somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইক্রোফোন টেস্টিং

১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলের পর...
রাজীব হাসান
বাঁশিতে একটা লম্বা ফুঁ দিলেন রেফারি। তার এক হাত সেন্টারের দিকে তাক করা। দুই পর্দা উঁচুতে গলা চড়ালেন ধারাভাষ্যকার। তার কণ্ঠ ছাপিয়ে শোনা গেল গ্যালারির গর্জন। কিন্তু এরই একটা অংশ একদম নিশ্চুপ। অধিক শোকে পাথর! চাইলে গ্যালারির এই বৈপরীত্যময় ছবিটা মাঠেও খুঁজে পাবেন আপনি। গোলবারের এক কোণে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোলরক। সামনে ডিফেন্স আর মিডফিল্ড মুণ্ডুপাত করছে নিজেদের, দুষছে একে অপরকে। গালে, নয়তো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রাইকার। আর অন্য দলে? কেউ লাফিয়ে উঠছেন শূন্যে, মুঠোবন্দী করতে চাইছেন আকাশকে! শূন্যে বারকয়েক ডিগবাজি খেয়ে নিজের ওস্তাদি জাহির করতে ব্যস্ত কেউ কেউ। অনেকেই আবার ছুটতে ছুটতে টুপ করে বসে পড়ছেন, এগিয়ে যাচ্ছেন সবুজ ঘাসের বুক চিরে। এদের মধ্যমণি হয়ে আছে যে, ওই তো ইতিমধ্যেই খুলে ফেলেছেন জার্সি, বারকতক চুমু ছুড়ে দিয়েছেন গ্যালারিতে। সহযোদ্ধারা সবাই ছুটছে তার দিকে। পাকড়াও করতে নয়, মাথায় তুলে নাচতে। তখনো বলেই চলেছেন ভাষ্যকার_'হোয়াট আ গোল, হোয়াট আ গ্লোরিয়াস মোমেন্ট...!'
গোলের উল্লাস প্রকাশের ভঙ্গিটা সবার একরকম নয়। উল্লাসের বিচিত্র সব প্রকাশে ফুটবলের নিয়ত বিচরণ। অপরূপ কিন্তু বিচিত্র সেই ভঙ্গিমাগুলোয় চোখ বোলানো যাক।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে সাকুল্যে চার গোল করেছিলেন মার্সেলো সালাস। কিন্তু ওই আসরের গোলবিষয়ক আলোচনা এলে সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভর সুকার, ৫টি গোল করে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাতিস্তুতা-ভিয়েরি, কিংবা তৃতীয় স্থানে সালাসের অন্য দুই সঙ্গী রোনালদো কিংবা হার্নান্দেজকে ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন চিলির এই স্ট্রাইকার। কারণ? গোল করার পর তার অনবদ্য ভঙ্গি। একটা হাঁটু মাটিতে, অভিবাদনের ভঙ্গিতে নত করে রাখা মাথা, একটা আঙুল তাক করে রাখা আকাশের দিকে_বুলফাইটারের কাসিক সেই ভঙ্গির কারণে তার নামই হয়ে গিয়েছিল_'দ্য ম্যাটাডোর'। অননুকরণীয় সেই ভঙ্গিমার কারণে দণি আমেরিকার কত কাউবয়ের ঘরে ঘরে তার পোস্টার ঝুলছে_কে জানে!
কারো কারো উদযাপনের ভঙ্গিটার পেছনে লুকিয়ে থাকে অনেক গল্প। স্পেনের শীর্ষ গোলদাতা রাউল প্রত্যেক গোলই উৎসর্গ করেন তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। হোক সেটা কাব রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা জাতীয় দলের প।ে গোল দিয়ে ছুটতে ছুটতে তিনি চুমু খান তার বিয়ের আংটিতে। ফ্রান্সেসকো টট্টি আরো এককাঠি সরেস! গত মৌসুমে গোলের আনন্দের সঙ্গে নিজের বাবা হওয়ার আত্দতৃপ্তিটাকে মিশেল দিয়ে এক অদ্ভুত কায়দায় গোল উদযাপন করেছেন ইতালির এই মিডফিল্ডার। বলটাকে চোখের পলকে পুরতেন নিজের জার্সির তলায়। উঁচু পেটটাকে দর্শকদের দেখাতেন গর্বের সঙ্গে! তারপর 'জন্ম' দিতেন বলের! এই কাজটা না করলেও ১২ বছর আগের বিশ্বকাপে পিতৃত্বের গৌরব বোঝাতে ব্রাজিলের বেবেতো বেছে নিয়েছিলেন অনন্য এক ভঙ্গিমা। হল্যান্ডের বিপ েগোল করার পর দুই হাতে কোলে তুলে নিয়েছিলেন অদৃশ্য এক শিশুকে। তার পাশে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গোল উদযাপন করেছেন রোমারিও আর মাজিনহো।
