somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিধানের সংযম

২৩ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংযমের ‘মাস’ রমজান, সংযমের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ‘কাল’ রমজান।
জ্ঞানপ্রাপ্ত কোনো মানবসন্তান যখন এ মাসের নাগাল পাবে, -সে যেন সংযত হয়; -বিধানের এ রকমই দাবি, -যে বিধানের লক্ষ্য শান্তি, -মানুষের শান্তি।
(সৃষ্টিগতভাবেই ‘মানুষ’ স্বাধীন। মানবাকৃতির জীবন্ত দেহটিকে স্বাধীনভাবে যে-সত্তাটি আগামীর দিকে ধাবিত রাখে, সেটি বিবেক এবং আবেগের সংমিশ্রিত স্বাধীন সত্তা, -‘মানুষ’ বা মনুষ্যসত্তা। ‘স্বাধীনত্ব’ই মানুষের বা মনুষ্যসত্তার অসংযত হওয়ার সহায়ক উপাদান।
স্বাধীনত্ব উপাদানটি ‘মনুষ্যসত্তা’ ও ‘শান্তি’ এ-দু’য়ের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যবধানকারীরূপে অস্তিত্বশীল।
মোটকথা, -মানুষ, -‘অসংযত হওয়া না-হওয়া’র স্বাধীনতাপ্রাপ্ত। তবে জীবিত প্রত্যেক মানবসন্তানের চূড়ান্ত লক্ষ্য, -‘শান্তি’। -এবং, সংযমের মাস রমজানই এ-ব্যাপারে সহায়ক সময়, -মানুষের অসংযত না-হওয়ার ব্যাপারে সহায়ক সময়। আবেগের স্বাধীনতাকে প্রশ্রয় না-দেওয়ার সহায়ক সময় বা কাল, -অর্থাত্‌, ‘দেহ এবং মন’ উভয়ের সংযমের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য প্রতিবছর কমবেশি ঊনত্রিশটা মনোনীত নির্দেশিত দিন রমজান মাস নামে চিহ্নিত।)
প্রত্যেক জাত-ধর্মের শান্তিকামী মানুষের আত্মরক্ষার জন্য জাত-স্বাপেক্ষে সংযমের শাসন আছে। যথারীতি, বিশ্বাসী মানুষেরা ‘অসংযত স্বাধীন আবেগ’-কে নিয়ন্ত্রণে রেখে রেখে শান্তির লক্ষ্যে জাতধর্মের বিধান মেনে মেনে চলে।
‘সংযম’ এবং ‘ত্যাগ’ দু’টো আলাদা শব্দ। যথারীতি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ নিয়ে ঐ শব্দ দু’টো প্রচলিত। প্রত্যেক জাত-ধর্মের বিধানের শাসনে ত্যাগের মাধ্যেমেও শুদ্ধির প্রক্রিয়া আছে, তবে রমজানের শুদ্ধিতে ত্যাগ নয়, -নির্দেশ আছে সংযমের। যেমন, দিন রাত পূর্ণ দিবস পানাহার ত্যাগ করতে হয় না, -দিবসের একাংশ, শুধু দিবাভাগে পানাহার বর্জন ক’রে সংযমের প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিধান আছে। তবে দিবাভাগে পানাহারের সাথে সাথে আরও যা’কিছুতে সংযত থাকার নির্দেশ আছে, সেগুলো রমজান ছাড়া অন্য সময়ে বৈধ কি-না, ধাঁধাটা সেখানেই।
যেমন, সংযত হওয়ার ধরণ যদি এমন হয় যে, -‘প্রতিদিন বারো জনের ক্ষতি করতাম, আজ রমজানে পাঁচ জনের ক্ষতি করছি; কিম্বা উসকানি দিয়ে সাতটা শান্ত পরিবেশকে কোন্দলময় করতাম, আজ তিনটাকে করছি; কিম্বা অন্যান্য দিনের মত নয়টা মিথ্যা না-ব’লে আজ ছয়টা মিথ্যা বলছি; কিম্বা পাঁচটা মিথ্যাসাক্ষ্য না-দিয়ে তিনটা দিচ্ছি; কিম্বা প্রতিদিন যে হারে অহংকার প্রদর্শন করতাম, রমজানে তারচে’ কম হারে অহংকার দেখাচ্ছি; কিম্বা অন্যান্য সময়ে কারো আড়ালে তার দোষ নিয়ে পাঁচখানা আড্ডায় আলোচনা করতাম, আজ তা’ করছি তিনখানা জলসায়; কিম্বা বিনাদোষে ভিন্নধর্মী বা ভিন্ন-মতাবলম্বীর রক্ত ঝরাতাম, আজ কেবল ধাক্কা দিয়ে ফেলে হালকা আঘাত দেবো; কিম্বা অ-রমজান-কালে যে-হারে অপচয় করতাম, আজ রমজানে তারচে’ কম অপচয় করছি; কিম্বা অন্যান্য দিনে বা রাতে প্রাপকের ন্যায্য ফাইল আটকিয়ে কৌশলে যত নিতাম, রমজানে আজ তারচে’ কম নিচ্ছি ;’ -ইত্যাদি ইত্যাদি ধরণের ‘সংযম-পালন’কে কোনো জাত-ধর্মই ‘বিধানের সংযম পালন’ ব’লে স্বীকৃতি দেয় না, -বরং ‘শয়তানি যুক্তি’ হিসেবেই চিহ্নিত করে এবং ‘শয়তানি যুক্তিময় সংযমের ধারণা’ কেবল শয়তানের ক্রীতদাস বা শয়তানের ভাইয়ের জন্যই গ্রহণযোগ্য।
বিধানের সহজ ভাষায় যা’ অবৈধ তা’ সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য। পরিত্যাজ্যকে পরিত্যাগ করলে তবেই কেউ একজন ‘বিধানে বিশ্বাসী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বিশ্বাসী হ’লে পরে তবেই তার জন্য ‘উপাসনা’ বা ‘সালাত’।
(-তালিকার তৃতীয় স্থানে ‘সিয়াম’ বা ‘সংযম’)
পরিত্যাজ্যকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে না-চেয়ে সেগুলো থেকে আংশিক ভাবে সংযত হ’তে চাওয়াকে শয়তানি চাওয়া হিসেবেই ধরা হয়।
‘শয়তানি সংযমের প্রশিক্ষণের মাস রমজান,’-এমন দাবি(!),--এমন দাবি কোনো শয়তানও করে না।
বস্তুত চিরঅক্ষম অভিশপ্ত শয়তান, মাধ্যম ছাড়া নিজে নিজে শয়তানি করতে পারে না।
আসলে,-‘বিধানের সংযম’ হ’চ্ছে এমন সব বিষয়ে সংযত থাকা যা’ পরিত্যাজ্য নয়। ‘সংযমের প্রশিক্ষণের নির্দিষ্ট’ কালে সংযম পালনের নির্দেশ আছে সেই সব কর্মকাণ্ডে যেগুলো অন্যান্য সময়ে বৈধ হিসেবেই বিধানে বিবেচিত। কিম্বা যেগুলো অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত নয়।
যেমন,-‘বৈধ উপার্জনে যোগাড় করা বিধানবৈধ খাদ্যদ্রব্যের অসীমিত ভক্ষণকে সীমিত করা; কিম্বা আঘাতের সম-পরিমাণ প্রতিঘাত করার বৈধ অধিকার এবং সুযোগ পেয়েও আঘাতকারীকে সসম্মানে ক্ষমা ক’রে দেওয়া; কিম্বা অসীমিত ‘বৈধ স্বজনপ্রীতি’কে (যে স্বজনপ্রীতিতে অস্বজনেরা যোগ্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত হয় না) সীমিত বা সংযত করা; কিম্বা স্বজনদেরকে বাদ দিয়ে ‘বেশি বেশি পরোপকার’-এর প্রবণতা সংযত করা; কিম্বা বৈধ পার্থিব কর্মকাণ্ডের ব্যতিব্যস্ততা কমিয়ে আনা; কিম্বা অন্যদেরকে সুযোগ না-দিয়ে একাই সমস্ত ভালোর দায়ভার বহন করার প্রবণতা সংযত করা; কিম্বা জাগতিক কর্মকাণ্ডকে এড়িয়ে সার্বক্ষণিক আধ্যাত্মিক জ্ঞানজগতে বিচরণের বৈরাগ্য প্রবণতা সংযত করা।’-ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাত্ত্বিক শিক্ষণের নয়, -বরং, -প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের অর্থাত্‌ ‘নিজে সংযত হ’য়ে সংযম পালনের’ প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাস রমজান।
প্রত্যেক মানুষ অসাধারণ, -সাধারণ হওয়া সাধনার ব্যাপার। সংযমের প্রশিক্ষণের মাস ‘রমজান’ মানুষকে সাধারণ হওয়াতে সাহায্য করে, সাহায্য করে মধ্যপন্থা-অবলম্বী হ’তে। জ্ঞানপ্রাপ্ত কোনো মানবসন্তান যখন এ মাসের নাগাল পেলো, সে যেন সংযত হ’লো, বিধানের এ রকম-ই দাবি। আর ঐ বিধানের লক্ষ্য শান্তি, --মানুষের শান্তি।
শেষের আগের কথা, আসুন, আবার একবার সংযত-জাগ্রত-বিবেকে, নিয়ন্ত্রিত-আবেগে আমরা ‘সমস্ত বিষয়টাকে’ এবং ‘নিজেকে’ ভেবে দেখি।
রঙ্গপুর : ১৯/১১/২০০৩
করণিক : মো: নুরুল আখতার
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×