অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন ব্লগে,ফোরামে অনেক জ্ঞান জাহির করা নাদান লেখকেরা লিখছেন জাফর এটা,জাফর সেটা , আরো কত কি?হ্যা পাঠক আমি শ্রদ্ধেয় ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কেই বলছি।
কেউ কেউ লিখেছে জাফর বাঙালী জাতিকে দেয়নি কিছু।আসলে তারা বলতে চেয়েছে জাফর বাঙালী জাতকে কিছু দেয়নি।হ্যা,জাফর বাঙালী
জাতকে কিছু দেয়নি বটে কিন্তু বাঙালী জাতিকে অনেক কিছুই দিয়েছেন।
এইযে কচি কচি বাচ্চাদের মনে অংকের ভূত, বিজ্ঞানের চিন্তা-ভাবনা ঢুকিয়ে দিচ্ছে।পাইয়ের মান দশমিকের পর কে কত ঘর পর্যন্ত মুখস্থ করতে পারে তার লড়াই বাধিয়ে দিচ্ছে কচি কাচাদের মধ্যে।সংখ্যা ত্বত্তের উপর ধারনা দিচ্ছে আর আমাদের সোনামনিদের চিন্তার কলম আর খাতা দিয়ে স্টেজে তুলে দিচ্ছে।নাও এবার চিন্তা কর।বিশ্বের দরবারে আর্ন্তজাতিক গনিত অলিম্পিয়ারের মাধ্যমে এক নতুন আঙ্গকে তুলে ধরছে এটা কার ফসল শুনি?হ্যা, জাফরের উর্বর মস্তিষ্কের দূরদর্শি চিন্তা পরিকল্পনার ফসল এটা। তিনিই প্রথম আমাদের এই গনিত অলিম্পিয়ার চালু করে এই
অনুরণনহীন জাতির নিউরনে অনুরণন ঘটানোর প্রকৃয়া চালু করেছে।
আবার অনেকে বলে আরে সে এক ধূর্ত ধান্ধাবাজ।কি সব ছাইপাশ লিখে।
পুরা অখাদ্য।রস নাই কস নাই।দু-শরীরের ছোঁয়াছোঁয়ি নেই।ইংরেজি সব সাইন্সফিকশনের বই অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়।কি সব আউল ফাউল কাহিনী।বেজির ভিতরে মানুষের জিন ঢুকিয়ে জিন পরীক্ষা করা,ভূত-প্রেত,গ্রহ-নক্ষত্র।আমি বলি যারা এসব বলে তারা না বুঝে সাহিত্যের কিছু না বুঝে বিজ্ঞানের কিছু।এরা হচ্ছে গোড়া। আরে ব্যটা তোরা উনার কয়টা বই পড়েছিস??আমি তপু,দিপু-নাম্বার-টু ,আমার বন্ধু রাশেদ, হাত-কাটা-রবিন এইসব বই পড়েছিস?নাকি বলবি এগুলো কোন লেখকের লেখা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেছে।নির্বোধের দল।যদি কারো সম্পর্কে সমালোচনা করার ইচ্ছা থাকে তবে জেনে করনা।না জেনে পশুদের মত করিস কেন?নাকি তোরাও পশু।পশুদের মত তোদের কোন বোধ বুদ্ধি নেই।
জামাতি কুত্তাদের ছা-পোনারা বলে আরে জাফর পড়েছেন পদার্থ বিদ্যায় হয়েছেন কম্পিউটারের শিক্ষক।ক্লাশে কিচ্ছু পড়াইতে পারেনা।কোন ছাত্রই কিছু বুঝেনা।আরে ধাপ্পাবাজের দল তোরা কখনো জাফর স্যারের ক্লাস করেছিস।আমি করেছি।আমি তার ছাত্র।আজ পর্যন্ত কোন বড় ভাইকে বলতে শুনিনি যে স্যারের পড়া বুঝিনা এমনকি আমার কোন সহপাঠি দেরকেও না।আমার জীবনে যত স্যারের ক্লাস আমি পেয়েছি তার মধ্যে এই কিছু না বুঝাতে পারা(তোদের মতে) লোকটার ক্লাসগুলোই আমার ভাল লাগে ।কারন একটাই যে যত বেশী জানে সে তত সহজ ভাবে কোন বিষয়কে অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারে।আর যে কম জানে সে কঠিন করে তুলে।
আরে জাফর একটা ফাউল লোক।হ্যা,জাফরতো ফাউল লোকই।কারন সে যে তোদের পশুবৃত্তির দাবি আজো তুলে।তোর রাজাকার পিতাদের বিচা
-রের কাঠগড়ায় দাড় করাতে চায়।বিপথগামী নতুন প্রজন্মকে আসল ইতিহাসের সন্ধান দেয়।আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনায়।মানুষের ভিতর লুকিয়ে থাকা বিবেককে জাগিয়ে তুলার চেষ্ঠা করে।
পাঠক আমি জাফর স্যারের ছাত্র বলে এসব বলছিনা।আসল সত্যকেই তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছি মাত্র। নিচের গল্পটা পড়ে দেখুন...
