somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু

৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন এবং মা'র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজবোন আছিয়া বেগম, সেজবোন হেলেন, ছোটবোন লাইলী ও তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।
১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের জন্য সার্জারি করাতে হয়েছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে তার সাথে ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। তিনজন পুত্রকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে হত্যা করা হয়। হাসিনা ও রেহানা বিদেশ থাকার কারণে ঐ যাত্রায় এই পরিবার থেকে শুধু এ দুজনেই বেঁচে রইলেন।
১৯৪০ সালে নিখিলভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪২ সনে এনট্রান্স পাশ করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইনে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিমলীগে যোগ দেন। এ সময় বাঙালি মুসলিম নেতা হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগের নেতা নির্বাচিত করা হয়। শেখ মুজিব জুনের শেষ দিকে জেল থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পরই খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হয়। এরপর অক্টোবরের শেষ দিকে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে মিলে লিয়াকত আলি খানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের চেষ্টা করায় ভাসানী এবং তাকে আটক করা হয়।১৯৪৪ সনে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিলভারত মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরী "ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের" সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ২ বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা। তার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন নেতা ও সংগঠক হিসেবে তিনি তৎকালীন বঙ্গদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন।
১৯৪৪ সনে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিলভারত মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরী "ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের" সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ২ বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর মুজিব কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এসময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক যুক্তি পরামর্শ করেন। ওই বছর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে তিনি এই প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। এ সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। শুরু করেন কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের শোষণ মুক্তির আন্দোলন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের অধিবেশনে বলেন যে, উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই মন্তব্যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এই বছরের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা। এখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিষদের আহ্বানে ১১ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়। এদের মুক্তি উপলক্ষ্যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র্যামলি করে যাতে শেখ মুজিব সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র্যাদলিতে অবরোধ করেছিল। পুলিশীকার্যক্রমের প্রতিবাদে শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ মার্চ দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। যার কারণে ১১ সেপ্টেম্বরে তাকে আবার আটক করা হয়।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর মুজিব কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এসময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক যুক্তি পরামর্শ করেন। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি পান। তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলে একটি উপনির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন ধর্মঘট করেন। তাকে আবার আটক করা হয়।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে তিনি এই প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। এ সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। শুরু করেন কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের শোষণ মুক্তির আন্দোলন। ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়ই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল । ওই বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তিতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবীর উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাঁদের কাছে যান।
১৯৫০ সনের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষ্য করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এবারও শেখ মুজিব আটক হন। সেবার তার দুই বছর জেল হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ঘোষণার পর জেলে থাকা সত্ত্বেও মুজিব প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। জেল থেকে নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরিচালনায় তিনি ভূমিকা রাখেন। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবী আদায়ের দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সময়ে বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই অনশন ১৩ দিন কার্যকর ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই তিনি পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টিতে জয় লাভ করে। যার মধ্যে ১৪৩ টি আসনই আওয়ামীলীগ লাভ করেছিল। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জে আসনে ১৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয় লাভ করে। ১৫ মে তিনি কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেয়। ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকা আসার পর বিমানবন্দর থেকে আবার তাকে আটক করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন শেখ মুজিব আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭ জুন আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবী পেশ করে যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৩ জুন দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন অর্জিত না হলে আইন সভার সকল সদস্য পদত্যাগ করবেন।
২১ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে "মুসলিম" শব্দটি বাদ দেয়া হয়। মুজিব পুনরায় দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ৩ ফেব্রয়ারি মুখ্য মন্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগের বৈঠকে দল থেকে খসড়া সংবিধানে স্বায়ত্ত্বশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানানো হয়। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব তিনিই সরকারের কাছে পেশ করেন। ৪ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে একটি দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল বের হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী এই মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে কমপক্ষে ৩ জন নিহত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিব কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়ে একসাথে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৭ সালে ৩০ মে দলের জন্য সময় দেয়ার লক্ষ্যে তিনি মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৭ আগস্ট সরকারি সফরে চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যান। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা এবং সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান দেশে মার্শাল ল জারি করে সকল ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এই বছরেরই ১১ অক্টোবর তাকে পুনরায় আটক করা হয়। ১৪ মাস পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু জেলের ফটক থেকে আবার গ্রেফতার করা হয়।
হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিব ১৯৬১ সালে জেল থেকে ছাড়া পান। তারপর শুরু করেন গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা। অনন্যসাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করে ১৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেন। ২৫ জুন অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে আইয়ুব খান সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রামে নেমে পড়েন। ৫ জুন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি আইয়ুব খানের সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোর যান এবং সেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুবরণ করেন।
সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামীলীগকে পুনরায় শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বছর আওয়ামী লীগের শেখ মুজিব মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১১ মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী পেশ করেন। যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা প্রতিচ্ছবি ছিল। শেখ মুজিব এই দাবীকে "আমাদের বাঁচার দাবী" শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের এক র্যা্লিতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবীতে ৭ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে ৩ জনকে হত্যা করে।
১৯৬৮ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিব এবং আরও ৩৪ জন বাঙালির বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পাকিস্তানকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র। এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামী করা হয়। অভিযুক্ত সকল আসামীকে ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এই মামলার প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী ঝড় উঠে। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের বিচারকার্য শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজোশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার হয়। এবং পরবর্তীতে তিনি এ বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ বিপুল বিজয় অর্জন করলেও তাকে শেষ পর্যন্ত সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।
বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি ৫ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের এগার দফা দাবী পেশ করে যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি গৃহীত হয়। এই সংগ্রাম এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণ আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। মাসব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কারফিউ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং বেশ কিছু হতাহতের পর আন্দোলন যখন চরম রূপ ধারণ করে তখন পাকিস্তান সরকার ছাড় দিতে বাধ্য হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতাদের সাথেএক গোলটেবিল বৈঠকের পর এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন। এর সাথে শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো জনতার এই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করা হয়। উপাধি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। এই সভায় রাখা বক্তৃতায় শেখ মুজিব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবীর পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
রাজনৈতিক অস্থিশীলতার মধ্যে ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে দেরি করছিলেন। বাঙালিরা এতে বুঝে ফেলে যে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া স্বত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন। ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে, মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
"এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক"।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মুজিবকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তিদেন। এরপর তিনি লণ্ডন হয়ে নতুন দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের পর জনসমক্ষে “ভারতের জনগণ, আমার জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু” বলে তাঁকে সাধুবাদ জানান। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। গান্ধীর সাথে সেদিন তিনি ঢাকায় জড়ো হওয়া প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন।
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×