somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আহমেদের অপ্রকাশিত রচনা '' নবীজী ''

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তখন মধ্যাহ্ন ।
আকাশে গনগনে সূর্য ।
নিচের বালি তেতে আছে । ঘাসের তৈরি ভারী স্যান্ডেল ভেদ করে উত্তাপ পায়ে লাগছে ।
তাঁবুর ভিতর বের হওয়ার জন্য সময় টা ভাল না ।
আয়ুজ তাঁবু থেকে বের হয়েছে । তাকে অস্থির লাগছে ।
তার ডান হাতে চারটা খেজুর ।সে খেজুর হাত বদল করছে ।
কখনো ডান হাতে কখনো বাম হাতে ।

আয়ুজ মনের অস্থিরতা কমানোর জন্য দেবতা হাবল্ কে স্মরণ করল । হাবল কা'বা শরিফে রাখা এক দেবতা যার চেহারা মানুষের মত । একটা হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল বলে কা'বা ঘরের রক্ষক কোরাইশ রা সেই হাত সোনা দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে । দেবতা হাবলের কথা মনে হলেই সোনার তৈরি হাত চোখে চকমক করে ।

দেবতা হাবল কে স্মরণ করায় তার লাভ হল । মনের অস্থিরতা কিছুটা কমলো ।

সে ডাকল , শামা শামা ।
তাঁবুর ভিতর থেকে শামা বের হয়ে এলো ।

শামা আউজের একমাত্র কন্যা ।বয়স ছয় । তার মুখ গোলাকার । চুল তামাটে । মেয়েটি তার বাবাকে অসম্ভব পছন্দ করে । বাবা একবার তার নাম ধরে ডাকলেই সে ঝাঁপ দিয়ে এসে তার বাবার গায়ে পড়বে । শামার মা অনেক বকা ঝকা করেও মেয়ের এই অভ্যাস দূর করতে পারেন নি ।

