somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু একবার বলি ‘ভালবাসি’

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধু একবার বলি ‘ভালবাসি’
আহমদ শিবলী

আমার খুব অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। আসলে ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলেই হয়। কিন্তু কেন জানি আমি এ ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারিনা। আমি অপ্রস্তুত বোধ করছি। কণারও মনে হয় একই অনভূতি হচ্ছে। সে চুপচাপ এক মনে খাচ্ছে। ঘটনাটা আপনাদের খুলেই বলি। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশেদ। আজ এক বছর হল বিয়ে করেছে। স্ত্রী নাদিয়া। রাশেদ অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে। তার উপর ভাল চাকরি, ভাল বেতন। জানিনা উপরি আছে কিনা। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। চাকরির দুই বছরেই গাড়ি, বাড়ি কিনে ফেলল। ওরা প্রেম করে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর প্রেম কমেনি বরং মনে হয় দিনকে দিন বাড়ছে। ওরা হচ্ছে উপলক্ষ জুটি। নিজেদের প্রেম এবং বিয়ের বিশেষ বিশেষ তারিখে ওদের পার্টি হবেই। উপলক্ষের সময় এলেই রাশেদের ফোন “দোস্ত চলে আয়, ভাবিকে নিয়ে আসিস।” আমি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেও পারিনা। আমাকে যেতেই হয়, সাথে কণাকেও। আজ যেমন এলাম। তারপর আমরা হই ওদের ভালবাসার দর্শক। ওদের খুনশুটি আর কথায়-আবেগে ভালবাসার উষ্ণ প্রকাশের নীরব দর্শক হই আমরা। খাওয়ার সময় নাদিয়া তার প্লেইট থেকে এক পিস মাংস তুলে দেয় রাশেদের প্লেইটে, রাশেদও তার এক পিস মাংস তুলে দেয় নাদিয়ার প্লেইটে। এবাবে চলে ভালবাসার উষ্ণ প্রকাশ। আর আমরা দারুন অস্বস্তি বোধ করতে থাকি। আমার আর কণারও কি একে অপরের প্লেইটে এক পিস মাংস তুলে দেয়া উচিৎ? বুঝতে পারি না। ভালবাসার এমন প্রকাশ্য প্রকাশে আমরা খুব অস্বস্তি লাগে। আমি তাই কিছুই করছিনা, চুপচাপ বসে আছি। ওদের দেখছি, কণাও ওদের দেখছে। ভদ্রতার হাসা হাসছি। এমন সময় হঠাৎ রাশেদ বলে উঠল।

- কিরে চুপচাপ কেন? কী হয়েছে?
- কই কিছু না তো।
আমি অবাক হওয়ার সুরে বলি।
- তাহলে কিছু বল। এই ক্যাসিয়ারাগিরি করে ক’দিন চলবি বল।
তারচেয়ে বরং ব্যবসা কর। বুঝলি।
- হ্যা ঠিক বলছিস। আমি সেটাই ভাবছি। বললাম আমি।
হ্যা, আমি একজন ক্যাশিয়ার। একটি ছোট প্রাইভেট কোম্পানিতে টাকা-পয়সা হিসাব করাই আমার কাজ। বাইরের লোকদের আমি বলি ফাইনেন্স অফিসার। অফিসার বলি ভাব বাড়ানোর জন্য। ভাবটা কতটুকু বাড়ে তা অবশ্য বুঝতে পারিনা।

ক্যাশিয়ার বলেই বেতনটা খুবই অল্প। চলতে খুব কষ্ট হয়। তাই কণাও একটি কেজি স্কুলে মাস্টারির চাকরি নিয়েছে। দুজনের আয়ে এক রকম চলে আরকি। খুবই হিসেব করে চলতে হয়। বলতে গেলে কিপ্টেমি করি দুজন মিলে।

