somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষাব্যবস্থায় "গিনিপিগ ব্যাচ" আর কত বাড়বে??

১২ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সকাল বেলায় পত্রিকা দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদ একটু বেশি হয়ে গেছে। একের পর এক অদ্ভুত সব পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে, আধাখেচড়া অবস্থায় তা রেখে আবার সে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা।

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কোন শেষ নেই; একেবারে স্কুলজীন থেকে কর্তৃপক্ষের যথেচ্ছাচারের স্বীকার হয়ে আমাদের জীবন ভজঘট হয়ে গেছে। ক্লাস এইটে উঠে প্রথমবার শুনলাম, নতুন বই হবে ইংরেজির, Communicative English নামে গালভরা নাম শুনতে লাগলাম স্যারদের মুখে, টিভির বিজ্ঞাপনে আর গাইড বইয়ের মলাটে। হঠাৎ করে, অপরিকল্পিত ভাবে আনা সেই সিলেবাস English grammar শেখার পথ হুট করে বন্ধ করে দিল। ইংরেজি পরীক্ষা হলো; কিন্তু প্রশ্নপত্রে tense এর কচকচানি নেই, translation নেই, voice, narration কিছুই নেই। সে সময় ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ মনে হয়েছিল আমার কাছে। নতুন নিয়মে পরিবর্তিত হলো পাবলিক পরীক্ষা দু'টাও। এসএসসি আর এইচএসসি সিলেবাসেও যোগ হল communicative English.
সিস্টেমটায় যে কত বড় গলদ ছিল তা টের পেলাম এইচএসসি পাসের পর, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে টের পেলাম, আমি জানি না ইংরেজি লেখার basic নিয়মগুলো কী? ইংরেজি লিখতে পারি, ইংরেজি পড়তেও পারি কিন্তু কেউ যদি বলে এই বাক্যটা ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ কি না? তখন মাথা চুলকাতে হয়। নিজের চেষ্টায় তখন বকেয়া ব্যাকরণ আবার পড়া শুরু করলাম; এখন যতটুকু জেনেছি তাতে কাজ চলে যায়,তবে গর্ব করার মত জ্ঞান নেই; কথায় আছে না সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়।
চার বছর যাওয়ার পর শিক্ষাবোর্ডের সিলেবাস প্রণেতাদের ভুলটা চোখে পড়েছে,শেষমেষ পাবলিক পরীক্ষায় গ্রামার এর জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ রেখে নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা হচ্ছে । মাঝখানে আমরা চার ব্যাচ গিনিপিগ রয়ে গেলাম।

এ-তো গেল শুধু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সিলেবাসের কথা। পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে, প্রশ্নপত্র কোন ধাঁচের হবে, মেধা যাচাই এর জন্য কোন পদ্ধতি বেছে নেয়া হবে এ নিয়ে একধরণের ছেলেখেলা চলছে অবিরাম। একসরকার আসছে, তাদের নিজস্ব থিওরী দিচ্ছে(আমি আসলে ঠিক বুঝি না সরকার পরিবর্তনের সাথে শিক্ষাপদ্ধতি আর সিলেবাসের কী সম্পর্ক থাকতে পারে?? কিন্তু সাদা চোখেই পরিষ্কার, এখানে "হাকিম যদি নড়ে হুকুম নড়তে বাধ্য")

এস.এস.সি. এবং এইচ.এস. িস. ২০০১ ব্যাচ বোধহয় শিক্ষা(অব্যবস্থা)'র সবচেয়ে বড় শিকার। নির্বাচনী পরীক্ষারও এক সপ্তাহ পর আমরা প্রথম খবর পাই, মেধাযাচাই পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসছে। তখন আমাদের মূল সমস্যা ছিল ফলাফল কোন্‌ পদ্ধতিতে দেবে, গ্রেডিং নাকি স্ট্যান্ড। গ্রেডিং হলে অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে বাংলা-ইংরেজি পড়তে হবে বেশি বেশি, নাইলে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে চেষ্টা করতে হবে ফুল মার্কস রাখার। সে বিভ্রান্তির মীমাংসা হয় মূল পরীক্ষার দু'সপ্তাহ আগে। আমরা সাধ্যমত নতুন নিয়মের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারলেও, যারা খাতা দেখবেন সেই মহামান্য শিক্ষকরা শিক্ষাবোর্ডের যাবতীয় নির্দেশনা'কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নম্বর দিয়েছেন পুরনো অভ্যাস বজায় রেখেই। চতুর্থ বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্ট মূল ফলাফলের সাথে যোগ না হওয়া এবং শিক্ষকদের ন্যায্য নম্বর বণ্টন এই যুগপৎ ক্রিয়ায় গ্রেডিং এ ধ্বস নামে।

