ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি ও ভারতের উদ্দেশ্য
ভারতের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের প্রতিরা বিভাগের প্রয়োজনে পরমাণু বোমা তৈরির পথে আর কোন বাঁধা থাকল না। ভারতের যেমন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার অধিকার আছে , ঠিক তেমনি ভাবে এর বিরোধিতাকারী দেশগুলোর বিরোধিতা করার অধিকার আছে। বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমান অধিকার রয়েছে। ইন্দো-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তির অর্থ এই নয় যে, ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বিকিয়ে দেওয়া, আšতর্জাতিক পরিস্থিতির প্রোপটে জাতীয় স্বার্থকে স¤প্রসারিত করাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ল্য। ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তি হলো পরমাণু বিজ্ঞানকে সঠিক ব্যবহার করা। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো ‘‘প্রথমে আঘাত নয়’’ । বর্তমান সরকারও এই নীতি মেনে চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রধান অংশীদার সিপিএম এর প্রবল বিরোধিতা উপো করে , এমনকি সরকার পতন ও আগাম নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকার সাথে পারমাণবিক চুক্তি স্বারের পদপে গ্রহণ করে।
১. ভারতীয় অর্থনীতিতে যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে সে তুলনায় চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি মজুদ অপ্রতুল্য। বিশেষ করে ভারতের ভবিষ্যৎ জ্বালানির নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জন্য পারমাণবিক প্রকল্পের বিকল্প নেই। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ভারত আগামী ৫০ বছরের জ্বালানি চাহিদাকে সামনে রেখেই পারমাণবিক এই পদপে সবার উর্ধ্বে স্থান দিয়েছে।
২. অন্যদিকে শক্তিশালী ও উদীয়মান বিশ্বশক্তি হিসেবে আঞ্চলিক পর্যায়ে ভারত চীনের সমতা অর্জন ও পাকি¯তানের উপর প্রাধান্য বি¯তারের একটি অন্যতম কৌশল হিসেবে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
৩. ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি কার্যকর হওয়ায় ভারত বেসামরিক পরমাণু জ্বালানি উৎপাদনে ভারতের প্রায় ৪’শ কোম্পানী জিই,ওয়েস্টিং হাউজ ও এরিভার মতো বিশ্বের বড় বড় পরমাণুর ফার্মগুলোর সহযোগিতা পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের পরমাণু চুক্তি সত্ত্বেও তারা নিজেরদের পরমাণু পরীা চালাতে পারবে।
৪. এই চুক্তি স্বারের মধ্যে দিয়ে ভারতের উপর থেকে পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
৫. এই চুক্তির ফলে ১১০ কোটি বেশি মানুষের দেশ ভারত তার ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু জ্বালানি , চুল্লি ও প্রযুক্তি পাবে।
৬. এই চুক্তি স্বারের ফলে ভারত পশ্চিমা বিশ্ব থেকে পরমাণু প্রযুক্তি কিনতে পারবে।
৭. পরমাণু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অংশ গ্রহণ করার অনুমতি ছিল না। এই চুক্তি স্বারের ফলে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংম গ্রহণ নিশ্চিত হলো।
৮. ভারত-মার্কিন বেসামরিক চুক্তি স্বারের ফলে ‘১২৩ চুক্তি’ বা¯তবায়নের পথে আর কোন বাঁধা রইল না।
৯. এই চুক্তির ফলে ভারত-মার্কিন সস্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি ও আমেরিকার উদ্দেশ্য ঃ
১. বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করে আমেরিকার কৌশলগত একটি বড় অর্জন।
২. এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিলিয়ন ডলারের বেসামরিক পরমাণু বাজার উন্মুক্ত হবে।
৩. কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাষ্ট্রি’র সূত্রে জানা গেছে, এই চুক্তির ফলে আগামী ১৫ বছর যুক্তরাষ্ট্র ভারতে ১৮ থেকে ২০টি পরমাণু স্থাপনায় ২৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আরো ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ফ্রান্স, রাশিয়া, এবং অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠান গুলো ভারতের এই বেসামরিক পরশাণু বাজারে অংশ নিতে পারে।
৪. বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি লাভবান হবে।ভারতের লোকসংখ্যা এখন প্রায় একশত কোটির উপরে। এর মধ্যে বিশাল অংশ দখল করে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। কাজেই সেখানকার বাজার ধরতে পারলে বড় রকমের লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশ। পারমানবিক চুক্তি কার্যকর হওয়ায় আমেরিকার বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভারতে ব্যবসা করতে পারবে। জ্বালানি সমস্যা পীড়িত ভারতে এ খাতে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে । ২৫ বছর একটানা চলবে এই ব্যবসা।
৫. ইন্দো-মার্কিন বেসরকারি পরমাণু চুক্তি স্বার হওয়ার ফলে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক দল ভারতের কিছু পরমাণু স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারবে।
৬. মার্কিন অর্থনীতিবিদ এলবার্ট কিডেল স¤প্রতি এক বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, কী করে চীনের শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আšতর্জাতিক সম্পর্ক ও অবস্থানের প্রতিটি ত্রেকেই প্রভাবিত করবে। চীনের সম্ভাব্য প্রভাব বলয়কে দমিয়ে রাখার একটি প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে ভারতের সাথে আমেরিকার পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদিত হলো।
৭. যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সহযোগী দেশগুলো জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে পূর্ব ইউরোপে বিশেষ করে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্রে পারমানবিক বর্ম সৃষ্টির প্রচেষ্টায়রত। ভারতের সাথে হলো পারমানবিক সহযোগিতাচুক্তি যদিও একে প্রাথমিকভাবে গবেষণা ও শাšিতপূর্ণ সহযোগিতামূলকভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এটা সহজে বোধগম্য যে, এ সবকিছুই হচ্ছে রাশিয়া ও চীনকে চাপে রাখার জন্যে।