somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হিমালয় পুত্র
হিমুর বাণী শুনুন... মনকে.....করুন।

কাট কপি করা তয় পইরা দেকতে পারেন.......।

২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিনি সিঙাপুরের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। তিনি একজন ব্লগার। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সিঙ্গাপুরের নেটিজেনরা তাকে “বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্যাক্সি ড্রাইভার” বলে ডাকে। তার নাম ড:মিংজি কাই।

ড: কাই ১৬ বছর সিঙ্গাপুরের এস্টারের ইনস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি এন্ড সেল বায়োলজি (আইএমসিবি) বা অনুজীব ও কোষ বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৭ সালে তাকে চাকুরি থেকে ছাঁটাই করা হয় (কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা ছাড়াই)। নতুন চাকুরি খোঁজার এক অসফল প্রচেষ্টার পর ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ট্যাক্সি ড্রাইভার হবার সিদ্ধান্ত নেন। চার মাস আগে তিনি ব্লগ লেখার সিদ্ধান্ত নেন। তার ব্লগ সিঙ্গাপুরী ব্লগারদের আকর্ষণ করেছে, একই সাথে তা মুল ধারার প্রচার মাধ্যমেরও দৃষ্টিগোচর করেছে।

ড: কাই নিজেকে এবং তার ব্লগকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দেন:

সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র ট্যাক্সি ড্রাইভার যার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রী এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে। আমাকে গবেষণার কাজ থেকে জোর করে বের করে দেওয়া তখন যখন আমার বৈজ্ঞানিক পেশা এক উচ্চ অবস্থায় ছিল, সে সময়। এরপর আমি অন্য চাকুরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই, যার কারণ আমি বর্ণনা করবো অনেকটা এভাবে যে এটা “বিচিত্র এক সিঙ্গাপুর”। এর ফলে জীবন যাপনের জন্য আমি ট্যাক্সি চালাতে শুরু করি। এর তার সাথে এই রকম একঘেয়ে কাজটিকে খানিকটা কৌতূহল জনক করার জন্য বাস্তব জীবনের গল্পগুলো লিখতে শুরু করি। আমি আশা করি এই সব গল্প আপনাদের কাছেও মজাদার মনে হবে।

ড: কাই সেই সব অবস্থার কথা উল্লেখ করেন, যা তাকে ট্যাক্সি ড্রাইভার হতে বাধ্য করেছে:

আমার মতো বয়সে চাকুরি হারা হওয়া সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে বাজে ব্যাপার। এটি রাতের এক দু:স্বপ্ন যা যে কোন সাধারণ মানুষের জীবনে ঘটতে পারে। সারা জীবন একবার যে পেশা বেছে নিয়েছিলাম, তা হারানোর কথা আর উল্লেখ করলাম না… এরপর আমি অগুনতি জীবন বৃত্তান্ত ও চাকুরির দরখাস্ত সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন জায়গায় জমা দিয়েছি, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী কোম্পানীতে। এদের বেশীর ভাগই কোন সাড়া দেয় নি। বেশ কিছু উত্তর এসেছিল কিন্তু তার থেকে কোন ইতিবাচক কিছু আমি বের করতে পারি নি। পরে সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আমার দ্রুত চাকুরি খুঁজে পাবার শেষ আশাটিও নিভিয়ে দেয়। ২০০৮ সালের নভেম্বরে অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নেই একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার হবার।

এই ব্লগে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে আমি যে সমস্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তার কিছু ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এগুলো সব বাস্তবিক ঘটনা এবং যতটা সঠিক ভাবে তুলে দেওয়া সম্ভব সে ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে… এই ব্লগের উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠকদের জানানো আমার নিজের ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতা, কি ভাবে এক প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক আজকের সিঙ্গাপুরের রাস্তার এক নতুন ট্যাক্সি ড্রাইভারে পরিণত হল।

কিন্তু ড: কাই কি বাস্তবে রয়েছেন? আসলেই কি তিনি একজন বৈজ্ঞানিক? টুয়ার্ড দি গ্রীণ ড: কাই এর তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে ড: কাই-এর বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

এই সব তথ্য পরিষ্কার ধারণা দেয় যে ড: কাই এর অস্তিত্ব রয়েছে এবং তার একজন প্রাণ রসায়নবীদ হিসেবে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তার কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। ঘটনার সবচেয়ে সেরা প্রমাণ জানাচ্ছে ২০০৭ সালের কোন এক সময় তিনি আইসিএমবি চাকুরি হারান। কিন্তু এই এই বিষয় কোন সঠিক নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

কাজেই প্রশ্ন হল কেন ড: কাই আরেকটি গবেষণা ও উন্নয়ন জাতীয় কাজ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হল? গবেষণা ও উন্নয়ন চাকুরির বাজার আজকের দিনে এতটা দামী নয়। খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা মানে এমন নয় যে, অনেক প্রতিষ্ঠান পেশাদার বৈজ্ঞানিককে ভাড়া করছে। এই ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব বেশী সাহায্য করে না- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে লম্বা সময় ধরে চলা আসা এক ইতিহাস রয়েছে যে, অনেক পিএইচডিধারী ব্যক্তি খুব অল্প সংখ্যক চাকুরির পেছনে ধাওয়া করছে। এটাও তেমন তাকে সাহায্য করেনি। অনেক লোক গবেষণা ও উন্নয়ন মূলক চাকুরির বাজারে বয়সের কারণে প্রবেশের চেষ্টা করে। ড: কাই ১৯৯০ অথবা এর আশেপাশের সময়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সম্ভবত তার চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝামাঝি এক বয়সে, যে কোন প্রতিষ্ঠানে এই বয়সেও চাকুরি পাওয়া এক চ্যালেঞ্জ বটে।

