somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম! (উৎসর্গ: ০৬ এর সামহোয়্যার ইন)

১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন এখানে ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম, তখন এখানে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন ছিলো - বড়জোর পঞ্চাশ-ষাট। বাকিরা সবাই আমার চেয়ে বড় ছিলো, আর এমন সব ব্যাপার নিয়ে কথা বলতো যার বেশির ভাগ এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যেত। ধর্ম, রাজনীতি, দেশ, ভালোবাসা নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলতো। মাঝে মাঝে দু'একজন ফাটাফাটি কোন গল্প কিংবা কবিতা লিখে বাকিদের মুগ্ধ করে দিতো। ঝগড়া, শ্রদ্ধা, স্নেহ সব মিলিয়ে সবার মধ্যে 'পরিবার-পরিবার' ভাব ছিলো। 'সাম্প্রতিক মন্তব্য'তে দিনের পর দিন একই পোস্ট থাকতো। 'অনলাইনে আছেন' এ একসাথে বিশজনকে দেখা যাওয়া বিরাট ব্যাপার ছিলো। প্রথম পাতা থেকে পোস্ট সরতেই চাইতো না, কেও সরাতে চাইলে বসে বসে ফ্লাডিং করতো। আর লিখলে B-) আসতো।তখন পোস্ট করার আগে লেখাটা দশবার পড়তাম, ভালো হলো নাকি ভেবে ভেবে দুশ্চিন্তায় মরতাম।

যে নামগুলো খুব চেনা ছিলো:

আস্তমেয়ে - স্বন্ধ্যাবাতির আগের নিক, আমার বড় বোন, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ - অনলাইন ও অফলাইন। ও আমাকে প্রথম দেখিয়ে দিয়েছিলো সামহোয়্যারইন। ওর লেখা পড়ে আমি এখনও আগের মতো মুগ্ধ হই, আর ভাবি, ও এতো পার্ফেক্ট কিভাবে হলো?

স্বপ্নময়/তেলাপোকা/মধ্যরাতের রাখাল/ ও আরও অনেক কিছু - আমি অনেক দিন পর্যন্ত ওনার লেখার বিষয়বস্তু কিছুই বুঝিনি, কারন ওনার লেখার ধরন, শব্দের ব্যাবহার সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে চলে যেতো। বোঝা শুরু করার পর মনে হতো হূ.আ কেও হার মানায় - তখন হূ.আ এর লেখা খুব ভালো লাগতো। এখন মনে হয় - সমরেশের কাছাকাছি কোথাও।

কৌশিক, অমি রহমান পিয়াল, অরুপ, কনফুসিয়াস, ফ্রুলিক্স, ধুসর গোধুলি, পথিক (অনেকগুলো !) - এদেরকে মনে আছে, কারন ওরা 'বড়রা' ছিলো। ওদের লেখা কখনও পড়তাম না, পড়লেও বুঝতাম না। মনে হতো বড়দের মোটা মোটা ঘুম এসে যাওয়া বইয়ের মতোন - জানতাম অসম্ভব ভালো লেখাগুলো আমার পৃথিবীর সীমানার বাইরে।

কালপুরুষ, রাগ ইমন, মৃন্ময় আহমেদ - ওদের কবিতা পড়ে মনে হতো, আমি এভাবে কখনও লিখতে পারবো?

অমিত আহমেদ - 'গন্দম' এর জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম। যেদিন সেটা ব্লগে লেখা বন্ধ করে দিলেন, আমার মনে হলো হৃদপিন্ডটা কেমন ডুবে যাচ্ছে। তারপর যেদিন বাসায় এসে দেখি 'গন্দম' এর কপি আমার টেবিলের ওপর, ভেতরে লেখকের নিজের হাতে লিখে জানিয়ে দেওয়া এটা মীরার জন্য, সেদিন হৃদপিন্ডটা এমন লাফালো যে একরাতে পড়ে শেষ করে ফেললাম।

আনোয়ার সাদাত শিমুল - 'ছাদের কার্নিশে কাক' এর লেখক, আপনার নামটা কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম, কিন্তু অমিত আহমেদ এ পাশাপাশি আপনিও আছেন!

মাহবুব সুমন - আপনার চোখে আমি কি এখনও ক্লাস ফাইভে পড়ি?

