somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল স্বপ্নঃ মামা হোটেল ডট কম

২৯ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই রকম মনোরম একটা পরিবেশ পেলে ব্যবসাটা না জমে যায় কোথায়? হ্যাঁ, ব্যবসাটা জমে উঠবার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে বলতে হয়। বিশাল একটা মার্কেট। সারাদিন হাজার হাজার লোকের আনাগোনা মার্কেটে। মার্কেটের দু'দিকে-উত্তরে নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রাবাস, দক্ষিণে দেশের প্রখ্যাত একখানা কলেজ। মার্কেটের বৈশিষ্ট্যই ভিড় জমিয়ে দেয় এসব ছাত্রাবাস ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই আসে তা নয় সাধারণ লোকেরাও মার্কেটে ঢু-মারে নিজেদের প্রয়োজনে। এই মার্কেটের ছাঁদে খোলা আকাশের নিচে হোটেলটি। দীর্ঘ আটাশটি বছর চলছে হোটেলটি, স্বীয় গুণে, বলা যায়- ঠাই দাঁড়িয়ে, সগৌরবে। প্রশ্ন তুললে ভ্রান্তিমান হবেন না। কেন এই হোটেলের পরিবেশকে মনোরম বলছি? তাছাড়া নিরিবিলি জায়গা হিসেবে মনোরম হলেও এরকম একটা ব্যবসা জমে উঠার জন্য জায়গাটা অবশ্যই মনোরম নয়। মনোরম পরিবেশ দিয়ে তো এসব ব্যবসা হয়না। দরকার জনবহুল এলাকা। চলতে ফিরতে চোখে পড়বে মানুষের। হোটেল দেখে খাবার কথা মনে হবে। না, হোটেলটি হাফিজ মামার চায়ের দোকানের মত জনবহুল এলাকায় নয়। এমন একটা স্থান হাফিজ মামা বেছে নিয়েছেন যে, চারদিক থেকে মানুষ ঐ জায়গায় মিলিত হয়, হতেই হয়। হাফিজ মামার দোকানের ডানে 'বাংলার বাঘ' ছাত্রাবাস। বামে 'সখিনাবিবি' ছাত্রীনিবাস। পিছনে সিঙ্গেল জোন তার মানে ব্যাচেলর কোয়ার্টার। আর সামনে একটু দুরে সম্মিলিত মেধাবিকাশকেন্দ্র 'জিনিয়াশদের হৈ চৈ'। প্রতিদিন অসংখ্য মেধাবী এখানে আসে মেধায় আর একটু শাণ দিতে। চারদিকে এত ভিড় যেখানে মানুষের, সেখানে হাফিজ মামার চায়ের দোকানের ব্যবসাটা না জমবার কোন কারণতো নেই। কিন্তু এরকম কোন উপযুক্ত জায়গায় নয় হোটেলটি। একেবারে নিরব একটা জায়গা। যেখানে ঐ হোটেলেরই গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ কিংবা হোটেল বয়দের চিল্লাহাল্লা ছাড়া বাইরের কোন শব্দের স্বাদ আপনি পাবেন না। অবশ্য মাঝে মাঝে সুযোগ্য কিছু খাদকের বিরক্তি আর চোখ রাঙানির শব্দ, না না চোখ রাঙানির তো শব্দ হয়না এই বিরক্তির সাথে চোখ রাঙানি লক্ষ্য করা যায় আর কি! হ্যাঁ, খাদকই বটে। এখানে যারা আসে তারা পূর্বসুরী খাদক দাদাদের মাধ্যমে পথটি চিনে নিয়েছে কিভাবে আসতে হয় এখানে। এবার উত্তর পেয়ে গেছেন নিশ্চয়? কেন এরকম 'নিরব জোন' ব্যবসাটাকে জমিয়ে তুলতে পারল। প্রথম দিকে হয়ত জানতই না অনেকে- আরশের নিচে মার্কেটের উপরে একটা হোটেল আছে- 'মামা ফুড সেন্টার'। কিন্তু বংশ পরস্পরায় নিরব এই জায়গাটি জনবহুল হয়ে উঠেছে খাদকদের পদচারণায়, মুখরিত সদা জাগরিত তোমার পদভারে, খাদকের হৈ হুল্লোরে। নিজেকে প্রকাশ করে দিতে সঙ্কোচ করব না। আমিও সেই খাদক ফোরামের একজন গর্বিত সদস্য হয়েছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের ঠিক পরে পরে। মহা আনন্দে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আমার নির্ধারিত 'তুখোড় ছাত্রনেতা' ছাত্রাবাসে উঠলাম। মহা আনন্দে বলা এই জন্য যে, যেহেতু আমার মত ব্যর্থজনের আর কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল না। একদিন রুমের বড় ভাই আদর করে খাওয়ালেন মামা ফুড সেন্টারে। আহ! কি মুখরোচক খাবার। মায়ের হাতের রান্না করা মাংস আর আলু দমের স্বাদ পেলাম বোধহয়। বাংলা খাবার। একদম ঘরোয়া পরিবেশে। স্বাদ এবং সাধ্যের মধ্যে। মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের স্বাদ পেতেই খাদকরা ভিড় জমায় এখানে। কত রকম দল যে আসে প্রতি মিনিটে। পাঁচজন, সাতজন, দশজন অহরহ আসে। দশ-পনের জনের দল প্রায়ই দেখা যায় বেশ রাতে। তবে হোটেলের অধিকাংশ আসনই দখল করে রাখে দু'জনের মহান জুটি, অধিকাংশ সময়ই। যেন ভালবাসার মানুষটিকে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ দিতে পারলে পরাণটা একটু ঠাণ্ডা হয়। