somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাগো মহল্লার কবিরা

১৩ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে রাহিস ওয় কিন্তু আমাগো মহল্লার পোলা- গিরিঙ্গি আব্বাস ক্যারাম বোর্ডের উপরে ম্যাশিনটা রেখে বললো, তোগো সামুয়িকিতে ওর কবিতা না দেখলে তোগো খবরই আছে কইলাম,

নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের উদ্যোগে একটা কবিতা প্রকাশনা বের হবে, অবশ্য এমন উদ্যোগ প্রতি বছরই নেওয়া হয়। একটা সাহিত্য সাময়িকী ছাপাতে ৫০০০ টাকার বেশী খরচ হয় না কিন্তু এই বাবদ বিজ্ঞাপনে পাওয়া যায় হাজার পঞ্চাশ, ছাপিয়ে, বিলিয়েও অনেক লাভ, তাই প্রতি বছরই এমন একটা প্রকাশনা ছাপানো হয়ই নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের উদ্যোগে।

এ বছর ব্যতিক্রম, আশিক ইবনে মাসুদ, শহরের উঠতি কবি, বাসা বদল করে এসেছে মহল্লায়, যদিও কৈশোরের সীমানা অনেক আগেই অতিক্রম করে এসেছেন তিনি তবুও তিনি শিং ভেঙে বাছুরের দলে যোগ দিয়েছেন। কোনো কিছু করবার অক্ষমতাকে তিনি স্বীকার করেন না, নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে তার বক্তব্য হলো, কবি মানুষদের ইরাম হতেই হয়, ওরা থাকে ভাবের জগতে, এইসব ছুটোমুটো কাজ করলে হবে, অপেক্ষায় থাকতে হবে, কখন কবিতা ধরা দেয়..............

তার উৎসাহেই মূলত বারোয়ারী সাময়িকীর বদলে একটা কবিতা সাময়িকী তথা লিটল ম্যাগ ছাপানোর কথা ভাবছে নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের সভ্যরা।

কবিতার বই কি চলবে? মাহমুদ রব্বানী এক কোণ থেকে প্রশ্নটা উঠিয়েই চুপ হয়ে যায়-
আরে বেটা কবিতার বই চলনের কি দরকার? তুই কি এইখানে কবিতা ছাপায়া নোবেল পাইবি?

না মানে কেউ কি বিজ্ঞাপন দিতে রাজি হইবো, না হইলে তো পুরা প্রোজেক্টের গাঢ় মারা গেলো।

রাজী হইবো না মানে আলবত রাজী হইবো, বুঝাইতে হইবো হেগোরে, বুঝাইলে বুঝে না এমন মানুষ কম, আমাগো গিরিঙ্গি আব্বাস আছে না, হ্যায় দ্যাখবো বিজ্ঞাপনের বিষয়, তোগো ভাবনের কাম নাই।

সেই থেকেই নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘেরক্লাব রুমের দরজায় ঝুলছে বিজ্ঞপ্তি, অচিরেই প্রকাশিতব্য কবিতা সাময়িকীর জন্য কবিতা আহ্বান করা হচ্ছে- আপনার কবিতাটি জমা দিন, মনোনিত কবিতার কবিকে পুরস্কৃত করা হবে।

নালিতাবাড়ী ক্লাবের সদস্যদের অনেক বিষয়েই অভিজ্ঞতা আছে, পাশের পাড়ার ছেলেদের সাথে লড়াই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিটি বাজানো, কলেজে ম্যাশিন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, তো দল লীগ শিবিরের লড়াইয়ে জান কবুল এই ক্লাবের সদস্যদের কবিতা প্রতিভাও সীমাহীন, সুতরাং দেখা গেলো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দিনই সামনে রাখা বাস্কে কবিতা জমা হচ্ছে-

আশিক ইবনে মাসুদ মাথা নাড়েন প্রবল বেগে, না হচ্ছে না কিছুই, এটাকে কবিতা বলে না মোটেও, এটা কবিতার নামে ধর্ষণ- এইভাবে কেউ কবিতা লিখে-

রশিদের কবিতাটা ছুড়ে ফেলবার পরে রশিদ ছুটে যায় আব্বাসের কাছে- বস, আমার কবিতাটা তো উড়ায়া ফেললো আশিক্যা- ওরে কিছু কইবেন না উস্তাদ, আমাগো মহল্লার নাম কি থাকে? মান মর্যাদা কি থাকবে যদি আমার কবিতা এইখানে না থাকে?

