাময়িক না ও হতে পারে। সর্বপরি আমি ভূতত্ব ও অর্থনীতি সম্পর্কে বিষদ ধারনা রাখি না ]
সম্প্রতিক সময়ে ৩ টি সামুদ্রিক ব্লক ইজারা নিয়ে ব্যাপক অলোচনা-সমালোচনা চলছে। চুক্তির অনুমোদন সম্প্রতিক সময়ে হলেও চুক্তির বেজ গাইড লাইন প্রনয়ণ শুরু হয় ২০০৪-৬ এ এবং অনুকোদন হয় ২০০৮ এবং ২০০৯ এ এই গাইড লাইন অনুসারে ১ম চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাত দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও তত্তাবধায়ক সরকার সবাই এর সাথে যরিত।
চুক্তির সবচেয়ে সমালোচিত দিক:
১। সর্বোচ্চ ৫৫% কস্ট রিকভারি
২। ৮০% গ্যাস রফতানির সম্ভবনা
৩। এলএনজি আকারে রফতানি
১। সর্বোচ্চ ৫৫% কস্ট রিকভার : ধরুন কোন কম্পানি ১ টি ব্লকে ১ টিসিএফ উত্তলনযোগ্য গ্যাস খেত্র পেল। ২-ডি/৩-ডি সিসমিক সার্ভে, ড্রিলিং, রিগ স্থাপন ইত্যাদি ইত্যাদিতে তারা১,২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলো। আর গ্যাস উত্তলনের জন্য ৪-১০ কূপ খনন করে সর্বোমোট ২
বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলো। তাহলে এই ২ বিলিয়ন ডলার উসুল করার জন্য কম্পানিটি সর্বোচ্চ ৫৫% পর্যন্ত গ্যাস দাবি করতে পারবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কত দামে তাদের কাছ থেকে গ্যাস কিনবো ?
চুক্তিতে বর্নিত উপায়ে ১ ইউনিটের (১০০০ সিফ) বর্তমান মূল্য ৪-৪,৫ ডলার । সুতরাং ২ বিলিয়ন/ ৪ = ৫,০০,০০,০০০ ইউনিট পাবে যা
১ টিসিএফ (১০,০০,০০,০০০) এর ৫০%। অতএব ৫৫% পাবার সুযোগ থাকলেও তারা ৫০% বেশী পাবে না। আর আমরা গ্যাস বেশী দামে কিনি তাহলে ওদের কম ইউনিট দিতে হবে আর কম দামে কিনলে বেশী ইউনিট দিতে হব তবে অবশ্যই তা ৫৫% এর মধ্য।
** আর দাম নির্নয় ও বিদেশী কম্পানির বিনিয়োগ বাজেট পাশ ও মনিটর করা পেট্রবাংলার কাজ। সুতরাং তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যত ভাল চুক্তিই করেন না কেন মনিটরিং এ ঘাপলা হলে সবই যাবে।
২। ৮০% গ্যাস রফতানির সম্ভবনা : ৫৫% কস্ট রিকভারি প্লাস ২৫% লাভের অংশ মোট ৮০% ভাগ। বাংলাদেশের বাত্সরিক প্রবৃদ্ধে ৫-৬% আর তা কনটিনিউ করার জন্য ২৩০ সান পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রয়োজন ১০০-১৩০ টিসিএফ গ্যাস। কয়লার জ্বালানি ক্ষমতাকে যদি আমরা গ্যাসে কনভার্ট করি তাহলে আমাদের বর্তমানে আছে
(গ্যাস প্লাস কয়লা ) ৩৫-৪০ টিসিএফ। সুতরাং দেশেই চাহিদার কমতি নেই।
টাটার মত ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি কারন ১০-১২ বছর গ্যাস দেওয়ার গেরান্টি আমরা দিতে পারিনি। এখন আমদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বেসকারী/বিদেশী প্রতিষ্ঠানে আমরা ৪-৫ ডালরে গ্যাস দিব নাকি বাজার মূল্যে (৮-১২ ডলার) দেব ?
