somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত চিঠি(শেষ)......

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজর্ষি
তোমার সাথে যেদিন ওল্ডহোম দেখতে গেছিলাম।
ক্রিষ্টিন নামে একটা মেয়ের সাথে দেখা রিসিপশনে। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।
ও আমাদের ওল্ডহোমের সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখালো।
তুমি ওকে বললে তোমার ওল্ড হোমের কথা। ও শুনে খুব খুশী হলো। কত প্রশ্ন যে করলো তোমাকে।

মিঃ উইলো নামে একজনের সাথে দেখা।
সুন্দর স্যুট পড় বসেছিলেন একটা চেয়ারে। ক্রিস্টিন কেমন আছেন মিঃ উইলো জানতে চাইলে ভালো বলেই বললেন,ওয়েটিং ফর দ্য কার।
ক্রিস্টিন আস্তে আস্তে বললো উনি ১৫ বছর ধরে এখানে আছেন।
একই নিয়মে প্রতিদিন রেডী হয়ে বসে থাকেন অফিসে যাবেন বলে।
সারাজীবন সরকারী চাকুরী করেছেন।
বউ নেই অনেক বছর।
একটা ছেলে ছিলো সেও নেই কয়েক বছর।
একটা নাতি আছে ।
মাঝে মাঝে আসে।
এই চেয়ার বসেই উনার সারাদিন কাটে। পাশ দিয়ে কেউ গেলে একই কথা বলেন......
এখানেই বসেই উনার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়,
দুপুর গড়িয়ে বিকাল।
কাউকে বিরক্ত করেন না।
ঝিম ধরে বসে থাকেন........কখনো ইচ্ছে হলে সামনে টিভির দিকে তাকান।

ঘুরতে ঘুরতে আরো কত কার সাথে দেখা হলো।
মিসেস হোয়াইট,মিসেস সান্দ্রা,মিঃ লুক..........।
সান্দ্রা নামের মহিলাটা সারাদিন উল বোনে। টুপি বানায়। মাফলার বানায়।
স্প্যানিশ ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানে না.......
ওর কোন আত্মীয় স্বজন আসে নি কখনো............একা একটা মানুষ।

কি অবাক যে লাগছিলো আমার।
তুমি বললে তোমাদের বৃদ্ধাশ্রমে এর চেয়েও অনেক অবাক করা ঘটনা আছে।
বাংলাদেশে মানুষ তো খুব বেশী দিন ধরে এইসবে অভ্যস্ত নয়............
রহিমা বেগম নামে একজনের গল্প করলে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী হারিয়েছেন।
দুই ছেলেময়ে নিয়ে কত সংগ্রাম করেছেন।মেয়েটা বিয়ের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও থাকে স্বামীর সাথে।
ছেলেটা বিয়ের পর মায়ের আর খোঁজ নেয়না.....
উনি অসুস্হ্য হবার পর গ্রামের মানুষ হাসপাতালে আনেন। এরপর থেকে বৃদ্ধাশ্রমে।
মেয়েটার চিঠি আসে মাঝে মাঝে।
রহিমা বেগম সারাক্ষন ছেলের আসায় বসে থাকেন।
প্রতিদিন সকাল থেকে তৈরী হয়ে অপেক্ষা করেন ছেলে আসবে...........দিনশেষে চোখের পানিতে বুক ভাসান।

মন এত খারাপ হয়ে গেছিলো।
তুমি বললে জানো দুঃখ যে কত রকম হতে পারে এই মানুষগুলোকে না দেখলে জানা হতো না। আমরা তো আমাদের চাওয়া পাওয়া নিয়ে মুখর থাকি।
কত মানুষ কত চাওয়া পাওয়াহীন সময় কাটায়।
সারাটা জীবন শুধু দিয়েই যায়। পায়না কিছুই।