এরপর এই পদ্ধতিতে দু'দফা সংশোধন করা হয়; এক এ গ্রেডের জন্য বরাদ্দ ৬০-৭৯ নম্বরের সীমাকে আরেকটু ছেঁটে ৭০-৭৯ করা হয় এবং মূল ফলাফলে চতুর্থ বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেডিং পয়েন্ট যোগ করার বিধান করা হয়। কিন্তু আমরা যারা ভুক্তভোগী ছিলাম তাদের ফলাফল এর পরের সিস্টেমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য কোন উদ্যেগ কর্তৃপক্ষ নেয়নি। ফলাফল চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণী নির্ধারণে বিড়ম্বনা, প্রতিনিয়ত আমরা যার মুখোমুখি হচ্ছি।

এই অভূতপূর্ব পদ্ধতি বাস্তবায়নের পর নতুন আরেক নিয়মের প্রবর্তন করা হয়; সকল কলেজে ভর্তি করা হবে শুধু এসএসসি'র জিপিএ দেখে, জিপিএ সমান হলে বয়সের জ্যেষ্ঠতা'র ভিত্তিতে। এর পক্ষের যুক্তি হিসেবে দাড় করানো হয়েছে কোচিং সেন্টার বাণিজ্য বন্ধের মহান উদ্দেশ্যকে। আমার প্রশ্ন হলো একাডেমিক কোচিং(১ম থেকে ১০ম) যদি চলতে পারে তাহলে ভর্তি কোচিং কী দোষ করল? এই বছর থেকে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম বাদ দিয়ে ভর্তি করা শুরু হয়েছে নম্বরের ভিত্তিতে; বোর্ড থেকে পাঠানো নম্বরের ভিত্তিতে সমান জিপিএ প্রাপ্ত ছাত্রদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করা হয়। আমি বুঝি না, তাহলে গ্রেডিং সিস্টেমের মূল্য থাকল কোথায়? এরা কি আসলে গ্রেডিং এর মানে বোঝে??

এতসব হৈ-হুল্লোড় এর মধ্যে আরেক নতুন ফর্মূলা একমুখী শিক্ষা নিয়ে বেশ উদ্যমের সাথে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করে feasibility study করতে বিদেশ ঘুরে এসেছেন কর্তাব্যক্তিরা; একমুখী শিক্ষা নামের এই অশ্বডিম্ব প্রসব থেকে বোর্ডকে বিরত করতে জাফর ইকবাল স্যার সহ অনেক শিক্ষাবিদ এগিয়ে এসেছিলেন। চাপে পড়ে সেটা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে (এখনো বাতিল করা হয় নি কিন্তু!!)

এরপর নিয়ে আসা হল আরেক সিস্টেম, কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি।গ্রামপর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অন্ধকারে রেখে চেষ্টা করা হল ২০০৯ সাল থেকেই এসএসসি'তে এ পদ্ধতি চালু করে দেবার। বিভিন্ন গাইড বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মালিক-প্রকাশক দের ডেকে এই পদ্ধতি'র মানসম্পন্ন মডেল বই বাজারে ছাড়তে বলা হল; কেউ কেউ বই প্রকাশও করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষক অভিভাবকদের বাধার মুখে মুখ থুবড়ে পড়ল এটিও। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের তৈরি করা গেলে এই পদ্ধতিটা বাংলাদেশের শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। এখন ধাপে ধাপে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর শোনা যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত একমুখী(একই ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা;বর্তমানে এগার ধরনের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে -সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি বিদ্যালয়, আনরেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন এবতেদায়ী মাদ্রাসা, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, স্যাটেলাইট বিদ্যালয়, কিণ্ডারগার্টেন এবং এনজিও পরিচালিত পূর্ণাঙ্গ প্রাথমিক বিদ্যালয়।) শিক্ষা চালু করা হবে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু আজকের প্রথম আলোর বলছে পঞ্চম শ্রেণীতে আরেকটা পাবলিক পরীক্ষার তোড়জোড় চলছে। আমি বুঝতে পারছি না এই পাবলিক পরীক্ষার উদ্দেশ্যটা কী? পরবর্তীতে কি এর ফলাফলের কোন মূল্য থাকবে(এসএসসি বা এইচএসসি'র মত)। নাকি বৃত্তি পরীক্ষার বিকল্প হিসেবেই এটা আসছে???

বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এই হ-য-ব-র-ল অবস্থা কতদিন চলবে? এই দেশে একেকটা শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা একেক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বেরোচ্ছে, এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। যে কোন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তৃণমূল পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, প্রস্তাবিত পদ্ধতি'র খারাপ দিকগুলোর সমাধান কী হবে, দেশের শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে কী ভাবছেন এগুলো বিবেচনায় আনা উচিত। আর কোন পদ্ধতি চালু হলে হুট করে সেটা বন্ধ না করে, নতুন পদ্ধতির সাথে আগেরটার একটা মেলবন্ধন করানো দরকার। সরকার পরিবর্তিত হলে পাঠ্যবইয়ের লেখক বদলে যাবে, ইতিহাস একেকজন একেকভাবে শিখাবেন এইসব বালসুলভ আচরণের ইতি হওয়া দরকার।নইলে এই দেশের প্রত্যেকটা শিক্ষিত নাগরিকই ভাববে যে শিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে তার মেধা আর মননের বিকাশ ঘটেছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ।

DIGITAL SYLHET A Bank Information about Sylhet.
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×