somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরুদ্দেশ

১০ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজের কমিউনিকেশন মডিউলটা টা অফ করে জোহান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক এবার আর কেউ তার খোঁজ পাবে না। শান্তিমতো ছুটিটা কাটাতে পারবে। টানা দু’বছর পর অনেক কষ্ট করে সে একটা ছুটির ব্যাবস্থা করেছে। কোনভাবেই সেটা সে নষ্ট করতে দিতে চায় না। অবশ্য দু’মাস আগেও সে এভাবে একটা ছুটির ব্যাবস্থা করছিলো। ছুটি নিয়ে সে যখন দক্ষিনের পাহাড়ী এলাকায় আগে থেকেই ঠিক কর রাখা রিসোর্টটিতে পৌছে একটা শাওয়ার নিয়েছে মাত্র, তখনই তার অফিস থেকে বাই ভার্বাল চলে এলো, কারন দুই নাম্বার লাঞ্চিং ষ্টেশনের সিষ্টেম ফেইল করেছে। যদিও সেবার অনেক আগেই জোহান তার কমিউনিকেশন মডিউল আর তার সাথে যোগাযোগের সব ব্যাবস্থা বন্ধ করে দিয়েছিলো একটু শান্তিতে ছুটিটা কাটানোর জন্য।কিন্তু সেবার তার অফিসের লোকজন তার বাই ভার্বালের ট্রাকিং মেশিন থেকে তাকে খুঁজে বের করে ফেলেছে।

জোহান একটা আন্তঃমহাকাশ উৎক্ষেপন কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী। সে ছুটিতে আসার আগে তার রিপ্লেসমেন্ট যদিও রেখে আসে, কিন্তু যতবারই সে কোন একটা ছুটি নিয়ে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করে না কেন, কোন একটা ঝামেলা লেগে যায় যেটা সে ছাড়া আর কেউ ঠিক করতে পারবে না। তাই গত দুই বছরে একটি উইকএন্ডও তার কাটানো হয় নি। একটি ছুটিও সে তারমতো করে উপভোগ করতে পারেনি। একবার তো এমন হলো জোহান কাউকে কিছু না জানিয়ে পাবলিক ভার্বালে করে শহর থেকে দূরে চলে গেলো যাতে কেউ তাকে খুঁজে না পায়। কিন্তু সেবারও ছুটিরি প্রথমদিনই একটা বাই ভার্বাল চলে এলো তার হোটেলে। কারন সেবার তারা তাকে খুঁজে না পেয়ে সব হোটেলের রিজার্ভেশনে তার নাম দিয়ে সার্চ করে তাকে খুঁজে বের করে ফেলেছে।

তাই এবার জোহান কোন হোটেলে উঠেনি। কোন বাই ভার্বালে করে না এসে কিছু পথ স্কাই ওয়ে, কিছু পথ টেলিপোর্টেশন ব্যাবহার করে আর কিছু পথ স্রেফ পায়ে হেটে সমুদ্রতীরের এই নির্জন জায়গাটাতে একটা গুহা খুঁজে বের করে চলে এসেছে। এখন তার সাথে সভ্য দুনিয়ার সকল যোগাযোগ বন্ধ। কিছুতেই কেউ আর তাকে খুঁজে পাবে না। তার এখন কিছুটাদিন একটু বিশ্রাম দরকার। পৃথিবীর এমন একটা জায়গা সে খুঁজে পায়নি যেখানে লুকিয়ে থাকা যায়। এই অতি উন্নত জীবন যাত্রার যুগে কেবল নিজের জন্য একটু সময় বের করতে তাই তাকে আসলেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

