somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্রগ্রাম -১

২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--------------------------------------------------------------------------------

পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে লিখার চিন্তা আমার কয়েকদিন আগে থেকে। কিন্তু সময়ের বড় অভাব। তাই পারচি না। আমাদের বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েচে। সেনাবাহীনির একটা অংশ সেখান থেকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্চে। এমতা অবস্থায় আমাদের বিরোধি দল এবং বুদ্ধিজীবিদের একটা বড় অংশ সেনা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করচে। তাদের মতে সেনা প্রত্যাহার করলে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালিদের জীবন নাশসহ অত্যাচারের ভয় রয়েচে।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির আগে এবং পরে পাহাড়ে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা রয়েচে।৯৫বা ৯৬তে আমি দেখেচি ২৮জন কাঠুরিয়াকে শান্তিবাহীনি নির্মম্ভাবে হত্যার পরে সেই কাঠুরিয়াদের পরিবারগুলোর আহাজারি। আকাশ বাতাশ হাহাকার করা সেইদিন আমি এখনো ভুলতে পারি নাই।সেই পরিবারগূলোকে সরকার অল্প কিছু টাকা দিয়ে দায় সেরেচে মাত্র।
আমি দেখেচি আমার এক সময়ের ক্লাসমেট এক বাপের এক ছেলে জাকিরকে কিভাবে পাহাড়ি সন্ত্রাসিদের হাতে জীবন দিতে হয়েছিল।ঘটনাটা ১৯৯৯তে। মৃত্যুর তিন্ দিন আগে থেকে তাকে অনবরত পাহাড়ি মদ পান করানো হয় পানির বদলে। মদ পান করিয়ে তার পুরুষাংগকে বেঁধে দেয়া হয় যেন সে পশ্রাব করতে না পারে। টিউব লাইটের কাচ ঢুকিয়ে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। আঙ্গুলের নখগুলো তুলে ফেলা হয়। তার সারা শরীরে ছিল অত্যাচারের চিহ্ন। তার মৃত লাশের ভোটকা গন্ধ এখনো আমার নাকে লাগচে, এটা আমি ভুলতে পারবো না কোনদিন।আমরা বা প্রশাসন কিছুই করতে পারি নাই, পেরেচি শুধু তার মৃত লাশ নিয়ে মিছিল করতে। জাকিরের হত্যার বিচার হয়নি আজো।আর হবেও না।

এমন অনেক হত্যা প্রতিনিয়ত ঘটচে পার্বত্য চট্রগ্রামে। এগুলির কোন সাজা হয় না। সেনাবাহীনি এইসব ছোটখাট বিষয়ে অকর্ম।শান্তিচুক্তির আগে শান্তিবাহীনির ভয়ে একসময় পুরো পাহাড়ের মানুষ ছিল অসহায়। অন্তত ত্রিশ হাজার বাংগালি আর সেনা সদস্য তাদের হাতে জীবন দিয়েচে। চাঁদাবাজিতে অস্থির ছিল পাহাড়ি বাংগালি সবাই। চাঁদা নাদিলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হতো, মানুষকে হত্যা করে লাশ পেলে দেয়া হতো পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চররায়(খাল)। প্রতিটি গাড়ি আসা যাওয়া করতে চাদা দেয়া লাগত টোকেন পদ্ধতিতে।অপাহাড়িরা জংগলে ঢুকতে পারতো না।সেনাবাহীনির সদস্যরাও সব জায়গায় যেতে পারত না। সেখানকার বেশিরভাগ সীমানা ছিল অরক্ষিত।শান্তিবাহীনির চোরাগুপ্ত হামলায় সেনাবাহীর সদস্যরাও প্রচন্ড মার খায়।

কেন শান্তিবাহীনির জন্ম সেটা সবাই জানে।নতুন করে কিছু বলার নেই। ঢাকা শহর বা চট্রগ্রাম শহরকে অন্ধকারে থেকে মুক্তিদিতে বানানো হয় কাপ্তাই বাঁধ। আর তাতে বিস্তির্ন পাহাড়ি ভুমি ডুবে যায় পানিতে। এবং পাহাড়িদের বাড়িঘর বা জুম চাষের জমিনগুলো ডুবে যায় এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্তিম লেক কাপ্তাই লেকের পানিতে। তখন পাকি সরকার এদেরকে তেমন গুরুত্ব না দিলে সেখান থেকে শুরু উপজাতিদের ক্ষোভের। জিয়ার আমলে এই ক্ষোভ রুপ নেয় সশস্ত্র যুদ্ধে। আর জিয়ার কঠোর দমননীতিতে তাদের ক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে।এবং যুদ্ধের দাবানল বাজে সম্পুর্ন পার্বত্য চট্রগ্রামে।

জিয়া তখন ভুলে গিয়েছিল আমরা বাংলার জনগন২৪ বছর পাকুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েও দমে যাই নি।স্বাধীনতা আমাদের প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল ফাকুদের অত্যাচারের কারনে।সে তার মুনিবদের মত করে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েচিল।ঘৃনা আর শক্তিদিয়ে সব কিছু জয় করা যায় না।এই কথা আমাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানরা বুঝতে পারেন নি। এরশাদ এসেও জারি রাখলো যুদ্ধের দামামা।
যদি তারা শান্তিপুর্নভাবে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন তাহলে হয়ত এতগুলি মানুষ মারা যেত না, এত সম্পদ ধংস হতো না। পাহাড়ি বাংগালিদের সম্পর্কও এত খারাপ হতো না। উন্নয়নের ধারা থেকে পাহাড়ের জনপদ এত পিছিয়ে থাকত না।উন্নয়নের ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে সিমান্তের নিরাপত্তা বাড়ানো যেত, রোধ করা যেত চোরাকারবারি বা মাদকপাচারের মত গুরুত্বপুর্ন অপরাধ।সামরিক খাতে খরচ হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা বেচে যেত, যা দিয়ে দেশের উন্নতি আরো বেশি করা যেত।কক্সবাজারের মত রাংগামাটি বা বান্দরবানকেও করা যেত পর্যটনের এক বিশাল কেন্দ্ররুপে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:২৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×