তুমি আরো বললে ,"আমার বাবা মার উপর খুব ঋণী বোধ করি। নিজের কোন ভাইবোন নেই বলে এক ধরনের নিঃসঙ্গতাবোধ ছিলো সবসময়। বাবা হারানোর পর মা যতদিন ছিলো কোন কষ্ট হলে মার কাছে বলতাম। মা চলে যাবার পর জড়িয়ে ধরে কাঁদার একজন মানুষ পাইনি।
এই বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলো আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলো। ওদের এক এক জনের কষ্ট দেখে আমি আমার নিজের একাকীত্বতার কষ্ট থেকে কেমন দুরে সরে এলাম।"
আমি চুপ করে শুনছিলাম তোমার কথা।
বলেছিলাম মানুষেরই জীবনই তো নানানরকম হয়।
কত ঘটনা ,কত স্মৃতি জমে থেকে জীবনের পরতে পরতে।

অনেকদিন পর কালরাত থেকে আমার জ্বর হয়েছে। কাল সারাদিন এত গরম পড়েছিলো। কাজ থেকে ফেরার পথে ডাউন টাউনের সেই পথটায় অনেক্ষন হাঁটলাম। ঠান্ডা পড়েছিলো হঠাৎ।
সারাক্ষন মনে হচ্ছিল তুমিও পাশে আছো। আমরা পাশাপাশি হাঁটছি আর কথা বলছি।
মনে আছে সেইদিন এখানে হাঁটতে হাঁটতে তোমাকে বলেছিলাম জানো তোমার সাথে কার খুব মিল?
তুমি তাকাতেই বললাম ,পাভেল বাঝোড়..........
তুমি হেসে দিলে ।
বললে পাভেলই তো আমার নাম। মায়ের দেয়া।
চমকে গেছিলাম............
আমি কি পাভেল বাঝোড় এর চেহারা দেখেছি নাকি?
শুধু দুষ্টুমী করার জন্য বলেছিলাম।

পাভেল জানো সেই অবাক হওয়াটা এখনও চমকে দিচ্ছে আমাকে।
তুমি যত দুরে যাচ্ছো,তারচেয়েও কাছে অনুভব করছি তোমায়।
চোখ দুটো আগুন হয়ে আছে........যেই অসুখ আমার হবার কথা সেতো জ্বরজারি নয় রাজর্ষি।
অদ্ভুত সেই অসুখটা বুকের মধ্যে সমুদ্রের অথই ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে।
সেই স্রোতধারায় ভেসে যাচ্ছে আমার এতদিনের অপেক্ষা।
সময়।
নিয়ম নীতি।
সবকিছু...........

রাজর্ষি বিসুবিয়াস এর জ্বলে উঠা বড় ভয়ানক................
আমি আসছি রাজর্ষি।
এই পূর্ণিমাতেই।

তটিনী


অপ্রকাশিত চিঠি ১
Click This Link
অপ্রকাশিত চিঠি ২
Click This Link
অপ্রকাশিত চিঠি ৩
Click This Link
অপ্রকাশিত চিঠি ৪
Click This Link
অপ্রকাশিত চিঠি ৫
Click This Link
অপ্রকাশিত চিঠি (শেষ পর্ব)
Click This Link

আমার কথা:
অপ্রকাশিত চিঠি শেষ হলো।
শেষ বলে কি আসলেই কিছু আছে? নিজেই ভাবি।সবটাই তো শুরু।
শেষ পর্বটা দিতে বেশ দেরী হয়ে গেলো... .....
...যদিও লেখাটা বেশ আগের। টাইপ করতে গিয়ে অনেক বদলেছে। সময়ের সাথে নিজের ভাবনাগুলো যেমন বদলে যায়,লেখাতেও তার ছাপ পড়ে।
হিমু বলেছিলো আপু নামকরণটা এমন কেনো?
নিজেও ঠিক কারনটা বলতে পারিনি তখন। এখনও পারছিনা।
দু'টো মানুষ।
তাদের হঠাৎ দেখা হওয়া।
তাদের নানান অনুভবের বিনিময়।
এক জনের দিনকে আর একজনের ধাবিত হওয়ার নানান উছিলা.......
এমনতো কত হয়।
এখনতও শুধু নেটে পরিচয়েই কত সম্পর্ক হচ্ছে..........
একসময় মানুষে মানুষে পরিচয়ের মাধ্যম কত সীমিত ছিলো।
আমার মায়ের বেলাতেই এক বাড়িতে থেকেও আব্বার সাথে কখনো দেখা হওয়া বা কথা বলার সুযোগ ও ঘটেনি।
মা আব্বাকে দেখেছিলেন। আব্বা কখনোই মাকে দেখেন নি।
আমার বড় মামা যেবার আমার মায়ের একটা ছবি দিয়ে বলেন আমার এই বোনটার জন্য একটা ছেলে দেখো আব্বা সেই প্রথম মাকে দেখেছিলেন। আব্বা তখন মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। তবু সাহস করে দাদাকে জানিয়েছিলেন এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চান।
আমার মা নাকি খুব অবাক হয়ে গেছিলেন.......এমন সুন্দর একজন মানুষ তাকে বিয়ে করবে।
কে জানে আব্বা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন আড়াল থেকে তার জন্য যত যত্নআত্তি হয়.......সবই এই কালো মেয়েটার জন্য.....
মার কাছে বহুবার এই গল্প শুনেছি.....
এও তো এক ধরনের প্রেম।
মানুষের এই চিরন্তন অনুভূতি এটা কার জন্য কার যে অপেক্ষায় থাকে.......কেউ কি তা বলতে পারে?