একই বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া বনাম বুলগেরিয়ার ম্যাচটিতেও জন্মোৎসবের দেখা মিলেছে। না, কোনো সন্তানের নয়, ফুটবলের মানচিত্রে পরাশক্তি হিসেবে জন্ম নেওয়া নতুন একটা জাতির আবেগমথিত উৎসব দেখেছে গোটা বিশ্ব! প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই ৩-০ গোলে বুলগেরিয়াকে বিধ্বস্ত করেছিল সুপার-ইগলেরা। প্রথম গোল করার পর গোলবারের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলেন রাশিদি ইয়াকিনি। মুষ্টিবদ্ধ দুই হাতে সর্বশক্তিতে জড়িয়ে ধরেছিলেন জাল। তাতেও আটকাতে পারেননি বাঁধভাঙা চোখের জল। খোঁজ নিয়ে দেখুন, তার সঙ্গে কেঁদেছিল দারিদ্র্যের নিমর্মতায় জর্জরিত পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির লাখো মানুষ।
আফ্রিকারই আরেকটি দেশ ক্যামেরুন। '৯০-এর বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে আসা দেশটিকে কেউই তেমন আমলে নেয়নি। সে অপমানের শোধ নিতে বলি হতে হয়েছে রুমানিয়া আর কলম্বিয়াকে। 'নাক-উঁচু' ফুটবলবোদ্ধারা বাধ্য হয়েছিলেন ক্যামেরুনকে 'অদম্য সিংহ' নামে ডাকতে। রজার মিলা পরিণত হয়েছিলেন জনগণের নায়কে। ৩৮ বছরের এই অদম্য 'তরুণ' গোল করেই ছুটে যেতেন কর্নার পতাকার দিকে। পায়ের পাতায় ভর করে শুরু হয়ে যেত নাচ। সেই সঙ্গে উল্লাসধ্বনিতে কাঁপিয়ে দিতেন চারদিক।
যদিও ২০০২ বিশ্বকাপে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ক্যামেরুন। সে অভাব পূরণ করেছে আরেক সিংহ_সেনেগাল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে আবিভর্ূত হওয়া দলটির নায়ক ছিলেন পেপ বুবা দিওপ। দেশের প েপ্রথম গোলটি করার পর তিনি খুলে ফেলেছিলেন জার্সি। এক নিঃশ্বাসে ছুটে গিয়ে কর্নার পতাকার ওপর টাঙিয়ে দিয়েছিলেন সেই জার্সি। যেন নতুন একটা খুঁটি গেড়ে দিলেন তিনি ফুটবল ইতিহাসে! চোখের পলকে তার সহযোদ্ধারা ছুটে এসেছিলেন। নতুন খুঁটিটা ঘিরে সেনেগালের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের অনন্য এক প্রদর্শনীই হয়ে গিয়েছিল সেদিন।
ফ্রান্সের অন্য খেলোয়াড়দের মতো সেই দুঃসহ স্মৃতি হয়তো সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়াবে লিলিয়ান থুরামকেও। অথচ চার বছর আগে এই থুরামই ছিলেন নায়ক। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ০-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ফ্রান্স। ফাইনালে খেলার সব আশা-স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার মুখে। এমন সময় এগিয়ে আসেন ডিফেন্ডার থুরাম। তার দু-দুটি গোল ফ্রান্সকে পার করে দেয় সেমিফাইনালের বৈতরণী। মহা গুরুত্বপূর্ণ সেই গোল দুটি উদযাপন করতে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন থুরাম। ঠোঁট জোড়ায় চেপে ধরেছিলেন একটা আঙুল। চোখ জোড়ায় ঠিকরে বেরোচ্ছিল আবেগ আর অবিশ্বাস_'আমি পেরেছি!' মজার ব্যাপার হলো, সেই জোড়া গোলের আগে-পরে আর কখনোই জাতীয় দলের হয়ে গোল করতে পারেননি থুরাম।
এ ধরনের আরো অনেক উদাহরণই আছে ফুটবল ইতিহাসে। ইতালির লুকা টনি কানে হাত দিয়ে 'তুমি কি শুনছো' ভঙ্গি নিয়ে আসছেন বিশ্বকাপে। পর্তুগালের পেদ্রো পলেতাও তৈরি ডানা মেলে উড়ে যেতে আকাশে। রোনালদো নাকি পশুপাখির অঙ্গভঙ্গি নকল করতে শুরু করেছেন। সতীর্থ রোনালদিনহো কিন্তু এখনো ধরে রেখেছেন আঙুল নেড়ে নেড়ে গ্যালারিকে অভিবাদন জানানোর সেই অকৃত্রিম ভঙ্গি। হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরবন্দনায় মাতবে অনেকে। সেই সঙ্গে দলবেঁধে নাচ তো হবেই।
তাই প্রস্তুত রাখুন নিজেকে। গ্যালারিতে না হোক, টেলিভিশনের সামনে বসে আপনাকেই তো নাচতে হবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:১৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×