রাশেদের বাসা থেকে ফেরার পর আমরা দুজনই কেন জানি চুপচাপ থাকি। হয়ত ওদের ঐশ্বর্য দেখে কিংবা ওদের ভালবাসার প্রকাশ্য প্রকাশ দেখে নাকি নিজেদের ভালবাসার প্রকাশের ব্যর্থতা দেখে, জানি না। বেশিক্ষন অবশ্য এ পরিস্থিতি থাকে না। একটু পরেই কণা এক কাপ কড়া লিকারের চা নিয়ে হাজির হয়। চা খেতে খেতে আমরা গল্প করি। ২ বছরের সংসারের সব অভাব-অনটন দুঃখ ভুলে সুন্দর আগামী নিয়ে গল্প করি। আইনস্টাইনের সময়ের আপেক্ষিকতার সূত্র তখন খুব ভালভাবে বুঝতে পারি। ঘড়ি তখন ঘোড়ার বেগে চলতে থাকে। সময় কেটে যায় বুঝতেও পারি না।

হঠাৎ একদিন রাশেদের ফোন। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলল। গিয়ে যা শুনলাম বিশ্বাস করতে পারলাম না। নাদিয়া রাশেদকে ছেড়ে চলে গেছে। ডিভোর্স লেটার নাকি পাঠাবে। সে নাকি রাশেদকে ভালবাসতে পারছে না। কেন পারছে না তা রাশেদও বুঝতে পারছে না। ভালবাসতে না পেরে ভালবাসার অভিনয় করেছে মাত্র। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কী করব বুঝতে পারলাম না। ভালবাসা কি এতই ঠুনকো ?

রাশেদকে স্বান্তনা দিয়ে বাসার পথ ধরলাম। হাটতে হাটতে ভাবছিলাম রাশেদ আর নাদিয়ার কথা। কে বলবে নাদিয়ার ভালবাসা সত্যি ছিল না। মিথ্যা আর অভিনয়ের আড়ালে ঢাকা ছিল তা। অতি উত্তপ্ত ভালবাসা হয়ত এভাবেই তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু আশেপাশে অনেক স্ত্রীই আছে যে তার স্বামীকে সত্যি খুব ভালবাসে। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও, চাওয়া-পাওয়ার অমিল থাকা সত্ত্বেও ভালবাসার মমতার আচল দিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখছে। কোন স্বামী কি তার স্ত্রীকে এর জন্য একটু ধন্যবাদ দিচ্ছে? চোখে চোখ রেখে একবার বলছে ভালবাসি? কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে।

হঠাৎ মনটা খুব ভাল হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে খুব অস্থির লাগতে লাগল। এতদিন যা মুখে বলা হয়নি আজ যে একবারের জন্য হলেও তা বলতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা নিয়ে বাসায় গেলাম। গিয়ে হাতে হাত রেখে প্রথমেই বললাম-
- ভালবাসি, ধন্যবাদ।
- ভালবাসি বুঝলাম। ধন্যবাদ কেন ?
তার অবাক দৃষ্টি।
- কেন জানতে চেয় না। শুধু বল তুমি কি জান আমি একটি ক্ষেত্রে খুব জ্ঞানী।
- তাই নাকি ?
- হ্যা, ভালবাসার ক্ষেত্রে সেই সবচেয়ে বড় জ্ঞানী যে ভালবাসে বেশি কিন্তু প্রকাশ করে কম।
- কণা হেসে বলল, এটা তো পুরান কথা।
- পুরান কথা হউক। কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্যি কথা। পৃথিবীর সব প্রেমিক প্রেমিকার জন্য সত্যি কথা।
কণা কিছু বলে না। শুধু হাসে। হয়ত ধন্যবাদ দিয়ে কণাকে ছোট করছি তবে এই প্রথম ভালবাসার কথা প্রকাশ্যে প্রকাশ করলাম। দু’একবার ভালবাসার ও রকম প্রকাশ্যে প্রকাশে মনে হয় খুব একটা দোষ নেই।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×