আমি ২০০৬ সালে বই মেলায় গিয়ে পুরোনো সব লেখকের বই কিনেছিলাম।আমার বইয়ের লেখকেরা মরে গেছে অনেক আগেই তাই আমার বইয়ে কারো কোন অটোগ্রাফ নেয়ার প্রশ্নই আসেনা।সে দিন অনেক বিখ্যাত লেখক মেলায় এসেছিলেন।তাই সাধ জেগেছিল তাদের অটোগ্রাফ নেয়ার।কিন্তু আমার কাছে কোন প্যড ছিলনা।তাই ধুরো ধুরো বুকে জাফর স্যারের জটলার মধ্যে দাড়াই।দেখি লোকটা সিড়িতে বসে অটোগ্রাফ দিচ্ছে।সেইদিন জীবনের প্রথম এই লোকটাকা আমি সরাসরি দেখেছিলাম।কিন্তু আমি তখনো জানতাম না যে আমি তার একদিন ছাত্র হব বা আমার সে সৌভাগ্য হবে।স্যারের সামনে আমি মেলে ধরেছিলাম জহির রায়হানের রচনা সামগ্রীর প্রথম পাতা।স্যার আমার নাম জিগ্গাসা করে তাতে আমার নাম লিখে আমাকে ভালবাসা শুভেচ্ছা দিয়ে অটোগ্রাফ দিলেন।আমি যেন বিশ্ব জয় করেছিলাম আনন্দ পেয়েছিলাম সেদিন।
সেদিন আরো দুজন বিখ্যাত লেখকের কাছে গিয়েছিলাম অটোগ্রাফের জন্য।কিন্তু নিজের বই না বলে তারা অটোগ্রাফ দেয়নি।
স্যারের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়ার পরের ঘটনা।
আমি একদিন বিকালে ক্যম্পাসে ঘুরছি।দেখি স্যারের পিছন পিছন একদল পথ ও গরীব শিশু।তাদের সাথে তিনি কথা বলতে বলতে উপরে নিয়ে গেলেন।আমিও গেলাম কি করে এদের নিয়ে তা দেখতে।দেখলাম এক বড় ভাই আমাদের ক্লাসরুমে কিছু শিশুদের পড়াচ্ছেন।স্যার তার দল নিয়ে ওখানে হাজির।পরে জানলাম তিনিই প্রথম আমাদের ক্যম্পাসে এইসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করতেন।এখনো করেন।তাইতো এইসব শিশুরা সরাসরি স্যারের রুমে ঢুকে যাওয়ার সাহস পায় কেউ কিচ্ছু বলেনা।আমার হিংসা হয় তাদের দেখে।তারা এইলোকটার সঙ্গ পাচ্ছে এই বয়সেই।
পরিশেষে একটু বলে শেষ করি....
" যে জাতি হারায়াছে দিশা
এই বঙ্গ ভূমির দেশে
শকুনেরা উল্লাস করতে চায়
রাক্ষসের বেশে। "
কুয়াশায় ঘেরা এই জাতির ভাগ্যে একটু আলোর প্রদীপ শিখা দেখানোর মত লোক আমাদের বড়ই দরকার।কিন্তু কতিপয় মানুষ নামের পশুরা এই জাতি আধারেই ডুবে থাকুক।যাতে তাদের উদ্দেশ হাসিল করতে সুবিধা হয়।আধারে নিন্মজ্জিত এই জাতির কিছুটা উত্তরনের জন্য হলেও জাফর স্যার এক উজ্জলতম এক আলোক বর্তিকা।তবে হে কেউ ভুল ভ্রান্তির উর্ঠে নই আমরা।কিন্তু যারা শুধু পরচর্চা,পরনিন্দার চাষ করে নিজের মধ্যে তারা মানুষকে বুঝতে চায়না শুধু মানুষকে বিচার করে।এই সব লোক আমাদের জাতির জন্য কোন কল্যান বয়ে আনতে চায়না ক্ষতি ছাড়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:১৯