গিরিঙ্গি আব্বাসের মাথায় রক্ত উঠে যায়, শালার মহল্লার মানসম্মান নিয়া টানাটানি করবো একটা বুইড়াচোদা- আইজকাই শালার পুতেরে একটা বীচি দেখায়া আসবো।

আশিক ইবনে মাসুদ আমতা আমতা করে বললো, দেখেন পাশের মহল্লার রবি কিন্তু ভালো কবিতা লিখে, ওর জন্য একটা স্পেস রাখতে হবে-

তোর স্পেসের মায়েরে চুদি, আমার মহল্লার পোলার কবিতা না ছাপাইলে স্পেস তোর হোগা দিয়া ভইরা দিয়াম শালা, আমারে চিনোস তুই?

আমাগো মহললার পোলাপাইনের কবিতা ছাপানোর পরে যদি কোন খালি জায়গা থাকে সেইটাতে যাইবো বিজ্ঞাপন, সেইটার পরে অন্য কিছু,

কিন্তু ৪৮ পাতার সাময়িকীতে ছাপানোর মতো ভালো কবিতা নেই, এখানে যা আছে সেসবকে কবিতা বলা যাবে না, সেসব ছাপানোর দায়িত্ব আমি নিবো না, আমি সম্পাদনা করলে ভালো কিছু একটা করার চেষ্টা করবো-

তোরে কেউ ফাঁপর দিতে কইছে? তুই কি এইটা ছাপায়া নাম কামায়া ফেলবি? তোর সম্পাদনার মায়েরে বাপ- শালা আমি কি কম বুঝি? গত ৫ বছর ছাপাইছে কি এই সাময়িকী? এই বান্দাই ছাপায়া আনছে, তোরে দরকার নাই কোনো, যা কইলাম করবি নাইলে খবর আছে।

পর দিন সকালে গিরিঙ্গি আব্বাস মজনুর চায়ের দোকানে বসে সিগারেটের প্যাকেটে আঁকিবুকি কাটে-

রশীদ আইস্যা বললো, বস কি করেন?
ভাবতাছি একটা কবিতা লিখুম, না লিখলে মান সম্মান থাকে না, ঐ পিচ্চি সাজ্জাইদ্যাও দেখি কবিতা লিখ্যা জমা দিয়া দিলো,

হ লিখেন বস, না লিখলে আমাগো প্রেস্টিজ থাকবো না।

বিকেল বেলা গিরিঙ্গি আব্বাস নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের ক্যারামবোর্ডে ম্যাশিনটা রেখে গমগমে স্বরে বললো- এই যে একটা কবিতা দিলাম, প্রথম পাতায় ছাপা হইতে হইবো, নাইলে ঘেট্টি খুইল্যা হাতে ধরায়া দিবো-

আশিক ইবনে মাসুদ বিরস বদনে কবিতা পড়ে-

চুলকানোর নিয়ম

-------------------

এ কিতাব রচিয়াছি আমি, গিরিঙ্গি আব্বাছ
চুলকাইতে অনেক মজা, চুলকাই বারো মাস

চুলকাই আঙ্গুল দিয়া গভীর মনোযোগে
চুলকাইতে গিয়া ঘা হইলো গোপনাঙ্গে

তাই তো বলি চুলকানোর নিয়ম জানা চাই

চুলকানোর আগেই নখ কাইট্যা নিয়ো ভাই।

--------------------------------------------------

দরিদ্র ইলিয়াস ভাঙা থালা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো-
আশিক ইবনে মাসুদকে দেখে বললো, কি ব্যাপার কোষ্টকাঠিন্য? সমস্যা নেই, ঘৃতকুমারী খেয়ে দেখতে পারেন

আরে না কবিতার যন্ত্রনায় ভুগি

নমস্কার সেলাম শুভ কামনা হে কবি।



------------------------------------------------------------------------------


ইদানিং বিরক্ত লাগে এইসব চুলকাচুলকি দেখতে, সবাই চুলকাচ্ছে, হে কবি, প্রীত হলাম, শুভাশীষ, মঙ্গালার্থে তৃতীয় বাংলা চতুর্থ সাময়িকী পরীক্ষায় কে কবিতা লিখছে আর কে লিখছে না এইসব চুলকা চুলকি দেখে মনে হলো- সবারই নেইল কাটার প্রয়োজন, নখ না কেটে চুলকালে ঘা হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৩৫
১৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×