হয় তারা উত্পাদকের কাছ থেকে বাজার মূল্যে কিনুক অথবা পেট্রবাংলার কাছ থেকে বাজার মূল্যে কিনুক। আমদের পক্ষে আর ভর্তুকি দিয়ে তাদের গ্যাস দেওয়া উচিত নয়। সুতরাং ৮০% গ্যাস যাতে বাংলাদেশেই ব্যাবহার হয় তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
৩। এলএনজি আকারে রফতানি : গ্যাস উত্তলোক কম্পানি গুলো যত তারাতারি পরে তরা তাদের বিনিয়োগ ও মূনাফা তুলে নিতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা মোট মজুদের ৭'৫% এর অধিক ১ বছরে উত্তোলন করতে পারবে না। সুতরাং ১ টিসিএফ তুলতে প্রায় ১৪ বছর লাগবে। ৭'৫% এর অধিক তুলতে চাইলে পেট্রবাংলার অনুমতি লাগবে। সুতরাং পেট্রবাংলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যত ভাল চুক্তিই করেন না কেন মনিটরিং এ ঘাপলা হলে সবই যাবে।
** আর পাইপ লাইনের গ্যাস দিয়ে শিল্প চালানোর চাইতে এলএনজি দিয়ে শিল্প চালানোর খরচ অনেক অনেক বেশী তাই বাংলসদেশ অতি সহজেই ঐ শিল্পগুলো আমাদের এখানে আনতে পারে। আর এলএনজি মূলত বাড়ির জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হয়। আমাদের উচিত পাইপ লাইন বাদ দিয়ে সিলিন্ডারে মুভ করা।
অনটারনেটিভ: আমরা ইচ্ছে করলে নিজেরাই গ্যাস উত্তোলন করতে পারি। তার অগে কিছু তথ্য:
১। বাংলাদেশে স্থল ভাগে প্রতি ১০ টি কূপের ১ টিতে উত্তলোনযোগ্য গ্যাস পাওয়া যায়। কূপ প্রতি খরচ প্রায় কোটি টাকা।
২। ড্রিলিং রিগের মূল্য ২ মিলিয়ন ডলার।
৩। বাংলাদএশের সি- ড্রিলিং রিগ, সিসমিক সার্ভে শিপ, ৩-ডি সার্ভে করার সামর্থ নাই।
কন্ট্রাক্ট : পুরো খরচ ও বিমার প্রমিয়াম বাংলাদএশকে বহন করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ২ টি ব্লক বিদেশী কম্পানি ফেরত দিয়েছে। সার্ভে ও টেস্ট কূপ খনন করে তাদের ব্যয় ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে এই যুকিটা নিতে হবে কন্ট্রাক্ট অথবা নিজেরা যেভাবেই করুক।
বাপেস্কের যে অবস্থা তাতে ১০-১৫ কোটি টাকা খরচ করে স্থল ভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা যেতে পারে। সমুদ্র আমদের কোন অভিজ্ঞতা নাই। আমাদেশ ৫-১২ বছর প্রয়োজন তা অর্জন করার জন্য।
আশা করি চুক্তি নিয়ে অতিরজ্ঞিত ধারনাগুলো অমি ক্লিয়ার করতে পেরেছি। তার পরেও যে কোন ধারা নিয়ে আমরা দেন-দরবার করতেই পারি। কিন্তু পুরো চুক্তি বাতিল কোন সমাধান নয়। অন্তত আগামী ৫-৭ বছর আমদের কোন না কোন বিদেশী কম্পানির দ্বারস্থ হতেই হবে যদি না আমরা এই সময়ের মধ্যে নিজেরা সামর্থ অর্জন না করি ত হলে আরো বেশী সময় বিদেশী কম্পানির পেছনে দৌড়াতে হবে। আর এক একটি চুক্তি করতে ১-২ বছর সময় লাগে। আমাদের অতি তারাতারি গ্যাস প্রয়োজন।
মাথা কেটে মাথা ব্যাথা সারানো কোন সমাধান নয় বরং মাথাটা রেখেই যত ভাল ভাবে তা পরিচর্যা/ পরিচালনা করা যায় সে চেষ্টাই করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩০