ধর্মের নামে নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 01 Sep 2013, 06:49 PM
রোববার শিল্প এলাকা সাভারের আশুলিয়ায় এক জনসভায় তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগে পুনরায় ভোট দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এই আহ্বান জানান।
পোশাক শিল্প অধ্যুষিত ওই এলাকায় জনসভার আগে এক হাজার পোশাক শ্রমিকের জন্য একটি ডরমিটরি ভবন উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী।
পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তা ঠেকাতে রপ্তানিমুখী এই খাতের শ্রমিকদের সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
“দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য গার্মেন্ট কারখানায় ‘স্যাবোটাজ’ হতে পারে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজির ব্যাবস্থা করে, সেই কারখানার কোনো ক্ষতি যেন কেউ না করতে পারে, তা দেখতে হবে।”
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এবং সংগঠনটির আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “তেঁতুল তত্ত্ব এসে গেছে। এটা তিনি(খালেদা জিয়া) সমর্থন করেন। আমি জানি না, কেন তিনি তা করছেন।
“মেয়েদের ক্লাস ফোর-এর বেশি পড়ানো যাবে না, কাজ করতে দেয়া হবে না, ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না- এটা কোন ধরনের কথা? মেয়েরা যদি কাজ করে, নিজেরা উপার্জন করে তাহলে তো সংসারের জন্যই মঙ্গল। কেন তারা স্বচ্ছলতার পথ বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে?”
“এ দেশে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার রয়েছে। গার্মেন্ট কারখানাসহ যে কোনো কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কাজ করেতে পারবে। আমরা তা নিশ্চিত করব। মেয়েরা কাজ করতে চাইলে কেউ বাধা দিতে পারবে না।”
সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্মগ্রহণকারী বিবি খাদিজা এবং ইসলামের প্রথম শহীদ বিবি সুমাইয়ার কথা তুলে ধরে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠায় নারীদের অবদান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“ইসলাম মেয়েদের সম্মান দিয়েছে, অধিকার দিয়েছে। সেই ইসলামের নামে তারা মেয়েদের কর্মক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করতে চায়।”
হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযানের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শাপলা চত্ত্বর নিয়ে কিভাবে তারা অপপ্রচার করেছে! তারা বলেছিল, ৫ মে আড়াই হাজার মানুষ মারা গেছে।
“আমরা যখন নিহতের তালিকা চাইলাম, তখন তারা বলল আড়াই হাজার নয়, মারা গেছে ৬১ জন। সেই ৬১ জনের তালিকায় দেখা গেল, যাদের নাম বলা হয়েছে, তারা বেঁচে আছে।”
ধর্মের নামে যারা অপপ্রচার চালানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যারা কোরআন শরিফ পোড়ায়, তারা কিভাবে ইসলাম রক্ষা করবে? তারা সত্যিকারে ধর্মে বিশ্বাস করে কি না, আমার সন্দেহ।”
কেবল আওয়ামী লীগই কৃষক-শ্রমিক-খেটে খাওয়া মানুষের কল্যাণে কাজ করে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, অন্য সরকারগুলো কেবল লুটপাটেই ব্যস্ত ছিল।
“আমাদের লক্ষ্য কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কল্যাণ। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সাধারণ মানুষ কিছু পায়। অতীতে অনেক সরকার ছিল। তারা শুধু কামাতে জানে। নিজেরা লুট করে, পাশাপাশি একটি লুটেরা শ্রেণি তৈরি করে।”
শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের সময়ে বেতন বাড়ানোর জন্য কখনো আন্দোলন করতে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করেছে। তাদের মজুরি আরো বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে সহযোগিতা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহতদের শিশুদের জন্য আলাদা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের সদস্যের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এত টাকা এর আগে কেউ দেয়নি।”
কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, শ্রমিকদের সুবিধার জন্য ২৯টি শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“কিন্তু আমার ভয় হয়, সরকার পরিবর্তন হলে, এই উদ্যোগগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে,” আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১২ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারত্বমুক্তভাবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট চাই।”