আজও নিয়মের ব্যাতিক্রম হল না । শামা ঝাঁপ দিয়ে তার বাবার গায়ে এসে পড়ল । সে হাঁটতে পারছেনা । তার বাঁ পায়ে খেজুরের কাঁটা ফুটেছে । পা ফুলে আছে । রাতে সামান্য জ্বর ও এসেছে । বাবা তার এক হাত বাড়িয়ে তাকে ধরল । এক হাতে বিচিত্র ভঙ্গিতে তাকে শুন্যে ঝুলিয়ে কোলে তুলে নিল । শামা খিল খিল করে হাসছে । তার বাবা যেভাবে তাকে কোলে তুলেন অন্য কোন বাবা তা পারেন না ।
আউজ বলল ,মা খেজুর খাও ।
শামা একটি খেজুর মুখে নিল । সাধারন খেজুর এটা না । যেমন মিষ্টি স্বাদ তেমনই গন্ধ । এই খেজুরের নাম মরিয়ম খেজুর ।
আউজ মেয়েকে ঘাড়ে তুলে নিয়েছে । রওয়ানা হয়েছে উত্তর দিকে ।
শামার খুব মজা লাগছে । কাজকর্ম না থাকলে বাবা তাকে ঘাড়ে নিয়ে বেড়াতে বের হন । তবে এমন কড়া রোদে কখনো না । রোদে কষ্ট হচ্ছে মা ?
শামা বলল , না ।
আসলে তার কষ্ট হচ্ছিল । সে না বলল শুধু বাবাকে খুশি করার জন্য ।
বাবা !
হু !
আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
তোমাকে অদ্ভুত একটা জিনিস দেখাবো ।
সেটা কি ?
আগে বললে তো মজা থাকবেনা ।
তাও ঠিক । বাবা , অদ্ভুত জিনিস টা শুধু আমি একলা দেখবো ? আমার মা দেখবেনা ?
বড়রা এই জিনিস দেখে মজা পায় না ।
আউজ মেয়েকে ঘাড় থেকে নামালো । সে সামান্য ক্লান্ত ।তার কাছে আজ শামাকে অন্য দিনের ছেয়েও ভারি লাগছে । পিতা এবং কন্যা একটি গর্তের পাশে এসে দাঁড়াল । কুয়ার মত গর্ত ,তবে তত গভীর না ।
আউজ বলল , অদ্ভুত জিনিসটা এই গর্তের ভিতর আছে । দেখো ভাল করে ।
শামা আগ্রহ এবং উত্তেজিত হয়ে দেখছে । আউজ মেয়ের পিঠে হাত রাখল । তার ইচ্ছা করছেনা মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলতে । কিন্তু তাকে ফেলতে হবে । তাদের গোত্র বনি হাকসা আরবের অতি উচ্চ গোত্রের একটি । এই গোত্র মেয়ে শিশু রাখে না । তাদের গোত্রের মেয়েদের অন্য গোত্রের পুরুষ বিবাহ করবে ? এত অসন্মান ?
ছোট্ট শামা বলল বাবা , কিছুই তো দেখিনা ।
আউজ চোখ বন্ধ করে দেবতা হাবলের কাছে মানসিক শক্তির প্রার্থনা করে শামার পিঠে ধাক্কা দিল ।
মেয়েটি 'বাবা' 'বাবা' করে চিৎকার করছে ।
তার চিৎকারের শব্দ মাথায় ঢুকে যাচ্ছে । আউজকে দ্রুত কাজ সারতে হবে । গর্তে বালি ফেলতে হবে । দেরি করা যাবেনা । এক মুহূর্ত দেরি করা যাবেনা ।
শামা ছোট্ট হাত বাড়িয়ে ভীত গলায় বলছে , বাবা ভয় পাচ্ছি । আমি ভয় পাচ্ছি ।
আউজ পা দিয়ে বালির একটা স্তূপ ফেললো । শামা আতংকিত গলায় ডাকল , মা! মা গো !
আউজ তখন মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল , উঠে আস ।
আউজ মাথা নিচু করে তাঁবুর দিকে ফিরে চলছে । তার কাঁধে পা ঝুলিয়ে আতংকিত মুখে শামা বসে আছে ।
আউজ জানে সে মস্ত বর ভুল করেছে । গোত্রের নিয়ম ভঙ্গ করেছে । তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে ।তাকে অবশ্যই গোত্র থেকে বেরিয়ে যেতে হবে ।
আজ থেকে সতেরশ বছর আগে আরব পেনিন্সুলার এটি অতি সাধারন একটি চিত্র। ---------------
------------ '' তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে ।'
বিখ্যাত এই গানের কলি শুনলেই অতি আনন্দ ময় একটি ছবি ভেসে উঠে । মা মুগ্ধ চোখে নবজাত শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে আচেন,তার চোখ আনন্দে ঝলমল করছে ।
ঘটনা কি সে রকম ?
সে রকম হওয়ার কথা না । শিশুটির বাবা নেই । বাবা আব্দুল্লাহ তার সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেন নি । মা আমিনার হৃদয় সেই দুঃখেই কাতর থাকার কথা । আরবের শুষ্ক কঠিন মরুভুমিতে পিতৃ হীন একটি ছেলের বড় উঠার কঠিন সময়ের কথা মনে করে তার শংকিত হয়ে উঠার কথা ।
শিশুর জন্মলগ্নে মা আমিনার দুঃখ কষ্ট যে মানুষটি হঠাৎ দূর করে দেন , তিনি ছেলের দাদাজান । আব্দুল মোতালেব । তিনি ছেলেকে দু হাতে তুলে নিলেন । ছুটে গেলেন কা'বা শরিফের দিকে । কা'বার সামনে দুহাতে উপরে তুলে উচ্চ কণ্ঠে বললেন , আমি এই নবজাত শিশুর নাম রাখলাম , মোহাম্মদ !
সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করল । নতুন ধরনের নাম । আরবে এই নাম রাখা হয় না । একজন বলল এই নাম কেন ?
উত্তরে মোতালেব বললেন , ---------------------------- ------------- -------------- ------------ । ---------------- , ------------ , ------------------ ।
( হাত ব্যথা হয়ে গেছে , লিঙ্ক দিচ্ছি নিজেই পড়ে নিন । )

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×