আমাদের সন্তানদের নিয়ে বাবা-মারা অনেক চিন্তা করে থাকেন। সন্তানেরা যখন ছোট থাকে তখন বাব-মাদের চিন্তা ভাবনা থাকে সঠিক খাবার-ঘুম-জ্বর-সর্দি ইত্যাদি নিয়ে। আর সন্তানেরা যখন বড় হতে থাকে তখন পিতা-মাতার চিন্তা ভাবনা পরিধি প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে। সন্তান স্কুল-কলেজ-কোচিং-ভার্সিটিতে সঠিকমতো যাচ্ছে কিনা? কী ধরনের সহপাঠীদের সাথে মিশছে, খারাপ নেতিবাচকের পথে ধাবিত হচ্ছে কিনা ইত্যাদি নানা চিন্তা ভাবনা পিতা-মাতা উভয় সারাক্ষণ করে থাকেন।
সন্তানের ভবিষৎ-এর সাফল্যের কথা চিন্তা করে বাবা-মার পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য মানুষদেরকেও নৈতিক দায়িত্ববোধের প্রতি সচেতন হতে হবে সুষ্ঠ লালান-পালনের মধ্য দিয়ে।
কতৃর্ত্বপরায়ণ:
শিশু বা সন্তানকে কখনো কোন বিষয়ে চাপ বা প্রভাব সৃষ্টি করা যাবে না। আশিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছে তোমাকেও পরীক্ষায় এ প্লাস পেতে হবে; ও পারলে তোমাকেও পারতে হবে যে করে হউক। আমদের এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে বাবা-মার পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য স্তরের মানুষদরেও এমনকি বিভিন্ন্ আড্ডার সহপাঠীদেরও। তা না হলে সমাজে নেতিবাচকের খারাপ প্রভাবগুলো দেখা দিবে। যেমন: মাদকাশক্তি, নেশা ও অন্যান্য।
প্রশ্রয়পূর্ণ আচরন:
অতিরিক্ত স্নেহ-ভালবাসা কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না সন্তানের জন্য। আমার দেখা একটি পরিবার আছে সেই পরিবারে মা তার ছেলেকে প্রচুর অতিরিক্ত স্নেহ-ভালবাসা-আদর যন্ত করে থাকেন এমনকি আত্মীয়স্বজনেরাও। কিন্তু ছেলেটি সঠিকভাবে বড় হচ্ছে না –এর মূল কারন বাবা-মা ও আশে-পাশের বিভিন্ন্ মানুষের প্রশ্রয়পূর্ণ আচার-আচরন। সন্তানের সবকিছুতে চাওয়া-পাওয়া সম্মতি। এতে সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় প্রতিনিয়ত ছোট থেকে বড় হওয়ার পাশাপাশি। না পেলে উগ্র মেজাজ প্রকাশ করে থাকে। কোন কোন পর্যায়ে বাবা-মা উভয় ভয়ের সম্মুখীন হতে থাকেন সন্তানের প্রতি যেমনটা হয়েছে ঐশীর ব্যাপারটা। প্রশ্যয়পূর্ণ অতিরিক্ত ভালবাসার ফলে বর্তমান তারুণ্যেরা খারাপ পথে চলে যাচ্ছে এবং আসক্ত হচ্ছে।
সামাজিক মূল্যবোধ:
কার কী আসে যায় ওর পরিবারের সন্তানেরা খারাপ এতে আমাদের কী আসে যায় না। আমাদের বাব-মা ও সমাজের বিভিন্ন মানুষের সামাজিক সঠিক মূল্যবোধের পরিচয় ফুটে উটে না বলে আজকাল আমাদের সন্তান ও তারুণ্যেরা সঠিকভাবে বড় হতে পাচ্ছে না বরং খারাপ পথের দিকে অতিবাহিত হচ্ছে। শুধু বাবা-মার একার দায়িত্ব নয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষগুলোকেও সামাজিক মূল্যবোধের পরিচয় ও ভালবাসা দেখাতে হবে স্ব-স্ব সন্তান ও তারুণ্যদের প্রতি।
আদর্শ পিতা-মাতা:
বাব-মার সঠিক শৃংখলা, নিয়ম-কানুন,পরিমিত সুষ্ঠু ভালবাসাই সন্তানের আগামীর ভবিষৎ। পারাস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বসুলভ আচার-আচরন সন্তানের প্রতি আদর্শ পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ববোধের পরিচয়গুলো ফুটিয়ে তুলে লাল গোলাপের পাপড়িগুলোর মতো।
শাস্তির বদলে সঠিক ভালবাসা, সুষ্ঠু ব্যাখ্যা, নিয়ম-কানুন, পরিমিত স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ইত্যাদির ফলে সন্তানের ভবিষৎ সুসংগঠিতভাবে গঠিত হয়।
সহপাঠী ও বাবা-মার করনীয়:
বিভিন্ন সেক্টরের সহপাঠী ও বাবা-মার ভালবাসা, পারস্পরিক সহযোগিতাই পারে আমাদের সন্তান, বন্ধু-বান্ধবকে নেশা জাতীয় পথ থেকে দূরে রাখতে।
• গুরুত্ব সহকারে কথা শুনা সন্তানের ও নানা পর্যায়ের সহপাঠীদের।
• পরিপূর্ণ ভালবাসা প্রকাশ করা সন্তানের প্রতি।
• শিশু বা সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
• সহপাঠী ও সন্তানেরা কিছু বলতে চাইলে গুরুত্ব সহকারে মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কোন প্রকার তাচ্ছিল্য করা যাবে না।
• উৎসাহিত করা সন্তান ও এবং বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবকে।
• পছন্দ-অপছন্দ, খারাপ-ভাল লাগা গুলো খোলামেলাভাবে বিনয়ের সাথে প্রকাশ করতে হবে।
• চাপ বা প্রভাব ফেলা যাবে না কোনভাবেই সন্তানের উপর।
• আড্ডায় সহপাঠীকে লজ্জিত করা যাবে না এমনকি ছোট করা যাবে না কোন ভাবেই।
• সন্তান বা সহপাঠীর প্রতি কোন ভাবেই গোপন নজরদারি করা যাবে না।
• ভাল কাজে প্রশংসা করতে হবে।
• প্রযুক্তির ভাল দিক গুলো ফুটিয়ে তুলতে হবে।
• সংস্কৃতি মনা করে তুলতে হবে।
• সন্তানের বন্ধুদেরকে বেশি বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
• বয়স বাড়ার পাশাপাশি যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যাখ্যা প্রধান করা।
সন্তানের ভবিষৎ-এর কথা মাথায় রেখে কোনভাবেই ভেংগে না পড়ে সুষ্ঠু সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে বাবা-মা উভয়কে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি সমাজের নানা স্তরের মানুষগুলোকেও সন্তান বা তরুন-তরুনীর বর্তমান ও ভবিষৎ-এর প্রতি সচেতন হতে হবে।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