আমার এই লেখাটার এসেছিলো যখন...তখন তো আর ব্লগে লিখতাম না। তাই থেমে ছিলো......
মাঝে মাঝে খাতাটা হাতে নিলে ইচ্ছা করতো আরো লিখি......
একটু আধটু যোগ হতো কখনো কখনো।
লেখা তো হলো নদীর ধারার মত।
লিখতে শুরু করলে কোন না কোন ছুঁতায় সামনে এগোবেই।
আর কেমন অগোচরে নিজস্ব পরিমন্ডল থেকে পারোপার্শ্বিকতার অনেক কিছুর ছাপ থেকেই যায়।

ব্লগে লেখার সময় যা যা হলো:
ঘরের মানুষ তো সারাক্ষন পিছে লেগে থাকলো।লিখতে বসলেই বলে , অপ্রকাশিত চিঠি?কবি গুরুর বান্ধবী বলে তো সারাক্ষনই ক্ষেপায়.......যদিও আমি ক্ষেপিনা......এই একজনকে ভীষণ ঈর্ষা তার।
লেখার পর্ব পোষ্ট করবার কদিন না যেতেই বলা শুরু করে কি ব্যাপার অন্যটা কবে আসছে?
কে খুঁজে গেলো।কে কি বলে গেলো সব বলতে থাকবে.......ব্লগ পড়ুয়াদের সেরা একজন সে।যদিও লেখার বেলায় নাই
রুবেল বারবার বললো চিঠির একটা উপন্যাস চাই।
চিটাগাং থেকে এক পড়ুয়া ব্লগার (যে লেখেনা শুধু পড়ে) মেইল করে বললো আপু আমার সাথে মিলে গেছে অনেককিছু।
এছাড়া প্রতিটা পর্বের অসাধারন সব মন্তব্য তো রয়েছেই।


পরিশেষে:
চিঠি লেখার চল চলে যাচ্ছে।
এখন একটা লাইন লিখে সেটাকে কপি পেস্ট করে অনুভবের বিশালতা বোঝায় কেউ কেউ।
এস এম এস ,টেলিফোন আর ম্যাসেন্জারের অফলাইনে সেরে নেয় যত কথা........দীর্ঘ একটা মেইল কেউ কাউকে লেখার সময় নাই।
আসলে কি সময় নাই?
ইমেইলের ইনবক্সে প্রিয়জনদের কারো চিঠি এসে বসে থাকলে কার না ভালো লাগে তা পড়তে?চিঠি তো শুধু প্রেমের হতে হবে এমন কথা নেই.......যে কোন সম্পর্কে সম্পর্কিত মানুষ চিঠির আদান প্রদান করতে পারে.......
এখনো মাঝে মাঝে ড্রয়ার খুলে বসে মায়ের লেখা ,ভাই এর লেখা,বন্ধুদের লেখা চিঠি পড়ি।
অনেক বছর হয়ে গেলো কেউ আর চিঠি লেখেনা......মেইলবক্স খুললে মাঝে মাঝে খুব লোভ হয়.........
যদি আসতো কোন চিঠি!

শুভকামনা সবার জন্য যারা চিঠি পর্বে সাথে ছিলেন। .........





সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৩৯
৫৭টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×