somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমানুষ

৩০ শে আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েক বছর আগে দেখা জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত ছবি টাইটানিক এখনও মনে দাগ কেটে আছে। বিশেষ করে শেষ মুহুর্তের সেই আবেগময় দৃশ্য- জাহাজ ডুবে গেছে। ছবির নায়ক জ্যাক বরফ শীতল পানিতে ডুবে আছে। তার প্রেমিকা রোজকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন লড়াই করে যাচ্ছে। এক সময় জ্যাক মারা যায়, বাঁচিয়ে দিয়ে যায় তার প্রেমিকাকে। তারপর তার প্রেমিকা রোজ তার স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।

সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে জাহাজের এতগুলি লোক মারা গেল তাদের জন্য আমার যতটুকু দুঃখ বোধ হয় তার চেয়ে অনেক বেশী দুঃখ হয় জ্যাক বেচারার জন্য। জাহাজের অন্য লোকজন মারা যায় যাক কিন্তু পরিচালক ব্যাটাতো জ্যাককে অন্তত রোজের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারত। যদিও সিনেমা, তারপরও তখন নায়কের জন্য বুকে এক ধরনের হাহাকার অনুভব করি। ছবির আবেগময় শেষ দৃশ্যের সাথে সাথে আমাদের চোখও ভিজে আসে।

২০০৮ ডিসেম্বর কিছু হতদরিদ্র বঙ্গ সন্তান অভাবের তাড়নায় শেষ সহায় সম্বল বিক্রি করে দিয়ে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। দিন দশেক পর থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমায় পৌছলে সে দেশের কোস্ট গার্ড তাদের আটক করে সাত দিন পাহাড়ের উপর খোলা আকাশের নীচে রেখে নির্যাতন চালায়। তারপর নৌকাগুলির ইঞ্জিন খুলে বড় একটি জাহাজের পেছনে দঁড়ি দিয়ে বেধে সমুদ্রে নিয়ে যায়। দুই দিন পর জাহাজ থেকে কিছু চাল, বিস্কুট , পানি দিয়ে তাদের নৌকাগুলি গভীর সমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ৮-১০ দিন ভাসতে ভাসতে নৌকাগুলি আন্দামানে পৌছালে ভারতীয় কোস্টগার্ড স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। সম্প্রতি দীর্ঘ ৮ মাসের নরক যন্ত্রণার পর এরা সহায় সম্বলহীন অবস্থায় দেশে ফিরতে শুরু করেছে।

এদের থেকে বেঁচে ফিরে আসা একজনের মর্মস্পর্শী কাহিনী ছিল অনেকটা এ রকম-
ছোট্র একটি ট্রলারে আমরা ১১৯ জন ভাসছি। সাগর আর শেষ হয় না। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সাগরের লোনাপানি খেয়েছি। লোনা পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনে ছটফট করে আমাদের সঙ্গের ১৯ জন মারা গেল। চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না। তাদের লাশ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। এভাবে কেটে যায় ১০-১২ দিন। গভীর সাগরে ভাসতে ভাসতে নিকোবার নামের একটি দ্বীপে গিয়ে নৌকা ভিড়ে। সেখানে পাতা সিদ্ধ করে খেয়ে কোনমতে ক্ষুধা মিটিয়েছি। এদের ভাষ্য মতে এদের দলে ৫০০ এরও বেশী লোক ছিল্। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ মারা যায় সাগরে ডুবে। তাদের সাথে যাওয়া মোট ৩০৫ জনের মত মারা গেছে।

আমি কিছু দিন পূর্বে একটি প্রথম শ্রেণীর জাতয়ি দৈনিকের শেষ পাতায় খবরটি পড়ি। আমি সকালের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরটি পড়ি, আমার কোন ভাবান্তর হয় না। এই সব খবর শেষের পাতায় আসবে এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ এই সব হতভাগ্য লোকদের করুণ কাহিনী নিয়ে আমাদের পাবলিসিটির সুযোগ কম। পাবলিক এই সব জিনিস সহজে খেতে চায় না। তারচেয়ে মিডিয়াতে কোন রান্নার রেসিপি দেখানো যেতে পারে। যেমন, মরিচের ঝাল হালুয়া। তাছাড়া এর চেয়ে অনেক বড় বড় কাজ আমাদের রয়েছে। দেশকে বদলে ফেলার কাজ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ। আরও কত্ত কি।

প্রতি বছর এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর পত্রিকার এক কোনায় এই খবর পড়ার কিছুক্ষণ পর আমরা এদের কথা ভুলে যাব। এটাই স্বাভাবিত। অথচ সিনেমায় জাহাজ ডুবি দেখে আমরা চোখের জল ফেলি। কারণ এরাতো আর সিনেমার কোন স্টার নয় যে এদের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে। পশুদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। পশুদের উপর কোন নির্যাতন হলে এরা সোচ্চার হয়ে উঠে। এতগুলি মানুষ মারা গেল, এতগুলি লোকের উপর এই অমানবিক আচরণ করা হল, আমাদের কোন বিকার নাই। কারণ এরাতো আর পশূ নয়। পশুরও অধম, এরা হচ্ছে মানুষ নামের অমানুষ।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×