কমিউনিকেশন মডিউলটা বন্ধ করে গুহার এক কোনে রেখে দিলো সে। এখানে কয়েকটা দিন কাটনোর জন্য সে সাথে করে অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। সেগুলো বের করে জায়গাটাকে মোটামুটি বসবাস উপযোগী করে ফেললো। এটা ঠিক গুহার মতো নয়। বোঝাই যায় এখানে কেউ কোন একটা সময় ছিলো। তাই জায়গাটা এখনো বসবাসের মতো আছে। বেশ কয়েকটা দিন শান্তিতে কাটানো যাবে। জোহান তার সুইমিং ট্রাকটা টা পরে গুহার পাশের ছোট সী বীচটাতে চলে এলো। বেশ খানিকক্ষন এখন সাঁতার কাটা যাবে। এটা ভাবতেই জোহানের দারুন লাগছে, এই প্রথমবারের মতো সে সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেউ আর তাকে খুঁজে পাবে না। উৎক্ষেপন কেন্দ্রের কোন একটা লঞ্চিং প্যাডে বন্ধ হয়ে গেলেও সে আর তা জানতে পারবে না। নিজেকে খুব ভার মুক্ত মনে হচ্ছে তার।

বেশ খানিক্ষন সাঁতার কেটে, আর আরো কিছুক্ষন সী বীচের বালুতে শুয়ে থেকে জোহান যখন তার গুহার সামনে এলো তখন সে অবাক হয়ে গেলো। কারন গুহার সামনে দুটো বাই ভার্বাল দাড়িয়ে আছে। সে দুটো যে তার অফিস থেকে এসেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। কারন প্রথমটাতে বসে আছে তার এসিষ্টেন্ট কিরি। কিন্তু কিভাবে তার তাকে খুঁজে পেলো। কোন ভাবেই তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। এই জায়গাটা শহর থেকে অনেক অনেক দূরে। আর সে তার কমিউনিকেশন মডিউল আর সব রকমের ইলেক্ট্রনিক ইকুইপমেন্ট বন্ধ করে রেখেছে, যেখান থেকে তারা জানতে পারবে যে সে এখানে আছে। এটা ভেবে জোহান আসলেই অবাক হয়ে গেলো যে কিভাবে তার তাকে খুঁজে পেলো।

তাকে দেখে কিরি দৌড়ে আসলো।
-স্যার চার নাম্বর প্লাট ফর্মের লাঞ্চিং প্যাডের সিষ্টেম ক্রাশ করেছে।আপনাকে এখনই যেতে হবে।
তখন চার নাম্বর প্লাট ফর্মের লাঞ্চিং প্যাডের সিষ্টেম ক্রাশ করার চেয়েও জোহানের কাছে বেশী জরুরী তারা কিভাবে তাকে খুঁজে পেলো সেটা জানা।
-কিন্তু তোমরা আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে?
-আমরা অত্যন্ত দুঃখিত স্যার আপনার ব্যাক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করায়। শেষবার আপনি যখন নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন তখনই আমরা ঠিক করেছিলাম যে এরপরআপনাকে খুঁজে বের করার জন্য একটা কিছু করতে হবে। তাই গত মাসে যখন আপনার হাতে ছোট অপারেশনটা হলো তখন আমরা আপনার অগোচরেই আপনার শরীরে একটি ট্রাকিং মেশিন সেট করে দিয়েছি। তাই এবার যখন আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন বাধ্য হয়েই সেটা আমাদের অন করতে হয়েছে আপনাকে খুঁজে পেতে। আমরা আসলেই দুঃখিত। কিন্তু এটা না করলে আমরা আপনাকে খুঁজে পেতাম না।

পুরোটা শুনে জোহান হাসবে না কাঁদবে তা বুঝতে পরলো না। প্রথমে ভাবলো খুব রেগে যাবে। কিন্তু কেন যেন রেগে না গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে তার গুহায় ফিরে গেলো। এই পৃথিবীতে কি লুকিয়ে থাকার একটাও জায়গা নেই?

আধঘন্টা পর জোহানকে তার অফিসের বাই ভার্বালে করে শহরের দিকে উড়ে যেতে দেখা গেলো।
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×