সারিয়া তাসনিম - প্রাপ্তি আমাদের সবাইকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়েছিলো।

শাওন, খুশবু, রিনয়, 'এই আমি', নুর-ই-হাফসা আর বাকি 'ছোটরা' - আমার ছোট হওয়ার একাকিত্ব দুর করেছে।

হিমু, ত্রিভুজ, সাদিক মোহাম্মদ আলম, শাহানা, ফজলে এলাহি, আরাফাত রহমান, মাশা, ভাস্কর চৌধুর, সাকিব আল মাহমুদ, অ্যালন, আবু সালেহ - ওদের লেখা পড়েছি, মনে আছে।

ধানসিড়ি, সাদাত শাহরিয়ার, ঝরা পাতা - মনে নেই, কিন্তু আমার আগের পোস্টগুলোতে ওদের নাম আছে, তার মানে ওরাও আমাকে বড় হতে সাহায্য করেছে।

বিন্দু আমি - ব্লগের জুটি। একটা বয়সে ওদের লেখা পড়তে খুব ভালো লাগতো।

এদের এবং আরও অনেকের (যারা আগে থেকে আছেন, কিন্তু নাম বাদ পড়ে গেছে) কাছ থেকে আমি অনেক নতুন নতুন জিনিস শিখেছি। যেমন - 'মাথার ওপর দিয়ে চলে গেলো', 'লাল বাতি জ্বলছে', 'সিংকিং সিংকিং ড্রিংকিং ওয়াটার'। এদের কাছ থেকে বানানও শিখেছি, যদিও এখনও আমার বানানে অনেক ভুল হয়। এদের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে অনলাইন/অফলাইন জীবন আলাদা রাখতে হয় ও কেন রাখা উচিৎ। এরা আমার পৃথিবীটা আর একটু বড় করেছে।

আমার লেখার বিবর্তন (মে-পোস্টগুলো থেকে কিছু কপি-পেস্ট):

মে ০৬ (১৫) - "চোখের পানি ফেলা কি দূর্বলতার পরিচয়? যদি তাই হয়, আমি আমার পনের বছরের ছোট্ট জীবণে কতবারই না নিজেকে দূর্বল প্রমান করেছি! অতি ছোটখাট ব্যাপারে... আমি এতো সার্থপর কেন?"

মে ০৭ (১৬) - "এ মুহুর্তে আপুনির ইউনির লাইব্রেরী থেকে ব্লগাচ্ছি। আজকে স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্কুলে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো জিনিষগুলোর একটা হচ্ছে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার মজা। আর আজকে আবিষ্কার করলাম যে না জানিয়ে ফাঁকি দেওয়ার থেকে জানিয়ে ফাঁকি দেওয়া অনেক বেশি মজা।"

মে ০৮ (১৭) - "আমার সময় এক ঘন্টার কয়েক মিনিট কম, তাই মন খুব তাড়াতাড়ি চিন্তা করতে চাচ্ছে আর হাত আরোও দ্রুত লিখতে চাচ্ছে। এই চেনা খাতার পৃষ্ঠা অনেকদিন উল্টে পাল্টে দেখিনি বলে চোখ তাড়াহুড়ো করে তৃষ্ণা মেটাতে চাচ্ছে। তাই একটা ভাবনা আরেকটার ওপর গড়িয়ে অতীত হওয়া ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারের মতো উঁচু কোথাও থেকে লাফ দিচ্ছে। আর আমি তাদের বাঁচানোর জন্য খুব চেষ্টা করছি, যদিও খালি মনে হচ্ছে এক একটা চিন্তা আস্তে আস্তে হাতের ফাঁক গলে চুপিচুপি মাটি ছুঁয়ে ফেলছে। তাই একদম প্রথম থেকে শুরু করি, যেন আর একটাও হারিয়ে না যেতে পারে।"

মে ০৯ (১৮) - "আমি এখন 'কেমন যেনো' মুডে।'কেমন যেনো' লিখতে ইচ্ছা করছে, আবার লিখতে ইচ্ছা করছে না।'কেমন যেনো' বই খুলে বসতে ইচ্ছা করছে, আবার করছে না।'কেমন যেনো' ভালো করতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু করছে না।
'কেমন যেনো' খুব পঁচা মুড।সারাক্ষন মন খারাপ করিয়ে রাখে, আর আস্তে মন খারাপটা বাড়িয়ে দেয়।তারপর সব কিছু খুব কনফিউসিং করে ফেলে।(যেনো বানান কি 'যেনো' নাকি 'যেন'?)"

হুম, আগে কি সু-ন্দর দি-ন কাটাইতা-ম!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৪০
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×