ড: কাই এখন ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে তার যে অভিজ্ঞতা সে সম্বন্ধে লিখছেন। তবে আমার মতো একজনের পক্ষে তার অভিজ্ঞতা পরিষ্কার এক সতর্ক বার্তা, যারা গবেষণা ও উন্নয়ন মূলক কাজ করতে চায় তাদের জন্য। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা গবেষণা ও উন্নয়ন পেশায় কাজ করতে চায়, সিঙ্গাপুর এবং এ*স্টার এর মতো প্রতিষ্ঠানে।

র‌্যাম্বলিং লাইব্রেরিয়ান ড: কাইকে বর্ণনা করেন “ঘটনাক্রমে সিঙাপুরের সকল ক্যাব চালকদের কণ্ঠস্বর হিসেবে”:

….ঘটনাক্রমে তিনি রাতারাতি সিঙ্গাপুরের সকল ক্যাব চালকদের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। কোন পরিকল্পনা ছাড়াই তিনি তার নিজস্ব উপায়ে তাদের নেতাতে পরিণত হন।

আলভিনোলজি ১১ ট্যাক্সি ড্রাইভার ব্লগারের মনোভাবের প্রশংসা করেছেন:

এই ব্লগ পড়ার পর মনে হয় যেন এটি এক উপন্যাসের মতো, এক বৈজ্ঞানিক কিনা ট্যাক্সি ড্রাইভারে পরিণত হল। তিনি রাস্তায় ট্যাক্সি চালানোর সময় যে সব ঘটনার মুখোমুখি হন তা নিয়মিত ভিন্ন ভাবে তুলে আনেন- যে সমস্ত যাত্রীর সাথে তার দেখা হয় তাদের কথা, আমাদের সমাজে যে সমস্ত পরিবর্তন হচ্ছে তার কথা তিনি তুলে ধরেন।

আমি তার কঠিন সময়ের চিন্তা ভাবনার কথা অনুভব করার চেষ্টা করি। এটা মানব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে মূলধন নষ্ট করার মতো এক বিষয়। যখন কোন মানুষের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে চাকুরি পায় না তখন মানুষের প্রতিভার এক অপচয় হয়। নিশ্চয়ই এটা স্বাস্থ্যকর কোন লক্ষণ নয়, যদি আমরা আরো অনেক সিঙ্গাপুরী নাগরিককে এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে দেখি।

মি: ওয়াং সে সো ড: কাই এর লেখার বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা করেন:

আমি আসলেই তার লেখা পছন্দ করি। এটা সৎ, চারপাশ কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত এবং বিশ্বাসযোগ্য। এই লেখার মধ্যে সত্যিকারে স্থানীয় এক গন্ধ রয়েছে। তার ব্লগের এই সব লেখা আমাকে আমার পরবর্তী কবিতার বই লেখার প্রেরণা যুগিয়েছে।

হেইজানিয়ে’র বিশ্ব মনে করে যে ট্যাক্সি চালানো কোন নীচু কাজ নয়, এমনকি তার জন্য, যার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পিএইচডি ডিগ্রী রয়েছে:

এটা এমন এক ধরনের কাজ যা আপনি স্বাধীনভাবে করতে পারেন এবং যদি ভালোভাবে চালান, তাহলে আপনি ভালো টাকা আয় করতে পারেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জীবনের অন্য প্রেক্ষাপটে বলা যায় এটি আপনার কাজ করার সময়কে বেধে রাখে না। মোটের উপর ড: কাই তার সারা জীবন অন্য আরেক জনের গবেষণাগারে গবেষণা করে কাটিয়েছেন। এই বিষয়টি তার জন্য ভালো হবে, নিজের জীবনে একটি পরিবর্তনের জন্য নিজেকে আবিষ্কার ও তাকে নিয়ে পরীক্ষা করা।

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি অনুভব করি ট্যাক্সি চালনোর মধ্যে দিয়ে কারো মর্যাদা হানি হয় না-এমনকি তা তারকা সম্পন্ন কোন পিএইচডিধারী ব্যক্তির জন্য-যদি কেউ কাজ করতে জানে তাহলে ট্যাক্সি চালানোর মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে সেরাটই বের করে আনতে পারে।

কেন্ট রিজ কমন আশা করছেন এই বৈজ্ঞানিক এমন এক পরিবেশে কাজ করবেন যেখানে তার প্রতিভার বিকাশ সম্ভব হবে:

ড: কাই এর অভিজ্ঞতা যেন পানি থেকে ডাঙ্গায় তোলা ছটফট করা মাছের মত অথবা আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হবে, এমন এক দমবন্ধ করা পরিবেশ, যাকে তার নিজের ভাষায় বলা যায় চিহ্নিত দমন, সংস্কার ও উগ্রতার পরিবেশ। আমাদের মত এক জাতির ক্ষেত্রে একজন প্রাণ রসায়নবীদ হওয়া অনেক ভালো। কিন্তু আমাদের প্রথমে ও সব সময়ের জন্য এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যা আমাদের প্রতিভাকে নিজ ক্ষেত্রে বিকশিত হতে দেয়। এ রকম পরিবেশে কেউ যদি কারো দমবন্ধ করে ফেলে তাহলে স্বপ্ন কেবল এক কল্পনাই রয়ে যাবে।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×