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই বটে। আর সে জন্যই বুঝি দীর্ঘ আটাশটি বছর মায়ের ভুমিকায় নায়ক হয়ে আছেন মামা। মামাতো মায়েরই ভাই। না, ভুলতে পারিনি বড় ভাইয়ের দেখানো সে পথ। বড় ভাইয়ের আদর করে খাওয়ানোর তিনদিন পর একাই গিয়ে হাজির সেই ফুড সেন্টারে। এর পর সপ্তাহে তিন দিন না গেলে আর যেন চলে না। কিন্তু একা আর ক'দিন ভাল লাগে। যেখানে এত জুটির মহাসমারোহ। একদিন পাশের কলেজের এক বন্ধুকে ইনভাইট, নাম মাহিন। ডাকার পর পর যথাসময়ে এসে হাজির মাহিন। তারপর ডাকতে হয়নি কোনদিন। সময় হলে সেই ডেকে নিত প্রতিদিনের মত। খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা শেষে হলে ফেরা। সারাদিনের ক্লান্তি মেটানোর একটা সুন্দর জায়গা পেয়ে মহাধুমধামে চলল প্রতি রাতে উদরপুর্তি। প্রতিদিন আমার সেই বন্ধু নতুন নতুন কর্ম পরিকল্পনার কথা শুনাতো খেতে খেতে। শুনাতো স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার কথা। তার একটা সখ ছিল মামা ফুড সেন্টারকে নিয়ে একটা কমেডি সিরিয়াল বানাবে। খুব সখ ছিল তার বড় নাট্যকার হবে সে। সে সখ তার পূর্ণ হয়নি। অবশ্য সখের বশে স্বপ্ন দেখা স্বপ্ন অধিকাংশ সময়ই অপুর্ণাঙ্গ থেকে যায়। একটা লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে। মাহিন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি। দীর্ঘ ছ'মাস কেটে গেল। মাহিনের সাথে দেখা হয় কালেভদ্রে। সে এখন এক সাহেবী কোম্পানির নামী অফিসার। জীবিকার খাতিরে দৌড়ঝাপ দিতে হয় আজ এখানে তো কাল ওখানে। মাঝে মাঝে ফোনে বলে- সোহান আজ রাতে মামায় একসাথে খাব। কিন্তু সে আসাও অনেক সময় আর হয়ে উঠেনা তার। ফোন দিয়ে যথাসময়ে বলে- দোস্ত খেয়ে নে। আর একদিন আসব।
সময়টা বদলে যাচ্ছে। নিজেকেও তো একটু বদলাতে হয়। পড়ালেখা শেষে মাহিন ঢুকে পড়েছে নতুন জীবনে। রেজাল্ট বের হতে আমার ছ'মাস বেশি সময় লেগে গেল। এখন কিছু একটা করা দরকার। চোখ রাখছি চারদিকে। হয়ত সময়মতো পেয়ে যাব মাথা গুজানোর মতো একটা ঠাই। তবুও দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে মাঝে মাঝে ভীত হয়ে যাই।
আজ মাহিন অনেক দিন পর সময় করতে পেরেছে। দু'জনে বসে বেশ কিছু দিনের জমে থাকা গল্পগুলো করছি টানটান আগ্রহে, মামা ফুড সেন্টারে। খাওয়া শেষে বের হওয়ার পথে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম- মামা দীর্ঘ আটাশটা বছর এই ফুড সেন্টার নিয়ে আছেন। অন্য কিছু করার কথা ভাবছেন না? কি আর করা মামা এই শেষ বয়সে? ভাবছি ছেলেটাকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া যায় কিনা। মামার উত্তর।
মামা ফুড সেন্টারের নাম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মেলাবেন মামা। অনলাইন সার্ভিস চালু করবেন তিনি। ক্লিক করলেই খাবার পৌছে যাবে খাদকের আবাসে স্বীয় টেবিলে। একটা বিজ্ঞপ্তি দেখলাম ফুড সেন্টারের দেয়ালে। কিছু সংখ্যক দক্ষ লোকের প্রয়োজন। সার্ভারের কাজের জন্য। সেই সাথে একটা নামও চাওয়া হয়েছে 'মামা ফুড সেন্টার' নামটার বদলে। বলা হয়েছে নিয়মিত খাদকদের অগ্রাধিকার। অনেক ভেবে একটা নাম ঠিক করলাম- 'মামা হোটেল ডট কম'। শ্লোগানও একটা ঠিক করলাম- 'ক্লিক করলেই খাবার'। একটা স্টিকার করার উদ্যোগ নেব চাকরিটা হয়ে গেলে। ভেবে রাখলাম স্টিকারের স্টাইলটা- পছন্দের খাবার পেতে লগ ইন করুন- http://www.mamahotel.com। ভাবলাম আমিতো এখানকার নিয়মিত খাদক। বাড়তি একটা যোগ্যতা যেহেতু আছে চাকরিটা আর যায় কোথায়?
হঠাৎ মোবাইলের এলার্ম বেজে উঠল। চোখ খুলে দেখি আটটা বেজে গেছে। আড়মোড়া দিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে। দৌড় দিলাম বাথ রুমে। বাথ রুমে গিয়ে নিজে নিজে হেসে উঠলাম আমার ডিজিটাল স্বপ্নের কথা ভেবে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমার গাওয়া ৩টি নজরুল গীতি শেয়ার করলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা ও সাম্যের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×