somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুমেরাং

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্দোলন দুই ফ্রন্টে চলছে। একটি ফ্রন্ট শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে আর অপরটি সাইবার স্পেসে। প্রথম যেদিন মেসেজ পেলাম সবাই ‘শাহবাগে জড়ো হন’। সেদিন আরও একটি মেসেজ পেয়েছিলাম, শাহবাগে কিছু গাঁজাখোর আর পতিতার সমাবেশ হয়েছে। একেবারে প্রথম থেকেই চেষ্টা শুরু হয়েছিল এই আন্দোলনকে গুরুত্বহীন করার। সাইবার যুদ্ধের একদিকের প্রচেষ্টা গুলো ছিল নেহাত সস্তা টাইপের কিছু মেসেজ দেয়া এবং আর অন্য দিকে ছিল নান্দনিকতায় ভরপুর কিছু পোস্ট।
আন্দোলনটি ঘিরে শুরু হওয়া সাইবার যুদ্ধের প্রথম দিকের চেষ্টা ছিল বেশ মজার। একদিকে ব্লগার গ্রুপ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সকলকে সংগঠিত করার। সকল গ্রুপে, ফেসবুকের ফ্রেন্ডদের আহ্বান করা হচ্ছে শাহবাগে আসবার জন্য। মনে তখনও দোদুল্যমানতা, ‘কতজন আসবে?’ কোন রাজনৈতিক ট্রেনিং নেই, পেছনে কোন দলের সাপোর্ট নেই। এমন সব মানুষকে ডাক দেয়া হচ্ছে যাদের সঙ্গে সত্যিকারের জানা শোনাও নেই। প্রথমটায় দু একটি চ্যানেল ছাড়া কেউ সরাসরি দেখানোর প্রয়োজনও মনে করে নি। ওপর পক্ষের প্রচেষ্টাও ছিল বেশ হালকা ধাঁচের। ‘কয়জন লোক দাঁড়ালে, মানুষজন তো ভিড় করবেই’। এমন সব প্রচারণা। এরপর চরিত্র হনন, ‘গাঁজাখোর’ আর ‘পতিতা’।
এরপর হঠাৎ করে গতি প্রকৃতি পাল্টে গেল। জনস্রোত বাড়তে লাগলো। দেশের অধিকাংশ ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য কাভারেজ দিল। প্রতিদিন নতুন আইডিয়া, নতুন নান্দনিকতা আন্দোলনটিকে নতুন করে রাখলো। যদিও একই আন্দোলনের কাভারেজ আসছিল কিন্তু প্রতিদিনই মনে হচ্ছিল নতুন কিছু দেখছি। প্রায় সবাই ই তাঁদের নান্দনিক চিন্তার প্রয়োগ করে কিছু না কিছু নতুন দেয়ার চেষ্টা করছিল। যেহেতু একটা নির্দিষ্ট মঞ্চ ছিল না তাই সবাই যে যার আইডিয়া নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ছিল। যে যা পারে। কেউ ছবি আঁকছিল, কেউ শুরু করলো স্বাক্ষর অভিযান। কেউ তৈরি করল প্রতীকী খাঁচা। তখনও কেউ কেউ আসলো ‘কি হচ্ছে’ দেখতে। আর বেশীরভাগ আসলো নিজের তাগিদে। প্রথমদিকের দোদুল্যমানতা ‘আদৌ কিছু হবে তো?’ ‘আমরা পারবো তো?’ ধীরে ধীরে কাটতে লাগলো। ওপর পক্ষ তখন আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল মাত্র গুটি কয়েক লোকের এই আন্দোলন। খুব বেশিদিন টিকবে না।
এরপর এলো শুক্রবার। মহাসমাবেশ। পুরো কাহিনী পাল্টে গেল। যোগ হল আস্থা। ‘আমরা পারবো’। শুরু হল নীতি নির্ধারণ জাতীয় কার্যকলাপ। আসলো শপথ। আসলো দৃঢ়তা ‘আমাদের পারতেই হবে’। যেন পথভ্রষ্ট না হয়, যেন একঘেয়ে না হয় এসব চিন্তা শুরু হল। ‘কি করা হবে না’ কিংবা ‘কোন কাজ গুলো হলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে’ এমন সব ব্যাপার আলাদা করা হল। প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবে চিনতে নেয়া শুরু হল। ওপর পক্ষের চেষ্টা তখন আন্দোলনটিকে দলীয় জামা পড়ানোর। ‘এটি আওয়ামী লীগের নাটক’।
সাইবার স্পেসে আরেক যুদ্ধের চেষ্টা হল। ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে কিছু বিভেদ তৈরির চেষ্টা হল। ‘তাহরির স্কয়ারে’ আন্দোলনের সময় সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়তো এবং মেয়েরা হিজাব পড়তো। এখানে তা হচ্ছে না, অতএব এই আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অন্যায় এর প্রসঙ্গ আনার চেষ্টা হল। বিশ্বজিৎ, হলমার্ক, শেয়ার বাজার এসব বেশী জরুরী। এসবের বিচার শেষ হলে তবে যুদ্ধাপরাধীর বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। কিংবা সবগুলো একসঙ্গে করেই একটা আন্দোলন হোক। এর সঙ্গে যুক্ত হল লিফলেট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীও যুক্ত হোক। মজার ব্যাপার হল, যে আন্দোলনটি কিছুদিন আগেও গাঁজাখোর আর পতিতার ক্ষুদ্র সমাবেশ ছিল, তাঁদের কাছেই আবার আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের দাবী আদায়ের চেষ্টা হল।
সম্প্রতি হওয়া ঝটিকা মিছিল কিংবা গাড়ি ভাংচুর কেন, ঠিক বোঝা গেল না। কারো মতে বিকেল চার টার মৌনতায় বাঁধা দেয়া। কারণ ঘটনাটা ঘটলো চারটা বাজবার কিছুক্ষণ আগে। তবে আরেকটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য। তা হচ্ছে সাইবার স্পেসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তির যে খেলা চলছিল, সেখানে একটু ভাটা পড়ল। কারণ প্রতিটি কৌশলের পরেই সেই কৌশলের বিবরণ দিয়ে পোস্ট চলে আসছিল ফেসবুকে। ফলে প্রচারণাগুলো সার্বজনীন না হয়ে নিজস্ব কিছু লোকের কাছেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকলো।
সাইবার স্পেসের মিথ্যে প্রচারণা গুলো কেন যেন আন্দোলনের শক্তি হয়ে যুক্ত হতে থাকলো। আন্দলনরতা মেয়েদের পতিতা বলার প্রতিবাদ হিসেবেই যেন সকল শ্রেণীর নারী, ছাত্রী, গৃহবধূ, বৃদ্ধা, শিশু সবাই যোগ দেয়া শুরু করলেন। একজন নারী কে অপমান করার সহজতম যে পথ, ‘পতিতা’ বলা, সেই পথকেই যেন সবাই সাদরে গ্রহণ করা শুরু করলেন। বোঝাতে লাগলেন, একটা অপপ্রচারের ভয়ে আমরা বাসায় বসে থাকবো না। কিছু মিথ্যে প্রচার যে আন্দোলনের জন্য শক্তি হয়ে উঠতে পারে, ওপর পক্ষ বোধ হয় বুঝে উঠতে পারে নি। বুঝতে পারেনি একটি শব্দ তাঁদের জন্য হয়ে উঠতে পারে, ‘বুমেরাং’।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×